আগেই বলেছি, এক-একটা পিঁপড়ের বাসায় কয়েক শত রানী, কয়েক শত পুরুষ এবং হাজার হাজার কর্মী বা শ্রমিক পিঁপড়ে দেখা যায় । রানী এবং পুরুষ পিঁপড়েরা কোনও কাজই করে না, কেবল অলসভাবে বাসার মধ্যে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায় মাত্র । শ্রমিকরা রানী ও পুরুষকে সর্বপ্রকার সেবা-যত্ন করে থাকে । শ্রমিকেরা খাবার সংগ্রহ করে পুরুষ ও রানীদের মুখের কাছে তুলে ধরে । আহারান্তে একাধিক শ্রমিক মাইল গাত্র মার্জনা করে দেয় এবং অবসরমত তাদের প্রসাধনে ব্যাপৃত হয় । ডিম পাড়বার সময় হলেই হাজার হাজার কর্মী-পিঁপড়ে তার আপাদমস্তক আড়াল করে অপেক্ষা করতে থাকে । সে সময় শ্রমিকেরা রানীর যেরূপ সেবাযত্ন করে থাকে, তা দেখলে বিস্ময়ে অবাক হয়ে যেতে হয় । একটির পর একটি করে ডিম বেরিয়ে আসতে আরম্ভ করলেই শ্রমিকেরা সেগুলিকে অতি যত্ন সহকারে মুখে তুলে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট কুঠুরিতে সাজিয়ে রাখে । অন্য এক দল শ্রমিক তখন ডিমের তদারকে নিযুক্ত হয় । তারা ডিম ছেড়ে কোথাও নড়ে না । দু-এক দিনের মধ্যেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় । এক-একটি কর্মী এক-একটি বাচ্চা প্রতিপালনের ভার গ্রহণ করে । এগুলিকে খাওয়ানো, পরিষ্কার করা, উন্মুক্ত স্থানে বেড়িয়ে আনা প্রভৃতি যাবতীয় কাজ শ্রমিকেরাই করে থাকে । পুরুষ বা রানীরা কোনও কাজেই বিন্দুমাত্র অংশগ্রহণ করে না । এরা বহু দূর দূরান্তর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে আসে এবং পুরুষ ও রানীকে শ্রেষ্ঠাংশ খাওয়াবার পর অবশিষ্ট অংশ সকলে মাইল ভাগাভাগী করে খায় । এদের সঞ্চয়ের অভ্যাস নেই । যা সংগৃহীত হয়, তাই খেতে শুরু করে দেয় । যদি খাদ্যের অনটন ঘটে তবে যৎসামান্য যা সংগৃহীত হয়, তা থেকে প্রথমে বাচ্চাগুলিকে খাওয়ায় এবং পরে পুরুষ ও রানীকে খাইয়ে যা অবশিষ্ট থাকে তা নিজেরা ভাগাভাগী করে খায়, নচেৎ অনাহারে থেকেই প্রয়োজনীয় কাজকর্ম চালিয়ে যায় । অনাহার সহ্য করে মৃত্যু বরণ না করা পর্যন্ত এরা নিজের কর্তব্যকর্মে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য প্রকাশ করে না ।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।