জিতকে টুকরো টুকরো করে ফেলে । অনেক সময় দেখা যায়- বিজেতার পায়ে অথবা শুঁড়ে পরাজিতের মস্তক অথবা দেহের প্রথমার্থ ঝুলে রয়েছে । পরাজিত যে মরণ-কামড় দিয়েছিল, মৃত্যর পরেও তা ছাড়ে নি । তাছাড়া দেখা যায়, শরীরের কতকাংশ সমেত তা বিজেতার শরীরে আঁকড়ে রয়েছে । বিজেতাকে আমরণ এভাবে শত্রুর দেহাংশ বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে । কর্মীদের এই যে কর্তব্যপরায়ণতা, দৃঢ়তা এবং পুরুষ ও রানীর প্রতি সেবাপরায়ণতা – এই সকল প্রবৃত্তির বিকাশ হলো কেমন করে ? অথচ এরা নিজের সুখদুঃখ সম্বন্ধে অনেকটা উদাসীন – এটাই বা সম্ভব হলো কিরূপে ? তাছাড়া আর একটা বিস্ময়ের বিষয়ে এই যে, এদের প্রজননক্ষমতা নেই কিন্তু কোনও কারণে বাসার শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকলে অথবা রানীর অভাব ঘটলে এই শ্রমিক দলের মধ্যে থেকে দু-একটি, যৌনসম্পর্ক ব্যতীতই ডিম পাড়তে আরম্ভ করে এবং এই প্রকার ডিম থেকে কেবলমাত্র শ্রমিকই জন্মগ্রহণ করে । একটি কথা জানা দরকার যে পিঁপড়েদের শ্রমিকেরা সকলেই স্ত্রী-জাতীয়, কিন্তু অপরিপুষ্ট অর্থাৎ এদের প্রজননযন্ত্র মোটেই পরিপুষ্টি লাভ করে না । তথাপি প্রয়োজনবোধ যৌন-সংসর্গ ব্যতিরেকে ডিম পাড়তে পারে ।
কিন্তু কেমন করে রানীর ডিম থেকে নির্দিষ্ট আকৃতিবিশিষ্ট লক্ষ লক্ষ শ্রমিক পিঁপড়ে জন্মগ্রহণ করে ? পর্যবেক্ষণের ফলে যতদূর জানা গেছে, তাতে দেখা যায় – সাধারণত ফাল্গুন মাসের প্রথম দিক থেকে বাসার মধ্যে রানী এবং পুরুষদের অপরিণত বাচ্চার আবির্ভাব ঘটে । এর পর আষাড়-শ্রাবণ মাস থেকে আবার পুরুষ এবং রানী পরিণত অবস্থায় উপনীত হবার পর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ডানায় ভর করে আকাশে উড়ে যায় । উড়তে উড়তে পুরুষ ও রানীর মিলন সংঘটিত হয় । পুরুষ পিঁপড়েরা আর বাসায় ফিরে আসে না । রানী যে কোনও একটা বাসায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করে । তার পরেই তার ডানা খসে যায় এবং কিছুকাল বাদেই ডিম পাড়তে আরম্ভ করে । এই ডিম থেকে যে সকল বাচ্চা হয় তারা সকলেই শ্রমিক শ্রেনীর । পরীক্ষার ফলে দেখা গেছে- রানীর সঙ্গে পুরুষ পিঁপড়ের মিলন ঘটতে না দিলেও রানী ডিম পেড়ে থাকে । কিন্তু সে সকল ডিম থেকে কেবল পুরুষ পিঁপড়েই জন্মগ্রহণ করে । কিন্তু কোনও অবস্থাতেই ডিম থেকে সরাসরি রানী জন্মগ্রহণ করে না । আবার এও দেখা গেছে, বাসা থেকে রানীদের সরিয়ে নিলে কিছু পরেই শ্রমিকদের মধ্যে থেকে দু-একটি বেশ কিছু সংখ্যক ডিম পাড়তে শুরু করে এবং সেই ডিম থেকে শ্রমিক পিঁপড়ে জন্মগ্রহণ করছে । সমস্যা এতে বড়ই জটিল বোধ হলো, কারণ জীবজগতের প্রজনন-প্রক্রিয়ার সাধারণ নিয়মের মধ্যে এদের আনা চলে না ।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।