বিজ্ঞান পত্রিকা-র দ্বিতীয় মুদ্রণ সংখ্যা প্রকাশিত হলো! দৈনিক কাগজের থেকে গভীরে কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের থেকে মনোগ্রাহী প্রাঞ্জল ভাষায় বিজ্ঞান জানতে চাইলে এই সংখ্যাটি সংগ্রহ করুন। নিচে পত্রিকার সম্পাদকীয় অংশটি তুলে ধরা হলো। সবশেষে, বইটা কোথায় কেনা যেতে পারে, তার ঠিকানা দেওয়া হলো।
আমরা একবিংশ শতাব্দীর বাসিন্দারা বিগত কয়েকশো বছরের বিজ্ঞান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। বড় হয়েছি বিজ্ঞানের ছত্রছায়ায়। কিন্তু সেই বিজ্ঞান আমাদের জীবনের প্রতিটি অংশে মিশে থাকা সত্ত্বেও যেন বহুদূরে চলে গেছে। বিজ্ঞানের একদম প্রথম সারিতে কোন লড়াইটা চলছে, সেটা আমরা সাধারণরা যে বুঝতে পারবো, সেই আশা করাও ধৃষ্টতা মনে হয়। সমাজে ধনসম্পদের বৈষম্যের মতো জ্ঞানের জগতেও একটা বৈষম্য দেখা দিয়েছে বলা যায়। ইন্টারনেট-এর কল্যাণে তথ্যমূলক জ্ঞান হাতের নাগালে এসে গেলেও অনেক তথ্যের মর্মোদ্ধার করতে যে ফুটনোটগুলো চাই, সেগুলো যেন হারিয়ে গেছে।
এই বৈষম্যকে দূর করতে এবং বিজ্ঞানকে আবার মানুষের ধরাছোঁয়ার নাগালে নিয়ে আসতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এক বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ তৈরি করার লক্ষ্যে সকলকে সামিল করাই তাদের উদ্দেশ্য। বাংলাতে ‘বিজ্ঞান’ এমনই একটা প্রয়াস। কথ্য ভাষায়, মাতৃ ভাষায় বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের খবরগুলি ত্রুটিহীন ভাবে প্রচার ও প্রসার করার উদ্দেশ্য নিয়েই “বিজ্ঞান” মাঠে নেমেছে। কয়েক বছর ইন্টারনেট-এ বাসা করার পর ২০১৮-র শেষে পত্রিকাটির প্রথম মুদ্রণ সংখ্যা বার হয়েছিল bigyan.org.in ও কন্টাই সায়েন্স অ্যাকাডেমীর যৌথ উদ্যোগে। সেই সংখ্যার সাফল্যের পর সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রকাশিত হতে চলেছে দ্বিতীয় সংখ্যা। গত কয়েক মাসে সমস্ত স্তরের পাঠক/পাঠিকাদের কাছ থেকে যে উৎসাহ আমরা পেয়েছি সেটাই এই দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশের মূলধন। স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই সংখ্যা পরিভ্রমণ করেছে কলেজ, গবেষণা কেন্দ্র এবং বিজ্ঞানমেলা প্রাঙ্গণ সহ আরও বিভিন্ন জায়গায়।
গত সংখ্যার মতো “বিজ্ঞান” পত্রিকার এই সংখ্যাতেও পাতায় পাতায় আছে নতুন আবিষ্কারের গল্প, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা নিত্য নতুন গবেষণার হাল হকিকত। তবে আমরা “বিজ্ঞান”-এর সদস্যরা এটাও বুঝি যে সবাই একভাবে শেখে না। তাই শুধু লেখা পড়ে নয়, আছে বিভিন্নভাবে বিজ্ঞান শেখার সুযোগ – কার্টুন-এর সাহায্যে প্রশ্নোত্তর, মজার ধাঁধা এবং হাতেকলমে নিজে বাড়িতে বসে করতে পারবে এমন কিছু সহজ পদ্ধতি। আর এসবই সহজ বাংলায় লিখছেন সেইসকল বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানপ্রেমী যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এইসব গবেষণার সাথে যুক্ত। অর্থাৎ, একদম বিজ্ঞানের আজকের গবেষণা সরাসরি গবেষকদের কাছ থেকে পৌঁছে যাচ্ছে তোমাদের কাছে।
কিরকম গবেষণা? ধরো, খবরের কাগজে পড়লে “মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কার হয়েছে”। কিন্তু সে যে কি জিনিস এবং কেনই বা এত গুরুত্বপূর্ণ সেটা ভালো করে বোঝানো আছে, এমন লেখা খুব বেশি নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই তরঙ্গ বের করা এত কঠিন কাজ যেন খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজা। কারণ এই তরঙ্গ নাকি ভীষণ ক্ষীণ। এখন প্রশ্ন হলো, হাজার হাজার তরঙ্গের মাঝে বিজ্ঞানীরা এই ক্ষীণ তরঙ্গ খুঁজে পেলেন কিভাবে? সেটা জানতে মন চাইবে বইকি। সেই জানার ইচ্ছে মেটাতে গবেষণার সাথে সরাসরি জড়িত এক বৈজ্ঞানিক লিখছেন সেই বিশাল কর্মকাণ্ড নিয়ে।
যদি তোমাকে কেউ প্রশ্ন করে, এই মহাবিশ্বে প্রথম আলো এসেছিল কি ভাবে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, প্রথম আলো? তুমি ভাবছ সূর্যের কথা, সে তো এই সে দিনের নক্ষত্র। তারও অনেক লক্ষ বছর আগে কেমন ছিল? খুব বেশী ভাবার প্রয়োজন নেই, সেই গল্পটাই তোমাদের শোনাবেন প্রফেসর নিধিরাম পাটকেল-এর ছদ্মবেশে এক কসমোলজিস্ট।
তারপরে ধরো, আমরা প্রায়ই শুনে থাকি বৈদিক গণিতের কথা। বেদের যুগে নাকি আধুনিক গণিতের অনেক ধারণাই ছিল। কিন্তু সেটা কি সত্যি নাকি অতিরঞ্জন? আর, এই ‘বৈদিক গণিত’ বলে যা প্রচলিত তা কি সত্যিই বেদের যুগেরই আবিষ্কার? অনেকসময় এইসব না ভেবেই আমরা পূর্বপুরুষদের জন্য গর্ববোধে মেতে থাকি। পত্রিকার এই সংখ্যাতে আমরা জেনে নিতে পারবো ঠিক কবে এবং কতটা অগ্রগতি হয়েছিল আমাদের প্রাচীন গণিত বিদ্যার। তাহলে হয়ত ভবিষ্যতে আমরা মিথ্যেটাকে এড়িয়ে যথার্থ কারণে গর্ববোধ করতে পারবো।
শুধু গ্রহনক্ষত্র নয়, বিজ্ঞানের প্রশ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও চারিদিকের পরিবেশে। আচ্ছা বলতে পারবে, সাবান কি করে ময়লা পরিষ্কার করে? জানি তো, অনেক অনেক ফেনা হয়। কিন্তু কেন সাবান ঘষলে আমাদের জামা কাপড়ের তেলচিটে দাগ উঠে যায় সেটা কি ভেবে দেখেছ কখনও? কিম্বা জানো কি, শুধু মানুষ নয়, পিঁপড়েরাও চাষ করে? চমকে গেলে তো! ভাবছো, পিঁপড়েরা আবার চাষি হ’ল কবে থেকে? কি চাষ করে? কাদের জন্য করে? এইসব প্রশ্নের উত্তরগুলো এই সংখ্যাতেই পাবে।
বা হয়তো তোমার ঘরে একটা কম্পিউটার পড়ে আছে, ই-মেল আর ইন্টারনেট ঘাঁটার বাইরে কিছু করা হয়না। প্রোগ্রামিং শিখতে চাও, কিন্তু কেউ একটু ধরিয়ে দিলে ভালো হতো। তাই যদি ভাবো তাহলে ভয় পাবার কোন কারণ নেই, এই সংখ্যাতে তারও একটা সমাধান পাবে।
এইরকমই নানান পাঁচমেশালি বিষয়ে লেখা আছে এই সংখ্যায়। এবং এতো রকমের বিজ্ঞান নিয়ে বলা ও ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকার কথা বহু মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এর পিছনে বহু বিজ্ঞানপ্রেমীর ভূমিকা আছে। তাদের মধ্যে বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাতে চাই জনপ্রিয় রেডিও ব্যক্তিত্ব মীরকে, যিনি সম্পূর্ণ অব্যবসায়িক উদ্যোগে ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকার কথা পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর বহু শ্রোতার কাছে। ধন্যবাদ জানাই বসু বিজ্ঞান মন্দিরকে, বিশেষত অধ্যাপক গৌতম বসুকে, যাঁর অসামান্য উৎসাহ আমাদের অনুপ্রাণিত করে বারবার। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের স্টলে ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকা স্থান পেয়েছে প্রবাদপ্রতিম সব বিজ্ঞানসাহিত্যের সাথে এক টেবিলে। এছাড়াও ‘বিজ্ঞান’-এর প্রসারের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই আকাশবাণী কলকাতার ডঃ মানস প্রতিম দাসকে, যিনি আজ প্রায় দু’দশক ধরে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানপ্রসারের দুরূহ কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন, ও তাঁর লেখনীতে ‘বিজ্ঞান’-কে সমৃদ্ধ করেছেন।
তাহলে আর কি, শুরু হোক পাতা ওল্টানো। বিজ্ঞান ভালোবাসো কিম্বা ভয় পাও, যেই হও না কেন, ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকা তোমারই জন্য।
জনপ্রিয় রেডিও মির্চি হোস্ট মীর-এর সাথে আলোচনায় বিজ্ঞান টীম-এর রাজীবুল ও স্বাগতা। বিজ্ঞান পত্রিকা ছাড়াও আলোচনায় উঠে এলো নানারকম প্রশ্ন: স্কুলের বই-এর বাইরে আমরা বিজ্ঞান নিয়ে কেন ভাববো, মানুষের কাছে বিজ্ঞানের খবরের উৎসগুলো কি আর সঠিক ও ভুয়ো খবরের যাচাই করার পদ্ধতি কি হওয়া উচিৎ।
বইটার মূল্য: ৩০ টাকা
যেখানে যেখানে বইটা পাওয়া যাবে:
কলকাতা বইমেলা (জানুয়ারী ২৯, ২০২০ – ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২০)
[১] বসু বিজ্ঞান মন্দিরের স্টলে, হল নম্বর ১, স্টল নম্বর ২২ (৪ নম্বর গেটের পাশে)
[২] গুরুচণ্ডা৯ -র স্টলে, স্টল নম্বর ৪৪৬ (৮ নম্বর গেটের পাশে)
পশ্চিম মেদিনীপুর
ভূর্জপত্র বই দোকান, তাঁতিগেড়িয়া লেবেল ক্রসিং, মেদিনীপুর
পূর্ব মেদিনীপুর
রয়েল আই.টি.আই., প্রফেসর কলোনী, কন্টাই, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ-৭২১৪০৪
অনলাইন
ই-মেল: [email protected] (অনলাইন অর্ডার করলে পোস্টাল খরচ ৩০ টাকা লাগবে।)
এছাড়াও, আপনি যদি আপনার স্কুল-এর জন্য কিংবা ক্লাব-এর জন্য একসাথে অনেকগুলি বই কিনতে চান, তাহলে আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়।
Bangladesh a nei??