গাছপালা বিবর্জিত একটা পাথরের বেদীর উপর কোনো কারণে ছোট একটা গাছসহ টব রাখা হয়েছিল। একদিন সকাল বেলায় দেখা গেল – সেই সিমেন্টের মেঝের উপর দিয়ে দূর থেকে প্রায় দশ-বারোটা শাদা রঙের শোঁয়াপোকা পিপড়ের মত সার বেঁধে অগ্রসর হচ্ছে। আশেপাশে গাছপালা নেই – এরা কোথা থেকে এলো ? আর এদিকেই বা অগ্রসর হচ্ছে কেন ? সেগুলিকে লক্ষ করে এরূপ ভাবছি, দেখতে দেখতে তারা এসে টবটার পাশে উপস্থিত হলো। কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়ার পর লাইন টা যেন কতকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল – কেউ কেউ এদিক-ওদিক একটু ঘুরে, কেউ কেউ বা মাথা উঁচিয়ে কিছু যেন অনুভব করার চেষ্টা করতে লাগলো। বোধ হয় ওরা টবের উপরের গাছটার গন্ধই পেয়েছিল। কারণ খানিক বাদে দেখা গেল, ওরা আবার পূর্বের মত লাইন করেই টবের গা বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো ; টবের কানার প্রায় দেড় ইঞ্চি নিচে মাটির মধ্যে গাছটি জন্মেছিল। শোঁয়াপোকাগুলি একে একে উপরে উঠেই টবের গোলাকার কানাটার উপর দিয়ে ঘুরতে লাগলো। গোলাকার রাস্তার আর শেষ হয়না। এদিকে পাতার গন্ধেও বুঝতে পেরেছে খাদ্যবস্তু অতি নিকটে ; কারণ এরা গাছের পাতা খেয়েই জীবনধারণ করে। এদিকে রাস্তাও ফুরোয় না। গোলকধাঁধায় পড়ে একই রাস্তায় যে বারবার ঘুরে মরছে সেটা বোঝবার মত বুদ্ধিও এদের নেই। প্রায় সমস্ত কানাটা জুড়েই এরা চলছিল। মাঝে একটু ফাঁকও নেই, যাতে অগ্রগামী পোকা একটু এদিক-ওদিক মাথা ঘুরিয়ে অবস্থা তদারক করতে পারে – কেবল একে অন্যকে অনুসরণ করে চলেছে। বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই, তাতে আবার অনাহার। একদিন একরাত্রি কেটে গেল, তখনও দেখলাম সেই গতি অব্যাহত রয়েছে। এরূপ অবস্থায় পাঁচ দিন পাঁচ রাত কেটে গেল। পঞ্চম দিন বেলা শেষে অনাহারে ও অতিরিক্ত পরিশ্রমে দলের একটি শোঁয়াপোকা যেন অসাড় ভাবেই লাইন থেকে নিচে পড়ে গেল এবং কিছুক্ষণ বাদেই তার মৃত্যুর লক্ষণ দেখা গেল। ভাবলাম একটা পোকা মরে যাওয়ায় এদের লাইনের মধ্যে বেশ খানিকটা জায়গা ফাঁকা দেখে এদিক – ওদিক মাথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টবের মাটির উপর দিয়ে গাছটার উপর উঠতে পারবে ; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, একটা শোঁয়াপোকা পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও লাইনের মধ্যে একটুও ফাঁক দেখা গেল না, পূর্বে যেমন ছিল এখনো ঠিক তেমনি একে অপরকে স্পর্শ করে এগিয়ে চলেছে। লক্ষ করে দেখলাম ব্যাপার আর কিছুই নয় মৃত শোঁয়াপোকাটা যখন দলে ছিল তখন ঠিকমত এদের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না, এরা নিজ নিজ শরীর কতকটা সংকুচিত করে চলছিল। ষষ্ঠ দিনে দেখা গেল আরও গোটা তিনেক শোঁয়াপোকা মরে পড়ে আছে তবুও তাদের লাইনের মধ্যে বড় একটা ফাঁক দেখা গেল না, এরা শরীরটাকে অসম্ভব লম্বা করে হেঁটে চলেছে। মনে হলো যেন এক-একটা শোঁয়াপোকা দৈর্ঘ্যে অন্তত দেড় গুণ লম্বা হয়ে গেছে, সপ্তম দিনে আরও কয়েকটা মারা গেল, এবার যেন এদের গতিবেগ ক্রমশই মন্দীভূত হয়ে পরেছিল।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।