21-12-2024 17:20:19 pm
Link: https://bigyan.org.in/glass-flowers-of-harvard-museum
শহরের নাম কেমব্রিজ, রাস্তার নাম অক্সফোর্ড স্ট্রীট! নামে ইংল্যান্ডের কোন জায়গা মনে হলেও চার্লস নদীর ধারে গড়ে ওঠা কেমব্রিজ আসলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন শহরের প্রতিবেশী। আর এই অক্সফোর্ড স্ট্রীটের ধারেই একটা পুরনো বিশাল বাড়িতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম অফ ন্যাচরাল হিস্ট্রি। ন্যাচরাল হিস্ট্রি অর্থাৎ প্রাকৃতিক ইতিহাস। যেমন, এই মিউজিয়ামে খুঁজে পাওয়া যাবে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা খনিজ ও রত্ন – ম্যালাকাইট, অ্যাজুরাইট, রকমারি জিওড পাথর ইত্যাদি। রকমারি রত্নসম্ভারের পাশের ঘরেই অবশ্য আছে এক হাজারের মত অন্য রকম ‘রত্ন’, যা বিশ্বের খুব বেশী মিউজিয়ামে নেই। পাঠকদের সাথে হার্ভার্ডের কাচের ফুলের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই লেখা!
চিত্র ১ -এ রডোডেনড্রন ফুলগুলোকে দেখলে বোঝাই মুশকিল যে এগুলো কাচ দিয়ে তৈরি! চার হাজারের বেশি ফুল, ফল, বোটানির বিভিন্ন নমুনা বা স্যাম্পেল ছড়িয়ে রয়েছে মিউজিয়ামে (চিত্র ২), একশো বছরের বেশী সময় ধরে। জার্মানীর বাবা-ছেলে জুটি লিওপোল্ড ব্লাশকা (১৮২২-১৮৯৫) আর রুডলফ ব্লাশকার (১৮৫৭ – ১৯৩৯) তৈরি এই কাচের ফুলগুলো ‘অমর’ হয়ে আজও বিস্ময় তৈরি করছে দর্শকদের মনে।
লিওপোল্ড ব্লাশকা কাচের কাজ শিখেছিলেন তার পারিবারিক ব্যবসা থেকে। শোনা যায় একবার ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় জাহাজে করে যাওয়ার সময় যান্ত্রিক গোলযোগে জাহাজ আটকে পড়ে মাঝ সমুদ্রে। আটলান্তিকের জলে লিওপোল্ড দেখলেন বহু জলজ অমেরুদন্ডী প্রাণী। তাদের দেহের স্বচ্ছতা দেখে তাঁর মনে কাচের মডেল তৈরি করার সংকল্প জাগল। ইউরোপে ফিরে তৈরি করতে থাকলেন সামুদ্রিক অমেরুদন্ডী প্রাণীদের, যেমন অক্টোপাসের, অসাধারণ সব মডেল। ছেলে রুডলফের সাথে লিওপোল্ড ব্লাশকার তৈরি কাচের বিভিন্ন নমুনা স্থান পেতে থাকল জার্মানীর মিউজিয়ামে। ইউরোপ ছাড়িয়ে তাঁদের সুনাম পৌঁছলো উত্তর আমেরিকায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ গুডেল এই সময় হার্ভার্ডে বোটানী বা উদ্ভিদবিদ্যা পড়ানোর জন্য ল্যাবরেটরী তৈরি করছিলেন। বোটানী পড়াতে গেলে লাগে বিভিন্ন ফুল, ফল, ও তাদের নানা অংশের নমুনা। কিন্তু, সেই সব নমুনাকে ঠিকভাবে প্রদর্শন করা বেশ সমস্যার। সাধারণত কিছুদিন বাদেই নমুনার রঙ ধীরে ধীরে ফ্যাকাসে হয়ে আসে। তাই প্রয়োজন এমন ভাবে সংরক্ষণের, যা হীরক রাজার দেশের বৈজ্ঞানিকের ভাষায়, “ঝরে না, মরে না, পোকা ধরে না।… রঙ হাতে আঁকা।” সেই সাথে বোটানীর নমুনা যেভাবে সংগ্রহ করা হয়, তাতে তাদের ত্রিমাত্রিক গঠন দর্শকের সামনে তুলে ধরাও মুশকিল। ব্লাশকাদের তৈরি কাচের নমুনা তাই মন কাড়ল অধ্যাপক গুডেলের। আসল গাছপালার বদলে কাচের মডেল তৈরি করতে পারলে প্রায় সব সমস্যারই সমাধান হয়। তা সংরক্ষিত থাকবে বছরের পর বছর। রঙ ফ্যাকাসে হবে না। ত্রিমাত্রিক গঠন ভালভাবে দেখানো যাবে। প্রয়োজনমত বিভিন্ন অংশের গঠন বিবর্ধিত আকারেও দেখানো যাবে। অধ্যাপক গুডেল ব্লাশকাদের তাঁর বোটানী ক্লাশরুম প্রোজেক্টে উৎসাহিত করার আশা নিয়ে জার্মানীতে গেলেন। রাজী করালেন ব্লাশকাদের।
প্রথমে কিছু বোটানীর নমুনা তৈরি করে হার্ভার্ডে পাঠালেন ব্লাশকারা। ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকার লম্বা সফরের ধাক্কায় ভেঙে গেল কাচের নমুনা। কিন্তু, তা সত্ত্বেও সেই নমুনাগুলোর উচ্চমান নজর কাড়ল গুডেল ও তাঁর সহকর্মীদের। বোস্টনের সভ্রান্ত ওয়্যার বংশের দুই ভদ্রমহিলার অর্থসাহায্যে ব্লাশকারা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেন বোটানীর মিউজিয়ামের নমুনার উপর কাজ করতে। একে একে তৈরি হতে থাকল অসাধরণ সব কাচের ফুল। কয়েকটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হল। চিত্র ৩ -এ ঝিঙে ফুলের সূক্ষ্ম কাজ, রঙ ইত্যাদি দেখে ব্লাশকাদের হাতের যাদুর ঝলক পাওয়া যায়। বিভিন্ন রঙের কাচ ছাড়াও গঠনগত কাঠামো বজায় রাখার জন্য ব্লাশকারা তারের ব্যবহার করেছিলেন। এই লেখার সাথে তুলে ধরা ছবিগুলি হার্ভার্ড ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের সৌজন্যে পাওয়া। ছবিগুলো কপিরাইট সংরক্ষিত, অর্থাৎ হার্ভার্ড ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।
ব্লাশকারা বিশ্বের বহু মিউজিয়ামের জন্য কাচের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের নমুনা তৈরি করেছিলেন। তাঁদের তৈরি ক্যাটালগে ক্রেতাদের একটা তালিকা পাওয়া যায়। সেই তালিকার মধ্যে রয়েছে কলকাতা যাদুঘরও (চিত্র ৬)। অবশ্য, কলকাতা যাদুঘর কি কিনেছিল ব্লাশকাদের কাছ থেকে, আর সেই কাচের নমুনার হাল বর্তমানে কী, তা অজানা। পাঠকের মধ্যে থেকে কেউ কি কলকাতা যাদুঘরের ব্লাশকার কাচের কাজের খবর দিতে পারবে(ন)?
তথ্যসূত্র ও অতিরিক্তঃ
লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।
Scan the above code to read the post online.
Link: https://bigyan.org.in/glass-flowers-of-harvard-museum