মানুষ সামাজিক প্রাণী । অপেক্ষাকৃত উন্নত শ্রেণীর জীবের মধ্যে মানুষের মতো সমাজ-ব্যবস্থা না থাকলেও মৌমাছি পিঁপড়ে প্রভৃতি নিম্নস্তরের কীট-পতঙ্গের মধ্যে এরূপ সমাজ-ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে । তাদের সমাজের রীতিনীতি যাতে অক্ষুন্নভাবে নিরুপদ্রবে চলতে পারে, তার জন্যেও একটা স্বাভাবিক অবস্থা অবলম্বিত হয়েছে । মানুষেরা বুদ্ধিমান এবং কৌশলী হলেও পিঁপড়ে অথবা মৌমাছির মতো সুনিয়ন্ত্রিত একটা পাকাপোক্ত সমাজ-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে নি । প্রচলিত সমাজ-ব্যবস্থায় মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি এবং ব্যক্তিগত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে । প্রত্যেকেই সুবিধামত সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে থাকে । তার ফলেই দাসত্ব প্রথা, বাধ্যতামূলক বেগার খাটা এবং অন্যান্য দুর্নীতিমূলক প্রথার উদ্ভব ঘটেছিল । স্বার্থান্বেষী ও প্রভুত্ব-প্রয়াসী ব্যক্তিরা অস্ত্র-প্রয়োগে মানুষের প্রজনশক্তি নষ্ট করে নিজেদের সুখসুবিধা বিধানের নিমিত্ত কায়েমীভাবে এক ধরনের শ্রমিকশ্রেণী উৎপাদনে অগ্রসর হচ্ছিল । কিন্তু যে কারণেই হোক তাদের এই প্রচেষ্টা অধিক দূর প্রসার লাভে সক্ষম হয় নি । যা হোক, মানুষের প্রয়োজনে আজ পর্যন্তও গৃহপালিত পশুপক্ষীর উপর এ ব্যবস্থা অবাধে প্রযুক্ত হচ্ছে । উদ্দেশ্য যাই হোক, উপায়টা যে সম্পূর্ণ নিষ্ঠুরতার পরিচায়ক, সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই । শ্রমসাধ্য যাবতীয় কার্যনির্বাহের জন্যে পিঁপড়েরা কিন্তু অতি সহজ উপায়ে এরূপ একপ্রকার শ্রমিকশ্রেণী উৎপাদন করবার উপায় আয়ত্ব করে নিয়েছে । মনুষ্য কর্তৃক অবলম্বিত উপায় অপেক্ষা তাদের উপায় যে সহস্র গুণে শ্রেষ্ঠ, এ কথা অস্বীকার করবার উপায় নেই । স্বার্থান্বেষী, পুঁজিবাদী, প্রভুত্বপ্রয়াসী মানুষেরা যদি পিঁপড়েদের অবলম্বিত কৌশলের মতো এমন কোনও সহজসাধ্য উপায় আবিষ্কারে সক্ষম হতো, তবে তার প্রভাবে পৃথিবীর অশিকাংশ মানুষই হয়তো বংশানুক্রমে কায়েমী শ্রমিকশ্রেণীতে পরিণত হতো । প্রভুর তুষ্টিবিধান ও স্বার্থ রক্ষা ছাড়া তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ বলে কোনও কিছুরই অস্তিত্ব থাকতো না । কৃত্রিম বাসার মধ্যে হাজার হাজার পিঁপড়ে প্রতিপালন করে বছরের পর বছর তাদের আচার-ব্যবহার যা প্রত্যক্ষ করেছি, তা থেকে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয় ।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।