30-12-2024 18:04:11 pm
Link: https://bigyan.org.in/bigyan-patrika-2
সম্পাদকমণ্ডলী, ‘বিজ্ঞান’
বিজ্ঞান পত্রিকা’-র দ্বিতীয় সংখ্যা বার করতে গিয়ে মনে হলো: কেন এই যাত্রাটা শুরু করেছিলাম আমরা, সেটা আরেকবার হয়তো ঝালিয়ে নেওয়া উচিত। আমাদের অসংখ্য বিজ্ঞানমনস্ক পাঠকদের কাছে হয়তো সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের জগৎ থেকে বঞ্চিত থাকা মানে জেনেশুনে একটা অন্য যুগে পড়ে থাকা। আর বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা হয়, এমন মাধ্যম তো হাতে গোনা কয়েকটি! তাই, ‘বিজ্ঞান’-এর প্রয়োজন কেন, সেই নিয়ে হয়ত প্রশ্ন নেই।
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়: ইন্টারনেট যুগে প্রিন্ট পত্রিকা কেন? তাও আবার এমন প্রিন্ট পত্রিকা যা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হয়? অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা বিশেষ উদ্দেশ্যের কথা বলি।
বিজ্ঞান পড়বো কি পড়বো না, এই সিদ্ধান্তটা খুব কাঁচা বয়েসেই আমাদের নিয়ে ফেলতে হয়। সাধারণত, সেটা হয় দশম শ্রেণীর পর, যখন সাইন্স, আর্টস বা কমার্সের মধ্যে কোনো একটা বেছে নিতে হয়। একবার বিজ্ঞান বেছে নিলে, তারপর কলেজে ভর্তির সময় আরেকবার আসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। খুব মোটাদাগে বললে, এবার বিকল্পগুলো হলো ফলিত বিজ্ঞান (applied science)/ ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান (pure science)। এই মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে কিসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগুলো নেব, আমাদের অনেকের কাছেই তার স্পষ্ট জবাব থাকে না। ফলস্বরূপ, বিজ্ঞান বেছে নেওয়ার বা না নেওয়ার কারণগুলোর সাথে অনেক সময় বিজ্ঞানের সরাসরি সম্পর্ক থাকেনা। যেমন, পরীক্ষার হলে অঙ্ক নামাতে না পেরে অঙ্ক তথা সমগ্র বিজ্ঞানের ভীতি কিম্বা কিছু বিশেষ ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে মোটা মাইনের চাকরির আকর্ষণ। এই কারণগুলো আমাদের সমাজ বা শিক্ষাব্যবস্থার দিকে আঙ্গুল তুলতে পারে, কিন্তু এইসব কারণে কেউ যদি বিজ্ঞান বেছে নেয় বা ছেড়ে দেয়, সেটা আক্ষেপের বিষয়।
অপরদিকে, বিজ্ঞান গবেষকদের যদি জিজ্ঞাসা করেন, কখন তারা প্রথম বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকেছিলেন, উত্তরে কিন্তু তাদের অনেকেই চলে যাবেন তাদের কৈশোরে। কোনো একটা বই, কোনো একটা লেখা, কোনো একজন তাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল: “বাহ্, এইটা করা যেতে পারে তো!” সেটা হতে পারে কোনো এক বিজ্ঞানের পত্রিকায় বা খবরের কাগজের কোনো লেখা, রেডিও-র কোনো অনুষ্ঠান অথবা কোনো পপুলার সাইন্সের বই। অনেক ক্ষেত্রেই, কোনো অসাধারণ বিজ্ঞান শিক্ষক কিম্বা শিক্ষিকা সেই ভূমিকা নেয়। কিন্তু, এমন একটা কিছুর সান্নিধ্যে যে সবাই আসবে, তার নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ করে, ইংরাজিতে স্বচ্ছন্দ না হলে সেই সুযোগ আরো অনেকটা কমে যায়।
সেই অভাবের কথা মাথায় রেখেই ‘বিজ্ঞান’ ওয়েবসাইট এবং বিশেষ করে, ‘বিজ্ঞান পত্রিকা’। শুধু নিজে পড়া নয়, আপনার চেনাপরিচিত ছাত্রছাত্রীদের যাতে পড়াতে পারেন, তার একটা সুযোগ করে দিতে চাই আমরা। আপনি যদি স্কুলের শিক্ষক কি শিক্ষিকা হন বা সন্তানের অভিভাবক হন, তাহলে এই প্রিন্ট-ফ্রেন্ডলি ফরম্যাটের পত্রিকা প্রিন্ট করে স্কুলের বুলেটিন বোর্ডে লাগাতে পারেন। বা অন্য কোনভাবেও ছাত্রদের কাছে পৌছে দিতে পারেন। পাঠ্যক্রমের বাইরে বৃহত্তর বিজ্ঞানের জগতের সাথে ছাত্রছাত্রীদের পরিচয় হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। তবেই না তারা বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, বিজ্ঞানের রাস্তায় নামবে কিনা। আর ভালোবেসে কোনো কিছু বেছে নেওয়ার চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে?
‘বিজ্ঞান পত্রিকা’-র দ্বিতীয় সংখ্যায় আমরা ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় থেকে একটা কি দুটো বাছাই লেখা তুলে ধরেছি। আশা করি বিজ্ঞানচর্চা কতটা মজাদার হতে পারে, তার এক ঝলক পাওয়া যাবে এখানে। যেমন, রসায়ন মানে শুধু সমীকরণ ব্যালান্স নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তা কতটা জড়িয়ে আছে, তা ‘লঙ্কাকাণ্ড’ পড়লে বোঝা যাবে। কেন জল খেলে লঙ্কার ঝাল জিভ থেকে যায়না, সেটাও কিন্তু রসায়ন। জীবন বিজ্ঞান মানে শুধুই হাজারটা নাম মুখস্থ নয়, ‘পেখম রহস্য’ সেটাই দেখায়। ময়ুরের বাহারি পেখম তো নেকড়ের জন্য আদর্শ, শিকার খুঁজে পেতে কোনো অসুবিধেই নেই, অথচ বিবর্তনের ফলে পেখম হারিয়ে যায়নি কেন, সেটাও কিন্তু জীবন বিজ্ঞানের প্রশ্ন। পদার্থবিদ্যা শুধু বইয়ের পিছনে দেখে অঙ্কের উত্তর মেলানো নয়, তার সাহায্যে মানুষ যে আজ অজানার কোন সুদূর প্রান্তরে পাড়ি দিয়েছে, তার কিছুটা পরিচয় দিচ্ছে ‘পরমশূন্য তাপমাত্রার কাছে’ বা ‘মহাবিশ্বের প্রথম আলো’। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখতে যে হাজারটা ব্যাকরণ বা সিনট্যাক্স মনে রাখতে হয়না, তা দেখাচ্ছে ‘খেলাচ্ছলে প্রোগ্রামিং’। এর সাথে থাকছে কিছু ইতিহাস, বিজ্ঞানের খবর, ইত্যাদি। বিজ্ঞানের ওয়েবসাইটে আগে এই লেখাগুলো যারা পড়েছিলেন তারা এই সুযোগে আবার একবার পড়ে নিতে পারেন।
আর সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে আছে ‘জলের দামে মাইক্রোস্কোপ’। প্রায় জলের দামে একটা মাইক্রোস্কোপ বানিয়ে সকলের কাছে পৌছে দেওয়ার এই প্রয়াসকে আমরা সেলাম জানাই। এটা কত উপযোগী আর সেই সাথে এটা বানাতে আবিষ্কারকদের কতটা সৃজনশীল হতে হয়েছে সেটাও আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা।
লেখাগুলো আমাদের খুবই পছন্দের। আশা করি, আপনাদেরও ভালো লাগবে।
‘বিজ্ঞান পত্রিকা’ ডাউনলোড করুন
লেখাটি অনলাইন পড়তে হলে নিচের কোডটি স্ক্যান করো।
Scan the above code to read the post online.
Link: https://bigyan.org.in/bigyan-patrika-2