09-05-2025 10:42:20 am

print

 
বিজ্ঞান - Bigyan-logo

বিজ্ঞান - Bigyan

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের এক বৈদ্যুতিন মাধ্যম
An online Bengali Popular Science magazine

https://bigyan.org.in

 

সৌরশক্তিকে বাষ্পবন্দী করার নতুন ফন্দি


%e0%a6%85%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a3-%e0%a6%97%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%8b%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a7%9f
অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়

("বিজ্ঞান" সম্পাদক)

 
%e0%a6%85%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a3-%e0%a6%98%e0%a7%8b%e0%a6%b7
অনির্বাণ ঘোষ

("বিজ্ঞান" সম্পাদক)

 
06 Nov 2017
 

Link: https://bigyan.org.in/steam_from_sun

%e0%a6%b8%e0%a7%8c%e0%a6%b0%e0%a6%b6%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%80-%e0%a6%95

সৌরশক্তির সাহায্যে জলকে বাষ্পে পরিণত করে সেই শক্তিকে কাজে লাগানো সহজ কাজ নয়। সূর্য থেকে আসা শক্তির একটা বড়সড় অংশ তাপের কুপরিবাহী জলকে গরম করতে গিয়ে, যাকে বলে, জলাঞ্জলি যায়। এই সমস্যার একটা সমাধান বার করেছেন ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি তারা একটা নতুন পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন যাতে জলের পরিবহনক্ষমতার উপর আর ভরসা করার দরকার পড়ে না।

জল থেকে বাষ্পীকরণের মাধ্যমে সৌরশক্তিকে বোতলবন্দী করার এক নতুন পদ্ধতি বেরিয়েছে। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জল গরম করার এক অভিনব উপায় বার করেছেন যাতে সৌরশক্তির প্রায় ৮৫ শতাংশ অব্দি বাষ্পের মধ্যে পরিচালিত হয় [১]। তুলনার জন্য বলি, এর আগের রেকর্ডটা ছিল ২৪  শতাংশ।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এ বাজারে নতুন কি হতে পারে? সৌর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে (সোলার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট-এ) প্রতিদিন সৌরশক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এই দুটো ভিন্ন প্রকৃতির শক্তির মধ্যে মধ্যস্থতা করছে জল। জল থেকে বাষ্প, বাষ্পের তোড়ে টারবাইন ঘুরছে, টারবাইনের গতিশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। এখানে সমস্যাটা কোথায়?

ট্রেডিশনাল সৌর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা (ছবির সূত্র)

সমস্যাটা হলো, গতানুগতিক পদ্ধতিতে জলে তাপসঞ্চার করতে থাকলে  প্রথমে পুরো জলটা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম হয়।  তারপর বাষ্পায়ন শুরু হয়। এদিকে, জলের তাপ পরিবহন ক্ষমতা খুব কম । সাধারণত সূর্যের আলো সরাসরি জলে এসে পড়ে না, পড়ে কোনো একটা তাপশোষক আচ্ছাদনের উপর (উপরের ছবিটাতে বাঁদিকের সোলার কালেক্টরটি দেখুন)। সেখান থেকে জলে সেই শক্তি চালান হয়। জল যেহেতু তাপের কুপরিবাহী, তাই এই চালান হওয়ার হার বড়ই কম। গরম আচ্ছাদন থেকে জল, জল থেকে আরো জল, এই যাত্রাপথে তাপমাত্রা ঝুপ করে পড়ে যেতে থাকে। পুরো জলের বাষ্পীকরণ তাপমাত্রায় পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক শক্তির অপচয় হয়। কারণ জল গরম হওয়ার ঢিলেমির মাঝে বেশিরভাগ শক্তি পুনর্বিকিরণের মাধ্যমে ওই গরম আচ্ছাদন থেকে পালিয়ে যায়।

পুরো জলের বাষ্পীকরণ তাপমাত্রায় পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক শক্তির অপচয় হয়।

এই সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়ার কিছু উপায় বেরিয়েছে। জলে সুপরিবাহী ন্যানোপার্টিকেল [২] ছড়িয়ে জলের পরিবহনক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে [৩]। কিন্তু তাতেও বিশেষ সুবিধে হয়নি। শক্তি পরিবর্তনের কার্যকারিতা বা এফিসিয়েন্সি, অর্থাৎ সৌরশক্তির কতটা অংশ বাষ্পের শক্তিতে পরিণত হলো, তার রেকর্ড এখনো অব্দি ছিল ২৪ শতাংশ। সাধারণত এই সমস্যা এড়াতে একটা মাঝারি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে জল ফোটানোর জন্য সূর্যের আলোকে অনেক কায়দা করে ফোকাস করতে হয়। বাঘা বাঘা আয়না সূর্যের আলোকে প্রতিফলন করে তাদের ফোকাল লাইনে, যাতে প্রয়োজনীয় ঔজ্জ্বল্য পাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই আয়না যাতে সূর্যমুখী হয়ে সূর্যের পরিক্রমা অনুসরণ করে, তারও জাঁদরেল ব্যবস্থা থাকে। সব মিলিয়ে, খরচসাপেক্ষ ব্যাপার।

তামিল নাড়ু-তে সৌরশক্তিকে ধরার প্রকাণ্ড আয়োজন (ছবির সূত্র)

ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক অন্য পথে হাঁটলেন [৪]। কাঁড়ি কাঁড়ি জলের মধ্যে শক্তি পাচার করার চেষ্টা না করে যদি এমনটা করা যায় যে সৌরশক্তি বুঁদ হয়ে জমে থাকলো আর জল সুড়সুড় করে তথায় এসে বাষ্পীভূত হয়ে গেলো! ধুর, এমনটা হয় নাকি? তবে আর বলছি কি!

যদি এমনটা করা যায় যে সৌরশক্তি বুঁদ হয়ে জমে থাকলো আর জল এসে বাষ্পীভূত হয়ে গেলো?

এই ভেলকিটা দেখাতে একটা দ্বিস্তর (ডাবল লেয়ার) কার্বন-এর চাঁই ব্যবহার করলেন গবেষকরা। উপরের স্তরে আছে এক্সফোলিয়েটেড গ্রাফাইট। গ্রাফাইট বলতেই মাথায় আসে থাকে থাকে সাজানো কার্বন অণুর স্তর। সেই গ্রাফাইট নিয়ে মাইক্রোওয়েভে বিকিরণের মাধ্যমে গরম করলে স্তরগুলোর মধ্যে থাকা গ্যাসের প্রসারণ হয়, ফলে গ্রাফাইটও ফুলে ফেঁপে চৌচির হয়ে যায়। একেই বলে এক্সফোলিয়েটেড গ্রাফাইট। আর নিচের স্তরে আছে কার্বনের শোলা। নিচের ছবিতে যে জিনিসটা জলে ভাসছে, সেটাই দ্বিস্তর-সমৃদ্ধ কার্বন-এর চাঁই।

দুটো স্তর মিলে জল টেনে বাষ্পে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করে।

ডাবল লেয়ার স্ট্রাকচার নিজে থেকেই সৌরশক্তিকে বগলদাবা করে বাষ্পে চালান করে (ছবির সূত্র)

শর্তগুলো কি? প্রথম শর্ত, গ্রাফাইটের ছিবড়েগুলো সূর্যালোকের প্রায় সবটাই শুষে নেবে। বিজ্ঞানীরা দেখলেন, প্রায় ৯৭ শতাংশ শুষে নিচ্ছে। দ্বিতীয় শর্ত, সেই শক্তি শুষে নিয়ে যখের মতো আগলে বসে থাকবে। তৈরী হবে কিছু তাপকেন্দ্র (হটস্পট)। নিচের কার্বনের শোলা সেই কাজেই সাহায্য করে। তার তাপ পরিবহন ক্ষমতা যৎসামান্য, তাই শোষিত শক্তি সেই দিকে পালাতে পারে না। তৃতীয় শর্ত, কার্বনের শোলায় যথেষ্ট ছিদ্র থাকতে হবে যাতে জল উঠে আসে। তাও আছে।

কিন্তু ছিদ্র আছে বলেই তো আর ভাসমান শোলা দিয়ে সুড়সুড় করে জল উঠে আসবে না। তাই, শেষ শর্ত হলো, জলকে টানতে হবে। দুটো স্তর-ই হাইড্রোফিলিক বা জলপ্রেমী। ক্যাপিলারি অ্যাকশন-এর মাধ্যমে ছিদ্র দিয়ে জলটাকে উঠে আসতে সাহায্য করে। ক্যাপিলারি অ্যাকশন কি, সেটা দেখতে একটা খুব সরু স্ট্র একপাত্র জলে ঢোকান। স্ট্রয়ের ভিতরের জলটা পাত্রের জলের তুলনায় একটু উপরে উঠে আসবে – স্ট্র যত সরু হবে তত বেশিদূর উঠে আসবে। আমাদের কার্বন শোলার ছিদ্রগুলো এতো সরু আর এতো বেশিসংখ্যক যে  জল খুব চটপট উপরের গ্রাফাইট স্তরে পৌঁছে যায়।  

স্ট্র যত সরু হবে তত বেশি জল উঠে আসবে ক্যাপিলারি অ্যাকশন-এর মাধ্যমে।

ক্যাপিলারি অ্যাকশন (ছবির সূত্র)

এই চারটে প্রকৃতির সম্মিলনের ফলে এমন একটা চাঁই তৈরী হলো যাকে স্রেফ জলে ভাসিয়ে সূর্যের আলোকে সফলভাবে বাষ্পবন্দী করে ফেলা গেল। কোনোরকম আলোপ্রতিফলনকারী কিংবা ফোকাসিং-এর প্রয়োজন পড়লো না। অবশ্যই, এটা যাকে বলে, প্রুফ-অফ-কনসেপ্ট। অর্থাৎ, বিজ্ঞানীদের ভাষায়, আমি দেখিয়ে দিলাম এটা সম্ভব, কিভাবে এর ইস্তামাল করবেন ব্যাপক হারে (ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেল-এ), সেটা আপনার মাথাব্যথা। তবে, বলতে লোভ হচ্ছে, কয়লা তথা অন্যান্য জ্বালানী-নির্ভর শক্তির শেষের দিন আরো ঘনিয়ে এলো।

(প্রচ্ছদের ছবির উৎস)

লেখার সূত্র

[১] Steam from the sun, MIT News

[২] ন্যানোপার্টিকেল আর কিছুই না, এক থেকে ১০০ ন্যানোমিটার সাইজের কণা। কণাগুলি একদম অণুর সাইজ না হলেও এতই ছোট যে তাদের বাইরের ক্ষেত্রফল (surface area) তাদের আয়তনের (volume) তুলনীয়। সাধারণত বস্তুর পদার্থবিদ্যা বুঝতে তাদের ভিতরটা নিয়ে ভাবলেই হয়, তাদের উপরিতলে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়না। ন্যানোপার্টিকেল-এর ক্ষেত্রে তাদের উপরিতলটাও জরুরি হওয়ার ফলে নতুন সব পদার্থবিদ্যা বেরিয়ে পড়ে যেটা ওই উপরিতলেই হয়। এটা দিয়ে একটা গোটা প্রযুক্তি শুরু হয়ে গেছে: ন্যানোটেকনোলজি।

[৩] Lenert, A. & Wang E.N., Optimization of nanofluid volumetric receivers for solar thermal energy conversion, Sol. Energy 86, 253-265 (2012)

[৪] Solar steam generation by heat localization, Nature Communications

সৌরশক্তি নিয়ে বিজ্ঞান-এ প্রকাশিত লেখাগুলি এখানে পড়ুন। আপনি যদি সৌরশক্তির অভিনব ব্যবহার কোথাও দেখে থাকেন বা সেই নিয়ে সমস্যার কোনো অভিনব সমাধান দেখে থাকেন, লিখুন আমাদের ঠিকানায়: [email protected]

লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।

Scan the above code to read the post online.

Link: https://bigyan.org.in/steam_from_sun

print

 

© and ® by বিজ্ঞান - Bigyan, 2013-25