08-12-2024 21:20:18 pm
Link: https://bigyan.org.in/friction-advantage-disadvantage-part-01
কোভিড-১৯-এর জন্য দীর্ঘদিন কোথাও বেরোনো হয়নি। যদিও আর কয়েক মাস পর রাহুলের মাধ্যমিক পরীক্ষা, তাকে আর আটকে রাখা গেল না। জানুয়ারিতেই সে ঠিক করলো মামার বাড়ি যাবে। মামার বাড়ি বাঁকুড়া। শুশুনিয়া পাহাড় কাছে পিঠেই। রাহুলের পাহাড়ে ওঠার খুব শখ। এবারে তার ইচ্ছে মামার বাড়ি গেলে একবার শুশুনিয়া পাহাড়ে উঠবেই। যেই না ভাবা অমনি কাজ। মামাবাড়িতে গিয়ে একদিন সকালে বড় মামাকে নিয়ে রাহুল পাহাড়ে গেল।
বড় মামা কাছেই একটি হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক। ভাগ্নের আবদারে মামাও বেরিয়েছেন শুশুনিয়া ট্রেকিংএ। পাহাড়ে উঠতে উঠতে রাহুলের মাথায় হঠাৎ প্রশ্ন এলো, পাহাড় যদি মসৃণ খাড়া হতো তবে কি তারা সহজে উপরে উঠতে পারতো? এখানে ঘর্ষণ কিভাবে কাজ করছে? এমনিতেই রাহুলের মনে নানারকম প্রশ্ন ভেসে ওঠে যখন তখন। আর সুযোগ পেলেই সে বড় মামাকে নাস্তানাবুদ করে তোলে। মামাও তার সাধ্যমত ভাগ্নের কৌতূহল নিরসন করার চেষ্টা করেন। এবারে তো মামাকে রাহুল হাতের কাছে পেয়েছে। তাই সুযোগটা সে হাতছাড়া করতে চাইলো না। মামাকে প্রশ্নটা সত্যি সত্যি করেই বসলো –
মামা পাহাড়ে ওঠার সময় ঘর্ষণ কিভাবে কাজ করে?
মামা জানেন ভাগ্নে ছাড়ার পাত্র নয়। তিনি বললেন –
দেখ, ঘর্ষণ যেমন আমাদের অনেক অসুবিধে করে তেমনি ঘর্ষণ বাদ দিলেও চলে না। ঘর্ষণের সুবিধের দিক অনেক। পাহাড়ে ওঠা –এটাও একটা ঘর্ষণের সুবিধের দিক। তবে ঘর্ষণের ব্যাপারটা ভালো করে বুঝতে হলে একটু খাতা কলমের দরকার। এখানে তো সম্ভব নয়। বাড়ি গেলে সন্ধ্যেবেলায় বুঝিয়ে দেব।
রাহুলের আনন্দ আর ধরে না। সে মামার কাছে আজ সন্ধ্যায় ঘর্ষণের প্রাথমিক পাঠ নেবে। সন্ধ্যাবেলায় একটু টিফিনের পর মামার কাছে রাহুলের ঘর্ষণের ক্লাস শুরু হলো। মামা তাঁর পড়ার টেবিলে ক্লাস ইলেভেনের ফিজিক্সের মোটা বইটা রাখলেন। তারপর বইটাকে এক হাত দিয়ে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করলেন। বইটা কিন্তু যেখানেই ছিল সেখানেই থাকলো, একটুও সরলো না।
বড় মামা রাহুলকে জিজ্ঞেস করলেন –
আমি তো একটা বল প্রয়োগ করে বইটাকে ঠেলেছিলাম। তবুও বইটা সরলো না কেন?
মামা, আমার মনে হয়, বইয়ের উপর তোমার দেওয়া ঠেলা বলের বিপরীতে একটা ঘর্ষণ বল কাজ করছে। ফলে বই-এর উপর লব্ধি বল শূন্য হচ্ছে। তাই বইয়ের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। (চিত্র- ১ক)
অষ্টম শ্রেণীতে ঘর্ষণ সম্পর্কে একটু আধটু জেনেছে সে।
বাহ! আমায় তুই বল বইটাকে ঘর্ষণ বল কে দিল?
কেন, টেবিলের উপরিতল। আর টেবিল ও বই-এর দুটি স্পর্শতলের অমসৃণতাই ঘর্ষণের কারণ।
ঠিকই বলেছিস! এবং দেখ, বই ও টেবিলের স্পর্শতলকে আপাতভাবে মসৃণ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা অনেকটাই অমসৃণ। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে স্পর্শতলে অনেক উঁচু নিচু খাঁজ স্পষ্ট বোঝা যায়। যে কোনো একটি বস্তুকে একটি তলের সংস্পর্শে রাখলে বস্তুর স্পর্শতলের খাঁজগুলি তলটির খাঁজগুলির সাথে আটকে যায় (চিত্র ৩)। ফলে বস্তুটিকে গতিশীল করলে বা করার চেষ্টা করলে তলের সাপেক্ষে বস্তুটির আপেক্ষিক গতি বাধা পায়। এর জন্য বস্তু ও ঐ তলের আপেক্ষিক গতির বিপরীতে যে বাধা বলের সৃষ্টি হয়, তাই ঘর্ষণ। আবার বস্তুটির উপর প্রযুক্ত লম্ব প্রতিক্রিয়া বল (normal reaction) যত বেশি হয়, ততই বস্তুটি তাদের স্পর্শতলে পরস্পরের সাথে বেশি করে খাঁজে খাঁজে আটকে যায় অর্থাৎ ঘর্ষণ বেড়ে যায়। তাই দেখবি, ভারী বস্তুকে অমসৃণ তলে স্থির অবস্থা থেকে গতিশীল করতে গেলে বা সময়ের সঙ্গে গতিবেগ পবিবর্তন করতে গেলে অনেক বেশি বল প্রয়োগ করতে হয় ঘর্ষণ বল বেড়ে যাওয়ার জন্য।
আচ্ছা মামা, লম্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটা প্রশ্ন অনেক দিন থেকে আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা এই সুযোগে করে ফেলি?
অবশ্যই কর!
ওজন নিম্নমুখী হলে তো লম্ব প্রতিক্রিয়া ঊর্ধমুখে কাজ করে। তাহলে কি বলা যাবে যে লম্ব প্রতিক্রিয়া বল ওজন ক্রিয়ার সমান ও বিপরীতমুখী একটি প্রতিক্রিয়া?
ব্রাভো, ভাগ্নে! তোর মতো বয়সে আমিও ঠিক একই জিনিস ভাবতাম। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ব্যাপারটা ঠিক সে রকম নয়। এই যে তুই বলছিস লম্ব প্রতিক্রিয়া হলো ওজনের প্রতিক্রিয়া বল, এটা তো নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কথা মাথায় রেখে। আচ্ছা নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি একটু বল তো দেখি।
প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।
একেবারে সঠিক। এই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া কি একই বস্তুর উপর কাজ করে?
না, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া দুটি পৃথক বস্তুর উপর কাজ করে।
ঠিক তাই। তাহলে একটি বস্তুর ওজন হলো ওই বস্তু কে পৃথিবী যে পরিমাণ বল দিয়ে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। এই ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া তো ওই একই বস্তুর উপর প্রযুক্ত হতে পারে না। বল দেখি এই প্রতিক্রিয়া বল তাহলে কার উপর কাজ করবে?
মামা, পৃথিবী যেরকম বস্তুটিকে আকর্ষণ করছে; বস্তুটির জন্যও পৃথিবীর ওপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল কাজ করছে। পৃথিবীর ভর অনেক বেশি তাই পৃথিবী ওই বলের জন্য বস্তুর দিকে যায় না। বস্তুটিই পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে যাবার প্রবণতা দেখায়। আমি বুঝতে পেরেছি, লম্ব প্রতিক্রিয়া ওজনের জন্য সৃষ্টি হয় না।
তিষ্ঠ ভাগ্নে, তিষ্ঠ। লম্ব প্রতিক্রিয়া ওজনের সরাসরি প্রতিক্রিয়া নয় ঠিকই। কিন্তু এই যে তুই বললি ওজনের জন্য বস্তুর (যেমন এই টেবিলের উপর রাখা বইটির) পৃথিবীর দিকে ত্বরণ সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এই প্রবণতার জন্য বই ও টেবিলের স্পর্শতলের অণুগুলোর মধ্যে দূরত্ব তাদের সাম্যাবস্থার থেকে কমে যায়। অণুগুলোর দূরত্ব এই সাম্যাবস্থার থেকে কমে গেলে স্থিতিস্থাপকতা (elasticity) অণুগুলোর দূরত্ব বাড়িয়ে আবার সাম্যাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে চায়। আর টেবিলের অণুগুলির দ্বারা বইয়ের স্পর্শতলের প্রতিটি অণুর উপর প্রযুক্ত স্থিতিস্থাপক বলগুলির লব্ধিই হল সমগ্র বই এর উপর প্রযুক্ত লম্ব প্রতিক্রিয়া।
বাহ্। দারুন তো। সত্যি মামা, আজ আমি নতুন ভাবে লম্ব প্রতিক্রিয়া বল কে বুঝলাম।
আবার দেখ, লম্ব প্রতিক্রিয়া যে সব সময় ওজনের উল্টো দিকে কাজ করে তা ঠিক নয়। এই যে কলমটা আমি হাতে তুলে ধরে রেখেছি এখানে কলমের ওজন নিচের দিকে ক্রিয়া করছে। কিন্তু, এক্ষেত্রে লম্ব প্রতিক্রিয়ার অভিমুখ ওজনের সাথে লম্ব ভাবে হাত ও কলমের স্পর্শতলে কাজ করছে (চিত্র- ১খ)।
এই লম্ব প্রতিক্রিয়া হাত ও কলমকে খাঁজে খাঁজে আটকে যেতে সাহায্য করে আর সেই কারণে তাদের মাঝে ঘর্ষণ বেড়ে যায়। তার মানে, বস্তুর ওজন সব সময় পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে কাজ করে। কিন্তু লম্ব প্রতিক্রিয়া স্পর্শতলের সাথে লম্ব ভাবে কাজ করে। স্পর্শতলের সাথে লম্বভাবে কাজ করা এই বলের পরিমাণ যত বেশি হবে ঘর্ষণের মান তত বেশি হবে।
এই ঘটনাটি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝা যেতে পারে। তুই চেয়ার ছেড়ে উঠে, পড়ার টেবিলটিকে একবার টেনে আর একবার ঠেলে সরানোর চেষ্টা করে বলতো কোনটাতে তুই কম বাধা পাচ্ছিস?
মামার কথা মতো রাহুল বারকয়েক টেবিলটিকে টানা ঠেলা করে বললো –
আমার টানতে বেশ সুবিধে হচ্ছে মামা।
তেমনটাই হবার কথা ভাগ্নে। কারণ সমতলে একটি বস্তুকে টানার সময় আমরা যে বল প্রয়োগ করছি তার অনুভূমিক উপাংশর জন্য বস্তুটি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। অন্য দিকে উল্লম্ব উপাংশ স্পর্শতলের সাথে লম্বভাবে ওজনের বিপরীতে অর্থাৎ লম্ব প্রতিক্রিয়ার দিকে কাজ করে। এখন স্থির অবস্থায় লম্ব প্রতিক্রিয়া বস্তুটির ওজনের সাথে সমান ছিল। কিন্তু বস্তুটিকে টানার পর সাম্যাবস্থায় লম্ব প্রতিক্রিয়া এবং যে বল প্রয়োগ করছি তার উল্লম্ব উপাংশ মিলিত ভাবে ওজনের সমান হয়। তাই এক্ষেত্রে লম্ব প্রতিক্রিয়া স্থির অবস্থার চেয়ে কম হয় (চিত্র ২)।
অর্থাৎ,
স্থির অবস্থায় লম্ব প্রতিক্রিয়া: () = ওজন ()
টানার সময়: + বলের উল্লম্ব উপাংশ বা,
অনুরূপভাবে, ঠেলার সময়:
বুঝতে পেরেছি। ঠেলা দেবার সময় অনুভূমিক উপাংশ ঠেলার দিকে কাজ করলেও উল্লম্ব উপাংশ বস্তুর ওজনের দিকে কাজ করে। স্বাভাবিক ভাবেই তার লম্ব প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। লম্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হওয়ায় ঘর্ষণও বেশি হয়। এই কারণে কোনো বস্তুকে ঠেলার সময় টানার চেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়।
তাহলে বোঝা গেলো যে টেবিল আর বইয়ের স্পর্শতল অমসৃণ বলেই তাদের মাঝে ঘর্ষণ বলের সৃষ্টি হয়। আর দেখলি, তলের লম্ব প্রতিক্রিয়া যত বেশি হয়, ঘর্ষণ বল তত বেড়ে যায়।
কিন্তু মামা লম্ব প্রতিক্রিয়া বাড়লে ঘর্ষণ কেন বেড়ে যাচ্ছে? আর একটা ব্যাপার বলছি আমি পরীক্ষা করে দেখেছি আমাদের খাওয়ার টেবিলের মসৃণ কাঁচের তলের উপরে একটা মসৃণ কাঁচের ব্লককে গতিশীল করার সময় আটকে আটকে যায়। এক্ষেত্রে তো দুটি স্পর্শতল–ই খুব মসৃণ, তবু এমন হয় কেন?
তোর দুটি প্রশ্নের উত্তর একসাথেই দেবো। আগে দ্বিতীয়টির উত্তর দিই – এই যে দুটি বস্তুর নিজ নিজ স্পর্শতলের অমসৃণ খাঁজের জন্য ঘর্ষণ সৃষ্টি হয় – এটা একটা গোদা ধারণা। প্রকৃতপক্ষে, দুটি বস্তু পরস্পর সংস্পর্শে এলে শুধুমাত্র উঁচু-নিচু অংশগুলির মধ্যে প্রকৃত স্পর্শ ঘটে। তলের অমসৃণতার জন্য মোট স্পর্শ-অঞ্চলগুলির (contact spot) সংখ্যা কম হয় ও প্রতিটি স্পটের ক্ষেত্রফলও কম হয়। স্পটগুলির প্রতিটিতে চাপ (=লব্ধি লম্ব বল / ক্ষেত্রফল) বৃদ্ধির ফলে বস্তুদুটির পৃষ্ঠতলের অণু বা পরমাণুগুলি খুব কাছাকাছি চলে আসে। একটি অণুর ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অংশ আরেকটি অণুর যথাক্রমে ঋণাত্মক ও ধনাত্মক অংশের মধ্যে স্থির তাড়িতিক আকর্ষণ বলের উদ্ভব হয় (যা ভ্যান ডার ওয়ালস বল নামে পরিচিত) ও শক্তিশালী আণবিক বন্ধনের সৃষ্টি হয়। ফলে একে অপরের সাথে আটকে যাওয়ার জন্য বস্তু দুটির আপেক্ষিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। মোদ্দা কথা, আমি বলতে চাইছি: ঘর্ষণ বলের কারণ দুটি বস্তুর স্পর্শতলের অণুগুলির মধ্যেকার আকর্ষণ বল। অর্থাৎ, ঘর্ষণ এক ধরণের তড়িৎচুম্বকীয় বল।
আর তোর প্রথম প্রশ্নের উত্তরটি হল – লম্ব প্রতিক্রিয়া বাড়লে স্পর্শ-অঞ্চলগুলিতে প্রকৃত স্পর্শতলের ক্ষেত্রফল বেড়ে যায়। অর্থাৎ, বেশি সংখ্যক আণবিক বন্ধনের সৃষ্টি হওয়ার ফলে লম্ব প্রতিক্রিয়ার সাথে সমানুপাতিক হারে ঘর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
সাধারণত আমরা জানি, দুটি তলের অমসৃণতা যত বাড়বে, ঘর্ষণ তত বেশি হবে (চিত্র – ৩ক)। কারণ, স্পর্শতল যত অমসৃণ হয় তত উঁচু-নিচু খাঁজ বেশি থাকে। আবার স্পর্শতল দুটিতে মসৃণতা একটু বাড়লে উঁচু-নিচু খাঁজগুলির সংখ্যা তুলামূলক ভাবে কমে যায়। ফলে প্রকৃত স্পর্শতলও তুলনায় কমে যাওয়ায় ঘর্ষণ কমে যায়। কিন্তু মসৃণতা খুব বেড়ে গেলে আবার বেশি সংখ্যক অণু পরস্পরের সংস্পর্শে চলে আসে অর্থাৎ প্রকৃত স্পর্শতল অনেকটাই বেড়ে যায় (চিত্র – ৩খ)। ফলস্বরূপ বস্তু দুটির আপেক্ষিক গতি বেশি বাধা পায়। আমার মনে হয় দুটি মসৃণ কাঁচের তলে যেমন এই ব্যাপারটি ঘটে, তেমনি দুটি খুব মসৃণ ধাতব পাতের ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটে। দুটি স্পর্শতলের মাঝে একটু পিচ্ছিল তেল দিয়ে দিলে দেখবি ঘর্ষণ অনেকটাই কমে যায়। কারণ, এই তেল স্পর্শতল দুটির অণুগুলিকে কাছাকাছি আসতে দেয় না, মাঝে একটা দেওয়াল সৃষ্টি করে।
হম! বুঝেছি। তবে একটা প্রশ্ন – স্পর্শতল দুটির ক্ষেত্রফল বাড়লেও তো বেশি সংখ্যক অণু কাছাকাছি আসে, তবে এক্ষেত্রেও কি ঘর্ষণ বল বাড়বে?
দেখ, লম্ব প্রতিক্রিয়া না বাড়িয়ে স্পর্শতলের ক্ষেত্রফল বাড়ানো হলে বেশি সংখ্যক স্পর্শ-অঞ্চল ঐ লম্ব বলের আওতায় আসে। কিন্তু, একই সাথে যেকোনো একটি স্পর্শ-অঞ্চলে লম্ব বলের প্রভাব আগের থেকে কমে যায়। ফলে মোট আণবিক বন্ধনীর সংখ্যার পরিবর্তন হয় না এবং ঘর্ষণের মান অপরিবর্তিত থাকে।
বোঝার সুবিধের জন্য এই কথাটা অঙ্কের ভাষায় বললে এইরকম হবে। মনে কর, বই ও টেবিলের ক্ষেত্রে প্রথমে বইয়ের স্পর্শতলের আপাত ক্ষেত্রফল কম ছিল এবং তাতে স্পর্শ অঞ্চলগুলির সংখ্যা ছিল । আবার ধর, প্রতি স্পর্শ অঞ্চলে সংখ্যক আণবিক বন্ধন উপস্থিত। এক্ষেত্রে, মোট আণবিক বন্ধনী সংখ্যা = । এখন লম্ব প্রতিক্রিয়ার মান অপরিবর্তিত রেখে বই এর আপাত স্পর্শতল বাড়ালে সংখ্যক স্পর্শ অঞ্চল সৃষ্টি হয়, যা -এর চেয়ে বেশি ()। সেক্ষেত্রে, প্রতিটা স্পর্শ অঞ্চলে গড় লম্ব প্রতিক্রিয়ার মান কমে যাওয়ায় আগের থেকে কম সংখ্যক আণবিক বন্ধনীর () সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মোট আণবিক বন্ধনীর সংখ্যা = , যা হরেদরে প্রথম ক্ষেত্রের -এর প্রায় সমান হয়। অর্থাৎ, লম্ব প্রতিক্রিয়া বলের পরিবর্তন না করে স্পর্শতলের ক্ষেত্রফল বাড়ালে মোট আণবিক বন্ধনীর সংখ্যার মান অপরিবর্তিত থাকে। এর ফলে মোট ঘর্ষণবলের মানেরও কোনও পরিবর্তন হয় না।
তাই বলা হয়, ঘর্ষণ স্পর্শতলের প্রকৃতির উপর নির্ভর করলেও স্পর্শতলের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে না। যেমন সাইকেলের চাকায় বড় ব্রেক হলেও যে সুবিধা ছোট হলেও সেই একই সুবিধা।
হ্যাঁ মামা! এবারে পরিষ্কার হল ব্যাপারটা।
হম! ঘর্ষণ ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং! এখনো পর্যন্ত আমরা যে আলোচনা করলাম তাতে প্রায় সব ক্ষেত্রেই বস্তুগুলো কিন্তু শেষমেষ স্থির ছিল – ঠ্যালা খেয়ে চলার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছিলো খালি। কালকে চলমান বস্তুর ওপর যে ঘর্ষণ কাজ করে সেই নিয়ে কথা বলা যাবে।
চল, আজ বেড়ে খিদে পেয়েছে। জম্পেশ রান্নাও তো করেছে তোর দিদিমা। আর কথা নয়। এবার মিশন উদরর্পূর্তি।
লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।
Scan the above code to read the post online.
Link: https://bigyan.org.in/friction-advantage-disadvantage-part-01