22-12-2024 02:25:05 am
Link: https://bigyan.org.in/jibanuder-jato-katha-5
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বের পর …
ব্যাকটেরিয়ার কোষ-প্রাচীর ও অ্যান্টিবায়োটিকস
আগের পর্বে আমরা ব্যাকটেরিয়া কোষের বাহ্যিক আবরণ, বিশেষ করে অন্তর্বর্তী কোষ-পর্দা, বাহ্যিক কোষ-পর্দা ও পেরিপ্লাসমের গঠনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। কোষ-পর্দা ও পেরিম্প্লাসমের মাধ্যমেই ব্যাকটেরিয়া পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে আয়নের সাম্য রক্ষা, পাশাপাশি দুটি কোষের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদান, ও বিশেষ বিশেষ প্রোটিন বা অন্যান্য অণু-পরমাণুর প্রবেশ ও নিকাশী ব্যবস্থা বজায় রাখে। কোষ-পর্দা ও পেরিপ্লাসম ছাড়া ব্যাকটেরিয়া কোষের প্রতিরক্ষা বলয়ের অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হলো কোষ-প্রাচীর। কোষের নির্দিষ্ট আকৃতি রক্ষা ও দৃঢ়তা প্রদান, অভিস্রবণজনিত চাপ (Turgor pressure) প্রশমন এবং ব্যাকটেরিয়া কোষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কোষ-প্রাচীরের ভূমিকা অপরিহার্য।
এই পর্বে আমরা ব্যাকটেরিয়া কোষের কোষ-প্রাচীরের গঠন সম্পর্কে ভালো করে জানব। একটা কথা মনে আসতেই পারে যে ব্যাকটেরিয়া কোষের কোষ প্রাচীর সম্পর্কে আমাদের জানার বিশেষ প্রয়োজন আছে কি? কোষ- প্রাচীর ছাড়াও তো উন্নত ইউক্যারিওটরা দিব্যি বেঁচে-বর্তে আছে! হ্যাঁ, ঠিক এই কারণেই আমাদের কোষ প্রাচীর সম্পর্কে আরো ভালো করে জানা দরকার! একটু গুছিয়ে বলি তাহলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।
আমাদের জ্বর, উদরাময় বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে যখন ডাক্তারখানায় যাই তখন প্রায়শই ডাক্তারবাবুরা আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। জেনে রাখা ভালো, প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক গুলির বেশীর ভাগ-ই ব্যাকটেরিয়া কোষের কোষ-প্রাচীরকে নষ্ট করে দেয়! কোষ-প্রাচীর নষ্ট হয়ে গেলে এক-কোষী ব্যাকটেরিয়ার পক্ষে অভিস্রবণজনিত চাপ সহ্য করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পরে এবং ব্যাকটেরিয়া কোষটি-ও নষ্ট হয়ে যায়, বিজ্ঞানের ভাষায় একে সেল-লাইসিস (cell Lysis) বলে। আমাদের কোষে যেহেতু কোন কোষ-প্রাচীর থাকে না তাই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে আমাদের কোষের কোনো ক্ষতি হয় না।
ব্যাকটেরিয়া ঘটিত নানা রোগের নিরাময়ের জন্যে ও আরো উন্নত অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা নিরলস গবেষণা করে চলেছেন ব্যাকটেরিয়ার কোষ-প্রাচীরের কার্যগত ও গঠনগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরো বিশদে জানার জন্যে।
কি দিয়ে তৈরী হয় এই কোষ-প্রাচীর? কি ভাবে ব্যাকটেরিয়া তৈরী করে কোষের বাইরের দৃঢ় আবরণ? সেই বিষয় গুলো তাহলে একটু ভালো করে জেনে নিই এখন।
ব্যাকটেরিয়ার কোষ-প্রাচীরের প্রধান উপাদান হল পেপ্টাইডোগ্লাইকান (Peptidoglycan) বা মিউরিন (murein) নামক পলিমার। শর্করা ও অ্যামিনো অ্যাসিড এর সমন্বয়ে তৈরী পেপ্টাইডোগ্লাইকান পলিমার অন্তর্বর্তী কোষ-পর্দার (inner membrane) বাইরের দিকে জালের ন্যায় এক ত্রিমাত্রিক সুদৃঢ় ও সুসংঘটিত বিন্যাস গঠন করে। আমাদের বাড়ির চারপাশে যেমন সারি-সারি ইঁট পরপর সাজিয়ে প্রতিরক্ষা বলয় বা প্রাচীর (wall) থাকে, ব্যাকটেরিয়া কোষের ক্ষেত্রেও এই পেপ্টাইডোগ্লাইকান পলিমার অনুরূপ প্রতিরক্ষা বলয় গঠন করে। আর সেই কারণেই এই আবরণের নাম কোষ-প্রাচীর (cell-wall)।
পেপ্টাইডোগ্লাইকানে প্রধানত দুই রকমের শর্করা থাকে: N-acetylglucosamine (NAG) এবং N-acetylmuramic disaccharide (NAM)।
এই N-acetylmuramic disaccharide বা NAM হলো বেশ মজার শর্করা অণু কারণ এর সঙ্গে আবার ৩-৫ টি অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে তৈরী একটি পেপটাইড শৃঙ্খল যোগ করা থাকে। প্রকৃতিতে শর্করা অণুর সঙ্গে পেপটাইড যুক্ত হয়ে থাকার উদাহরণ কিন্তু খুবই কম। আরও একটা মজার ব্যাপার হলো NAM-এর এই পেপটাইড শৃঙ্খলে যে অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি থাকে সেখানে প্রায়শই D-অ্যামিনো অ্যাসিড-এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যেমন D-অ্যালানিন, D-গ্লুটামিক অ্যাসিড এবং D-গ্লুটামাইন (L আর D stereoisomer সম্পর্কে তোমরা রসায়নের ক্লাসে নিশ্চই পড়েছ, এখানে সে বিষয়ে আর বিস্তারিত আলোচনা করলাম না!)। জেনে রাখা ভালো ইউক্যারিওটিক ও প্রোক্যারিওটিক কোষের লক্ষ-লক্ষ প্রোটিন বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে তৈরী হলেও সেখানে কিন্তু কখনই D-অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে না। এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত সমস্ত প্রোটিনে কেবলমাত্র L -অ্যামিনো অ্যাসিডের উপস্থিতিই পাওয়া গিয়েছে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে পেপ্টাইডোগ্লাইকানের গঠনগত এককগুলি কিন্তু প্রকৃতিতে অনন্য!
যদিও কোষ-প্রাচীর তৈরীর এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় অন্তর্বর্তী কোষ-পর্দা এবং বাহ্যিক কোষ-পর্দার মধ্যবর্তী স্থান পেরিপ্লাসমে, প্রোটিন/উৎসেচক বা পেপ্টাইডোগ্লাইকানের গঠনগত একক গুলি কিন্তু পেরিপ্লাসমে তৈরী হয় না। সে সবই তৈরী হয় কোষ রস বা cytoplasm-এ। অন্তর্বর্তী কোষ-পর্দায় যে অবিচ্ছেদ্য মেমব্রেন প্রোটিন (Integral membrane proteins) থাকে তাদের মাধ্যমেই কোষ-প্রাচীর তৈরীর উপাদানগুলি পেরিপ্লাসমে পরিবাহিত হয়ে থাকে।
যে সমস্ত উৎসেচকগুলি কোষরসে পেপ্টাইডোগ্লাইকানের গঠনগত একক তৈরীতে সাহায্য করে, যে সব মেমব্রেন প্রোটিন তাদের পেরিপ্লাসমে পরিবহন করতে সাহায্য করে এবং যে সব উৎসেচকের সহায়তায় পেরিপ্লাসমে কোষ-প্রাচীর তৈরী হয়, সেই সব প্রোটিন/ উৎসেচকগুলিকে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হয়ে থাকে।
কিছু প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের উদাহরণ যে গুলি ব্যাকটেরিয়ার কোষ-প্রাচীর নষ্ট করে
অ্যান্টিবায়োটিকের নাম | কি ভাবে কাজ করে |
Amoxicillin | কোষ-প্রাচীর তৈরীতে বাধা দেয় |
Ertapenem | কোষ-প্রাচীর তৈরীতে বাধা দেয় |
Loracarbef | কোষ-প্রাচীর তৈরীতে বাধা দেয় |
Ampicillin | কোষ-প্রাচীর তৈরীতে বাধা দেয় |
Bacitracin | পেপ্টাইডোগ্লাইকানের গঠনগত একক গুলির পেরিপ্লাসমে পরিবহন বন্ধ করে |
Flucloxacillin | কোষ-প্রাচীর তৈরীতে বাধা দেয় |
Carbenicillin | কোষ-প্রাচীর তৈরীতে বাধা দেয় |
Vancomycin | কোষ-প্রাচীর তৈরীতে বাধা দেয় |
Cefalexin | কোষ-প্রাচীর তৈরীতে বাধা দেয় |
ছবি সৌজন্যে – https://faculty.ccbcmd.edu/
লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।
Scan the above code to read the post online.
Link: https://bigyan.org.in/jibanuder-jato-katha-5