09-05-2025 00:46:25 am

print

 
বিজ্ঞান - Bigyan-logo

বিজ্ঞান - Bigyan

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের এক বৈদ্যুতিন মাধ্যম
An online Bengali Popular Science magazine

https://bigyan.org.in

 

জীবাণুদের যত কথা - ১


%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%a5-%e0%a6%98%e0%a7%8b%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b2
দেবনাথ ঘোষাল

(University of Melbourne)

 
21 Apr 2014
 

Link: https://bigyan.org.in/jibanuder-jato-katha

%e0%a6%9c%e0%a7%80%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a3%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%af%e0%a6%a4-%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a7%a7

"ওরা ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র! খালি চোখে ওদের দেখা মেলা ভার। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে রাখলে তবেই সেই ক্ষুদ্র প্রাণ এর চঞ্চলতা বোঝা যায়। আপাত দৃষ্টিতে তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর মনে হলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ওদের উপস্থিতি আমরা টের পাই প্রতি মুহূর্তে! " শুরু হল ধারাবাহিক জীবানুদের যত কথা। লিখছে দেবনাথ ঘোষাল।

পর্ব ১: সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ওরা ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র! খালি চোখে ওদের দেখা মেলা ভার। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে রাখলে তবেই  সেই ক্ষুদ্র প্রাণ এর চঞ্চলতা বোঝা যায়। আপাত দৃষ্টিতে তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর মনে হলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ওদের উপস্থিতি আমরা টের পাই প্রতি মুহূর্তে! দুধ থেকে দই তৈরী, ফল থেকে ওয়াইন, ময়দা থেকে কেক-বিস্কুট সবেতেই ওদের ব্যবহার। আবার উল্টো দিকে পৃথিবীর সব থেকে  ভয়ংকর রোগ-ব্যাধির কারণও ওরাই। ঠিক ভেবেছ আমি আমি আজ জীবাণুদের (microbes) কথা বলব।


জীবাণুদের মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটজোয়া  আর ছত্রাক। ওদের সকলেরই আকার ভীষণ ছোট্ট: এক মিটার-এর দশলক্ষ ভাগ এর এক ভাগ বা তার থেকেও কম। কিছু ব্যতিক্রমী প্রোটজোয়া আকারে সামান্য বড় হলেও কখনই তা ১ মিলিমিটার এর বেশী বড় হয় না। আকারে অতি ক্ষুদ্র হলেও জীবাণুরা সংখ্যায় কিন্তু মানুষ বা পৃথিবীর অন্যান্য সব প্রাণীর তুলনায় অকল্পনীয় ভাবে বেশী। একটু খুলে বলি তাহলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। পৃথিবীতে বর্তমানে মানুষের সংখ্যা আনুমানিক ৭,০০০,০০০,০০০ (সাতশ কোটি, বা ৭ x ১০৯)। সম্প্রতি জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর একদল বিজ্ঞানী পৃথিবীর মোট ব্যাকটেরিয়া-র  সংখ্যা গণনা করতে বসে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। সেই সংখ্যা প্রায় ৫,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ (পাঁচশ কোটি কোটি কোটি কোটি, বা ৫ x ১০৩০) । একই ভাবে ভাইরাস, প্রোটজোয়া  আর ছত্রাক এর সংখ্যাও যে আমাদের তুলনায় অনেক অনেক বেশী সে কথা বলাই বাহুল্য।

 

জীবাণুদের নিয়ে নানা গবেষণার ফলে একথা আজ সর্বজনবিদিত যে পৃথিবীর ইতিহাসে জীবাণুদের আবির্ভাব-ই সবার প্রথমে হয়েছে। সে আজ থেকে প্রায় ৩,৬০০,০০০,০০০ বছর আগে। মানব সভ্যতার ইতিহাস সে তুলনায় অনেক নবীন। আধুনিক  মানুষ এর ইতিহাস আনুমানিক  ২০০, ০০০ বছর-এর। এই দীর্ঘ সময় কালে জীবাণুরা সবসময় মানুষের আশেপাশে  থাকলেও  ১৬৭৬ সালের ৯-ই অক্টোবর এর আগে ওদের কথা কেউ জানতই না। এই ছোট্ট ছোট্ট প্রাণ গুলির সন্ধান প্রথম দেন  ডাচ বিজ্ঞানী এন্টনি ফিলিপস ভ্যান লীউবেন্হোক (Antonie van Leeuwenhoek) । তাঁকে তাই জীবাণু বিজ্ঞান এর জনক বলা হয়ে থাকে। এই সময় অবশ্য এন্টনি ফিলিপস ভ্যান লীউবেন্হোক জানতেন না যে এই জীবাণুদের জন্যেই  দুধ থেকে দই তৈরী হয়, খাদ্যে পচন ধরে, বা নগণ্য এই কণা গুলি প্লেগ, কলেরা বা যক্ষ্মা এর মত মারাত্মক রোগের কারণ। পরবর্তীকালে, প্রায় দুশো বছর পরে ফরাসী বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) ও জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কক্ (Robert Koch) প্রথমবার জীবাণুদের মানুষের নানা রোগ এর কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেন। রবার্ট কক্ প্রমাণ করেন যে কলেরা ও টিউবারকিউলোসিস এর জন্যে দায়ী দুটি পৃথক জীবাণু। জীবাণু বিজ্ঞানে তাঁর অসামান্য অবদান এর জন্যে তাঁকে  ১৯০৫ সালে চিকিত্সা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। রবার্ট কক্ এর সমসাময়িক ছিলেন লুই পাস্তুর ও ফার্দিনান্দ কহন (Ferdinand Julius Cohn)। জীবাণু বিজ্ঞানের রহস্য উন্মোচনে তাঁদের অবদানও অনস্বীকার্য। লুই পাস্তুর  সর্বপ্রথম জীবাণু ঘটিত রোগ নিরাময়ে ভ্যাকসিন বা টীকা এর ধারণা দেন। তিনিই তরল পানীয় (দুধ, ওয়াইন ইত্যাদি) কে জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় পাস্তুরায়ন (pasteurization) পদ্ধতি  আবিষ্কার করেন। আজও দৈনন্দিন জীবনে তরল পানীয় সংরক্ষণ  করার জন্যে সেই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে। জীবাণু  বিজ্ঞানে আর এক সমসাময়িক আবিষ্কার হলো ব্যাকটেরিয়া প্রতিষেধক বা আন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কার।  স্কটিশ বিজ্ঞানী আলেক্জান্ডার ফ্লেমিং (Alexander Fleming) ১৯২৯ সালে ব্রিটেন এর জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল প্যাথলজি তে সর্বপ্রথম আন্টিবায়োটিক-এর ধারণা প্রকাশ করেন। আন্টিবায়োটিক-এর আবিষ্কার কে জীবাণু  বিজ্ঞান এর ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য মাইল ফলক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

(চলবে)

বিজ্ঞানীদের ছবি সৌজন্যে: উইকিপিডিয়া, প্রচ্ছদের ছবিটির উৎস:  https://guardianlv.com/wp-content/uploads/2013/11/cholera-virus-or-bacteria-nhbn3b8t.jpg

পর্ব ২ পড়ুন এখানে।

লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।

Scan the above code to read the post online.

Link: https://bigyan.org.in/jibanuder-jato-katha

print

 

© and ® by বিজ্ঞান - Bigyan, 2013-25