সূর্য্যকিরণে লালিত উদ্ভিদ্ ভোজন করিয়াই প্রাণিগণ জীবনধারণ করিতেছে ও বর্দ্ধিত হইতেছে। তবে দেখা যায় যে, এই ভূপৃষ্ঠের প্রায় সর্ব গতির মূলে সূর্য্যকিরণ। আকাশের স্পন্দন দ্বারাই পৃথিবী স্পন্দিত হইতেছে ; জীবনের স্রোত বহিতেছে।
আমাদের চক্ষুর আবরণ ক্রমে ক্রমে অপসারিত হইল। এক্ষণে আমরা বুঝিতে পারিতেছি যে, এই বহুরূপী বিবিধ শক্তিশালী জগতের মূলে দুইটি কারণ বিদ্যমান। এক, আকাশ ও তাহার স্পন্দন; অপর, জড় বস্তু।
জড় পদার্থ বিবিধ আকারে দেখা যায়। এক সময়ে লৌহবৎ কঠিন, কখনও দ্রব, কখনও বায়বাকার, আবার কখনও বা তদপেক্ষা সূক্ষ্মতর রূপে দেখিতে পাওয়া যায়। শূন্যে উড্ডীন অদৃশ্য বাষ্প আর প্রস্তরবৎ কঠিন তুষার একই পদার্থ ; কিন্তু আকারে কত প্রভেদ !
গৃহমধ্যে নিশ্চল বায়ু দেখিতে পাওয়া যায় না। উহার অস্তিত্ব সহসা আমরা কোনো ইন্দ্রিয়ের দ্বারা উপলব্ধি করিতে পারি না। কিন্তু এই অদৃশ্য সূক্ষ্ম বায়ুরাশিতে আবর্ত্ত উত্থিত হইলে উহা বিভিন্ন গুণ ধারণ করে। আবর্ত্তময় অদৃশ্য বায়ুর কঠিন আঘাতে মুহূর্ত্তমধ্যে গ্রাম জনপদ বিনিষ্ট হইবার কথা সকলেই জানেন।
জড় পদার্থ আকাশের আবর্ত্ত মাত্র। কোন কালে আকাশ-সাগরে অজ্ঞাত মহাশক্তিবলে অগণ্য আবর্ত্ত উদ্ভূত হইয়া পরমাণুর সৃষ্টি হইল। উহাদের মিলনে বিন্দু, অসংখ্য বিন্দুর সমষ্টিতে জগৎ, মহাজগৎ উৎপন্ন হইয়াছে।
আকাশেরই আবর্ত্ত জগৎরূপে আকাশ-সাগরে ভাসিয়া রহিয়াছে।
জার্ম্মাণ কবি রিক্টার স্বপ্নরাজ্যে দেবদূতের সাক্ষাৎ পাইয়াছিলেন। দেবদূত কহিলেন, “মানব, তুমি বিশ্ব-রচয়িতার অনন্ত রচনা দেখিতে চাহিয়াছ– আইস, মহাবিশ্ব দেখিবে।” মানব দেবস্পর্শে পৃথিবীর আকর্ষণ হইতে বিমুক্ত হইয়া দেবদূতসহ অনন্ত আকাশপথে যাত্রা করিল ! আকাশের উচ্চ হইতে উচ্চতর স্তর ভেদ করিয়া তাহারা ক্রমে অগ্রসর হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে সপ্তগ্রহ পশ্চাতে ফেলিয়া মুহূর্ত্তের মধ্যে সৌরদেশে উপনীত হইল। সূর্য্যের ভীষণ অগ্নিকুণ্ড হইতে উত্থিত মহাপাবকশিখা তাহাদিগকে দগ্ধ করিল না। পেরে সৌররাজ্য ত্যাগ করিয়া সুদূরস্থিত তারকার রাজ্যে উপস্থিত হইল। সমুদ্রতীরস্থ বালুকাকণার গণনা মনুষ্যের পক্ষে সম্ভব, কিন্তু এই অসীমে বিক্ষিপ্ত অগণ্য জগতের গণনা কল্পনারও অতীত। দক্ষিণে, বামে, সম্মুখে, পশ্চাতে দৃষ্টিসীমা অতিক্রম করিয়া অগণ্য জগতের অনন্ত শ্রেণী ! কোটি কোটি মহাসূর্য্য প্রদক্ষিণ করিয়া কোটি কোটি গ্রহ ও তাহাদের চতুর্দ্দিকে কোটি কোটি চন্দ্র ভ্রমণ করিতেছে। ঊর্দ্ধহীন, অধোহীন, দিকহীন অনন্ত। পরে এই মহাজগৎ অতিক্রম করিয়া আরও দূরস্থিত অচিন্ত্য জগৎ উদ্দেশে তাহারা চলিল। সমস্ত দিক আচ্ছন্ন করিয়া কল্পনাতীত নূতন মহাবিশ্ব মুহূর্ত্তে তাহাদের দৃষ্টিপথ অবরোধ করিল। ধারণাতীত মহাব্রহ্মাণ্ডের অগণ্য সমাবেশ দেখিয়া মানুষ একেবারে অবসন্ন হইয়া কহিল, “দেবদূত ! আমার প্রাণবায়ু বাহির করিয়া দাও ! এই দেহ অচেতন ধূলিকণায় মিশিয়া যাউক। অসহ্য এ অনন্তের ভার ! এ জগতের শেষ কোথায় ?”
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।