বিবিধ পরীক্ষার পরে অবশেষে দেখা গেল যে, পিঁপড়েদের ডিম পর্যন্ত আদিম জৈব-বস্তুর বংশানুবর্তী একটা ধারাবাহিকতা আছে বটে, কিন্তু ডিম ফোটবার পর থেকেই একটা বিশেষ খাদ্যবস্তুর প্রভাবে বাচ্চার আকৃতি এবং প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে থাকে । এই খাদ্যবস্তুর পরিমাণের উপর আকৃতি এবং প্রকৃতিগত পরিবর্তন নির্ভর করে । অবশ্য এরও একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে । ব্যাপারটা আরও একটু পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে বলছি । বছরের অধিকাংশ সময়েই বাসার মধ্যে কেবল হাজার হাজার শ্রমিক-পিঁপড়ে দেখতে পাওয়া যায় । শ্রমিকদের দু-একটার ডিম থেকে সেই সময়ে আরও কিছু কিছু শ্রমিক পিঁপড়ে জন্মগ্রহণ করে । পূর্বেই বলেছি, এই পিঁপড়েরা গাছের উপর বাসা বাঁধে এবং সাধারণত গাছের উপরেই ঘোরাফেরা করে থাকে এবং মৃত কীট-পতঙ্গ, পাখির পালক, মাছের কাঁটা প্রভৃতি সংগ্রহ করে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে । শীত ঋতুর অবসানে ফাল্গুনের প্রারম্ভে গাছে গাছে নতুন পত্র-পল্লব এবং মুকুলের মধ্যে কয়েক প্রকারের অজস্র গাছ-উকুন আত্মপ্রকাশ করে থাকে । এই সব মুকুল ইং গাছ-উকুনের শরীর থেকে অতি অল্প পরিমাণে মধুর মতো এক প্রকার পদার্থ নিঃসৃত হয়ে থাকে । এই সময়ে পিঁপড়েদের মধু সংগ্রহ করবার মরসুম । তারা প্রায় সকল কাজ পরিত্যাগ করে এই মধুর লোভেই দিনরাত্রি পত্র-পল্লব এবং গাছ-উকুনের মধ্যে অবস্থান করে । এই মধুর মধ্যে ভিটামিন-বি-১ নামক এক প্রকার খাদ্যপ্রাণের অস্তিত্ব আছে । এই মধু খাবার পর শ্রমিক-পিঁপড়েরা বাসায় এসে তা উদ্গীরণ করে বাচ্চাগুলিকে খাওয়ায় । শ্রমিক-পিঁপড়ের অনেকেই পরপর বাচ্চাগুলিকে উদ্গীর্ণ মধু খাওয়াতে থাকে । এক-একটা বাসায় হাজার হাজার বাচ্চা থাকে এবং শ্রমিকদের সংখ্যাও অগণিত; কাজেই কোন কোন বাচ্চাকে কতবার খাওয়ানো হলো, তার কোনো হিসাব ঠিক রাখতে পারে না । এর ফলে কোনো কোনো বাচ্চা প্রচুর পরিমাণে এই খাদ্যপায় আবার অনেকে অতি সামান্য মাত্র পেয়ে থাকে । যারা এই খাদ্য বেশি পরিমাণে পায় তারা অতি দ্রুতগতিতে বর্ধিত হয়ে রানীর আকৃতি পরিগ্রহ করে । যারা মাঝামাঝি পরিমাণে মধু খেতে পায়, তারা পুরুষ-পিঁপড়েতে পরিণত হয় । যারা অতি সামান্য পায় অথবা মোটেই পায় না তারাই বড় এবং ছোট বিভিন্ন রকমের কর্মী বা শ্রমিক রূপে আত্মপ্রকাশ করে । যৌনমিলন ব্যতিরেকে উৎপন্ন পুরুষ এবং মধুর প্রভাবে উৎপন্ন পুরুষ পিঁপড়ের মধ্যে হয়তো কোনও প্রকৃতিগত পার্থক্য বিদ্যমান থাকতে পারে, তবে তা এখনও পরীক্ষাসাপেক্ষ বলে নিশ্চিতরূপে কোনও কথা বলা যায় না । তবে একথা ঠিক যে পত্র-পল্লব এবং গাছ উকুনের দেহনিঃসৃত রসপরিবেশনের তারতম্যানুসারে প্রয়োজনমত রানী এবং কর্মী-পিঁপড়ে উৎপাদন করা যেতে পারে ।মোটের উপর খাদ্য পদার্থের মধ্যে ভিটামিন-বি এবং সেই জাতীয় অন্যান্য কোন পদার্থের অভাবের ফলেই শ্রমিক পিঁপড়ের উৎপত্তি ঘটে থাকে ।
________________
প্রবাসী, শ্রাবণ,১৩৫১
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।