08-05-2025 23:50:48 pm

print

 
বিজ্ঞান - Bigyan-logo

বিজ্ঞান - Bigyan

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের এক বৈদ্যুতিন মাধ্যম
An online Bengali Popular Science magazine

https://bigyan.org.in

 

পেঁয়াজি


%e0%a6%85%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a3%e0%a6%ac-%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0
অর্ণব রুদ্র

(MIT)

 
06 Dec 2014
 

Link: https://bigyan.org.in/peyaji

%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%81%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%bf

পেঁয়াজ বড়ই পাজি। রান্না করতে পেঁয়াজ কেটেছ কি মরেছ। চোখ বেয়ে টপ টপ করে জল নেমে আসবে। কাঁদিয়েই ছাড়বে তোমায়। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছ কেন এমনটা হয় ?

নিশ্চয় কিছু একটা আছে পেঁয়াজের মধ্যে। তুমি যখন ছুরি দিয়ে পেঁয়াজ কাটছ, তখন যদি একটা খুব শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের (microscope) মধ্যে দিয়ে দেখতে, তাহলে বুঝতে পারতে পেঁয়াজের কোষগুলো ছুরির কোপে কেটে যাচ্ছে । আর এই কোষগুলোর মধ্যেই থাকে একটা উত্সেচক (enzyme), যার নাম অ্যালিনেজ (alliinase) এবং সাল্ফক্সাইড (sulfoxide) গোত্রের রাসায়নিক পদার্থ আইসোঅ্যালিন (isoalliin)। এরা রাসায়নিক বিক্রিয়া করে তৈরি করে এক ধরনের সালফেনিক অ্যাসিড যার রাসায়নিক নাম ১-প্রপিনাইল সালফেনিক অ্যাসিড (1-propenyl sulfenic acid)। এই পর্যন্ত সব ভালো। কিন্তু এরপর গল্পের মধ্যে প্রবেশ হলো এক ভিলেনের।

সেই ভিলেন আর এক উত্সেচক, ল্যাক্রাইমেটরি ফ্যাক্টর সিন্থেজ (lachrymatory factor synthase)। ইনিও কোষের মধ্যেই থাকেন ঘাপটি মেরে। ইনি সালফেনিক অ্যাসিড থেকে নষ্টের গোড়া প্রপান্থায়াল এস-অক্সাইড (propanthial S-oxide) তৈরি করেন। আর এই গ্যাসীয় পদার্থটি খুবই মারাত্মক। আমাদের চোখের মধ্যে যে স্নায়ু আছে তাকে বিরক্ত করে এই গ্যাস। চোখ জ্বালা করতে শুরু করে। তখন আমাদের বেচারি চোখ এই গ্যাসীয় অণুগুলোকে বিদায় করতে জল বার করে, অনেকটা কলের জল দিয়ে বাসন মাজার মত পরিষ্কার করে দেয় আমাদের চোখ। আর তুমি ফিচ ফিচ করে কাঁদতে থাকো আর চোখ-নাক দিয়ে জল বেরোতে থাকে।

তোমাদের মধ্যে যারা কলেজে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করছ, তারা হয়ত রাসায়নিক নামকরণ থেকে অণুর চেহারাও আন্দাজ করতে পারবে। তবে না পারলেও ক্ষতি নেই। নিচে রাসায়নিক গঠন সহ বিক্রিয়াগুলোর একটা রূপরেখা দেওয়া হলো। লাল রঙের রাসায়নিক পদার্থটি হলো সেই ভিলেন ল্যাক্রাইমেটরি ফ্যাক্টর সিন্থেজের রাসায়নিক পরমাস্ত্র। এই ভিলেন না থাকলে অবশ্য সালফেনিক অ্যাসিড থেকে থায়োসাল্ফিনেট (thiosulfinate) গোত্রের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় দুটো অণু স্বতস্ফূর্ত ভাবে জুড়ে গিয়ে, যা কিনা আর যাই করুক চোখ জ্বালা করায় না।  

  

প্রসঙ্গত বলে রাখি যে রসুনেও এরকম রাসায়নিক পদার্থ থাকে। সেখানেও এমন বিক্রিয়া হয় ঠিকই, কিন্তু সেখানে রাসায়নিক পদার্থটি একটু আলাদা, তাই ওই ভিলেন কিসসু করতে পারে না। সেখানে আইসোঅ্যালিনের বদলে থাকে অ্যালিন আর তাই অ্যালিনেজ তৈরি করে ২-প্রপিনাইল সালফেনিক অ্যাসিড, যা খুব দ্রুত একইরকম আরেকটি অণুর সঙ্গে জুড়ে গিয়ে অ্যালিসিন (allicin) তৈরি করে। নিচে তার রাসায়নিক গঠন দেওয়া হলো। খেয়াল করে দেখো, এটাও কিন্তু থায়োসাল্ফিনেট (thiosulfinate) গোত্রের।

এবার ভেবে দেখো যে এই ভিলেনকে যদি তুমি জব্দ করতে পারো কোনোভাবে, তাহলে কিন্তু পেঁয়াজ কাটতে আর কষ্ট হবে না অথচ রান্নাও দারুন হবে। নিউজিল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানী সেরকমই একটা কাণ্ড করেছিলেন এমন পেঁয়াজ বানিয়ে যা কাটলে চোখ দিয়ে জল গড়ায় না। তবে সেই পেঁয়াজ এখনো বাজারে পাওয়া যায় না।

 

বিশদে জানতে :

https://blogs.scientificamerican.com/scicurious-brain/2013/09/17/ignobels-2013-the-tearless-onion/

ছবিটি কপিরাইট ফ্রী

লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।

Scan the above code to read the post online.

Link: https://bigyan.org.in/peyaji

print

 

© and ® by বিজ্ঞান - Bigyan, 2013-25