পাঠ্যবইয়ে নিশ্চয় এটা পড়েছো যে, একটা পৃষ্ঠতল (surface) বাড়াতে শক্তির (energy) প্রয়োজন পড়ে। অন্যভাবে বললে, দুটো ভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে যে তলদেশটা রয়েছে, সেটা বাড়াতে গেলে শক্তি খরচ করতে হয়, কমে গেলে সেটা থেকে কিছুটা শক্তি বেরিয়ে আসে। মাধ্যমগুলো তরল না কঠিন, সেই অনুযায়ী শক্তির খরচটা কম-বেশি হতে পারে, তবে শক্তি কিন্তু সবসময় লাগে।
কতটা শক্তি জমা রয়েছে একটা পৃষ্ঠতলে, তার আন্দাজ পাওয়া যায় তার পৃষ্ঠটান (surface tension) থেকে।
পৃষ্ঠতল বাড়ানো কি আর পাঁচটা শক্তি-খরচ-সাপেক্ষ কাজের মত?
পাঠ্যবইয়ের কথাগুলো প্রথমবার পড়লে মনে হতেই পারে, পৃষ্ঠতল বাড়াতে শক্তি লাগতে যাবে কেন? ‘শক্তি’ কথাটা ভাবলে সাধারণত একটা মেহনতের কথা মাথায় আসে। একটা বস্তুকে তার বর্তমান অবস্থায় আনতে যতটা মেহনত করতে হয়েছে, যতটা ‘কাজ’ (work) করতে হয়েছে, সেটাই তার শক্তি।
যেমন, একটা চলন্ত বস্তুর ‘গতিশক্তি’ (kinetic energy) রয়েছে কারণ কেউ একটা বস্তুর স্বাভাবিক স্থিতাবস্থা থেকে তাকে চালু করতে ‘কাজ’ করেছিল। উঁচুতে থাকা একটা বস্তুর ‘স্থিতিশক্তি’ রয়েছে কারণ কেউ একটা মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে ‘কাজ’ করে সেটাকে ওই উচ্চতায় পাঠিয়েছিল। এইভাবে ভাবলে মনে হতেই পারে, একটা পৃষ্ঠতল বানাতে বা বাড়াতে কাজ করতে হবে কেন? কাজটা কিসের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে? এই প্রশ্নটা থেকে আরেকটা প্রশ্ন আসে, কখন পৃষ্ঠতল বাড়ানো সোজা আর কখন কঠিন?
আণবিক স্তরে ব্যাখ্যা
এই কাজ বা শক্তির উৎস খুঁজতে পৃষ্ঠতলের দু-ধারে যে দুটো মাধ্যম (medium) রয়েছে, তার মধ্যে আণবিক স্তরে কী হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। দেখতে হবে অণুগুলোর মধ্যে কী বল (force) বা আন্তঃক্রিয়া (interaction) কাজ করছে।
একটা মাধ্যমের গভীরে গেলে অণু-পরমাণু স্তরে যে বলটা দেখা যায়, সেটা একটা আকর্ষণ বল (cohesive force)। বিভিন্ন ধরনের বস্তুতে এই আকর্ষণ বলটা ভিন্ন কারণে তৈরি হয়। কারণটা হতে পারে রাসায়নিক বন্ধন (chemical bonding), হাইড্রোজেন বন্ধন (hydrogen bonding), বা ভ্যান ডার ওয়াল্স আন্তঃক্রিয়া (Van der Waals interaction)। এই আকর্ষণ বলই বস্তুটাকে ধরে রাখে এবং তার অভ্যন্তরীণ শক্তিতে (internal energy) যোগদান করে।
কিন্তু একটা মাধ্যমের পৃষ্ঠতলে থাকা একটা অণুর কথা যদি ভাবো, তার সবদিকে কিন্তু একই ধরনের অণুর বিন্যাস নেই। এক ধারে প্রতিবেশী অণু না থাকার ফলে পৃষ্ঠতলে থাকা অণুর উপর একদিক থেকেই নিট বল কাজ করে। বস্তুর উপর নির্ভর করে সেই বলটা আকর্ষক বা বিকর্ষক হতে পারে। একটা তরলের কথাই ভাবো। তরলের অভ্যন্তরে অণুগুলোর মধ্যে একটা পারস্পরিক আকর্ষক বল কাজ করে। কিন্তু পৃষ্ঠতলের অণুগুলো একধারে তরলের অণু আর অন্যধারে বাতাসের অণু, এই দুইয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই দুই জাতীয় বল ভিন্ন হওয়ার কারণে এই অণুগুলো তরলের অভ্যন্তরের দিকে একটা নিট বল অনুভব করে।
একটা পৃষ্ঠতল তৈরি করতে হলে কয়েকটা অণুর মধ্যবর্তী প্রতিসম (symmetric) আকর্ষক বল ভেঙে দুটো মাধ্যমের সীমানায় নিয়ে যেতে হয়। এই বল ভাঙতে সিস্টেমে শক্তি যোগ করতে হয়, তাই গোটা সিস্টেমের শক্তি বাড়ে। এই অতিরিক্ত শক্তি পৃষ্ঠতলের উপর বন্টিত হয়, যার নিট ফল হলো পৃষ্ঠশক্তি এবং পৃষ্ঠটান।
কঠিন তরল সব বস্তুরই পৃষ্ঠটান রয়েছে। আর প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবৃত্তি যেহেতু ন্যূনতম শক্তিতে থাকা, এই পৃষ্ঠটানের প্রচেষ্টাই হলো অণুগুলোকে যথাসম্ভব কাছে টেনে পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল (surface area) কমানো।
খামের পিঠে চটজলদি অঙ্ক
পরিচিত তেলগুলোর কথাই ধরা যাক। শক্তির সমবিভাজন নীতি (law of equipartition of energy) অনুযায়ী তেলের গভীরে প্রত্যেক অণুর আকর্ষক বলের কারণে গড়ে পরিমাণ শক্তি থাকে। এখানে, হলো বোল্টজম্যান ধ্রুবক (Boltzmann constant) এবং হলো ডিগ্রী কেলভিনে তাপমাত্রা। কিন্তু তেলের উপরের স্তরে অণুগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। তাদের শক্তি মোটামুটি গভীরে থাকা অণুদের অর্ধেক, অর্থাৎ:
এর কারণ হলো, উপরের স্তরের অণুগুলো খালি একদিকেই আকর্ষক বল অনুভব করে, অন্যদিকে থাকে বাতাসের অণু, যাদের প্রভাব খুবই কম।
এবার কয়েকটা সংখ্যা বসিয়ে দেখা যাক। তেলের অণুর ব্যাস কোন তেল তার উপর নির্ভর করে 0.1 থেকে 0.5 ন্যানোমিটার অব্দি যেতে পারে। আমাদের কাজের জন্য ধরা যাক ব্যাস 0.2 ন্যানোমিটার। পৃষ্ঠটানকতটা হবে, সেটা এর থেকে চট করে কষে ফেলা যায়। পৃষ্ঠটান যেহেতু প্রতি একক ক্ষেত্রফলে পৃষ্ঠশক্তির মাপ, তাই :
বোল্টজম্যান ধ্রুবকের মান আর ঘরের তাপমাত্রা () বসিয়ে বেরোয় যে পৃষ্ঠটান আনুমানিক । মজার ব্যাপার হলো, এই ছোট্ট অঙ্কটা কষে যে মানটা পাওয়া গেল, সেটা অধিকাংশ বাজারে পাওয়া তেলের পৃষ্ঠটানের সাথে মিলে যায় [2]।
তেল, জল এবং তরল ধাতু — পৃষ্ঠটানের রকমফের
অবশ্যই, পৃষ্ঠটান কত হবে, সেটা বিভিন্ন তরলের ক্ষেত্রে আলাদা এবং সেটা নির্ভর করে তাদের আণবিক গঠন আর আন্তঃআণবিক বলের উপর।
যেমন, জলের ক্ষেত্রে অণুগুলোর মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন কাজ করে। অন্যান্য তরলের মধ্যে যে আন্তঃআণবিক বন্ধন থাকে, সেটার তুলনায় হাইড্রোজেন বন্ধন অনেক বেশি মজবুত। ফলে, জলের পৃষ্ঠটানও অন্যান্য তেল জাতীয় তরলের তুলনায় বেশি। তাই, জল গোলগোল ফোঁটা তৈরি করে এবং ক্যাপিলারি টিউবে জল রাখলে উপরে একটা মেনিসকাস (meniscus) দেখা যায়।
এই আন্তঃআণবিক বন্ধন জলের থেকেও বেশি মজবুত পারদ জাতীয় তরল ধাতুর (liquid metal) মধ্যে। এই ধাতব বন্ধনের উৎস হলো এক সমুদ্র ধনাত্মক আয়ন-এর (ion) মধ্যে ভেসে বেড়ানো মুক্ত ইলেক্ট্রন (free electron)। এই ইলেক্ট্রনগুলোই ধাতুর তড়িৎ পরিবাহিতা এবং ঘরের তাপমাত্রায় (room temperture) তরলতার জন্ম দেয়। অন্যদিকে এদের কারণে সৃষ্ট বন্ধন অনেক বেশি মজবুত হওয়ার ফলে তরল ধাতুর পৃষ্ঠটান বেশিরভাগ তরলের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাই, তরলের ধাতুর ফোঁটাগুলো প্রায় গোলাকার হয় এবং তরল ধাতু অন্যান্য তরলের থেকে একদম আলাদা আচরণ করে।
ডিম ফ্যাটানো থেকে চুল শুকনো — পৃষ্ঠতল বাড়ানোর নমুনা
একটা নতুন পৃষ্ঠতল বানাতে তাহলে কী করতে হচ্ছে? বস্তুর অভ্যন্তরে থাকা কয়েকটা অণুর মধ্যে আন্তঃআণবিক বন্ধন ভেঙে অণুগুলোকে পৃষ্ঠতলে চালান করতে হয়। এখন, বন্ধন ভাঙতে হলে তো শক্তির প্রয়োজন পড়বেই। সেই কারণেই পৃষ্ঠতল বানাতে শক্তি লাগে।
ডিম ফ্যাটানোর কথাই ভেবে দেখো। চামচে কি এগ বিটার (egg beater) দিয়ে যখন ডিমটাকে জোরে জোরে ফ্যাটাচ্ছো, তখন তুমি ডিমের মধ্যে যান্ত্রিক শক্তির (mechanical energy) সাপ্লাই দিচ্ছো। সেই শক্তি ডিমের অণুর মধ্যে বন্ধন ভাঙছে, ফলে বাড়ছে ডিমের পৃষ্ঠতল। সেই ডিম দিয়ে যখন ভুরজি হবে, ডিমটাকে যতটা ফ্যাটানো হয়েছে, সেটা ততটাই আমাদের পছন্দমত ফুরফুরে হবে।
আরেকটা উদাহরণ ভাবা যাক। ধরো তোমাকে একটা কাঠের ব্লক দেওয়া হলো এবং বলা হলো ওজন না বাড়িয়ে ওর পৃষ্ঠতল বাড়াতে। এটা করতে গেলে তোমাকে যান্ত্রিক শক্তির প্রয়োগ করতে হবে — হয় ছোট ছোট পিসে কেটে নয়তো হাতুড়ি মেরে ভেঙে সেই ব্লকের পৃষ্ঠতল তুমি বাড়াতে পারবে। দুটো ক্ষেত্রেই তুমি কাঠের অণুর মধ্যবর্তী বন্ধনগুলোকে ভেঙে এই পৃষ্ঠতল বাড়ানোর কাজটা করছো।
কাঠের ব্লক ভাঙাচোরা ছেড়ে একটা পরিচিত ঘটনা দেখা যাক। চান করার পর কি জলে ডুব দিয়ে আসার পর আমরা অনেকেই লক্ষ্য করে থাকবো যে চুলটা মাথার সাথে সেঁটে থাকে। চুলটাকে আবার আগের মত ফুরফুরে করতে, বা পৃষ্ঠতল বাড়াতে, আমাদের হাতে দুটো উপায় আছে। প্রথমটা হলো গামছা দিয়ে চুল মোছা, যেখানে আমরা যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগ করে চুল আর জলের মধ্যের বন্ধনগুলো ভাঙছি। দ্বিতীয়টা হলো হেয়ার ড্রায়ার (hair dryer) ব্যবহার করা, যেখানে তাপ ব্যবহার করে ওই বন্ধনগুলোকে ভেঙে জলকে বাষ্পীভূত করে দিচ্ছি, ও নতুন পৃষ্ঠতল তৈরি করছি।
দুটো উদাহরণের ক্ষেত্রে মূল নীতিটা একই: নতুন পৃষ্ঠতল বানাতে গেলে শক্তি সাপ্লাই দিয়ে অণুর মধ্যের বন্ধনগুলোকে ভাঙতে হবে। খাবার বানানো, একটা বস্তুর চেহারা পাল্টানো, চুল পরিপাটি করে সাজগোজ কিংবা নতুন পৃষ্ঠতল বানিয়ে তাতে শক্তি জমানো, এই ধারণাটা সর্বত্রই খাটে — পৃষ্ঠতল বাড়াতে হলে শক্তির জোগান দিতে হবে। সেই শক্তিকে শুধু যান্ত্রিক শক্তি বা তাপে সীমিত রাখার দরকার নেই, সেটা রাসায়নিক (chemical), তড়িৎ-চুম্বকীয় (electromagnetic), বা অন্য যে-কোনো ধরনের শক্তি হতে পারে। এই ধারণাটা বুঝতে পারা খুব জরুরি, কারণ পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অনেক পদ্ধতি বা পরিবর্তনের আড়ালে এই সহজ ধারণাটাই কাজ করছে।
পৃষ্ঠতল কমলে শক্তি বেরিয়ে আসে
পৃষ্ঠতল তৈরি করতে যেমন শক্তি সরবরাহ করা দরকার, পৃষ্ঠতল ধ্বংস হলে একই রকম ভাবে শক্তি নিষ্কাশন করাও সম্ভব।
দৈনন্দিন একটি উদাহরণ থেকেই এই বিষয়টা সহজে বোঝা যেতে পারে। একটা বেলুনকে ফুঁ দিয়ে ফোলালে তার পৃষ্ঠতল বাড়তে থাকে। কতটা শক্তি এই পৃষ্ঠতল বাড়াতে আমরা প্রয়োগ করছি তা বাতাসের চাপ ও বেলুনের আয়তনের তারতম্য পরিমাপ করে আমরা সহজেই জানতে পারি। এই শক্তিই বেলুনের পৃষ্ঠতলের শক্তি হিসাবে সঞ্চিত থাকে।
এখন একটি ফোলানো বেলুনকে যদি একটা পিন দিয়ে খোঁচা দেওয়া হয়, তাহলে এই পৃষ্ঠতলের আচমকা বিরাট সংকোচন হয়, ও পৃষ্ঠতলে জমে থাকা শক্তি তখন শব্দ শক্তি (ও কিছুটা তাপ শক্তি) তে রূপান্তরিত হয়। আমরা যদি হাতেকলমে একটা ছোট পরীক্ষা করে দেখি তাহলে বিষয়টা আরো পরিষ্কার হতে পারে। আমরা কয়েকটা বেলুন নিয়ে সেগুলোকে একটা নির্দিষ্ট চাপে ধীরে ধীরে বিভিন্ন আয়তনে ফোলাতে পারি।
সেটা করতে যে ‘কাজ’ করতে হয়, সেটা তাপগতিবিদ্যার সূত্র () থেকে খুব সহজেই পাওয়া যেতে পারে। একটা স্থির চাপের (constant pressure pump) পাম্প নিয়ে যদি তার মুখে একটা বেলুন লাগিয়ে ফোলানো হয় তাহলে বেলুনে বাতাস ঢুকিয়ে ফুলিয়ে তুলতে যে শক্তি ব্যবহার করা হয় তার পরিমাপ ।
বিভিন্ন আয়তনের অনেকগুলি বেলুন ফোলানো হয়ে গেলে সেগুলোকে এক এক করে পিন দিয়ে ফাটানোর সময় যে শব্দ হবে তার তীব্রতা আমরা আমাদের ফোনে থাকা সাউন্ড সেন্সর ব্যবহার করে পরিমাপ করতে পারি, ও পরীক্ষা করে দেখতে পারি যে সেগুলি বেলুন তৈরির শক্তি, বা পৃষ্ঠতলের শক্তির সঙ্গে সমানুপাতিক কিনা! (Phyphox -এর মত app ফোনে নামিয়ে সহজেই ফোনের সাউন্ড সেন্সরকে ব্যবহার করা যায়।)
পৃষ্ঠতলের শক্তি থেকে আলো বা তাপ সৃষ্টি
সাবানের বুদ্বুদ ফাটার সময়ও একই ঘটনা ঘটে। কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আবার এই বুদ্বুদের পৃষ্ঠতল লোপ পেলে পৃষ্ঠতলে সঞ্চিত শক্তি শুধুমাত্র শব্দ নয়, তা তাপ, এমনকি আলোক শক্তিতেও পরিণত হতে পারে। Sonoluminescence (সোনো-লুমিনিসেন্স) এমনই এক ঘটনা, যেখানে শব্দ ব্যবহার করে তৈরি একটি বুদ্বুদ হঠাৎ করে সম্পূর্ণ সংকুচিত (collapsed) হয়ে যাওয়ার ফলে পৃষ্ঠতলের অধিকাংশ শক্তি আলোক শক্তিতে পরিবর্তিত হয়।
প্রাণিজগতের এক প্রজাতিও বুদ্বুদের পৃষ্ঠতলের এই শক্তিকে নিজের কাজে ব্যবহার করে। পিস্তল শ্রিম্প বা চিংড়ি এই কাজ করে। এই বিশেষ ধরনের চিংড়ির দাঁড়া অত্যন্ত শক্তিশালী ও বিদ্যুতের গতিতে বন্ধ হতে পারে। যখন এই পিস্তল চিংড়ি জলের মধ্যে তার দাঁড়া অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ করে, একটা তীব্র গতির জলের ধারা দাঁড়ার মধ্যে থেকে ফিন্কি দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসে। এই ফিন্কির গতি এতটাই বেশি থাকে যে এর মধ্যের চাপ জলের বাষ্পচাপের থেকে কম হয়ে যায় ও জলের মধ্যে একটা ক্যাভিটি বা বুদ্বুদ তৈরি হয়। এই তীব্রগতিতে ধাবমান বুদ্বুদ যখন আবার সংকুচিত হয়ে মিলিয়ে যায়, তখন এই পৃষ্ঠতলের প্রবল শক্তি বিপুল পরিমাণ তাপশক্তিতে পরিণত হয়। এই তাপ এতটাই বেশি, যে কয়েক মুহূর্তের জন্য তা সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার (~4800°C) কাছাকাছি চলে আসে। একটা তীব্র শব্দ ও ক্ষণস্থায়ী আলোর ঝলকানিও দেখা যায় [3]। যে শিকার এই প্রচণ্ড শব্দ ও তাপের সংস্পর্শে আসে, সে মুহূর্তের মধ্যে অসার হয়ে যায় ও পিস্তল চিংড়ির খাদ্যে পরিণত হয় [4]।
সুতরাং বুঝতেই পারছো, আর যাই হোক, পৃষ্ঠতলের শক্তিকে হেলাফেলা করা যায় না।
(প্রচ্ছদের ছবির সূত্র — Vulture)
তথ্যসূত্র ও অন্যান্য টুকিটাকি:
- Marchand, A., Weijs, J.H., Snoeijer, J.H. and Andreotti, B., 2011. Why is surface tension a force parallel to the interface?. American Journal of Physics, 79(10), pp.999-1008.
- Gennes, P.G., Brochard-Wyart, F. and Quéré, D., 2004. Capillarity and wetting phenomena: drops, bubbles, pearls, waves (pp. 7-9). Springer New York.
- Ant Lab. Snapping Shrimp Attacks at 11,000 fps – CAVITATION BUBBLES!, Youtube
- BBC Earth Science. Pistol Shrimp’s Cavitation Bubble | Richard Hammond’s Invisible Worlds, Youtube
- Lohse, D., Schmitz, B. and Versluis, M., 2001. Snapping shrimp makes flashing bubbles. Nature, 413(6855), pp.477-478.[6] Lohse, D., Schmitz, B., Von Der Heydt A., Versluis, M., How Snapping Shrimp Snap: Through Cavitating Bubbles , Science, 289(5487), pp. 2114-2117