তখন একে একে ক্ষুদেরা অর্ধমৃত পিঁপড়েটাকে ঘিরে ধরলো। ক্ষুদেদের প্রধান লাইনে এই সংবাদ পৌঁছতে বিলম্ব হলো না। দেখতে দেখতে ক্ষুদে পিঁপড়েরা কাতারে কাতারে ডালটার দিকে অভিযান শুরু করে দিল। ডালটার ঠিক মধ্যস্থলে প্রায় হাতখানেক স্থান জুড়ে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলতে লাগলো। ক্ষুদেদের প্রবল চাপ নালসোরা এবার সহ্য করতে পারছিল না ! বাধা দিতে দিতে তারা ক্রমেই পিছু হটতে লাগলো। দলে দলে নালসোরা প্রাণ দিতে লাগলো, কিন্তু ক্ষুদেদের সৈন্যসংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বোধ হলো যেন বিষাক্ত গ্যাসের গন্ধেই তারা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারছিল না। কারণ সে স্থলে বহু নালসো সমবেত হয়ে একযোগে গ্যাস ছাড়ছিল। প্রায় মিনিট পাঁচ-সাত এভাবে চলবার পর দেখা গেল, ক্ষুদে পিঁপড়েরা এক নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। পুরাতন বাসাটার প্রায় দুই ইঞ্চি উপরে অন্য ডালের একটা পাতার ডগা ঝুলছিল। উপরের ডাল ধরে ঘুরে গিয়ে ক্ষুদেরা সেই পাতাটার ডগা পর্যন্ত পৌঁচেছে ; কিন্তু যোগাযোগ না থাকায় নামতে পারছিল না। বাসাটা যে খুবই নিকটে, গন্ধে বোধহয় তা টের পেয়েছিল। কিছুক্ষণ ইতস্তত করবার পর অবশেষে ক্ষুদেরা একে একে ঝুপ ঝুপ করে বাসাটার উপর পড়তে লাগলো, যেন প্যারাসুটিস্টের অবতরণের মতো। অবতরণ করে বিনা বাধায় তাদের অনেকেই বাসাটার ছিন্ন অংশ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। বাসার উপরেই এই অবতরণকারী সৈন্যদের কয়েকটার সঙ্গে নালসোদের ভীষণ ধ্বস্তাধ্বস্তিও চলছিল। প্রায় ৬০।৭০টা ক্ষুদে পিঁপড়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে। ভিতরে তখন কী ঘটছিল, বাইরে থেকে তা দেখবার উপায় ছিল না ; কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখা গেল নালসোরা বাসার বিভিন্ন বিছিন্ন অংশের ভিতর দিয়ে দ্রুতগতিতে যে দিকে পারে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে। অনেকে আবার ডিম ও বাচ্চাগুলিকে মুখে নিয়ে বের হয়েছে। তাদের চালচলন ও গতিভঙ্গি দেখে পরিষ্কার বুঝতে পারা গেল যে, তারা ভয়ানক ভয় পেয়ে গেছে। চতুর্দিকে একটা ভীষণ অরাজক কাণ্ড। এদিকে ডালের উপরের ক্ষুদে পিঁপড়েরা অগ্রগতিতে বাধা পেয়ে একটা নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। এতক্ষণ ডালটার উপর দিকেই যুদ্ধ চলছিল। পাশে ও নিচের দিকে নালসোদের কোনও রক্ষণ ব্যবস্থা ছিল না। এই সুযোগে ক্ষুদেরা ডালটার নিচ ও পাশের দিক দিয়ে আরও দুটা নতুন লাইনে অগ্রসর হতে লাগলো। এই কৌশলে এক রকম বিনা বাধায় বহু সংখ্যক শত্রুসৈন্য নালসোদের বাসার কাছে গিয়ে উপস্থিত হলো। পূর্বেই বাসার মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। এখন অতর্কিতে বহু শত্রু সৈন্য বাসার প্রবেশ পথ ধরে আক্রমণ করবার ফলে বিশৃঙ্খলা চরমে উঠলো। মাঝখানে এক দল এবং বাসাটার নিকটে দু-তিন দলে বিচ্ছিন্ন ভাবে লড়াই চলতে লাগলো। নালসোদের মধ্যে যোগাযোগ একবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কাজেই প্রাণভয়ে সকলেই পালাতে ব্যস্ত। তারা এতই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, অনেক পিঁপড়ে দিশাহারা হয়ে ছুটতে গিয়ে বাসার উপর থেকে ঝুপ ঝুপ করে নিচে পড়তে লাগলো। সেখানে তারা মাটিতে অবশিষ্ট ক্ষুদে-পিঁপড়েদের কবলে পরে প্রাণত্যাগ করতে বাধ্য হলো। বাসাটার বাইরের দিকে একস্থানে দেখলাম, প্রায় ৪০।৫০টা রানী এক সঙ্গে জড়াজড়ি করে ভয়ে আত্মগোপন করে রয়েছে। নতুন বাসার মধ্যে অসংখ্য নালসো আশ্রয় গ্রহণ করলেও পুরাতন বাসায় তখনও কয়েক হাজার পিঁপড়ে অবস্থান করছিল।