20-05-2025 18:31:57 pm

print

 
বিজ্ঞান - Bigyan-logo

বিজ্ঞান - Bigyan

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের এক বৈদ্যুতিন মাধ্যম
An online Bengali Popular Science magazine

https://bigyan.org.in

 

অঙ্ক কি শক্ত


%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%bf-%e0%a6%ae%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0
পার্থসারথি মজুমদার

(IACS)

 
29 Jun 2015
 

Link: https://bigyan.org.in/is-math-difficult

%e0%a6%85%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%95-%e0%a6%95%e0%a6%bf-%e0%a6%b6%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4

অঙ্ক মানেই একটা বিভীষিকা। স্কুলপড়ুয়াদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। অথচ, অঙ্ক শেখা কি মজাদার হতে পারে না? একদম সেই ছোট্টবেলা থেকেই, যখন দশটা সংখ্যা নিয়ে নাড়াচাড়া করছি, শিখছি যোগ-বিয়োগ। সেই প্রশ্নই তুলেছেন অধ্যাপক পার্থসারথি মজুমদার।

কথাটা ‘অঙ্ক কিইই শক্ত’ বললে হয়ত সব স্তরের স্কুল পড়ুয়ারাই সহমত হত।

ইংরিজি, বাংলা, ইতিহাস বা ভূগোলের তুলনায় অনেক বেশী সংখ্যায় ছাত্রদের পক্ষে অঙ্ক যেন একটা বিভীষিকা। ফলে অভিভাবকেরাও অঙ্কের ‘ভালো’ শিক্ষক খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। অথচ এটাও সবাই জানে যে অঙ্কই সেই বিষয় যেটা আয়ত্ত করতে মুখস্থ করার থেকে বুদ্ধির দরকার বেশী, এটাই একটিমাত্র বিষয় যেটাতে পরীক্ষায় ১০০-য় ১০০ পাওয়া যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। তা হলে, সমস্যাটা কোথায়?

হয়তো গোড়াতেই। যুক্তিনির্ভরতার বদলে স্মৃতিনির্ভরতার সংস্কার কিন্তু বেড়েই চলেছে। কমপিউটারের ভাষায় বললে: CPU-এর বদলে RAM-এর ব্যবহার বেশী। অনেকেরই ধারণা এইরকম, কোনও কিছু বোঝার চেষ্টার চেয়ে সেটা আদ্যন্ত মুখস্থ করে ফেলা সহজ। অসুবিধে এই যে অঙ্কের ক্ষেত্রে না বুঝে মুখস্থ করা অতি কষ্টসাধ্য। অতএব, বিড়ম্বনা। ভালো ‘অঙ্ক-স্যার’ ধরে আনতে ছোটাছুটি।

সমস্যাটা শুরু হয় একদম গোড়াতে, যখন বাচ্চাদের গুনতে শেখানো হয়। প্রায় সব স্কুলেই প্রাথমিক পর্যায়ে গোনা শেখানো হয় জিনিসের মাধ্যমে: ১-টা আম, ২-টো বল, ৩-টে গাড়ী ইত্যাদি। ধরে নেওয়া হয় যে বাচ্চারা আম, বল বা গাড়ীর সঙ্গে পরিচিত, তাই এটাই সহজ। যেন, ১, ২, ৩ সংখ্যাগুলির ঐ জিনিসগুলো ছাড়া আলাদা কোনও অস্তিত্বই নেই। তাই, ১ থেকে ১০০ গোনা বেশ একটা শক্ত ড্রিল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, সংখ্যার সঙ্গে জিনিসের যে একাত্মতা গোড়াতে শেখানো হয়েছে, সেই যুক্তি দিয়ে গোনার কাজটা হচ্ছে না! অতএব, আবার সেই স্মৃতিনির্ভরতা – টেনে মুখস্থ।

আপনি বলবেন: উপায় কী? সবাই তো এই ভাবেই শেখে। হয়ত। কিন্তু একবার ভাবুন তো – কী অপূর্ব এই সংখ্যার জগৎ! যেখানে ইংরিজি শিখতে ২৬টা আলাদা বর্ণ শিখতে হয়, বাংলা বা হিন্দি শিখতে হলে স্বর ও ব্যাঞ্জনবর্ণ নিয়ে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক, তাও যুক্তক্ষর তো ধরাই হল না, সেখানে অঙ্ক শিখতে দরকার মাত্র ১০টি চিহ্নের – ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,০। এই ১০টি চিহ্ন দিয়ে বিশ্বের যাবতীয় পূর্ণসংখ্যা লেখা যায়। এই হল আমাদের আবিস্কৃত ‘দশমিক পদ্ধতি’র মাহাত্ম্য। আমাদের সন্তানদের এই মহান কীর্তির কথা না শিখিয়ে শুধু মুখস্থ করালে পাপ হবে না?

আদপে কিন্তু বাচ্চারা গুনতে শেখে খেলার মধ্যে দিয়ে। ‘এক্কা-দোক্কা’ ছোট মেয়েদের মজার খেলা। এবার যদি বলি, শুরুটা হচ্ছে ০, তারপর এক লাফ – ‘এক্কা’ – মানে ১, বুঝতে অসুবিধা নেই। এবার ১-এর পর আরো ১ লাফ, অর্থাৎ ‘দোক্কা’, এটার মানে ০ থেকে ২। এর মধ্যে দিয়ে এটাও কি বলা হল না : ১ + ১ = ২। অর্থাৎ, যোগ করা শেখানো শুরু। এবার সাবেকী ‘এক্কা দোক্কা’থেকে বাড়িয়ে আরো এক ধাপ লাফালে শুরু (০) থেকে সেটা ৩, অর্থাৎ ২ + ১ = ৩! এইভাবে ০ থেকে ৯, ১ যোগ করে করে, শেখানো যেতেই পারে। খেলা বলে বিভীষিকার সম্ভাবনা নেই, মুখস্থের দরকার নেই।

শুধু তাই নয়, ধরুন আমার মেয়ে এক এক করে ৮-এর ধাপে পৌছেছে। এবার তাকে জিগেস করি:আচ্ছা বলতো, এক ধাপ সামনে না লাফিয়ে পেছনে লাফালে শুরু থেকে কত নম্বর ধাপে পৌছবি? সহজ উত্তর: ৮এর ধাপের আগে সে তো ৭-এর ধাপ পেরিয়ে এসেছে, তাই সে অকাতরে বলবে ‘৭’, অর্থাত সে আমাকে বলে দিল ৮ – ১ = ৭! অর্থাৎ বিয়োগ শেখা শুরু, প্রায় নিজে-নিজে। সম্পূর্ণ যুক্তিনির্ভর সে!

এই যে ‘এক্কা-দোক্কা’ পদ্ধতি, গণিতজ্ঞ মাত্রেই জানেন, এটাই ‘এক মাত্রার জাফ্রী’ (one dimensional lattice) দিয়ে পূর্ণসংখ্যার জ্যামিতিক রূপদর্শনের সর্বস্বীকৃত উপায়। অথচ, আমার বা আপনার ৪ বছরের মেয়েকে সেটা বোঝানো শক্ত নয়। এটাই অঙ্কের বৈশিষ্ট্য।

এবার ৯-এর ধাপ পৌছলে প্রশ্ন উঠবে : পরের ধাপটা কী ? ‘দশমিক পদ্ধতি’র আরও একটা অপূর্ব আবিস্কার: ৯ + ১ = ১০। অর্থাৎ, শুরু ০-র মত আবার একটা শুরু। শুধু আগের শুরু ০ থেকে যে আমরা ৯ ধাপ এসে আরও এক লাফিয়েছি, সেটা মনে রাখতে হবে। এর পর আবার আগের মত: ১০-এর পর এক ধাপ মানে ০-র জায়গায় ১, অর্থাত ১১! এই এক এক করে একই ভাবে ১৯ অবধি। তারপর আবার নতুন জিনিস : ১৯ + ১ = ধাপটা কী? উত্তর: বাঁ দিকের ১টা ২ হয়ে গিয়ে আবার ০ থেকে শুরু: অর্থাৎ ২০। এই ভাবে ৩০, ৪০, … ১০০। যুক্তি দিয়ে তৈরী হচ্ছে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম অসুবিধে হল এই যে সেটা অত্যন্ত পরোক্ষ বা নির্লিপ্ত। অর্থাৎ ছাত্রদের কে কতটা কী করতে পারল, সেদিকে কোনও নজর নেই। সিলেবাস শেষ করাই তার মহৎ উদ্দেশ্য। সেই সিলেবাস পরে কেউ কিছু শিখছে কি না, তা তলিয়ে দেখার ধৈর্য কারুরই নেই। নিজে ‘করতে করতে শেখা’ ব্যপারটা আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি থেকে বিতাড়িত। তাই ক্লাসে প্রশ্ন করলে দলছুট ছাত্র সহপাঠীদের কাছে ধমক খায় ‘সময় নষ্ট করিস না’, ‘কী বোকার মত জিগেস করছিস, এটাও জানিস না’ ইত্যাদি। করতে করতে শেখার মানেই অনেক প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, তর্ক করা, নিজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে থাকা, কে কত মুখস্থ-করা জ্ঞান ফলাতে পারে তার প্রতিযোগিতা নয়। এই ভাবে কি অঙ্ক-বিভীষিকা দূর করা যায় না?

লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।

Scan the above code to read the post online.

Link: https://bigyan.org.in/is-math-difficult

print

 

© and ® by বিজ্ঞান - Bigyan, 2013-25