সুতরাং দেখা যাইতেছে, প্রতি জীবনে দুইটি অংশ আছে। একটি অজর, অমর ; তাহাকে বেষ্টন করিয়া নশ্বর দেহ। এই দেহরূপ আবরণ পশ্চাতে পড়িয়া থাকে।
অমর জীববিন্দু প্রতি পুনর্জ্জন্মে নূতন গৃহ বাঁধিয়া লয়। সেই আদিম জীবনের অংশ,বংশপরম্পরা ধরিয়া বর্ত্তমান সময় পর্যন্ত চলিয়া আসিয়াছে। আজ যে পুষ্প-কলিকাটি অকাতরে বৃন্তচ্যুত করিতেছি, ইহার অণুতে কোটি বৎসর পূর্ব্বের জীবনোচ্ছ্বাস নিহিত রহিয়াছে।
কেবল তাহাই নহে। প্রতি জীবের সম্মুখেও বংশপরম্পরাগত অনন্ত জীবন প্রসারিত।
সুতরাং বর্ত্তমান কালের জীব অনন্তের সন্ধিস্থলে দণ্ডায়মান। তাহার পশ্চাতে যুগযুগান্তরব্যাপী ইতিহাস ও সম্মুখে অনন্ত ভবিষ্যৎ।
আর মনুষ্য ? প্রথম জীবকণিকা মনুষ্যরূপে পরিণত হইবার পূর্ব্বে কত পরিবর্ত্তনের মধ্য দিয়া আসিয়াছে ! অসংখ্য বৎসরব্যাপী, বিভিন্ন শক্তিগঠিত, অনন্ত সংগ্রামে জয়ী, জীবনের চরমোৎকর্ষ মানব !
আজ সেই কীটাণুর বংশধর, দুর্ব্বল জীব স্বীয় অপূর্ণতা ভুলিয়া অসীম বল ধারণ করিতে চাহে। আকাশ হইতে বিদ্যুৎ আহরণ করিয়া স্বীয় রথে যোজনা করে। অজ্ঞান ও অন্ধ হইয়াও পৃথিবীর আদিম ইতিহাস উদ্ধার করিতে উৎসুক হয়। ঘন তিমিরাবৃত যবনিকা উত্তোলন করিয়া ভবিষ্যৎ দেখিবার প্রয়াসী হয়।
যদি কখনও সৃষ্ট জীবে দৈবশক্তির আবির্ভাব সম্ভব হয় তবে ইহাই সেই দৈবশক্তি।
অধিক বিস্ময়কর কাহাকে বলিব ? বিশ্বের অসীমতা, কিম্বা এই সসীম ক্ষুদ্র বিন্দুতে অসীম ধারণা করিবার প্রয়াস– কোন্টা অধিক বিস্ময়কর ?
পূর্ব্বে বলিয়াছি, এ জগতের আরম্ভও নাই, শেষও নাই। এখন দেখিতেছি, এ জগতে ক্ষুদ্রও নাই, বৃহৎও নাই।
জীবনের চরমোৎকর্ষ মানব ! এ কথা সর্ব্ব সময়ের জন্য ঠিক নয়। যে শক্তি আদিম জীববিন্দুকে মনুষ্যে উন্নীত করিয়াছে, যাহার উচ্ছ্বাসে নিরাকার মহাশূন্য হইতে এই বহুরূপী জগৎ ও তদ্বৎ বিস্ময়কর জীবন উৎপন্ন হইয়াছে, আজিও সেই মহাশক্তি সমভাবে প্রবাহিত হইতেছে। ঊর্ধ্বাভিমুখেই সৃষ্টির গতি! আর সম্মুখে অন্তহীন কাল এবং অনন্ত প্রবাহিত হইতেছে।
১৮৯৫
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।