খুঁটিটার মাথার উপর কতকগুলি নতুন ডাল গজিয়েছিল। সেই ডালের পাতা মুড়ে সঙ্গে সঙ্গে কতকগুলি কর্মী পিঁপড়ে নতুন বাসা নির্মাণে লেগে গেল। এভাবে একটা ডালের মধ্যেই তিন-চারটা ছোট ছোট বাসা তৈরি হয়ে গেল। বাসা নির্মাণ শেষ হতে না হতেই তারা ডিম ও বাচ্চাগুলিকে তার মধ্যে স্তূপাকারে রাখতে লাগলো। এদিকে ঝুলন্ত বাসাটার নিচের দিকে দিকে নজর পড়তেই দেখি – এক আশ্চর্য ব্যাপার। যখন শত্রু-সৈন্যরা ভিতরে ঢুকে পড়েছিল, সেই সময়ে ভয় পেয়ে কতকগুলি কর্মী-পিঁপড়ে বাচ্চা মুখে করে বাসাটার নিচের দিকে জড়ো হয়েছে। ক্রমশ স্থানাভাব হওয়ায় কর্মীরা বাচ্চা মুখে করে স্তূপাকারে নিচের দিকে ঝুলে রয়েছে। যাহোক, এদিকে শত্রুপক্ষ পরাভূত হওয়ায় তাদের রাস্তা খোলা হয়ে গিয়েছিল। এখন বাখারী ও গাছটার দুদিকে ইতস্তত অনেক সৈন্য পাহারায় নিযুক্ত করে তারা ডিম ও বাচ্চাগুলিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। ডিম ও বাচ্চাগুলিকে সরাবার পর তারা পুরুষ পিঁপড়েগুলিকে ঠিক নিশান বহন করবার মতো উঁচু করে নিয়ে আসতে লাগলো। পুরুষের সংখ্যাও কম ছিল না। দেড়শ কী দু’শর উপর হবে। তার পর রানীদের পালা। রানীরা আকারে ওদের তুলনায় খুবই বড়। সেগুলিকে বহন করে আনা অসুবিধাজনক। রাখালেরা যেমন গরুর পাল তাড়িয়ে নেয়, কর্মীরাও রানীগুলিকে তেমনি পিছনে পিছনে তাড়িয়ে আনছিল। শত্রুপক্ষের লাইন তখন ভেঙে গেছে। কেবলমাত্র দু-চারটা কর্মী বিচ্ছিন্নভাবে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করছিল। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। এপর্যন্ত দেখেই সেদিন সেখান থেকে ফিরে এসেছিলাম। তার পরের দিন সকালে গিয়ে দেখি – বাসাটি শূন্য অবস্থায় ঝুলছে। বাসিন্দাদের কতকগুলি অবশ্য তখনও সেখানে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করছিল। পালিতা-মাদারের খুঁটির গা বেয়ে বাখারীর উপর দিয়ে তারা পরিষ্কার রাস্তা করে দলে দলে উপরে-নিচে আনাগোনা করছে। আর শত্রুপক্ষ বাখারীর বিপরীত দিকে দিয়ে পূর্বের ন্যায় লাইন করে চলেছে। এখন আর শত্রুতার ভাব দেখা গেল না।
______________
প্রবাসী, পৌষ, ১৩৪৪
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।