কিছুকাল যাবৎ পিঁপড়েদের এই অদ্ভুত প্রজনন-রহস্য উদ্ঘাটনের নিমিত্ত পরীক্ষায় প্রবৃত্ত হয়েছিলাম । পরীক্ষার ফলে এই রহস্য সম্বন্ধে যতটুকু জানতে পেয়েছি, তা মোটামুটিভাবে আলোচনা করবো । প্রথমত কাঠ-পিঁপড়ে নিয়ে কাজ আরম্ভ করেছিলাম । তার পর ক্রমাগত ডেঁয়ো-পিঁপড়ে, বিষ-পিঁপড়ে, সুড়সুড়ে-পিঁপড়ে নিয়ে পরীক্ষা করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারি নি । কারণ এই পিঁপড়েরা প্রত্যেকেই মাটির নিচে গর্ত খুঁড়ে বাস করে । বাচ্চা প্রভৃতি মাটির নিচে অন্ধকারেই প্রতিপালিত হয়, বাইরে থেকে দেখবার কোনও উপায় নেই । কৃত্রিম বাসা তৈরি করে তাতে হাজার হাজার পিঁপড়ে প্রতিপালন করে দেখেছি, তারা – রানী, বাচ্চা, ডিম প্রভৃতি অন্ধকারে কোনও কিছুর আড়ালে অতি সংগোপনে রক্ষা করে । কাজেই এদের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালী প্রত্যক্ষ করা অতি দুরূহ ব্যাপার । অবশেষে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করবার নিমিত্ত লাল-পিঁপড়ে পুষতে আরম্ভ করি । লাল-পিঁপড়েরা গাছের ডালের পাতা পরস্পর জুড়ে গোলাকার বাসা নির্মাণ করে । পাতার ভিতর দিয়ে বাসার ভিতরের অবস্থা দেখা যায় না ; কাজেই কৃত্রিম বাসার সাহায্য নিতে হয়েছিল । অনেক কিছু ব্যর্থ চেষ্টার পর অবশেষে পাতলা সেলোফিন মুড়ে বাসা তৈরি করতে সক্ষম হলাম । পুরুষ, রানী, ডিম ও বাচ্চা সমেত হাজার হাজার পিঁপড়ে বাসায় ছেড়ে দিলাম । তারা সেলোফিন-আবৃত বাসায় উপস্থিত হয়ে ফাটা এবং ফুটা স্থানগুলি বন্ধ করে দিল এবং বিভিন্ন কুঠুরি নির্মাণ করে বেশ সহজভাবেই বসবাস করতে লাগলো । পাতলা সেলোফিনের পর্দার ভিতর দিয়ে পিঁপড়েগুলির কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করতে কোনই অসুবিধা হয় না । বিভিন্ন জাতীয় পিঁপড়েদের আকৃতি এবং প্রকৃতি বিভিন্ন হলেও তাদের সমাজ-ব্যবস্থা এবং প্রজনন ব্যাপারে মোটামুটি একটা সামঞ্জস্য দেখা যায় । কাজেই লাল-পিঁপড়ের সম্বন্ধে আলোচনা করলেই সাধারনভাবে পিঁপড়েদের সামাজিক বিধি-ব্যবস্থার বিষয় অবগত হওয়া যাবে ।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।