যদি বলা হয় রক্ত সঞ্চালনের তারতম্য থেকে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ বলে দেওয়া যায়, আশ্চর্য লাগবে কি? গল্প নয়, সত্যি। কোন কাজের সাথে মস্তিষ্কের কোন জায়গাটা সক্রিয় হয়ে উঠছে, সেটা তক্ষুনি বলে দেওয়া যায়। পদ্ধতির নাম ফাংশানাল ম্যাগনেটিক রেসনান্স ইমেজিং বা fMRI। এই পদ্ধতির একজন পথিকৃত, জ্যাক বেলিভো, মারা গেলেন গত সপ্তাহে।
সাল ১৯৯১। ম্যাগনেটিক রেসনান্স ইমেজিং-এর উপর একটা সম্মেলন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য তিরিশ পেরোনো এক বিজ্ঞানী বললেন তার নতুন কাজের কথা। তিনি দাবি করলেন, রক্ত চলাচল মেপে বলে দিতে পারেন একটা বাইরের বস্তু দেখে মস্তিষ্কের কোন জায়গাটা সক্রিয় হচ্ছে। কিভাবে মাপা হবে সেটারো একটা ফিকির বার করেছেন। রক্তের মধ্যে একটা বিশেষ ফেরোম্যাগনেটিক এজেন্ট (ferromagnetic agent) প্রবেশ করাতে পারলেই কাজ হয়ে যায়। এটা যে করা সম্ভব, সেটা দেখাতে কয়েকটা ছবি সঙ্গে করে এনেছিলেন তিনি। এই ছবিগুলি-ই হয়ত মস্তিষ্কের সক্রিয় স্থিতি-র প্রথম “লাইভ টেলেকাস্ট”।
এটা এখন আর করা হয়না। রক্তে ফেরোম্যাগনেটিক এজেন্ট ঢোকানো খানিক বিপজ্জনক আর অস্বস্তিকর-ও বটে। তবে বেলিভো যে পথ দেখিয়েছিলেন, তাতে অনেকদুর এগোনো গেছে। তার প্রস্তাবের আগে এটা ভাবা যেত না যে মস্তিষ্কের সক্রিয় স্থিতি-র ছবি এমন সরাসরি পাওয়া যাবে। এর আগে যেসব পদ্ধতি চালু ছিল, তাতে পর্যবেক্ষণের সময় মস্তিষ্কের একটা স্থির ছবি পাওয়া যেত। সেই মুহুর্তে মস্তিষ্কের কোন জায়গাটা সজাগ আছে, সেটা খুব সুক্ষভাবে বলা যেত না। বেলিভোর পদ্ধতিতে এই বাধা আর রইলো না। মস্তিষ্কের ক্রিয়ার সাথে বাইরের উদ্দীপকের সরাসরি যোগাযোগ বোঝা সম্ভব হলো।
জ্যাক বেলিভো আর নেই। তবে তার কল্যানে মানব মস্তিষ্কটাকে আর হয়ত ততটাও দুর্ভেদ্য মনে হয় না।
ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস