যে নির্দিষ্ট স্থানে খাড়া পাহারায় নিযুক্ত। আমাকে সেখানে নড়াচড়া করতে দেখে আর একদল – প্রায় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটি হবে – বাসার শেষ প্রান্তে এসে নিম্নভাগ ঘেঁষে সম্মুখের পা দুটি শূন্যে তুলে অদ্ভুত ভঙ্গিতে ভীতি প্রদর্শন করছিল। কতকগুলি আবার শরীরের পশ্চাদ্ভাগ ঊর্ধ্বে তুলে আমার প্রতি বিষাক্ত গ্যাস ছড়াচ্ছিল, একটা অপ্রীতিকর গন্ধে তা বুঝতে পারলাম। কয়েক শত নালসো তড়িদগতিতে ছুটাছুটি করে গাছটার বিভিন্ন ডালে নতুন স্থানের অবস্থা তদারক করতে লেগে গেল। ভাবলাম শীঘ্রই হয়তো নতুন বাসার পত্তন শুরু হবে, কিন্তু কোথায় হবে তার কিছুই বোঝা গেল না। প্রায় তিনঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেল, তথাপি বাসা নির্মাণ করবার কোনই তোড়জোড় দেখা গেল না। বাসার নিচের দিকটা ছিঁড়ে যাবার ফলে কতকগুলি ডিম ও বাচ্চা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। সেগুলির লোভে ইতিমধ্যে কতকগুলি ক্ষুদে পিঁপড়ে আনাগোনা শুরু করেছে। আমার নজর ছিল তখন নালসোদের দিকে। ক্ষুদে পিঁপড়ে তো সর্বত্রই আছে, এখানেও ছিল, ডিমের লোভে এসেছে – এই ভেবেই ব্যাপারটা উপেক্ষা করে গেলাম।
বেলা তখন ৫টা হবে। হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। গাছের ডালে ডালে যে নালসোগুলি ইতস্তত ছড়িয়ে পড়েছিল, বৃষ্টির দরুণ তাদের আনাগোনা কমে গেছে। তাদের অনেকেই বাসায় ফিরে এসেছে। খাড়া পাহারা ও টহলদাররাও অনেকেই বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে একটা জিনিস লক্ষ করে বিস্মিত হলাম। ঘন্টা দুই পূর্বে যে ক্ষুদে পিঁপড়েরা মাটির উপর বিচরণ করছিল, তারা এখন একটা সরু লাইন করে প্রায় ছয়-সাত হাত তফাত থেকে গাছের গুড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এর ফলে যে একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, সে বিষয়ে তখন কিছুমাত্র সংশয় জাগে নি। যাহোক, নিরাশ হয়ে সেদিনের মতো পর্যবেক্ষণ বন্ধ করতে হলো।
তার পরের দিন সকাল সাড়ে আটটার সময় অবস্থার কিছু পরিবর্তন লক্ষিত হলো। নালসোগুলিকে গাছের উপর ঘোরাঘুরি করতে দেখলাম না। এতদ্ব্যতীত যে ডালটায় তাদের বাসা ঝুলছিল, সেই ডালটার আগাগোড়া কতকগুলি টহলদার নালসো মোতায়েন হয়েছে। বাসাটার উপরেও কয়েকটা খাড়া পাহারার ব্যবস্থা হয়েছে। গাছটার বিপরীত দিকে যেতেই শিকড়ের প্রায় কাছাকাছি গুড়িটার গায়ে ৫০।৬০টা লাল পিঁপড়েকে শুঁড় উঁচিয়ে নিচের দিকে মুখ করে নিশ্চলভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। তার কিছু উপর থেকেই ডালটা পর্যন্ত দশ-বারোটা নালসো বার্তাবাহকের মতো একবার উপরে একবার নিচে ছুটাছুটি করছে। এক-একটি বার্তাবাহক নিচ থেকে বাসার দিকে ছুটে যাবার পথে ডালের উপরে টহলদার ও খাড়া পাহারাদারদের প্রত্যেকের মুখের সঙ্গে মুখ ঠেকিয়ে কী যেন বলে যাচ্ছিল। যাই বলুক, সেটা যে কোনও উত্তেজনাপূর্ণ সংবাদ, তাতে কোনও সন্দেহ ছিল না। কারণ বার্তাবাহকের মুখ ঠেকাঠেকি হবার পরক্ষণেই প্রত্যেকটি পাহারাদার যেন জোড় পায়ে লাফাতে লাগলো। এক দিন এক রাত কেটে গেছে – উত্তেজনা একটু মন্দীভূত হবারই কথা। তবে এরা আজ আবার বাসা থেকে এত দূরে এসে ঘাঁটি নিয়েছে কেন ?
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।