শত্রুর আক্রমণে ভীত হয়ে হয়তো বাচ্চা মুখে করে কোনো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করতে ছুটছে, সেই সময় দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – এমন কী, অর্ধাংশ দ্বিখন্ডিত করে দিলেও বাচ্চাকে মুখ থেকে ফেলে দিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাবার চেষ্টা করে না । শত্রু-কবলিত বাচ্চা, রানী অথবা পুরুষ পিঁপড়েকে উদ্ধার করবার জন্যে নিষ্ফল প্রচেষ্টায়ও কেউ জীবন দিতে কিছুমাত্র ইতস্তত করে না । দু-একটি ব্যতীত অধিকাংশ ঘটনা দেখে জীবনের প্রতি এদের সত্য-সত্যই কোনো মমত্ববোধ আছে কিনা সন্দেহ হয় । এদের কোনও চালকও নেই বা কার্য-বন্টনও কেউ করে দেয় না । যখন যার প্রয়োজন উপস্থিত হয়, সংস্কারবশেই যেন সে কার্যে আত্মনিয়োগ করে এবং সুশৃঙ্খলার সঙ্গে তা সম্পন্ন করে । এদের মধ্যে কঠিন বা সহজ বলে কোনও কাজের বিচার নেই । কঠিনই হোক, কী সহজই হোক প্রয়োজন উপস্থিত হওয়া মাত্র এরা নির্বিচারে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে । শত্রু প্রবলই হোক, কী দুর্বলই হোক, নাগালের মধ্যে আসামাত্রই সমস্ত শক্তি দিয়ে নির্বিচারে তাকে আক্রমণ করবে । একটা কাঠি বা এক টুকরো ইঁট কাছে আনামাত্রই তাকে প্রানপণে কামড়ে ধরবে এবং ভারী হলে তা টেনে তুলতে না পারলেও সেই নিরীহ ইঁটের টুকরোটা মুখে করে সারা দিন ঝুলে থাকবে- এমনই কর্তব্যপরায়ণ এবং বিশ্বস্ত এরা ।
বাসা বাঁধবার সময় কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখে বিস্ময়ে অবাক হয়ে থাকতে হয় । লাল-পিঁপড়েরা একটির পর একটি পাতা জুড়ে গাছের ডালে গোলাকার বাসা নির্মাণ করে । শত শত কর্মী একযোগে কাছাকাছি অবস্থিত দুটি পাতা টেনে ধরে পরস্পর সংলগ্ন করে রাখে । আর এক দল কর্মী বাচ্চা মুখে করে সে স্থানে উপস্থিত হয় এবং বাচ্চার মুখনিঃসৃত সুতার সাহায্যে পরস্পর সংলগ্ন পাতা দুটিকে জুড়ে দেয় । এভাবে অনেক পাতা জুড়ে ক্রমশ একটি বড় বাসা গড়ে তোলে । অনেক সময় দেখেছি- হাজার হাজার পিঁপড়ের একত্রিত হয়ে এক সঙ্গে গাছের পাতা জুড়ে টেনে ধরে রয়েছে । সুতা বোনা শেষ হলে কর্মীরা একে একে সেই টানা ছেড়ে দিতে থাকে । কিন্তু পরীক্ষার উদ্দেশ্যে একবার সুতা-বোনা পিঁপড়েগুলিকে অগ্রসর হতে দেওয়া হলো না । কৌশলে তাদের গতিরোধ করা হলো । এদিকে কর্মীরা পাতা টেনে ধরেই আছে । এক দিন, দু’দিন করে ক্রমাগত কয়েক দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেল, তথাপি পাতার টানা ছাড়বার কোনই লক্ষণ দেখা গেল না । অনাহারজনিত দুর্বলতায় দু’একটা করে পিঁপড়ের কামর ছেড়ে নিচে পড়ে যেতে লাগলো । কিন্তু অন্য পিঁপড়ে এসে তৎক্ষনাৎ তাদের স্থান পূরণ করতে লাগতে লাগলো । কিন্তু সুতা বোনবার সুযোগ আর এলো না । এথেকেই পিঁপড়েদের স্বভাবের দৃঢ়তার এবং কর্তব্য-নিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া যায় ।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।