পিৎজা বা অলম্পিক–এর মধ্যে মিল হ’ল বৃত্ত, প্রথমটার আকৃতি আর দ্বিতীয়টির পতাকায় পাঁচটা রিং বা বৃত্ত। আর বৃত্তাকার যে কোন কিছু দেখলে প্রথম যা মাথায় আসে তা হ’ল পাই (π)। পাই হ’ল বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসে অনুপাত তা সে বৃত্ত যত ছোট বা বড়ই হোক না কেন। ‘লাইফ অফ পাই’ সিনেমাটি যারা দেখেছ তাদের হয়ত মনে থাকবে ব্ল্যাক বোর্ড জুড়ে পাই এর বিশাল সংখ্যা মান এর কথা। এখন পর্যন্ত দশমিকের পরে এক লক্ষ কোটি সংখ্যার আবিষ্কার হয়েছে (এক ট্রিলিয়ন–এর কিছু বেশী)। বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসে অনুপাতের মান গণিতজ্ঞরা এখনও শেষ করে উঠতে পারেননি। এ গণনা শুরু হয়েছে তা প্রায় তিন–চার হাজার বছর আগে। পৃথিবীর অসংখ্য গণিতজ্ঞের সঙ্গে ভারতের আর্যভট্ট, নিলাকান্ত সোমায়াজি এবং রামানুজন–এর অবদান গণিত ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা আছে। ২০১৫ সালে ভারতের রাজভীর মীনা পাই (π) এর ৭০,০০০ মান স্মরণে রাখার গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।
তাহলে বোঝা গেল পাই এর ১০১ মান এই গল্পে লুকিয়ে রাখা আছে। কিন্তু কি ভাবে? নীচে সমাধান দেওয়া হ’ল।
সংখ্যা | শব্দের শেষ বর্ণ সঙ্কেত | উদাহরণ |
১ এক | ক, খ, ক্ষ | কেক, তাক, দেখা, নাক, ফাঁকি, শিক্ষা |
২ দুই | ই | কই, খাই, যাই, নাই |
৩ তিন | ন, ণ | নয়ন, বায়না, লাবণ্য |
৪ চার | র, ড় | ঘড়ি, হাতুড়ি, চুরি |
৫ পাঁচ | চ, ছ, জ | রাজা, লুচি, কাছা |
৬ ছয় | য় | ভয়, জয়, তনয় |
৭ সাত | ত, ৎ, থ | কলিকাতা, বিশ্বস্ত, কথা |
৮ আট | ট, ঠ | মাঠ, কপাট, বিস্কুট |
৯ ন্য়/নবম | ম | গরম, হজম, পদ্মা |
০ শূন্য | স, শ, ষ | হাসি, খুশী, মহিষ |
এখন যদি আমরা গল্পের প্রথম বাক্যটি দেখি তাহলে দেখব সেখানে ৩.১৪১৫৯২৬৫৩৬৮৯৭৯৩২ মান লুকিয়ে আছে। কি ভাবে তা দেখানো হ’ল –
“কোন এক রাজ্যের এক রাজা বলেছিল, “আমি চাই ধোঁয়া, ধূল মুছে, নতুন গাছ, কয়েকটি উত্তম হাসপাতাল এবং অতি উত্তম পান্থশালা নির্মান করাই।”
কোন = ৩, এক = ১ রাজ্যের = ৪, এক = ১, রাজা = ৫, আমি = ৯, চাই = ২, ধোঁয়া = ৬, মুছে = ৫, নতুন = ৩, গাছ = ৬, কয়েকটি = ৮, উত্তম = ৯, অতি = ৭, উত্তম = ৯, নির্মান = ৩, করাই = ২।
অর্থাৎ এই লাইনটা মনে রাখলে আমরা অনায়াসে দশমিকের পরে ১৬ টি সংখ্যা মনে রাখতে পারব। এখন তোমরা চাইলেই এই গল্পটি থেকে পাই এর ১০১ টি মান পেয়ে যাবে। দেখতো সেটা নীচের সংখ্যার সাথে মিলছে কিনা।
π = ৩.১৪১৫৯ ২৬৫৩৫ ৮৯৭৯৩ ২৩৮৪৬ ২৬৪৩৩ ৮৩২৭৯ ৫০২৮৮ ৪১৯৭১ ৬৯৩৯৯ ৩৭৫১০ ৫৮২০৯ ৭৪৯৪৪ ৫৯২৩০ ৭৮১৬৪ ০৬২৮৬ ২০৮৯৯ ৮৬২৮০ ৩৪৮২৫ ৩৪২১১ ৭০৬৭৯
এই মান মনে রাখার জন্য পাই–এম (পাই পোয়েম) নামে এক ধরণের কবিতা বা ছড়া পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয়েছে। যদিও যারা রেকর্ড গড়েন তাঁরা অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন (Piphilology)। বাংলা ভাষায় এমন পাই ছড়া আমার চোখে পড়েনি তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এখানে দশমিকের পরে একশত মানকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিন এক চার এক
পাঁচ নয় দুই
পই পই করে বলি
শুনিস না তুই
এর পর ছয় পাঁচ
তিন পাঁচ আট
অঙ্কের কথা শুনে
ফাঁকা হয় মাঠ
নয় সাত নয় তিন
দুই তিন আট
বিষম লাগলো বুঝি
ষাট ষাট ষাট
চার ছয় দুই ছয়
চার তিন তিন
অভ্যাস কর যদি
রোজ রাত দিন
আট তিন দুই পাঁচ
নয় পাঁচ ‘খালি’
‘খালি’ মানে শূন্য
দাও হাত তালি
হাত তালি দিতে লাগে
জেনো দুটো হাত
দুই আট আট চার
এক নয় সাত
আর এক ছয় নয়
তিন নয় নয়
পাই–এর মান কে যেন
পেয়ো না কো ভয়
তিন পাঁচ সাত এক
তার পর ‘জিরো’
পঞ্চাশ পের হ’ল
আজ তুমি হিরো
পাঁচ আট দুই শেষে
শূন্য ও নয়
সাত চার নয় চার
কেটে গেছে ভয়
চার পাঁচ নয় দুই
তিন জিরো সাত
খিদে পেলে খেয়ে নিই
পেট ভরে ভাত
আট এক ছয় চার
শূন্য ও ছয়
অনুমতি পেলে করি
এভারেস্ট জয়
দুই আট ছয় দুই
জিরো আর আট
ভুলে যাব এ ছড়া কি
সে বালাইষাট
নয় নয় আট ছয়
দুই আট জিরো
মনবল আজ আমার
মজবুত দৃঢ়
তিন চার আট দুই
পাঁচ তিন চার
শ্রীনিবাস রামানুজন
অঙ্কের স্যার
দুই এক এক সাত
জিরো ছয় একি
একশত হতে আর
দুটো ধাপ বাকী
সাত নয় শেষ হ’ল
আমার এই ছড়া
ট্রিলিয়ন আছে আরও
সংখ্যাতে ভরা
ব্যাস আর পরিধির
এ আজব খেল
অঙ্কেতে কেন তবু
দেয় না নোবেল?