প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ কেবলমাত্র বন্য জন্তু জানোয়ারকে বশীভূত করেই ক্ষান্ত থাকেনি, তারা কীট-পতঙ্গের মধ্য থেকে মধুর জন্যে মৌমাছি এবং রেশমের জন্যে রেশম-কীট বা মথ-জাতীয় প্রজাপতির বাচ্চাগুলিকে পোষা প্রাণীতে পরিনত করেছে । প্রতিবছর এই রেশম-কীট থেকে কি বিপুল পরিমাণ রেশম উৎপাদিত হয়ে থাকে, তার সঠিক হিসেব নির্ণয় করা দুষ্কর। আমাদের দেশে বহুকাল থেকেই রেশম-কীট প্রতিপালনের রীতি প্রচলিত আছে। এই কীট প্রতিপালনের দেশীয় পদ্ধতির বিষয় কিঞ্চিৎ আলোচনা করছি ।
বিভিন্ন জাতীয় রেশম-কীটের গুটি বা কোয়া থেকে সুতা সংগ্রহ করে আমাদের দেশে গরদ, তসর, এন্ডি, বাফতা প্রভৃতি কয়েক জাতীয় বস্ত্র প্রস্তুত হয়। যে জাতীয় রেশম-কীট থেকে গরদের কাপড় প্রস্তুত হয়, তারা পলু পোকা বা তুঁতপোকা নামে পরিচিত। এরা বিভিন্ন জাতীয় মথ নামক প্রজাপতির বাচ্চা বা ক্যাটারপিলার। আমাদের দেশে বড়-পলু, ছোট-পলু, নিস্তারি পলু ও চীনা পলু নামক কয়েক জাতীয় তুঁত পোকা প্রতিপালিত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে বড়-পলু ও বিলিতী-পলুই সর্বোৎকৃষ্ট। এদের কোয়াগুলি খুব বড় হয় আর শুভ্র বর্ণের প্রচুর পরিমাণ রেশম উৎপাদন করে। আমাদের দেশে বিলিতী-পলু প্রতিপালিত হলেও তার পরিমাণ যথেষ্ট নয় । বড়-পলু ও বিলিতী-পলু প্রতিপালনের প্রধান অসুবিধা এই যে, এদের ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে প্রায় দশ মাস সময় লাগে। বড়-পলু ও বিলিতী-পলু খুব সম্ভব একই জাতীয় পোকা; কিন্তু এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় । হয়তো বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাবে বংশানুক্রমে এই পার্থক্য আত্মপ্রকাশ করেছে । যাহোক, বড়-পলুর ডিম মাস দশেক হাঁড়ির ভিতর রাখবার পর মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমীর দিনে হাঁড়ির ঢাকনা খুলে দেওয়া হয় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এই দশমাস ডিম সমেত হাঁড়িটাকে ঠান্ডা অন্ধকার ঘরে শিকেয় ঝুলিয়ে রাখা হয়। আলোকিত বা উষ্ণস্থানে থাকলে ডিম ভালো করে ফোটে না। খুব ঠান্ডা জায়গায় না রাখলে বিলিতী-পলুর ডিম মোটেই ফোটে না। বিলিতী-পলুর ডিম বরফের মত ঠান্ডা স্থানে রাখতে হয়। ফোটবার পূর্বে দু-তিন সপ্তাহ ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট উত্তাপে রাখা দরকার। তারপর উত্তাপ ক্রমশ বৃদ্ধি করলে বাচ্চা বের হতে থাকে । ৭৪ বা ৭৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট উত্তাপে এই পলু-পোকা পুষতে হয়।
ছোট-পলু, নিস্তারি-পলু ও চীনা-পলুর ডিম গ্রীষ্মকালে আট-দশ দিনে বর্ষাকালে দশ-পনেরো দিনে এবং শীতকালে পঁচিশ-ত্রিশ দিনে ফুটে থাকে। ডিম থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শোঁয়াপোকা বা ক্যাটারপিলার বের হয়েই তুঁত পাতা খেতে আরম্ভ করে। ডালা বা কাগজের ওপর পোকাগুলি রেখে তার ওপর কচি কচি তুঁত পাতা কুচি কুচি করে চড়িয়ে দিলেই পোকাগুলি উপরে উঠে পাতা খেতে থাকে। ভুক্তাবশিষ্ট পাতা ও নাদি পরিষ্কার করবার জন্যে তুঁত পোকাগুলির উপর এক খন্ড সরু জাল বিছিয়ে তার উপর নতুন পাতা কুচিয়ে দিতে হয়।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।