শ্রমিক-পিঁপড়ের জন্ম-রহস্য
আমাদের আশেপাশে রকমারি পিঁপড়ে দেখতে পাই । এদের বাসস্থান অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে – প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাতে দুই, তিন বা ততোধিক বিভিন্ন আকৃতির পিঁপড়ে রয়েছে । একই জাতীয় পিঁপড়ের এই আকৃতি-বৈষম্য স্বভাবতই বিস্ময়ের উদ্রেক করে । খুঁটিনাটি বৈষম্য থাকলেও সন্তান, মাতা অথবা পিতার মতো আকৃতি পরিগ্রহ করে থাকে । জীবজগতের এটাই অতি পরিচিত ঘটনা । কদাচিৎ কখনও দু-এক ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটতে দেখা যায়, কিন্তু তার কারণও সুস্পষ্ট । পিঁপড়েদের ক্ষেত্রে কিন্তু মাতা অথবা পিতা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন আকৃতির সন্তান জন্মগ্রহণ করাটাই স্বাভাবিক নিয়ম । মাতা বা পিতার অনুরূপ সন্তান জন্মগ্রহণ করাটা কতকটা সাময়িক এবং অনেকটা আকস্মিক ব্যাপারের মতো । এক একটা পিঁপড়ের বাসায় সাধারণত চার-পাঁচ রকমের পিঁপড়ে থাকে – কয়েক শত পুরুষ, কয়েক শত রানী এবং কয়েক হাজার কর্মী বা শ্রমিক । আমরা সচরাচর শ্রমিক-পিঁপড়েই দেখে থাকি এবং এদের দেখেই জাতি নির্ণীত হয় । শ্রমিকদের মধ্যে কতকগুলি থাকে মাথা মোটা সৈন্য এবং বাকিগুলি ছোট, বড় ও মাঝারি – এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত । রানীর আকৃতি সাধারণ পিঁপড়েদের তুলনায় অসম্ভব বড় । পুরুষের আকৃতি মাঝারি গোছের । কিন্তু কর্মীরা সর্বাপেক্ষা ছোট এবং পিতা বা মাতার সঙ্গে কোনো আকৃতিগত সামঞ্জস্য দেখা যায় না । পুরুষ বা রানী পিঁপড়েদের প্রত্যেকেরই ডানা আছে ; কিন্তু কর্মীদের কারও ডানা নেই, অথচ বিস্ময়ের বিষয় এই যে, পুরুষ ও রানীর মধ্যে মিলন সংঘটিত হবার পর রানীর ডিম থেকে কেবল এই কর্মী শ্রেণীর পিঁপড়েরাই জন্মগ্রহণ করে থাকে । কি উপায়ে এরূপ অদ্ভূত ব্যাপার সংঘটিত হয়ে থাকে, প্রত্যেকেরই তা জানবার আগ্রহ হওয়া স্বাভাবিক । বিভিন্ন জাতীয় কয়েক প্রকার পিঁপড়ের মধ্যে এরূপ আকৃতিগত বৈষম্য দেখে এক সময় আমারও কৌতূহল অদম্য হয়ে উঠেছিল । ইতিপূর্বে বৈজ্ঞানিকেরা এ সম্বন্ধে অনেক প্রকার গবেষণা করেছেন বটে, কিন্তু কোনও স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন নি ।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।