জালের ফাঁক দিয়ে নিচের পোকাগুলি উপরের পাতায় উঠে আসে, তখন জাল সমেত পোকাগুলিকে আরেকখানি ডালায় রেখে পূর্বের ডালাটি পরিষ্কার করে ফেলতে পারা যায়। এই উপায় সর্বদাই পোকাগুলিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। প্রথম অবস্থায় পোকাগুলিকে প্রত্যহ পাঁচ-ছয় বার তাজা পাতা দিতে হয়, চার-পাঁচদিন পরেই পোকাগুলি নিশ্চলভাবে অবস্থান করে এবং কিছুকাল বাদেই প্রথমবার খোলস পরিত্যাগ করে। এই সময় ওরা কিছু খায় না। এই সময় অন্তত একদিন পাতা দেওয়া বন্ধ রাখতে হয়। পোকাগুলি নড়াচড়া আরম্ভ করলেই পুনরায় পাতা দেওয়া দরকার। এইরূপে এরা প্রায় চারবার খোলস ছাড়ে এবং তাদের দেহের আকার ক্রমশ বেড়ে যায়। এরা গ্রীষ্মকালে তিন-চারদিন অন্তর এবং শীতকালে পাঁচ-ছয়দিন অন্তর খোলস পরিত্যাগ করে। তৃতীয় বার খোলস ছাড়বার পর পাতা আর কুঁচিয়ে দিতে হয়না – গোটা পাতা দিলেই চলে। চতুর্থবার খোলস ছাড়বার পর পোকাগুলি শনশন শব্দে অতি অল্প সময়ের মধেই পাতা খেয়ে শেষ করে। তৃতীয়বার খোলস পরিত্যাগের পরই পাতার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ এই সময় বেশী খেলে প্রায়ই তারা ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চতুর্থবার খোলস ছাড়বার পর পোকাগুলি গ্রীষ্মকালে ছয়-সাত দিন ও শীতকালে দশ-বারো দিন আহার করবার পর খাওয়া বন্ধ করে গুটি বা কোয়া প্রস্তুত করে। কোয়া প্রস্তুত করার সময় হলেই পোকাগুলি ইতস্তত ঘুরে বেড়ায় এবং মুখ থেকে অল্প অল্প রেশম বের থাকে। এরূপ অবস্থা দেখলেই সেগুলিকে বেছে নিয়ে শুকনো ডালপালা বা বাঁশের চেটাইয়ের দ্বারা প্রস্তুত এক প্রকার সচ্ছিদ্র পাত্রের মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে দুদিনের মধ্যেই গুটি বা কোয়া প্রস্তুত করে ফেলে ।
পলু পোকাগুলি যাতে ঘনসন্নিবিষ্টভাবে না থাকে, তার জন্য বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন। প্রথম অবস্থায় ডালার উপর পলুগুলিকে পাতলা ভাবে রাখতে হয়। বড় হলে একটু ঘন ভাবে রাখলেও তত ক্ষতি নেই। প্রথমাবধি অযত্ন করলে অথবা অপরিছন্ন ভাবে রাখলে বড় হলেই তারা ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। পলু যে ঘরে রক্ষিত হয়, তার হাওয়া খুব গরম বা ঠান্ডা হওয়া খুবই মারাত্মক। ঘরে হাওয়া প্রবেশ করবার ব্যবস্থা করে যাতে নাতিশীতোষ্ণ অবস্থায় থাকতে পারে তাই করা উচিত। কিন্তু দেখতে হবে-যেন পলুর গায়ে টানা হাওয়া লাগতে না পারে। কারণ টানা বাতাসে পলু রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। গুমোট হলে পাখার হাওয়া করে ঘর ঠান্ডা রাখতে হয়, নচেৎ সলফা বা হাঁসা নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পলু মৃত্যুমুখে পতিত হয়। রোগাক্রান্ত মথের ডিমে মাতৃরোগ সংক্রামিত হয়ে থাকে। তার ফলে যত্ন করলেও পলু মরে যায়। এজন্যে ডিম পাড়বার পর প্রতেকটি স্ত্রী-মথের শরীর থেকে এক ফোঁটা রস বের করে অনুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করলে যদি কারও রসে দানার মত কোনও পদার্থ দেখা যায়, তবে মথের ডিম নষ্ট করে ফেলাই বিধেয়। তাছাড়া তুঁতের জলে ঘর, ডালা এবং অন্যান্য উপকরণ ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তাতে সুস্থ পলুপোকা প্রতিপালন করা উচিত। তুঁতের জলে ধোবার পরও ঘরের ভিতর গন্ধক পুড়িয়ে স্থানটিকে যতদুর সম্ভব দুষিত বীজাণুমুক্ত করে নেওয়া কর্তব্য। কেউ কেউ কাগজের উপর ডিম পাড়িয়ে ডিম সমেত কাগজখানিকে তুঁতের জলে ডুবিয়ে পরে ঠান্ডা জায়গায় ঝুলিয়ে শুকিয়ে নেয়। এতে ডিমগুলি বীজাণুমুক্ত হতে পারে। এতদ্ব্যতীত একরকম বড় বড় মাছি পলুর গন্ধ পেলেই তাদের পিঠের উপর ডিম পেড়ে যায়। এই ডিম ফুটে কৃমি বের হয়। তারা পলুর শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে রস-রক্ত চুষে খেয়ে সেগুলিকে মেরে ফেলে। পলুপোকা প্রতিপালন করতে হলে এই মাছি সমন্ধে সর্বদাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন, নচেৎ পলুর মড়ক নিবারণ অসম্ভব।