হেড্ আফিসের বড়বাবুর প্রলাপ – “গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।” হয়তো এখনও আমরা অনেকেই ভুলিনি, কিন্তু এও কি ভাবা যায় আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে যে Gene-গুলো আছে তার কতকগুলো Gene-এর গঠন জেনে সত্যি-সত্যিই আমাদের মুখমণ্ডলের ছবি আঁকা সম্ভব! হ্যাঁ, মার্চ, ২০, ২০১৪ -এ প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র, Modeling 3D Facial Shape from DNA-তে ঠিক এমনটাই দাবী করেছেন একদল বিজ্ঞানী। ব্যাপারটা ঠিক কেমন ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে সেটার একটা ছবি পেতে গেলে আগে আমরা বরং কতকগুলো জীবনবিজ্ঞানভিত্তিক বিষয় খুব সংক্ষেপে আলোচনা করে নিই।
আমরা অনেকেই লক্ষ্য করেছি বিশ্বের বিভিন্ন অংশের বিশেষ আঞ্চলিক মানুষের মুখের গড়নের মিল। এক্ষেত্রে মোঙ্গলজাতি বোধ হয় বেশ ভালো উদাহরণ। সত্যিই চীনাদের চিনতে আমাদের কি খুব একটা অসুবিধা হয় ? মা এবং বাবা’র মুখমণ্ডলের সাথে তাদের সন্তানদের মুখাকৃতির মিল আমরা সবাই-ই দেখেছি। তার মানে মা- বাবা’র কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সন্তানের শরীরের কোষ — তার মধ্যে উপস্হিত Gene-এই কি লুকিয়ে আছে এর বিশেষ রহস্য ? হ্যাঁ এভাবেই ভেবেছেন এবং এগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমে তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং কেপ ভার্দের বসবাসকারী য়ুরোপিয়ান এবং পশ্চিম-আফ্রিকার মিশ্র জাতিকুলের (ancestry) মধ্যে থেকে সংগ্রহ করেছেন ৫৯২ জন স্বেচ্ছাসেবীর ছবি। তারপর তাদের মুখের এই ছবিগুলো থেকে তৈরী করেছেন ত্রিমাত্রিক অবয়ব( 3D models) আর ছবিগুলো বোঝার সুবিধার জন্যে প্রতিটি চিত্রকে ভাগ করে নিয়েছেন সাত-হাজারেরও বেশি খণ্ডে।
ছবি: https://www.plosgenetics.org/article/info:doi/10.1371/journal.pgen.1004224#pgen-1004224-g001
এরপর প্রতিটি খণ্ডের (ধরা যাক, নাক ) আলাদা-আলাদা করে গঠন বিন্যাস পর্যবেক্ষণ করে তাদের মধ্যে বৈষম্যের তারতম্য গুলো খুঁজেছেন। এতো গেলো বাহ্যিক ব্যাপার, কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি বিজ্ঞানীরা, উত্তরের খোঁজে ঢুকে পরেছেন Gene-এর ভেতরে। স্বেচ্ছাসেবীদের Gene-এর বিন্যাস ঘেঁটে বের করেছেন যে DNA-এর ঠিক কোন্ কোন্ অংশ গুলো মুখমণ্ডলের এই বাহ্যিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী ! গবেষণাটির যথার্থ রূপ দিতে তাঁরা ক্রমান্বয়ে কতকগুলো ধাপে এগিয়েছেন। প্রথমে মুখমণ্ডল/ মাথার পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্যে যে Gene গুলো দায়ী সেগুলির ওপর নজর দিয়েছেন। তারপর স্বেচ্ছাসেবীদের পূর্বজাতির পরিচয় এবং রাশিভিত্তিক বিশ্লেষণের (statistical analysis) মাধ্যমে ২০টি Gene-এর মধ্যে ২৪টি বিশেষ অংশকে(SNP-single nucleotide polymorphism) চিহ্নিত করেছেন। কাজটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা কিন্তু নয়, এর সাথে জুড়ে রয়েছে বেশ জটিল কিছু যান্ত্রিক গণনা!
এই গবেষণা দেখে এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে অপরাধ দমনে এর প্রয়োগ করা যেতে পারে। অপরাধীরা কোন অপরাধ মূলক কাজের সময় নিজেদের অজান্তেই যে “criminal’s visiting card” (যেমন, শরীরের লোম, কোষ,হাতের ছাপ ইত্যাদি) রেখে যায় আর তার মধ্যে থাকা DNA থেকেই তাদের মুখের ছবি পাওয়া যাবে! যদিও এই গবেষণার ফল এক্ষুণিই ব্যাপকভাবে প্রয়োগ সম্ভব নয় কিন্তু সহ-গবেষক পিটার ক্লেইসের আশা আগামী দশ বছরের মধ্যেই এর চমকপ্রদ ফল পাওয়া যাবে, অপরাধ এবং অপরাধী দমনে শক্তিশালী হবে Forensic Science!