09-06-2025 12:58:34 pm

print

 
বিজ্ঞান - Bigyan-logo

বিজ্ঞান - Bigyan

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের এক বৈদ্যুতিন মাধ্যম
An online Bengali Popular Science magazine

https://bigyan.org.in

 

মৌমাছির খাবার খোঁজা


%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0
সুমন্ত্র সরকার

(MIT)

 
26 Oct 2014
 

Link: https://bigyan.org.in/honeybee_waggle_dance

%e0%a6%ae%e0%a7%8c%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9b%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%96%e0%a7%8b%e0%a6%81%e0%a6%9c%e0%a6%be

মানুষ যেমন দিক নির্ণয় করতে কম্পাসের সাহায্য নেয় বা ধ্রুবতারা দেখে দিক ঠিক করে, মৌমাছিরাও তেমনি সূর্যের পোলারাইজড আলো কে ব্যবহার করে দিক ঠিক করতে। কোনো মৌমাছি ফুলের মধু খুঁজে পাওয়ার পর অন্যান্য সঙ্গীদের নাচ দেখিয়ে কেমন ভাবে সেই ফুলের অবস্থান বুঝিয়ে দেয় তাই নিয়ে লিখেছে সুমন্ত্র সরকার।

পশু-পাখি, পোকা-মাকড় এরা খাবার পায় কোথা থেকে ? আমাদেরর মতো এদের তো আর পাড়ার মুদির দোকান নেই, তাই এদেরকে খাবার খুঁজতে হয় । খাবার খোঁজাকে ইংরেজীতে বলে ফোরেজিং (Foraging) । যেমন ধরো, তোমরা দূর্গাপুজোর সময় এগরোলের দোকান খুঁজে বেড়াও, খুঁজে বেড়াও কোথায় সবথেকে ভালো ফুচকা পাওয়া যায়, বা কুকুর-বিড়ালরা বাড়ি বাড়ি কাঁটাটা-কুটোটা খুঁজে বেড়ায়,একেই বিজ্ঞানীরা বলেন ফোরেজিং। মানুষ, কুকুর, বিড়ালরা এদের একলা-একলাই জীবন কাটে, বাঁচার জন্য সাধারণত এদেরকে কারোর ওপর নির্ভর করতে হয়না। তাই এইসমস্ত প্রাণীদের বিজ্ঞানীরা বলেন সলিটারী বা একান্তবাসী জীব। আবার, পিঁপড়ে-মৌমাছিরা একা একা কখনো বাঁচতে পারে না , একটা মৌমাছির চাকের বাসিন্দারা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই এদেরকে বলা হয় সোশ্যাল বা সামাজিক জীব। তোমরা হয়ত জানো যে একটা মৌমাছির চাকে মূলত তিন ধরণের মৌমাছি থাকে – রানী, পুরষ আর কর্মী মৌমাছি। রানী মৌমাছি আর পুরুষ মৌমাছির একমাত্র কাজ হলো বংশ বিস্তার করা। খাবার জোগাড়, ডিম-বাচ্চাদের লালন-পালন, মৌচাককে শত্রুদের থেকে রক্ষা করা, রানী-পুরুষ মৌমাছিদের পরিস্কার রাখা, এই সবকিছুরই দায়িত্ব হলো কর্মী মৌমাছিদের। স্বাভাবিক ভাবেই একটা কর্মী মৌমাছির পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়, তাই এক এক দল কর্মী-মৌমাছি তাদের কাজ ভাগ করে নেয়। আমি আজকে যাদের কথা বলব তাদের কাজ হল খাবার খোঁজা। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এদের বলে ফোরেজার বা জোগাড়ে মৌমাছি।

খাবার খোঁজার জন্য  প্রথমে অল্প কিছু মৌমাছি চারিদিকে উড়ে যায়। এবার ধরা যাক, মৌমাছি এমন একটা  পেল যাতে অনেক পরাগরেণু আছে। কিন্তু শুধু নিজে জানলেই তো হবে না, অন্যদেরকেও জানাতে হবে। তাই, এই মৌমাছিটা চাকে ফিরে যায়, আর গিয়ে একটা অদ্ভুত  নাচ নাচে,  যাকে বলে Waggle Dance। এই নাচের থেকে অন্যান্য মৌমাছিরা জেনে যায় একদম ঠিক কোথায় সেই ফুলটা খুঁজে পাওয়া যাবে। কার্ল ফন ফ্রিশ নামে এক অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী গত শতকের চল্লিশের দশকে এটা আবিষ্কার করেন এবং  এই ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। কিন্তু ফুলের অবস্থান বোঝানো তো সহজ ব্যাপার নয় মোটেই। চাক থেকে ফুলের অবস্থান বোঝানোর জন্য শুধু দূরত্ব বোঝালেই তো হবে না, চাকের কোন দিকে ফুলটা অবস্থিত, সেটাও তো জানা দরকার  অর্থাৎ ফুলের অবস্থান একটা ভেক্টর রাশি। কিন্তু একটা নাচের মাধ্যমে মৌমাছি এই অবস্থান বোঝায় কি করে ? ব্যাপারটা খুব আগ্রহজনক।

Honey Bee Waggle Dance

  মৌমাছির নাচ : মৌমাছিটি বাংলার ৪-এর আকারের একটি পথে বারবার ঘুরতে থাকে। মাঝের অংশটাতে মৌমাছিটি শরীরের পিছনের অংশটা পর্যায়ক্রমে নাড়াতে থাকে। ওই মাঝের অংশটি যেদিকে নির্দেশ করে সেই দিকেই ফুলটা থাকে । ছবি : Wikimedia

তোমরা জানো আলো হলো এক ধরণের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। তরঙ্গের একটা চুম্বকীয় ভাগ থাকে আর একটা বৈদ্যুতিক ভাগ থাকে এবং দুটি ভেক্টর রাশি। সুতরাং তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ একটি ভেক্টর তরঙ্গ , যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বা transverse wave। যেহেতু এটা একটা ভেক্টর তরঙ্গ, তাই এর একটি দিকও থাকে, একে বলা হয় তরঙ্গটির Polarization ( সাধারণত বৈদ্যুতিক ভাগের দিককে polarization  হিসেবে ধরা হয় )। সূর্যের আলো যখন বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবীতে প্রবেশ করে তখন বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের আয়নগুলির প্রভাবে polarized হয়ে যায় এবং এই polarization-এর দিক সূর্যের দিকে হয় ! মানুষের চোখ সেটা ধরতে পারে না কিন্তু মৌমাছির পুঞ্জক্ষিতে তা ধরা পড়ে এবং আমরা যেভাবে ধ্রুবতারাকে দেখে দিক ঠিক করতে পারি সেইরকম মৌমাছিরাও সূর্যকে কম্পাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

এর পরের ব্যাপারটা কতকটা সহজ। ফুল খুঁজে পাওয়ার পর মৌমাছিটা চাকে ফিরে উপরের ছবির মত নাচ নাচে। পৃথিবীর অভিকর্ষ যেদিকে হয় ঠিক তার উল্টোদিককে ওরা সূর্যের দিক হিসেবে ধরে ; এইটা হলো ওদের দিকনির্ণয়ের মাপকাঠি। এরপর, মৌমাছিটি বাংলার ৪-এর মতো একটা পথে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকে আর মাঝের অংশটায় শরীরের পিছনের দিকটা নাড়াতে থাকে ( উপরের ছবির মতো , একেই বলে waggle dance )। আশে-পাশে যে সমস্ত মৌমাছিগুলো থাকে ওরা ওই মাঝের অংশতা লক্ষ্য করে। এই মাঝের অংশটা যেদিকে নির্দেশ করে ওটাই ফুলের দিক ! কিন্তু শুধু দিক বললেই তো হবে না, দূরত্বও তো জানাতে হবে।  এটাও ওই নাচের মাধ্যমেই বুঝতে পারে ! মৌমাছিটি মাঝের অংশের নাচটা যত বেশিক্ষণ ধরে নাচে, ফুলটাও তত বেশি দূরে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, এক সেকন্ড ধরে নাচলে ফুলটা মোটামুটি এক কিলোমিটার দূরে থাকে। মজার ব্যাপার হলো মৌমাছিদের দূরত্বের কোনো ধারণাই নেই, আছে শুধু সময়ের জ্ঞান। বেশিরভাগ প্রাণীর ক্ষেত্রেই সেটা সত্যি, এমনকি মানুষের ক্ষেত্রেও ! ভেবে দেখো, কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে যে , “ ভাই অমুকের বাড়িটা কোথায় রে ? ” আমরা কিন্তু বলিনা যে,    “ওই ৫০০ মিটার হবে।” বরং আমরা বলি, “বেশি না, এই দশ মিনিটের হাঁটা পথ।” উল্টোদিক থেকে খুব জোরে হাওয়া দিলে, মৌমাছির কোনো ফুলে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগে। তাই যখন হাওয়া দেয়, একই দূরত্বের জন্য মাঝের অংশের নাচটা মৌমাছিরা অনেক বেশি সময় ধরে নাচে। তাই, অন্য মৌমাছিদেরও ফুলে পৌঁছাতে কোনো ভুল হয় না। অবাক করার মত ব্যাপার ! তাই না ?

তথ্যসূত্র:

১) https://en.wikipedia.org/wiki/Polarization_%28waves%29
২)
Honeybee Waggle Dance Video

লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।

Scan the above code to read the post online.

Link: https://bigyan.org.in/honeybee_waggle_dance

print

 

© and ® by বিজ্ঞান - Bigyan, 2013-25