মথ বা নিশাচর প্রজাপতি সর্বদাই ডানা প্রসারিত করে বসে, কিন্তু দিবাচর প্রজাপতি ডানা মুড়ে বসেই বিশ্রাম করে। অবশ্য সময়ে সময়ে তারা ডানা মেলে বসে রোদ পোহায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দিবাচর প্রজাপতির বাচ্চার গায়ে শোঁয়া থাকে না ; কিন্তু লোমশ শোঁয়াপোকা থেকে সাধারণত মথ জাতীয় প্রজাপতিই আত্মপ্রকাশ করে। অবশ্য লেজওয়ালা, লোমশূন্য বিচিত্র বর্ণের বড় বড় শূককীট থেকেও নিশাচর প্রজাপতি উৎপন্ন হয়ে থাকে। দিবাচর প্রজাপতি পুত্তলী অবস্থায় কোনও কিছুতে ঝুলে বা আটকে থাকবার জন্যে মাত্র সামান্য সুতা বোনে এবং বিভিন্ন জাতীয় পুত্তলী বিভিন্ন বর্ণের উজ্জ্বল কাচ খন্ডের মতো আকার পরিগ্রহণ করে, কিন্তু নিশাচর প্রজাপতির বাচ্চা পুত্তলী অবস্থায় রূপান্তরিত হবার পূর্বে মুখ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ লালা নিঃসরণ করে সুতা বোনে এবং সেই সুতায় গুটি তৈরি করে তার অভ্যন্তরে পুত্তলী রূপ ধারণ করে নিশ্চলভাবে অবস্থান করে। বিভিন্ন জাতীয় নিশাচর প্রজাপতির গুটি থেকেই আমরা রেশম পেয়ে থাকি। নিশাচর প্রজাপতির ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলেই তারা গাছের পাতা বা ছাল খেয়ে ক্রমশ বড় হতে হতে বার বার খোলস পরিত্যাগ করতে থাকে। বার বার খোলস বদল করে পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় উপনীত হলে দল বেঁধে কোনও স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং কিছুদিন পরে সুবিধামত স্থান নির্বাচন করে মুখ থেকে সুতা বের করে শরীরের চতুর্দিকে একটি ডিম্বাকার আবরণ গড়ে তোলে। আবরণটি বেশ পুরু হলে শরীরের লোমগুলি তুলে নিয়ে একটি আস্তরণ দিয়ে দেয়। তারপর চুপ করে অবস্থান করে। কিছু দিন পরে উপরের ছালটা ফেলে দিয়ে জলপাইয়ের বীজের মতো পুত্তলীর আকার ধারণ করে আবার কিছুদিন নিশ্চেষ্টভাবে পড়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে এক মাস বা দুই মাস আবার কোন কোন ক্ষেত্রে প্রায় বৎসরাবধি এরূপ নিশ্চলভাবে অবস্থান করবার পর প্রজাপতির রূপ ধারণ করে গুটি কেটে বেরিয়ে আসে। এদের মধ্যে কয়েক জাতীয় পতঙ্গ দেখা যায়, যাদের স্ত্রী-পতঙ্গের নামমাত্র ডানা থাকে। শরীরটা তাদের অসম্ভব মোটা – একটুও নড়তে চড়তে পারে না। বৎসরাধিক কাল গুটির অভ্যন্তরে কাটিয়ে বাইরে আসামাত্রই পুরুষ-পতঙ্গেরা উড়ে এসে তাদের সঙ্গে মিলিত হবার পর দুই-তিন দিনের মধ্যেই স্ত্রী-পতঙ্গগুলি অসংখ্য ডিম প্রসব করে মারা যায়। এই হল তাদের প্রজাপতি-জীবন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মথ সাধারণ প্রজাপতির মতোই জীবনযাত্রা নির্বাহ করে থাকে।
কয়েক জাতীয় প্রজাপতি দেখা যায়, যারা আকৃতি-প্রকৃতিতে মথের মতো, কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে সেগুলিকে দিবাচর প্রজাপতির পর্যায়ভুক্ত বলা যেতে পারে। এরা সর্বদাই অল্প অন্ধকার অথবা ছায়ার মধ্যেই অবস্থান করে। দক্ষিণ আমেরিকার পেঁচক-প্রজাপতিই বোধহয় এই জাতীয় প্রজাপতিদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে। দিবাচর প্রজাপতিদের মধ্যেও এদের চেয়ে বৃহত্তর প্রজাপতি বিরল। এদের নিচের ডানা দুটির নিম্নতলে পেঁচার চোখের মতো বড় বড় দুটি গোল দাগ থাকে। সন্ধ্যার সময় যখন এরা উড়তে থাকে, তখন তাদের বৃহৎ ডানা ও গোলাকার চোখ দুটির জন্যে একটা অদ্ভুত প্রাণী বলে মনে হয়। আমাদের দেশেও দুই-তিন ইঞ্চি পরিমাণ এই জাতীয় প্রজাপতির অভাব নেই। শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনে বড় বড় গাছের শিকড়ের আড়ালে অন্ধকারের মধ্যে অনুসন্ধান করলেই দেখা যাবে, অসংখ্য ধূসর ও কালো রঙের অদ্ভুত আকৃতির প্রজাপতি বসে আছে।