22-02-2025 08:21:49 am
Link: https://bigyan.org.in/quantum-computing-4
এই লেখাটি পড়ার জন্য পাঠকদের যেসব জিনিস জানা থাকলে সুবিধা হবে সেগুলি হল: বীজগণিত ও বাইনারী বা দ্বিমিক সংখ্যা ব্যবস্থা। নিউটনের সূত্র ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স জানা থাকলে সুবিধে, কিন্তু জানা না থাকলেও সমস্যা নেই।
প্রথম পর্বে আলোচিত হয়েছিল কম্পিউটিং-এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করেছি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর গাণিতিক ভিত্তি ও প্রথম কোয়ান্টাম অ্যালগরিদম ও তৃতীয় পর্বে ক্রিপটোগ্রাফি ও কোয়ান্টাম কম্প্যুটিং নিয়ে আলোচনা করেছি।
চতুর্থ পর্ব
এতক্ষণে নিশ্চয় কোয়ান্টাম কম্পিউটার দেখতে কেমন সে ব্যাপারে সবার আগ্রহ চরমে পৌঁছে গেছে। নিচে আমি আইবিএমের ষোল কিউবিটের অতিপরিবাহী কোয়ান্টাম কম্পিউটার চিপের ছবি দিলাম।
এই চিপটি থাকে একটি ফ্রিজের ভিতর যেটির ভেতরটি দেখতে নিচের মত।
খোলস পরানো হলে এটি দেখতে নিচের মত লাগে।
এখন আপনি এটিতে প্রোগ্রাম লিখে চালাবেন কি করে? নিচে আইবিএমের প্রোগ্রাম লেখার ওয়েবসাইটটির ছবিও দিয়ে দিলাম।
এরপর নিচে দিলাম রিগেটির ঊনিশ কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের চিপের ছবি।
আমরা মেরীল্যান্ডের IONQ কোম্পানীতে যে আধানফাঁদ বা আয়নট্র্যাপ ভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানাচ্ছি সেটির চিপ দেখতে নিচের মত।
এই চিপটি বসানো হয় একটি আলোকটেবিলের উপরে। পুরো কম্পিউটারটি দেখতে নিচের মত হবে (এখনো বানানো শেষ হয়নি!)।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারে বড় কম্পিউটার বানাতে অর্থাৎ আরো বেশি কিউবিট একসাথে বানাতে আমাদের এখনও এত সমস্যা হচ্ছে কেন? মূল সমস্যার জায়গা হল বাস্তব জগতে কোন পদার্থকে কোয়ান্টাম অবস্থায় দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের কম সময়ে। এই সময়কে ডিকোহেরেন্স সময় বলে, যা বিভিন্ন কিউবিটের হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। যেমন, পরীক্ষাগারে একটি আয়ন কিউবিটের ডিকোরেন্স সময় সর্বাধিক দশ মিনিট দেখানো গেছে। বেশীরভাগ যন্ত্রে, যেখানে অনেক আয়ন কিউবিট একসাথে গণনার কাজ করছে, সেখানে এই সময়টা আরও কম, এক সেকেন্ডের থেকেও কম। আর যত কিউবিট বাড়তে থাকবে তত এই সময়টাও কমতে থাকে। এর অর্থ হল এই ডিকোহেরেন্স সময়ের মধ্যে আমাদের গণনার কাজ সেরে ফেলতে হবে। এর থেকে বেশি সময়ে পরিবেশের নানা রকম প্রভাবে কিউবিটের কোয়ান্টাম ধর্মই ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। তখন সে আর কিউবিটই থাকে না! বেশী জটিল গণনা করতে বেশী কিউবিট ও বেশী সময় লাগে – তাই বাস্তবে এখনো পর্যন্ত কিছু সহজ গণনা ছাড়া অন্য কিছু করা সম্ভব হয়নি। হাজার হাজার কিউবিট নিয়ে জটিল গণনা কি করে বাস্তবে সম্ভব হবে তা নিয়ে আমাদের এখন অনেক গবেষণা করতে হবে। হয়তো পাঠকদের মধ্যেই কেউ ভবিষ্যতে নতুন কোন বুদ্ধি বের করবে, কে জানে! এই জন্য দরকার পদার্থবিদ্যা, বিশেষত কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও প্রযুক্তিবিদ্যার বিভিন্ন বিষয়ে নতুন চিন্তাভাবনা।
ইতিমধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানাচ্ছে (গুগল, মাইক্রোসফট, আইবিএম, রিগেট্টি, আয়নকিউ, ইত্যাদি)।
শুরু থেকেই আমি মূলত দেখানোর চেষ্টা করে এসেছি কিভাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্ম এবং কেন এটি ধ্রুপদী কম্পিউটার বিজ্ঞানের চেয়ে আলাদা।
প্রিয় পাঠক, আমি আপনাদের ঠিক এখানেই ছেড়ে দিতে চাই না। ঊনিশশো চুরানব্বই সালে শরের অ্যালগরিদম আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে বিজ্ঞানের এই শাখাটি অনেক এগিয়ে গেছে। দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধান করার জন্য আমরা এর মধ্যে আরো অনেক অ্যালগরিদম পেয়েছি। দুটি অ্যালগরিদমের কথা আমি বিশেষ করে বলব – একটি হল কোয়ান্টাম ভ্যারিয়েশনাল আইগেন সলভার অ্যালগরিদম যেটি ম্যাট্রিক্সের স্বকীয়মান বা আইগেনভ্যালু বের করার কাজে ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনেক শাখাতেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের শর্ত হিসেবে ম্যাট্রিক্সের স্বকীয়মান বের করতে হয়। এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ হল কোয়ান্টাম রসায়নবিদ্যা ও কোয়ান্টাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আরেকটি হল কোয়ান্টাম অ্যাপ্রোক্সিমেট অপটিমাইজেশন অ্যালগরিদম। এটি মূলত: বিন্যাস ও সমাবেশ সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা সমাধানের কাজে ব্যবহার করা হয়। দুটি অ্যালগরিদমের মূল দর্শন হল যেহেতু বড় কোয়ান্টাম কম্পিউটার পেতে এখনও অনেক দেরি আছে, ছোট কোয়ান্টাম কম্পিউটার আর ধ্রুপদী কম্পিউটারের সংকর ব্যবহার করে কি করে বড় সমস্যার সমাধান করা যায় সেটি বের করা।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সীর মতে শরের অ্যালগরিদম আমাদের অনলাইন জীবনের গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকিতে পরিণত হওয়ার মত বড় কোয়ান্টাম কম্পিউটার আসতে আরো তিরিশ বছর লাগবে।
বে অন্যান্য ক্ষেত্র বিশেষ করে রসায়ন, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এসব ক্ষেত্রে আশা করি আরো আগেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তার বাস্তব প্রভাব ফেলতে শুরু করবে।
সেসবের বিস্তারিত গল্প না হয় আরেকদিন বলা যাবে!
(সমাপ্ত)
উৎসর্গ: মুক্তচিন্তক শহীদ অভিজিৎ রায়
কৃতজ্ঞতা: মাহবুব আজাদ আজাদকে পরিভাষা ও বানানের ব্যাপারে সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ।
সতর্কবাণী: আমি প্রথমবারের মত কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে গদ্য বাংলায় লিখছি। আমি মনে করি পরিভাষার ব্যাপারটি একটি ব্যক্তিগত অনুষঙ্গ। কাজেই এটি কতটুকু করলে ভাল সেটি নির্ভর করে কে লেখাটি পড়ছে তার উপর। ঠিক কোথায় পরিভাষা আর মূল শব্দের মধ্যে সীমারেখা টানতে হবে সেটি শিখতে আমার মনে হয় আরো অনেক সময় লাগবে!
লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।
Scan the above code to read the post online.
Link: https://bigyan.org.in/quantum-computing-4