30-12-2024 17:17:24 pm
Link: https://bigyan.org.in/resisting-virus-carriers
গরমে দরদর করে ঘামতে ঘামতে গ্রিনহাউসে গিয়ে দেখা গেল: দুটো গাছের প্রায় মরো-মরো অবস্থা। সবেধন নীলমণি একটা গাছে গিয়ে ঠেকেছে। এইটা মরে গেলে এদের সাথে সাথে সযত্নে পোষা একটা অদৃশ্য কলোনীও মরে যাবে। ভাইরাস-এর কলোনী (colony)। যে কলোনীটা একার জোরে বাঁচতে পারে না, যার ঘাড়ে চেপেছে তার দাক্ষিণ্যে বাঁচতে হয়। শেষ গাছটা মরে গেলে মাঠে ছুটতে হবে আবার নতুন করে উপনিবেশ শুরু করতে। গবেষকরা আলোচনায় বসলো। ঠিক হলো, শিগগির আরেকটা খাঁচায় একটা সুস্থ গাছকে ধরে আনতে হবে, তারপর সেই গাছে ভাইরাস চালান করে নতুন কলোনী শুরু করতে হবে।
এরকম এমার্জেন্সি আগেও হয়েছে। আগেও গবেষকরা কলোনীটাকে হাপিস হওয়া থেকে আটকেছে। তাই খুব বেশী ভয় পেল না তারা। শেষ ভাইরাস-আক্রান্ত গাছ থেকে কিছু খুদে পোকা নিয়ে নতুন খাঁচায় একটা সুস্থ টমেটো গাছে সেগুলো ছেড়ে দিল।
University of Georgia-র Entomology বিভাগের এই গবেষকদের মূল গবেষণার বিষয় অবশ্য ওই গাছগুলো নয়। তাদের মাথাব্যথা ওই খুদে পোকাগুলোকে নিয়ে।
ঠিক যেমন মশা মানুষের মধ্যে জীবাণু ছড়ায়, সেরকমভাবে বিভিন্ন ধরণের পোকা গাছেদের মধ্যে জীবাণু, যেমন ভাইরাস, ছড়ায়। ভাইরাসগুলো গাছেদের মধ্যে নানারকমের রোগ সৃষ্টি করে ফলনের চরম ক্ষতি করতে পারে। গবেষণাগারে এইরকমই একধরণের পোকা, whitefly, এবং তার দ্বারা বাহিত ভাইরাস নিয়ে কাজ হয়।
সাদা রঙের এই ছোট্ট পোকাগুলো ছারপোকা এবং গঙ্গাফড়িং-এর সমগোত্রীয়। এদের দেখতে যতই নিরীহ হোক, একাধিক গোত্রের ভাইরাস ছড়িয়ে এরা চাষের বিপুল ক্ষতি করে। আপাতত নানারকমের কীটনাশক ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায়ে এই পোকাদের বাগে আনা যায় না।
সেসব কীটনাশক আবার সবসময় কাজও করেনা। কিছুদিনের মধ্যেই এই পোকাগুলো কীটনাশক সহ্য করার ক্ষমতা তৈরি করে ফেলে। তখন অন্য কীটনাশক বা আরও বিষাক্ত কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। যেমন আমরা দেখেছি মশার ক্ষেত্রে। একসময় ছিল যখন মশারা এক জাতীয় mosquito repellent-এ কুপোকাত হয়ে যেত; তারপর একটা সময় এলো যখন সেগুলো জ্বলা সত্ত্বেও দেখা যেত মশারা মনের আনন্দে ঘুরছে। নিত্যনতুন সামগ্রী বাজারে আসতে লাগলো ‘আগের থেকে আরও শক্তিশালী’ তকমা দিয়ে।
কিন্তু চাষের ক্ষেত্রে ‘আরও শক্তিশালী’ কীটনাশক ব্যবহার করার একটা সীমা আছে। বাড়াবাড়ি করলে মানুষের স্বাস্থ্যের ভয়ঙ্কর ক্ষতি হতে পারে। তাহলে উপায়? পোকাদের দৌরাত্ম্য কমাতে পোকা মারাই কি একমাত্র উপায়? কোনো ভাবে পোকাগুলোর ভাইরাস বহন করার ক্ষমতাটা যদি কমিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কেমন হয়?
University of Georgia-র Enotomology বিভাগের এই গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা এই কাজই করছেন। Whitefly-এর মধ্যে ভাইরাস কীভাবে ঢোকে এবং বাসা বাঁধে, সেইটা ভালো করে বোঝাই তাঁদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। সেটা বুঝতে পারলে তবেই ভাইরাস-এর ঢাল তলোয়ার ভাঙার উপায় বের করা যাবে।
রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করেও যে ভাইরাসবাহকের সমস্যাটার একটা বিহিত করা যায়, এই ধারণাটা শুধুমাত্র গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নেই। যেমন, অক্সিটেক নামে এক কোম্পানি ভাইরাসবাহকের শায়েস্তা করতে এক অদ্ভুত জৈবিক সমাধান বার করেছে। এই কোম্পানির একটা পরীক্ষা ছিল এডিস মশার উপর। এডিস মশা বিভিন্ন রোগের জীবাণু, যেমন ডেঙ্গু, জিকা, পীত জ্বর, ইত্যাদি ছড়ায়। পরীক্ষায় জিনগত পরিবর্তন করে এক বিশেষ ধরণের পুরুষ এডিস মশা বানানো হয়েছিল — জিনগত পরিবর্তনটা এমন যে এই ধরণের পুরুষ মশা সাধারণ স্ত্রী এডিস মশার সাথে মিলিত হলে তাদের থেকে জাত স্ত্রী মশা ডিম পাড়ার আগেই মারা যাবে। 2022 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এক শহরে এই বিশেষ পুরুষ এডিস মশার ফিল্ড ট্রায়াল করা হয়েছিল [১]। এই ট্রায়াল-এর থেকে পাওয়া অন্তত 22000 ডিম গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছিলো, এই ডিম থেকে জন্মানো স্ত্রী মশাগুলো বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর আগেই মারা যায়।
অতএব রাসায়নিক কীটনাশক ছাড়াও জিনগত পরিবর্তন করে পোকাদের বহনক্ষমতা কমানো সম্ভব। ঠিক কী ধরণের পরিবর্তন করতে হবে এবং সেই পরিবর্তন কেন কাজ করবে, সেটাই গবেষণা।
এই ধরণের গবেষণাতে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হয় পোকাদের উপর। যদি মনে হয়, অমুক জিনগত পরিবর্তন করে লাভ হতে পারে, সেইটা আদতে ঠিক কী না, সেটা পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
অতএব এই ধরণের গবেষণায় ভাইরাস কলোনী, সুস্থ পোকার কলোনী, পরীক্ষা চলাকালীন ভাইরাস-আক্রান্ত পোকার কলোনী, এইগুলো আলাদা আলাদা করে টিকিয়ে রাখতে হয়। গবেষকদের দিনের কিছুটা সময় যায় এই কলোনী maintain করতে — অর্থাৎ, পোকা আর ভাইরাস-এর সাপ্লাই যথেষ্ট আছে কিনা, সেটা দেখতে। কাজের এই অংশটার মধ্যে একটা মজার ব্যাপার রয়েছে: গবেষণার মূল উদ্দেশ্য যদিও ভাইরাসের এবং পোকার প্রকোপ কমানো, গবেষণাগারে কীকরে তাদের টিকিয়ে রাখা যায় সেই নিয়ে বেশ কিছুটা সময় যায়।
তাই দিনের কোনো একটা সময়ে যদি গবেষককে খুঁজতে যাও, তাকে হয়তো পাবে ইউনিভার্সিটি-র বিশাল বিশাল গ্রিনহাউস-এর কোনো একটার মধ্যে। সেখানেই পোকাদের খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। Whitefly-রা তুলোগাছ খুব ভালোবাসে, সেইজন্য এদের বেশিরভাগ সময়েই তুলোগাছের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও টমেটো, বিন্স, বাঁধা কপি, স্কোয়াশ বা কুমড়ো জাতীয় গাছে এরা দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকতে পারে। এই গাছগুলোকে গ্রিনহাউস-এর মধ্যে মূলত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের সমতুল্য তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতায় রাখা হয়। এই তাপমাত্রা আর আর্দ্রতা শুধু গাছেদের জন্যই নয় পোকাদের বেড়ে ওঠার জন্যেও আদর্শ।
তবে গাছের মধ্যে পোকাদের বাড়তে দিলেই তো হলোনা, পোকাগুলো এদিক ওদিক উড়ে অন্য গাছে গিয়ে বসবে যে! বিভিন্ন গাছ ঘুরে ঘুরে খাবার খেলে সেই পোকা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা চলেনা। তাহলে পোকাটাকে কোনো একটা বিশেষ গাছের ভাইরাস-এর বাহক হিসেবে ভাবা যাবে না। পরীক্ষার গোড়াতেই গলদ হয়ে যাবে। তাই এমন পোকা নিয়ে কাজ করতে হয় যা জন্ম থেকে একটি নির্দিষ্ট গাছেই বেড়ে উঠেছে। ঠিক এই কারণেই পোকা সমেত এক এক ধরণের গাছকে খাঁচায় রাখা হয়। এই খাঁচাগুলো বিশেষ ধরণের জাল দিয়ে তৈরি যাতে অন্য কোনো পোকা বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে, অথচ খাঁচার ভেতরে থাকা গাছ এবং পোকার যেন আলো-বাতাসের কোনো অভাব না হয়।
তবে গ্রিনহাউসে শুধু পোকা নয়, গাছেদের উপর সযত্নে টিকিয়ে রাখা হয় আরো একটা কলোনীকে। সেটা হলো ভাইরাসের কলোনী। পোকাদের থেকে এই কলোনীটাকে টিকিয়ে রাখা অনেক বেশী ঝক্কির কাজ। কারণ এদের টিকিয়ে রাখতে হয় গাছের মধ্যে, অথচ গাছ সেই ভাইরাস-এর চাপে সহজেই কুপোকাত হয়ে যেতে পারে। গল্পের প্রথমে যে ফ্যাসাদের কথা বলা হয়েছিল, সেটার শুরু এই সমস্যা থেকেই।
ভাইরাস টিকিয়ে রাখতে গাছের প্রয়োজন কেন? কারণ ভাইরাস এক অদ্ভুত ধরণের বস্তু, একে জড় এবং জীবের মাঝামাঝি বললে খুব একটা ভুল বলা হবেনা। এরা host অথবা পালক দেহের মধ্যে জীবের মতন আচরণ করে–অর্থাৎ বংশ বিস্তার করে–কিন্তু পালক দেহের বাইরে এরা জড়বৎ। তার মানে, ভাইরাসকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয় তাহলে একটা পালক জীব দরকার। যদি ভাইরাস গাছের হয়, তাহলে অবশ্যই পালক জীব একটা গাছই হবে।
ভাইরাস কলোনী স্থাপনের প্রথম ধাপ হলো কলোনীটা শুরু করা, অর্থাৎ ভাইরাস ধরে আনা। ঠিক যেমনভাবে মানুষের ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে বিভিন্ন রুগীর দেহ থেকে স্যাম্পল নেওয়া হয়, এখানেও স্যাম্পল জোগাড় করা হয় অসুস্থ গাছেদের থেকে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে রুগী নিজে থেকেই হাসপাতালে চলে আসে, সেখানে গেলেই ভাইরাস স্যাম্পল পাওয়া যায়। অসুস্থ গাছ নিজেদের চিনিয়ে দিয়ে গবেষকদের সুবিধে করে দেয়না। তাদের পেতে গেলে চাষের মাঠ ঘুরে ঘুরে খুঁজে আনতে হয়। এইভাবে ভাইরাস আক্রান্ত গাছ জোগাড় করে আনা হয় গ্রিনহাউসে। তারপর সেই গাছকে আলাদা করে খাঁচায় রেখে তার মধ্যে এমন পোকা ছাড়া হয় যার মধ্যে কোনো ভাইরাস নেই। তার মানে এই পোকাগুলো ভাইরাস আক্রান্ত গাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করলে, তাদের মধ্যেও ভাইরাস চলে আসবে।
কলোনী স্থাপনের পরের কাজ হলো কলোনী-টাকে ছড়ানো, যাতে বার বার ভাইরাস খুঁজতে মাঠে ছুটতে না হয়। অসুস্থ গাছ থেকে শুরু করে কলোনী-টাকে কিছু সুস্থ গাছের উপর টিকিয়ে রাখতে হবে। একটা নতুন গাছে ভাইরাস ঢোকাতে হলে সেখানে রোগাক্রান্ত গাছ থেকে পোকা ছেড়ে দেওয়া হয়। কয়েকটা গাছ মিলে ভাইরাস কলোনী থাকলে তবেই গবেষণার জন্য যখন চাইবে তখন ভাইরাস পাওয়া যাবে। কিন্তু সমস্যা ওটাই, গাছ মরলে ভাইরাসও হাপিস হয়ে যাবে। সেইজন্য সজাগ থাকতে হয়, গ্রিনহাউসের একটা ভাইরাস আক্রান্ত গাছ মরি মরি করতে শুরু করলেই নতুন গাছে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে হবে পোকার মাধ্যমে।
গ্রিনহাউস-এ কাজ করার সময় গবেষককে খুব সতর্ক থাকতে হয়। ধরো, একটা গাছ থেকে পোকা বার করার সময় এলো। গবেষক যদি একটুও অসতর্ক হয়, তাহলেই পোকা এবং গাছ উভয়েরই নানা রকম জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, সেই ভাইরাস ছাড়া অন্য কোনো জীবাণু সংক্রমণ ঘটলে সেই পোকা বা গাছ কোনটা নিয়েই কাজ করা যাবেনা, সর্বস্ব ফেলে দিতে হবে।
গবেষণার কিছুটা গ্রিনহাউসে হলেও বাকিটা হয় একটা ল্যাবরেটরিতে। সেখানে পোকা ধরে এনে তাদের উপর কাঁটাছেড়া চলে। কীভাবে ভাইরাস পোকার ভিতর বাসা বাঁধছে, সেই নিয়ে হয় জোরকদমে গবেষণা।
খাদ্যের মাধ্যমে ভাইরাস যখন পোকার দেহে প্রবেশ করে, তার উদ্দেশ্য হলো পোকার লালাগ্রন্থিতে (salivary gland) বাসা বাঁধা। একবার যদি ভাইরাস পোকার লালাগ্রন্থিতে পৌঁছে যায়, সেই ভাইরাস-বহনকারী পোকা যে গাছ থেকেই খাদ্য গ্রহণ করবে, লালার মাধ্যমে সেই গাছে ভাইরাস চালান করে দেবে। এইভাবে ভাইরাস নিজের বংশবিস্তার সুনিশ্চিত করে।
পোকার লালাগ্রন্থি অব্দি ভাইরাসের যাত্রাপথটা খানিকটা এইরকম — মুখ দিয়ে ঢুকে ভাইরাস খাদ্যনালীর মাধ্যমে পোকার অন্ত্রে যায়। তারপর অন্ত্রের দেওয়ালে থাকা বিভিন্ন কোষ-এর মধ্যে দিয়ে গিয়ে পোকার দেহের haemolymph-এর মাধ্যমে অন্তিম গন্তব্য পোকার লালাগ্রন্থিতে পৌঁছয়। এখানে haemolymph-কে পোকার দেহের রক্ত হিসাবে ভাবতে পারো। তবে এই যাত্রাপথ শুনতে সোজা-সাপ্টা হলেও আসলে বেশ জটিল। জটিলতা ঠিক কোথায় সেটা বুঝতে হলে ভাইরাস-এর যাত্রাপথটা একটু আতস কাচের নিচে ফেলে দেখা যাক।
ভাইরাসকে মুখ থেকে অন্ত্র পর্যন্ত প্রায় কোনোই বাধা পেতে হয়না। কারণ এই অংশটা অনেকটা আমাদের খাদ্যনালীর মত একটা লম্বা নালী অর্থাৎ ফাঁপা। কিন্তু পোকার দেহে বাসা বাঁধতে হলে ভাইরাসকে অন্ত্র থেকে পোকার কোষ ও কলার মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। এই কাজটাই সব থেকে জটিল। কারণ ভাইরাস-এর কোষের বিভিন্ন প্রোটিন পোকার অন্ত্রের দেওয়ালে থাকা কোষের বিভিন্ন প্রোটিন-এর সাথে সফল ভাবে যোগসাজশ করতে পারলে তবেই কোষ-কলার মধ্যে প্রবেশ করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে যে ভাইরাস-এর পৃষ্ঠতলে থাকা কেবল মাত্র একটাই প্রোটিন–যাকে coat protein বা CP বলা হয়–পোকার অন্ত্রের দেওয়ালে থাকা কোষের বিভিন্ন প্রোটিনের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এই কাজটা সম্পন্ন করে।
এইখানেই পোকার ভাইরাস-বহনক্ষমতাতে দাঁড়ি টানার সুযোগ। গবেষকরা যদি বার করতে পারেন ভাইরাস-এর CP প্রোটিন পোকার দেহে কোন কোন প্রোটিনের সাথে যোগসাজশ করছে, সেই প্রোটিনগুলোতে কারসাজি করে পোকার বহনক্ষমতাতে দাঁড়ি টানা যায়।
ল্যাবের মধ্যে বিজ্ঞানীরা প্রথমে কৃত্রিম উপায়ে CP প্রোটিন তৈরি করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন পোকার কোন প্রোটিনগুলো ভাইরাসকে দেহের মধ্যে ঢুকতে সাহায্য করে। এইধরণের কোনো প্রোটিন-এর হদিস পেলে শুরু হয় পরবর্তী ধাপ – বুঝতে চেষ্টা করা সেই প্রোটিন কীভাবে ভাইরাসকে সাহায্য করে অথবা করেনা। দেখা হয়, প্রোটিন-টা না থাকলে কি ভাইরাস আর পোকার মধ্যে বাসা বাঁধতে পারতো না?
এই কাজের জন্য প্রথমেই সুস্থ পোকার দেহে জিনগত পরিবর্তন করে সেই প্রোটিন-এর উৎপাদন বন্ধ করা হয়। তারপর, এই অবস্থায় পোকাগুলোকে ভাইরাস আক্রান্ত গাছে ছেড়ে দেওয়া হয়, যাতে সেই গাছ থেকে পোকারা খাবার খায় এবং ভাইরাস আহরণ করে। এরপর জিন পরিবর্তিত এবং ভাইরাস খাওয়া পোকাগুলোকে সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় যে তাদের দেহে কতটা ভাইরাস আছে। সেই ভাইরাস-এর পরিমান তুলনা করা হয় জিনগত ভাবে অপরিবর্তিত পোকার মধ্যে কতটা ভাইরাস থাকতে পারে তার সাথে। ধরা যাক, জিন পরিবর্তিত পোকার দেহে কম ভাইরাস পাওয়া গেল। তাহলে এর থেকে বোঝা যাবে, এই বিশেষ প্রোটিনটা ভাইরাসকে সাহায্য করছে বাসা বাঁধতে।
ব্যাস, কেল্লা ফতে! সেটাই গবেষকের ইউরেকা মুহূর্ত। তবে বলাই বাহুল্য, সব কিছু যদি প্ল্যানমাফিক যায়, তবেই এরকম সুরসুর করে প্রোটিন খুঁজে পাওয়া যায়। একটা জিন-কে চুপ করিয়ে দিয়ে একটা প্রোটিন উৎপাদন বন্ধ করা হলো আর অমনি পোকার ভাইরাস-লোড কমে গেল, এই স্পষ্ট সিগনাল পাওয়ার পথে অনেক বাধা থাকে।
পোকার মধ্যে প্রোটিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য নানা রকম ট্রিটমেন্ট করতে হয়। একটা পোকায় ট্রিটমেন্ট করে পরীক্ষা করা চলেনা, তাই অনেক পোকা নিয়ে ট্রিটমেন্ট করা হয়। যেহেতু প্রতিটা পোকা এক একটা স্বতন্ত্র প্রাণী, প্রত্যেকে একই রকমভাবে ট্রিটমেন্টে সাড়া দেবেনা, অনেকের অকাল মৃত্যুও হতে পারে। এইসব বাধা পেরিয়ে যে পোকারা বেঁচে থাকে তাদের নিয়ে আরো নানান রকম পরীক্ষা করা হয় ভাইরাস মাপার জন্য। এখানেও দেখা যায় আরেক গ্যাঁড়াকল! সব পোকা তো আর একই পরিমাণ খাবার খাবেনা, স্রেফ সেই কারণেই পোকার মধ্যে ভাইরাসের পরিমাণে তারতম্য থাকতে পারে। সেই তারতম্যটার মধ্যে থেকে প্রোটিন কমিয়ে দেওয়ার কারণে পরিবর্তনটা খুঁজে বার করতে হবে। এতসব ধাপ পেরিয়ে অবশেষে ফলাফল যা পাওয়া যায়, তা অনেক সময়ই আশানুরূপ হয়না।
তবে, ইউরেকা মুহূর্ত-টাতে পৌঁছতে গেলে সেসব বাধাকে তোয়াক্কা করলে চলবে কেন? যদি আরো শক্তিশালী রাসায়নিক কীটনাশকের আশ্রয় না নিয়ে চাষের শত্রু এই পোকাগুলোকে আটকাতে হয়, সরাসরি জিনগত স্তরে ঢুকে এদের ‘বিষদাঁত’ ভাঙ্গা ছাড়া উপায় কী!
ছবি: Images by Banani Mondal taken in research greenhouses on the University of Georgia Griffin Campus, Griffin, Georgia, USA.
তথ্যসূত্র:
[১] https://www.nature.com/articles/d41586-022-01070-x
[২]The Incredible Journey of Begomoviruses in Their Whitefly Vector. (https://doi.org/10.3390/v9100273)
লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।
Scan the above code to read the post online.
Link: https://bigyan.org.in/resisting-virus-carriers