তখন উপর দিক থেকে শিকল ক্রমশ খাটো করতে করতে নিচের পাতাকে টেনে কাছে এনে কীড়ার সাহায্যে মূল বাসার সঙ্গে শক্ত করে গেঁথে দেয়।
এরা মাংসাশী প্রাণী। মৃত কীট-পতঙ্গ, মাছের কাঁটা, পাখির পালক প্রভৃতি সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে যায় এবং অবসর মতো সকলে মিলে সেগুলি চেটে খায়। অন্যান্য পিঁপড়ের ডিম ও উই এদের উপাদেয় খাদ্য। নালসোরা সুকৌশলে উই ধরে থাকে। উইয়েরা কখনও অনাবৃত স্থানে যাতায়াত করে না, সর্বদাই অন্ধকারে থাকতে ভালবাসে। এই জন্যই মাটির সুড়ঙ্গ গাঁথতে গাঁথতে অগ্রসর হয়ে থাকে।
জীবন্ত ফড়িং বা ওই জাতীয় কোনো পতঙ্গকে একবার ধরতে পারলে আর রক্ষা নেই। একটা পিঁপড়ে কোনো রকমে একবার শিকার কামড়ে ধরলেই হলো – দেখতে দেখতে দলের অন্যান্য পিঁপড়েরা এসে চতুর্দিক থেকে তাকে ঘিরে ফেলবার চেষ্টা করতে থাকে দংশন-যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে শিকার উড়ে পালাবার জন্যে প্রাণপণে ধ্বস্তাধ্বস্তি করে ; কিন্তু পিঁপড়েরাও তাকে কাবু করবার জন্যে দ্বিগুণ উত্সাহে বলপ্রয়োগ করতে থাকে। ডানা চেপে ধরতে না পারলে শিকার সহজেই উড়ে যেতে সক্ষম হয় ; সে অবস্থায় কিন্তু পিঁপড়েরাও কামড় ছাড়ে না। অন্যান্য পিঁপড়ে এসে তখন সে পিঁপড়েটার পা অথবা কোমর কামড়ে ধরে টেনে রাখতে চেষ্টা করে। এই অবস্থায় ক্রমশ পিঁপড়ের একটা শিকল গেঁথে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায়, ফড়িং উড়ে যাচ্ছে আর তার লেজ অথবা পা কামড়ে ধরে দু-তিনটা নালসো শিকলের মতো ঝুলছে।
নালসো-পিঁপড়েদের প্রকৃতি এতই উগ্র যে, শত্রু হোক কী মিত্রই হোক বাসার কাছে এলে কারও নিস্তার নেই। প্রবল-দুর্বল নির্বিশেষে দলে দলে ছুটে এসে আক্রমণ করবে। প্রাণের ভয় যেন এদের মোটেই নেই। একবার আক্রমণ করলে কিছুতেই পিছু হটবে না। শত্রুর আক্রমণে সঙ্গীরা দলে দলে প্রাণ হারাচ্ছে দেখেও এরা যেন মোটেই বিচলিত হয় না বরং চতুর্গুণ উত্তেজনার সঙ্গে মরণপণ লড়াই শুরু করে দেয়। একবার শত্রুকে কামড়ে ধরতে পারলেই হয় – কিছুতেই আর কামড় ছাড়বে না। মস্তক থেকে দেহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও মস্তকটি সেই একই ভাবে মরণ-কামড় দিয়ে শত্রুর দেহ্সংলগ্ন হয়ে থাকে। শত্রুর আগমনের আশঙ্কা হলেই দেহের প্রান্তদেশ থেকে এক প্রকার বিষাক্ত রস পিচকিরির মতো ছুড়ে মারতে থাকে। এই রসের বিষাক্ত উগ্র গন্ধে এরা অনেক দূর থেকেই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে। লড়াই শুরু হবার মুখে এরা শরীরের পশ্চাদ্দেশ ঊর্ধ্বে তুলে সম্মুখের পা উঁচু করে এমন উত্তেজিত অবস্থায় মুখ হাঁ করে ছুটে এসে দলে দলে বাসার উপর সার বেঁধে দাঁড়ায় যে, অতি বড় শত্রুও অগ্রসর হতে ইতস্তত করতে বাধ্য হয়। উত্তেজিত জনতা যেমন জিগির তুলে সকলের প্রাণে উত্সাহের সঞ্চার করে, প্রবল উত্তেজনার সময় এরাও তেমনই শরীরের পশ্চাদ্দেশ পাতার উপর ঠুকে ঠুকে এক প্রকার অদ্ভুত শব্দ উত্পাদন করে। বাসার সম্মুখে কান পেতে রাখলে এক প্রকার অষ্ফুট খস্ খস্ শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।