বিশ্ববিখ্যাত কার্টুনিস্ট ল্যারি গণিক হাত মেলালেন এক পদার্থবিজ্ঞানীর সাথে। সৃষ্টি হল কিছু অসামান্য কার্টুন! বাহুবলীকে কতটা জোর লাগাতে হচ্ছে পিয়ানোটা ঠেলতে? পিয়ানোর ওজনের সমান নাকি অন্য কিছু? এরকম কিছু কার্টুন প্রশ্ন নিচে দেওয়া হলো। ভেবে বার করো দেখি।
বিজ্ঞানে যুক্তি প্রাধান্য পায় বেশি; আবেগ বা শিল্পের বহিঃপ্রকাশ সেখানে সচরাচর কম। তাই বিজ্ঞান শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই নবীন মনের কাছে শুকনো মনে হয়। শুধুই যুক্তির কচকচিতে মন সাড়া দিতে চায় না এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে মাস্টারমশাই যখন ক্লাসে বিজ্ঞানের দুরূহ তত্ত্বগুলো বুঝিয়ে চলেছেন, অনেক ছাত্র-ছাত্রীই তখন নিজেদের মজাদার জগতে মশগুল।
‘বিজ্ঞান’ পত্রিকার সদস্য ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড ইস্টার্ন শোর-এর পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ডঃ কৌশিক দাস বিশ্বাস করেন আমরা বিজ্ঞানকে নবীন মনের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে এই বাধা অতিক্রম করে ওঠা যায়। যে হাসি, মজা, আড্ডা নিয়ে আমরা মেতে থাকতে চাই তা যদি বিজ্ঞানের ক্লাসের মধ্যে, পড়ানোর মধ্যে আমরা আনতে পারি, তাহলে পড়াটা, শেখাটা আর শুকনো থাকে না। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয় বস্তু আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এই চিন্তারই ফসল কৌশিক দাস আর বিশ্ববিখ্যাত কার্টুনিস্ট ল্যারি গনিকের যৌথ উদ্যোগে তৈরী পদার্থবিদ্যার কার্টুন প্রশ্ন। এই মজাদার প্রশ্নগুলোর উদ্দেশ্য ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞান যাচাই করা নয়, বরঞ্চ ক্লাসে এমন এক পরিবেশ তৈরী করা যাতে সকলে বিজ্ঞান নিয়ে হাসি-মজা আর আড্ডা বা তর্কে মেতে প্রশ্নগুলোর গভীরে যেতে পারে আর নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোর সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে পারে। শিক্ষকের দায়িত্ব এক্ষেত্রে প্রশ্ন গুলো দিয়ে তার উত্তর বলে দেওয়া নয়, বরঞ্চ ছাত্রছাত্রীদের আলোচনার সূত্র ধরে সঠিক দিকের দিশা দেওয়া যাতে তারা নিজেরাই যুক্তিযুক্ত সঠিক সমাধানে পৌঁছতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন এই প্রজেক্টের পৃষ্ঠপোষক। বিজ্ঞান পত্রিকার সম্পাদক ডঃ কাজী রাজীবুল ইসলামের অপিরিসীম উৎসাহ এবং অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় ও ‘বিজ্ঞান’-এর অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকের বঙ্গানুবাদে আমরা ক্রমান্বয়ে এই মজাদার প্রশ্নগুলো নিয়ে পাঠকের দরবারে আসবো। আজ আমাদের প্রথম পর্ব।
[১] সঞ্জয় উপর দিকে একটা ডিম ছুঁড়লো।
ডিমটা যখন শূন্যে, তখন বায়ু ছাড়া আর কোন কোন বল ডিমটার ওপর ক্রিয়াশীল ?
নিম্নাভিমুখী অভিকর্ষ বল এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকা একটা ঊর্ধ্বাভিমুখী বল।
ঊর্ধ্বাভিমুখী গতিপথে সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছনো পর্যন্ত সমানে কমতে থাকা ঊর্ধ্বাভিমুখী বল এবং পতনের সময় ক্রমশ বাড়তে থাকা নিম্নাভিমুখী বল।
প্রায় ধ্রুবক (constant) নিম্নাভিমুখী অভিকর্ষ বল এবং সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছানোকালীন কমতে থাকা ঊর্ধ্বাভিমুখী বল। পতনের সময় শুধুমাত্র ধ্রুবক অভিকর্ষ বল।
প্রায় ধ্রুবক নিম্নাভিমুখী অভিকর্ষ বল।
কোনো বলই নেই। ডিমটা নিচে পড়ছে কারণ ভূপৃষ্ঠে পড়ে স্থির হয়ে যাওয়াই তার প্রবণতা।
[২] সঞ্জয় বঁড়শিতে একটা মাছ ধরেছে যা সমবেগে সে ওপরে তুলছে।
ছিপের সুতো দ্বারা মাছটার ওপর প্রযুক্ত ঊর্ধ্বমুখী বলের ক্ষেত্রে কোনটা সত্যি? আপাতত ঘর্ষণ বলকে উপেক্ষা করা যাক।
এই বলটা নিম্নমুখী অভিকর্ষ বলের চেয়ে বেশি।
এই বলটা নিম্নমুখী অভিকর্ষ বলের সমান।
এই বলটা নিম্নমুখী অভিকর্ষ বলের চেয়ে কম।
এই বলটা নিম্নমুখী অভিকর্ষ বল এবং বায়ুজনিত নিম্নমুখী বলের সমষ্টির চেয়ে বেশি।
কোনো ঊর্ধ্বমুখী বলের অস্তিত্বই নেই। মাছটা ঊর্ধ্বাভিমুখে উঠছে, কারণ ছিপের ঝুলে থাকা সুতোটার দৈর্ঘ্য ছোট হচ্ছে।
[৩] ঊষা ‘খ’ বিন্দু থেকে ঝুলন্ত একটা বট গাছের ঝুরি ধরে দুলছে।
‘ ক ‘ বিন্দুটা দিয়ে যাওয়ার সময় ঊষার উপর এই চারটে বল কাজ করতে পারে:
নিম্নমুখী অভিকর্ষ বল (ছবিতে, ১ দিশায়)।
উষা যেদিকে এগোচ্ছে, সেই দিকে একটা বল (ছবিতে, ২ দিশায়)।
ঝুরি বরাবর ক থেকে খ বিন্দুর দিকে একটা বল।
ঝুরি বরাবর খ থেকে ক বিন্দুর দিকে একটা বল।
এর মধ্যে কোনটা (বা কোনগুলো) প্রকৃতই ঊষার উপর কাজ করছে?
শুধু ১।
১ আর ২।
১ আর ৩।
১, ২ আর ৩।
১, ২ আর ৪।
৪] কিংবদন্তি বলবান বাহুবলী সমতল মেঝের উপর রাখা একটা ভারী বস্তুকে ক্রমাগত একই বলে ঠেলতে থাকেন। এর ফলে বস্তুটা স্থির v দ্রুতি সহকারে এগিয়ে যায়।
সুতরাং, বাহুবলীর প্রয়োগ করা বল:
বস্তুটার ওজনের সমান হবে।
বস্তুটার ওজনের থেকে বেশি হবে।
বস্তুটার গতির বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ বল কাজ করছে, তার সমান হবে।
বস্তুটার গতির বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ বল কাজ করছে, তার থেকে বেশি হবে।
বস্তুটার ওজন অথবা বস্তুটার গতির বিরুদ্ধে কার্যকর বলের থেকে বেশি হবে।
[৫] এবার বাহুবলী বস্তুটার ওপর পূর্বের তুলনায় প্রযুক্ত বল-এর মান দ্বিগুণ করে দিলেন।
দ্বিগুণ বলপ্রয়োগের পূর্বে বস্তু যদি v সমবেগে গতিশীল হয়, তাহলে দ্বিগুণ বলপ্রয়োগের পর তার দ্রুতি কত হবে?