সুমন্ত্র সরকার
ব্রান্ডেইস ইউনিভার্সিটি, ম্যাসাচুসেটস
মূল আলোচনায় আমরা দানাদার পদার্থের স্তম্ভের ব্যাপারে কথা বলেছি। বিজ্ঞানীরা বুদ্ধি লাগিয়ে খুব সহজ উপায়ে এই স্তম্ভের তলায় বলের পরিমান মেপেছিলেন।a তোমরাও খুব সহজে বাড়িতে বসে এই পরীক্ষাটা করতে পারো। আর তোমাদের কাছে কম্পিউটার থাকলে এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণটাও করতে পারো। নীচে আমি পদ্ধতির একটা খসড়া দিলাম, কয়েকজন বন্ধু মিলে পরীক্ষাটা করে ফেলো আর আমাদের জানাও তোমাদের পরীক্ষার ফলাফল।
পরীক্ষা
উপকরণ:
- দানাদার পদার্থ: সাইজে একটু বড় হলে ভালো হয়। বল বেয়ারিং বা কাঁচের গুলি ব্যবহার করলে সবথেকে ভালো হয়। সর্ষে ব্যবহার করলে কার্বন পেপারের ছাপগুলো বুঝতে অসুবিধা হবে।
- দুমুখ খোলা চোঙ (সিলিন্ডার): কোল্ডড্রিঙ্কসের বোতল কেটে নিজে বানাতে পারো অথবা PVC পাইপ কেটে কেটে বানাতে পারো। পাঁচ-ছয়টা বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের সিলিন্ডার হলে ভালো হয়।
- কার্বন পেপার আর সাদা কাগজ, যাতে কার্বন পেপারটার ছাপ পড়বে।
- স্ক্যানার বা ডিজিটাল ক্যামেরা।
- Matlab বা ওই জাতীয় প্রোগ্রামb যাতে পরীক্ষাটার বিশ্লেষণ করা যায়।
পদ্ধতি:
- দানাদার পদার্থ দিয়ে একটি চোঙ পুরো ভর্তি করো।
- এবার সাবধানে চোঙটাকে কার্বন পেপার আর সাদা কাগজের উপর রাখো।
- হালকা হালকা করে টোকা মারতে থাক। দেখবে দানাদার পদার্থগুলো এদিক ওদিক সরে যাচ্ছে। কৌটোতে বিস্কুট বা মুড়ি ঢোকানোর সময় আমরা যেমন ঠুকে ঠুকে বা থাবরা মেরে জায়গা করি অনেকটা সেইরকমই, কিন্তু আস্তে আস্তে কর,যাতে দানাদার পদার্থগুলো না লাফায়। মোটামুটি এক-দু মিনিট ধরে টোকা মারো, যাতে দানাদার পদার্থগুলো সরা বন্ধ হয়। এই পদ্ধতিকে বলে compaction (কমপ্যাকসান)। বড় বড় বাড়ির ভিত বানানোর সময় এরকম করা হয়, যাতে তলার মাটি পরবর্তীকালে সরে গিয়ে দুর্ঘটনা না ঘটায় ।
- এবার দানাদার পদার্থগুলোর উপরে ভারী একটা পদার্থ বসিয়ে দাও (৫ বা ১০ কেজির বাটখারা বসালে ভালো হয়)।
- দ্যাখো কোনো দাগ পড়ল কিনা। যদি না পড়ে, আরও ভারী ওজন নিয়ে দেখতে পারো।
- এই অবস্থায় দশ-পনের বার করে পরীক্ষাটা কর, যাতে যথেষ্ট পরিমানে data পাওয়া যায়। খেয়াল রেখো যাতে চোঙটা না নড়ে। প্রত্যেক পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা সাদা কাগজ ব্যবহার কর।
- আবার নতুন করে চোঙটা ভর আর পরীক্ষাটা কর। কিছু আলাদা দেখতে পেলে কি?
বিশ্লেষণ:
- সাদা কাগজগুলো স্ক্যান কর।
- এবার matlab ব্যবহার করে সাদা কাগজের উপর দাগগুলোর বিশ্লেষণ কর। এই পদ্ধতিকে বলে image processing (ইমেজ প্রসেসিং)।
- দাগ যত বেশি, বলের পরিমান তত বেশি। কোনো একটা দাগের মাপকে একক পরিমান বল হিসেবে ধর। এই এককের উপর ভিত্তি করে বাকি বল গুলোর পরিমাপ কর।
- এবার বলগুলোর probability distribution (প্রবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন) বের কর। কি দেখলে?
তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
আমরা এবার একটা সহজ তত্বের দ্বারা উপরের পরীক্ষাটা বোঝার চেষ্টা করবো। এই ধরনের তত্ত্বকে ইংরেজিতে বলে Toy Model (টয় মডেল)। আমি এখন যে তত্বের কথা বলব, তাকে বলে q-model। আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে এই মডেলটা বেরোয়। পেপারটা এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারো। আজ প্রায় বছর কুড়ি পরে আমরা আবার এই মডেলটা নিয়ে খেলা করব।
উপকরণ:
Matlab বা ওই জাতীয় প্রোগ্রাম যাতে পরীক্ষাটার বিশ্লেষণ করা যায়।
পদ্ধতি:
- Triangular lattice-এ (নীচের ছবি) বেশ কয়েকটা দানাকে সাজাও। প্রত্যেকটা সারিতে মোটামুটি এক-দুহাজার করে দানা রাখো। এরকম করে বেশ কয়েকটা (১০০-২০০ যেমন ইচ্ছা) সারি বানাও।
- প্রত্যেক দানার ওজন w আর r নম্বর সারির i নম্বর দানার উপর মোট বলের পরিমান F(r,i)।
- প্রত্যেক দানা তার নীচের সারিতে সবথেকে নিকটবর্তী দানাদুটিতে এই F(r,i) আর নিজের ওজন পুরোপুরি বিতরণ করে দেয়। কিন্তু দানা দুটির মধ্যে বিতরণের পরিমান আলাদা আলাদা হতে পারে। ধরা যাক, একটা দানা এই বলের q অংশ পেলো, তাহলে অন্য দানাটা 1 – q অংশ পাবে। কোন দানা কোন অংশ পাবে, সেটা কিন্তু পুরো random বা এলোমেলো। তাই একটা কয়েন টস (কম্পিউটারে) করে ঠিক করা যায় কোন দানা কোন অংশটা পাবে। তাহলে একটা দানার উপর বলের পরিমান হলো q*(F+w) আর অন্য দানার উপর বলের পরিমান হলো (1-q)*(F+w)। এই q হলো model-টার একটা parameter। তাই একে q-model বলে।
- এইভাবে বলের আদান প্রদান করতে থাকো।
- শেষ হলে, বিভিন্ন সারিতে বলের probability distribution (প্রবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন) মাপো। কি দেখতে পেলে?
- প্রত্যেকটা দানায় বলের পরিমান একটা রং দিয়ে দেখাও। দেখবে বলধারার মত আকার দেখতে পাবে। দ্যাখো তো পরীক্ষার সাথে মেলে কিনা!
তথ্যসূত্র:
[a] The University of Waikato | Science Learning Hub
[b] সম্পাদকদের মন্তব্য – Matlab সফ্টওয়্যারটি বহুল প্রচলিত হলেও আর্থিক কারণের জন্য সহজলভ্য নাও হতে পারে। তাই তোমাদের সুবিধার জন্য আমরা বিকল্প কয়েকটি সফ্টওয়্যারের লিংক দিলাম যা বিনামুল্যেই তোমরা ব্যবহার করতে পারবে এবং যার কোড ল্যান্গুয়েজের বেশিরভাগটাই Matlab-এর মতো। এছাড়া Fiji সফ্টওয়্যরটি দিয়ে কোনরকম কোড না লিখেই বলের পরিমাপ ( কালো দাগের ইন্টেনসিটি ) করতে পারবে। নিচে আমরা সফ্টওয়্যারগুলোর লিংক দিলাম। দেখোতো ইন্টারনেটে কোড খুঁজে নিয়ে কিভাবে তোমরা এই ইমেইজ প্রসেসিং করতে পারো।
https://www.gnu.org/software/octave/
https://www.scilab.org/
https://fiji.sc/Downloads