21-12-2024 16:45:34 pm
Link: https://bigyan.org.in/vertical-farming-hydroponics-part-2
চাষের জন্য জমির প্রয়োজন নেই। অল্প জায়গায় থাকে থাকে চাষ করা যায়। ভার্টিকাল ফার্মিং-এর সমর্থকরা সেরকমটাই বলেন। কিন্তু শূন্যে চাষ করা মানে গাছের শিকড়গুলো ঝুলছে। উপরের ছবিটার মত। কিম্বা জলে চুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিচের ছবিটার মত।
প্রথম ছবিটা এরোপনিক্স (aeroponics) পদ্ধতিতে চাষের ছবি, দ্বিতীয়টা হাইড্রোপনিক্স (hydroponics) [১]। জলে একই সাথে মাছ ছেড়ে দিলে তার নাম অ্যাকোয়াপনিক্স (aquaponics)।
উপরের ছবিগুলো দেখে মনে হতেই পারে, এতরকম ‘পনিক্স’-এর মধ্যে গাছের শিকড়গুলো আছে কীকরে? শূন্যে থাকলে জল সার পাচ্ছে কোত্থেকে, জলে থাকলে সেই জলে ডুবে মরে যাচ্ছে না কেন?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখানে দেওয়া হয়েছে। যদি উত্তর শুনতে শুনতে কারো মনে হয়, এই ‘পনিক্স’-পদ্ধতিগুলো বড় ফ্যাচাং, তাই আগে এর সুবিধেটা বলা যাক।
হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতির সমর্থকরা প্রথাগত চাষের উদ্দেশ্যে সাধারণত এই কথাটা বলে থাকেন: মাটিতে যখন সার দিচ্ছো, তার কতটা কাজে লাগছে, সেটা জানো কি?
তাদের কথা অনুযায়ী, গাছে সার কিন্তু খুব একটা হিসেব কষে দেওয়া হয়না। হিসেবটা কষবেই বা কীকরে? মাটির ভিতর শিকড় কিভাবে ছড়িয়ে আছে, সেটা দেখা তো আর যাচ্ছে না। সার কোথাও হয়তো ভালোভাবে মিশলো, কোথাও হয়তো উপর উপর রয়ে গেল, পৌঁছল না শিকড়গুলোতে। যদি বৃষ্টি পড়ে, গোটা সার দেওয়াটাই সার হয়ে যেতে পারে। জল চুঁইয়ে সেই সার মাটির গভীরে চলে যেতে পারে।
সার রাসায়নিক হলে সমস্যা আরেক। রাসায়নিক সার মাটির উপকারী জীবাণুকে নিঃশেষ করে দিয়ে, মাটির প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে দিয়ে ক্রমশ চাষের অযোগ্য করে তোলে মাটিকে। একসময় হয়তো এই চিন্তা করতে হতো না, যথেচ্ছ মাটি ছিল নষ্ট করার মত। এখন আর সেই বিলাসিতার সুযোগ আমাদের নেই।
হাইড্রোপনিক্স-এর সমর্থকদের কাছে, জলে চাষে সেসব সমস্যা নেই। হাইড্রোপনিক্সে গাছের শিকড়গুলো থাকে একটা আবদ্ধ আধারে, পুষ্টি-দ্রবণের (nutrient solution) মধ্যে নিমজ্জিত বা অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায়। আধারটা আবদ্ধ, তাই সার অপচয়ের সুযোগ নেই। জলে যেকোনো জিনিস খুব সহজে গুলে যায়, তাই যেকোনো সারই খুব সহজে সুষমভাবে দ্রবণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, গাছের শিকড়গুলোর সবটাই পুষ্টি পেতে পারে সমান ভাবে। শুধু তাই না, পাশাপাশি আলাদা আধারে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির গাছের চাষ করা যায় — যার যেরকম পুষ্টির দরকার, তার জলে সেরকম মেশালেই হলো। মাটিতে সেইটা করো দেখি!
নিচের এই সুন্দর ছবিটা হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতির এইসব সুবিধেগুলোকেই দেখাচ্ছে।
কিন্তু হাইড্রোপনিক্স দিয়ে গণহারে যে চাষ সম্ভব, সেই নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় আছে। তারা বলবেন, উপরের ছবিটা অর্ধেক কথা বলছে। শিকড়গুলো ডুবে যাচ্ছে না কেন সেটা বলো? তার জন্য কী ব্যবস্থা করতে হয়, সেটা বলো? এইটা চেপে গেলে কিকরে চলবে!
এই লেখাতে সেইসব না চেপে গোটা ছবিটাই দেওয়া হবে।
প্রথম প্রশ্ন হলো: গাছের শিকড় মরতে ডুবে যাবে কেন? ডুবে যাওয়া মানে কি? একটা মানুষকে ডোবাতে হলে মুণ্ডুসুদ্ধ জলে ডুবিয়ে দিতে হয়। তার কারণ, মানুষের অক্সিজেন শোষক বন্দোবস্ত-টাতে অক্সিজেন ঢোকে নাক দিয়ে, নাকটা জলের তলায় গেলে বাতাসের অক্সিজেন নেওয়া সম্ভব হয় না।
কিন্তু যেখানে গাছের প্রায় গোটাটাই জলের উপরে, পাতাগুলো অক্সিজেন শোষণে সক্ষম, তখন গাছ জলে চুবিয়ে দিলে ডুবে যাবে কেন?
ডুবে যে যায়, সেটা বারান্দার টবের গাছে বেশি জল দিলে তখন বুঝতে পারবে। দেখবে, শিকড়ে পচন ধরেছে। তার কারণ হলো, গাছের শিকড়গুলোকেও শ্বাস নিতে হয় (অর্থাৎ, অক্সিজেন শোষণ করতে হয় খাবার ভেঙ্গে পুষ্টি নিতে)।
মানুষের সাথে গাছের তফাৎ হলো, গাছের দেহে মানুষের মত একটা দুর্দান্ত রক্ত-চলাচল বন্দোবস্ত নেই। একটা হৃদয় তেড়ে গোটা দেহে রক্ত পাম্প করে না, রক্তের মত কিছু নেই-ও যেটা অক্সিজেন বইতে পারে। গাছের মধ্যে খাদ্য চলাচল হয় কিছু রসের মাধ্যমে, কিন্তু সেইটা খুব ধীরে হয়। তাই, গাছের যেখানে অক্সিজেন চাই, সেখানেই শ্বাস নিতে হয়, সে পাতাই হোক কি শিকড়। (এখানে প্রশ্ন আসতে পারে — তাহলে জলজ উদ্ভিদদের কী হয়? সেই প্রশ্নে যাচ্ছি না কারণ আপাতত সব ধরণের গাছই জলে চাষ করার কথা হচ্ছে।)
অতএব হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি নিয়ে প্রথমেই প্রশ্ন আসে: গাছের শিকড় জলে চুবিয়ে দিলে ডুবে যাচ্ছে না কেন? অবশ্যই প্রথাগত চাষে এই প্রশ্নটা নেই কারণ মাটিতে চাষ করলে মাটির ডেলাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে বাতাস চলাচল করতে পারে। সেখান থেকেই গাছের শিকড়গুলো অক্সিজেন সংগ্রহ করে। কিন্তু গাছের শিকড় দ্রবণের মধ্যে ডুবে থাকলে সেখানে বাতাস চলাচলের সেই সুযোগটা নেই।
এরোপনিক্স পদ্ধতিতে প্রশ্নটা ঠিক উল্টো: শূন্যে শিকড় ঝুললে অক্সিজেনের তো কোনো অভাব নেই কিন্তু শিকড়গুলো জল পায় কোত্থেকে?
এইসব চাষের পদ্ধতিতে কিভাবে অক্সিজেন আর জল দুটোই সরবরাহ করা হয়, তারও রকমফের আছে। কয়েকটা পদ্ধতির কথা নিচে বলা হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেকরকম পদ্ধতি রয়েছে। সবের মূলেই রয়েছে একটা জল পাম্প করার ব্যবস্থা যাতে গাছের গোড়ায় লাগাতার সার-সমৃদ্ধ জল সরবরাহ করা যায় (পাম্পের খরচ বা ঝামেলা করতে না চাইলে সলতেও ব্যবহার করা যায় যাতে জল নিজে থেকে উঠতে পারে)।
এই পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা করা হয় টাইমার ব্যবহার করে।
এখানে শিকড়গুলো হাওয়াতেই থাকে, তাই অক্সিজেন নেওয়ার সমস্যা নেই। সার-সমৃদ্ধ জলটা পাম্প করা হয় শিকড়ের মধ্যে, দিয়ে শিকড় চুঁইয়ে সেই জল নিচের ট্রেতে গড়ায়। জল পড়ার সময় শিকড়গুলো জল এবং জল থেকে প্রয়োজনীয় সার নিয়ে নেয়, নিচের দিকের শিকড়গুলো কিছুটা ডুবে থাকার সময়ও সেগুলো নিতে পারে (মাছের মলমূত্র ,হাঁসের সার, কেনা রাসায়নিক সার বা কৃত্রিম পুষ্টি, এইসব ব্যবহার করা হয় সার হিসেবে)।
একটা নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর, জলটা খালি করা হয় নিচের রিজার্ভার-এ (উপরের ছবিতে সেটা একটা overflow pipe-এর সাহায্যে করা হচ্ছে)। সেখানে আবার প্রয়োজনীয় সার জলে দেওয়া হবে। ব্যাস, এইটাই চক্র!
মূল কথা হলো, একটা টাইমার দিয়ে জলের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এইটা আগের পদ্ধতিটারই একটা রকমফের। আগের পদ্ধতিটার সাথে এখানে তফাৎ হলো: জলটা ক্রমাগত দেওয়া হচ্ছে, কোনো বিরতি নেই।
উপরের ট্রে-টা এখানে খানিক কাত করা থাকে। তাই বাড়তি জল গড়িয়ে আবার ফিরে যেতে পারে নিচের রিজার্ভার-এ। পাম্প বন্ধ করে জল বার করতে হয় না।
নিচের শিকড়গুলো এখানে গোটা সময়টাই জলের মধ্যে থাকে। তাই এই পদ্ধতিতে শিকড়গুলোর ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই কারণে জলটাতেও অক্সিজেন দিতে হয়। নিচের রিজার্ভার-এ একটা এয়ার পাম্প আর এয়ার স্টোন দিয়ে জলটাকে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ করা হয়।
এখানেও পাম্প ব্যবহার করা হয় কিন্তু যেটা পাম্প করে তারপর স্প্রে করা হচ্ছে, সেটা হলো ফোঁটা ফোঁটা জল (যেমনটা কুয়াশায় দেখা যায়)।
এখানে অক্সিজেন আর জল একে অপরের বিরোধিতা করে না। ভেবে দেখো, কুয়াশায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় কি? তবে এই পদ্ধতিটা নামানো বেশ ঝক্কি। জলের সারের পরিমাণ একেবারে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
তাহলে কারা ঠিক : হাইড্রোপনিক্স-এর সমর্থক না বিরোধীরা? সত্যি কথা হলো, যতই ঝক্কি হোক, চাষের অন্যান্য পদ্ধতির কথা না ভেবে এখন আর উপায় নেই। হাইড্রোপনিক্স-এ শুরুতে একটু ঝামেলা আছে বটে, কিন্তু একবার ব্যবস্থাগুলো করে ফেলতে পারলে ফলটা সুদূরপ্রসারী।
কতদূর এগিয়েছে হাইড্রোপনিক্স চাষ? শখের চাষের বাইরেও কি এর ব্যবহার করা হয়? সেই গল্প থাকবে পরের অংশে।
(চলবে)
[১] Aeroponics পদ্ধতিটা আসলে hydroponics-এরই একটা শাখা, যেখানে চাষের জলটা ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
[২] NFT : https://www.trees.com/gardening-and-landscaping/nutrient-film-technique
[৩] Ebb & Flow Technique: https://www.trees.com/gardening-and-landscaping/ebb-and-flow-hydroponics
লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।
Scan the above code to read the post online.
Link: https://bigyan.org.in/vertical-farming-hydroponics-part-2