পঙ্গপালের ব্যাপারটা কিরূপ, সে সম্বন্ধে আমাদের দেশের লোকের ধারণা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। তার প্রধান কারণ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অভাব। পঙ্গপালের উপদ্রব যে কী ভীষণ তা যথাযথ বর্ণনা করা দুরূহ। একসঙ্গে অকস্মাৎ অগণিত পতঙ্গের আবির্ভাব একটা অভাবনীয় ব্যাপার। চোখে না দেখলে পঙ্গপালের অভিযানের ভীষণতা কিয়ৎ পরিমাণেও হৃদয়ঙ্গম করা অসম্ভব। সিনেমায় পঙ্গপালের অভিযানের দৃশ্য দেখে বাস্তব ঘটনার ভীষণতা কিয়ৎ পরিমাণে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। একসঙ্গে লক্ষ কোটি পঙ্গপাল দেখে নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে প্রবৃত্তি হয়না। লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি পতঙ্গ কোথা থেকে এসে অকস্মাৎ গাছপালা, পথ-ঘাট উপর-নীচ সব কিছু ছেয়ে ফেললো। আকাশ বাতাস যেদিকে তাকাও – কেবল পঙ্গপাল আর পঙ্গপাল। স্থানে স্থানে তিন চার ফুট উঁচু হয়ে পঙ্গপাল জমেছে। পুঞ্জীভূত ঘনকৃষ্ণ বিশাল মেঘ দেখতে দেখতে যেমন করে দিনের আলো আচ্ছন্ন করে ফেলে তার চেয়েও বহুগুণ গাঢ়তার আবরণে আকাশ-বাতাস আচ্ছন্ন করে পঙ্গপালের অভিযান চলতে থাকে। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। কোথাও ব্যাপকভাবে মড়ক লাগলে পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকেরা যেমন ভীতিবিহ্বলতার পরিচয় দিয়ে থাকে – বহুদূরে পঙ্গপাল দেখা যাচ্ছে – এ কথা শুনে মানুষ তেমনই আতঙ্কে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। হাওয়া অফিস যেমন ঝড়, জল, ঘূর্ণিবাত্যা প্রভৃতি দুর্যোগের সূচনা দেখলে তড়িদ্বার্তার সাহায্যে পূর্বেই সকলকে সতর্ক করে দেয়, কোনও স্থানে পঙ্গপালের আবির্ভাব ঘটলে আজকাল সেরূপ তাদের অগ্রাভিযানের সম্ভাবিত পথ সম্বন্ধে পূর্বাহ্নেই সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এর ফলে দূরবর্তী স্থানের লোকেরা এদের যথাসম্ভব প্রতিরোধ করবার জন্যে পূর্ব থেকেই প্রস্তুত হতে পারে। কিন্তু এদের অভিযান ব্যর্থ করা অসম্ভব। আকাশের একদিক থেকে কৃষ্ণবর্ণ ঘন মেঘের মতো পঙ্গপালের অগ্রগতি দেখতে পেলেই গ্রামের লোকেরা একযোগে দিশাহারা ভাবে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, শিঙ্গা ফুঁকে অথবা বিভিন্ন উপায়ে ভীষণ শব্দ করে তাদের অভিযানের দিক পরিবর্তন করবার জন্যে প্রাণপণে চেষ্টা করে; কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে সময়ে সময়ে দিক পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা গেলেও মোটের উপর এর দ্বারা কোনও সুফল লাভ হয় না। যতই কিছু উপায় অবলম্বিত হোক না কেন- মাঠ-ঘাট, আকাশ-বাতাস ছেয়ে পঙ্গপালের অভিযান চলতে থাকে। আগুন অথবা অন্য কোনও উপায়ে স্তূপীকৃতভাবে ধ্বংস করলেও এদের সংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি কিছুই বুঝতে পারা যায় না – সংখ্যা এদের অগণিত।
যে সকল স্থান শস্য এবং সবুজ তৃণগুল্ম বা গাছপালায় আচ্ছন্ন ছিল পঙ্গপালের আবির্ভাবের কয়েক ঘণ্টা পরেই দেখা গেল, সে সব স্থানের চেহারা একেবারে বদলে গেছে। কোনও স্থানেই আর সবুজের চিহ্ন মাত্র নেই। ঘাস-পাতা, শাক-সব্জির তো কথাই নেই, বড় বড় গাছপালা সকলই পত্রশূন্য অবস্থায় বিরাজ করছে। পঙ্গপালেরা বহু বিস্তীর্ণ প্রান্তরের যাবতীয় পত্র-পল্লব শস্যাদি নিঃশেষে উজাড় করে দেশকে মরুভূমিতে পরিণত করে উড়ে গেছে। মোটের উপর কোনও স্থানে পঙ্গপাল আবির্ভাবের পূর্বে এবং পরের অবস্থা দেখলে একথা সহজেই মনে হবে যেন কোনও অদ্ভুত যাদুবিদ্যাবলে দেশটা রাতারাতি এভাবে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। কোনও কোনও স্থানে খুব পুরু হয়ে বরফ পড়লে সময় সময় রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেরূপ রেল লাইনের উপর পুরুভাবে পঙ্গপাল জমে যাবার ফলে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এরূপ ঘটনারও নজীর আছে। এ থেকেই পঙ্গপালের সংখ্যার গুরুত্ব অনুমান করা যেতে পারে।
পঙ্গপালের উৎপাত সম্বন্ধে প্রাচীন মিশরের একটি বর্ণনায় উল্লেখিত আছে – পরমেশ্বর আমাদের দেশের উপর দিয়ে সারাদিন সারারাত পূর্ব দিকের বায়ু প্রবাহিত করালেন। প্রভাত হবার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ব বায়ু পঙ্গপালের আবির্ভাব ঘটলো। পঙ্গপালেরা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো। তারা যেন পৃথিবীর সর্ব স্থান ঢেকে ফেললো। কাজেই দেশ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। দেশের যেখানে লতাপাতা, শাক-সব্জি, গাছপালা ছিল, তা সবই নিঃশেষ করে ফেললো। বিস্তীর্ণ মিশরের কোথাও একটু সবুজের চিহ্নমাত্র রইলো না।
বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে আজও পঙ্গপালের উপদ্রব প্রতিকারের তেমন কোনও কার্যকর পন্থা আবিষ্কৃত হয়নি। ১৯২৮ সালে ডানাশূন্য অপরিণত বয়স্ক পঙ্গপালের আক্রমণে প্যালেস্টাইন এক প্রকার শ্মশানে পরিণত হয়েছিল। ১৯২৫ সালে মিশরে পঙ্গপালের আক্রমণ হয়। কিন্তু কীটতত্ত্ববিদ বৈজ্ঞানিকদের সমবেত প্রচেষ্টায় মিশর সে যাত্রায় অনেকটা আত্মরক্ষায় সক্ষম হয়েছিল। আলজিরিয়া, পারস্য, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার বহু স্থানে কয়েক বছর পর পর পঙ্গপালের উপদ্রব হয়। তার ফলে সেখানে খাদ্য-রেশনের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। ১৯২৬ সালে একমাত্র উত্তর ককেশাস প্রদেশেই প্রায় ৮০০০০ একর জমির গম, ভুট্টা, বজরা প্রভৃতি শস্য পঙ্গপালের উদরস্থ হয়েছিল। এ থেকেই পঙ্গপালের উপদ্রবের ভীষণতা কিয়ৎ পরিমাণে উপলব্ধি হবে।
ছোট শুঁড়ওয়ালা বৃহত্তর এক জাতীয় কয়ার-ফড়িংকেই সাধারণত পঙ্গপাল নামে অভিহিত করা হয়। অবশ্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতীয় কয়ার-ফড়িং এবং অন্যান্য তৃণভোজী পতঙ্গ-এমন কি, দলবদ্ধ ঝিঁঝিঁ পোকাকেও পঙ্গপাল নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। যাহোক, আমাদের দেশে কয়ার-ফড়িং বোধহয় অনেকেই দেখে থাকবেন। এরা ঝোপঝাড়ে এবং শস্যক্ষেত্রেই অনবরত বিচরণ করে থাকে। এদের শরীরের গঠন খুবই দৃঢ়। পিছনের ঠ্যাং দুখানি দেহের তুলনায় খুবই লম্বা এবং স্থুলাকার। এই ঠ্যাং দুটির শক্তিও অসাধারণ। ঠ্যাঙের সাহায্যে এরা প্রায় দশ-বারো ফুট দূরে লাফিয়ে যেতে পারে। প্রায়ই এরা গাছ বা লতাপাতার উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। নেহাৎ দায়ে পড়লে উড়ে যায়। তবে উড়তে তত পটু নয়। ঘাসপাতা, ফুল-ফল খেয়েই ওরা জীবন ধারণ করে। আমাদের দেশেই অন্তত বিশ-পঁচিশ রকমের কয়ার-ফড়িং দেখা যায়, কিন্তু এরা কেউ দলবদ্ধ ভাবে উড়ে বেড়ায় না, সর্বদাই একক ভাবে বিচরণ করে। কয়েক জাতীয় কয়ার-ফড়িং সিকি ইঞ্চির বেশী বড় হয় না। আমাদের দেশীয় প্রকৃত পঙ্গপাল জাতের কয়ার-ফড়িংগুলি প্রায় দু-ইঞ্চি থেকে আড়াই-ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এরা সংখ্যায় অপেক্ষাকৃত কম। বিভিন্ন জাতীয় কয়ার-ফড়িঙের শরীরে বিচিত্র বর্ণের সমাবেশ দেখা যায়। বিভিন্ন জাতীয় কয়ার–ফড়িংই শরীরের পশ্চাদ্ভাগের সাহায্যে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে ডিম পাড়ে।
ডিম পাড়বার পূর্বে এদের স্ত্রী–পুরুষের মিলনরীতিও কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়। এদের পিছনের পায়ের ভিতরের দিকে অতি সূক্ষ্ম করাতের দাঁতের মতো সারবন্দিভাবে সূক্ষ্ম কাঁটা আছে। শরীরের উভয় পার্শ্বস্থিত পাতলা পর্দার উপর উখার মতো ঘষে এরা এক প্রকার শব্দ উৎপন্ন করতে পারে। একটু মনোযোগ দিলেই এখানে ঘাসপাতার মধ্যে এদের চিড়িক্ চিড়িক্ শব্দ শুনতে পাওয়া যাবে! পূর্বেই বলেছি, এরা দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে না। মিলনের সময় হলেই পুরুষ পতঙ্গটা প্রথমে তিন বার অথবা কোনও কোনও স্থলে চার বার চিড়িক্ চিড়িক্ শব্দ করে। কয়েক দফায় এরূপ শব্দ করবার পর আশেপাশে কোথাও কোনও স্ত্রী-পতঙ্গ থাকলে সেও তখন তিনবার কি চারবার চিড়িক্ চিড়িক্ শব্দ করে। কিছুক্ষণ পরে পুরুষ পতঙ্গটি আবার অনুরূপ শব্দ করতে থাকে। প্রায় আধঘণ্টা কাল পালাক্রমে উভয়ে এরূপ শব্দ করবার পর পুরুষ পতঙ্গটা উড়ে গিয়ে স্ত্রী-পতঙ্গের নিকটে উপস্থিত হয়। স্ত্রী-পতঙ্গের শরীরের পশ্চাদ্ভাগে ডিম পাড়বার শক্ত অথচ সূঁচালো একটি লম্বা নলের মতো পদার্থ আছে। এর সাহায্যে সে গর্তের মধ্যে সুবিন্যস্তভাবে কতকগুলি ডিম পেড়ে রাখে। গুচ্ছাকারে সজ্জিত ডিমগুলির উপরিভাগে একটা শক্ত আবরণী বেষ্টিত থাকে।
বাচ্চাগুলি দেখতে অনেকটা পূর্ণবয়স্ক পতঙ্গের মতো। কিন্তু তাদের ডানা থাকে না। এরা বারংবার খোলস পরিত্যাগ করে ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রজাপতি এবং ফড়িঙের যেমন শেষবার খোলস পরিত্যাগের পর ডানার পূর্ণরূপ বিকশিত হয়, এদের কিন্তু সেরূপ হয় না। প্রত্যেকবার খোলস পরিবর্তনের পর ডানাগুলি ক্রমে ক্রমে বড় হতে থাকে এবং শেষ বারে পূর্ণাঙ্গ অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। বাচ্চা বয়সে এরা প্রায়ই লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। অপরিণত বয়স্ক বাচ্চাগুলিই বেশীরভাগ শস্যাদি উজাড় করে দেয়। Locusta migratoria নামে একজাতীয় পঙ্গপাল দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম–এশিয়ার ভূখণ্ডসমূহে মাঝে মাঝে আবির্ভূত হয়ে থাকে। এই জাতীয় পঙ্গপালই একবার উত্তর ককেশাসে আবির্ভূত হয়েছিল। এই পঙ্গপালগুলিকে এবং বিশেষভাবে তাদের ডিম সমেত একটি নির্দিষ্ট স্থানকে পরীক্ষার ফলে দেখা যায় – তাদের ডিম ফুটে পূর্বোক্ত পঙ্গপালের অনুরূপ অনেক বাচ্চা বের হয়েছে বটে কিন্তু তাদের মধ্যে বিভিন্ন রকমারি বাচ্চারও অভাব নেই। পূর্বে যে পঙ্গপালকে স্বতন্ত্র জাতীয় মনে করা হতো, এরা দেখতে ঠিক তাদেরই মতো ছিল। অথচ আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই জাতীয় পঙ্গপাল পূর্ব বছরে সেস্থানে মোটেই দৃষ্টিগোচর হয় নি। এরা সাধারণত এককভাবে বিচরণ করে ; কিন্তু পূর্বোক্ত পতঙ্গগুলি দলবদ্ধভাবে দেশ-দেশান্তরে উড়ে বেড়াতেই অভ্যস্ত। তারপর পরীক্ষাগারে এই পঙ্গপাল নিয়ে পুনরায় দস্তুরমত গবেষণা শুরু হয়! পরীক্ষার ফলে প্রমাণিত হয় যে, উড়ন্ত পঙ্গপাল এবং বর্ণ বৈচিত্র্য বিশিষ্ট একাকী বিচরণকারী পঙ্গপালেরা একই জাতির অন্তর্ভুক্ত। কাজেই বোঝা গেল যে, পঙ্গপালের দল প্রথম অন্য স্থান থেকে উড়ে এসেছিল। তাদের সন্তান-সন্ততিরাই ভিন্নরূপ ধারণ করে একাকী বিচরণকারী পঙ্গপালে পরিণত হয়েছে। সুতরাং কোনও কোনও ক্ষেত্রে পঙ্গপালের আকস্মিক আবির্ভাবের পর আবার আকস্মিক তিরোধান ঘটলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তাদের বংশধরেরা থেকেই যায়। উড়ন্ত পঙ্গপালের ডিম থেকেও একাকী-বিচরণকারী পঙ্গপালের উৎপত্তি ঘটে থাকে। তখন তাদের আকৃতি, প্রকৃতি সবই পরিবর্তিত হয়ে যায়। কতকগুলি প্রজাপতির মধ্যেও এরূপ ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এদের শীত ও বর্ষা উভয় ঋতুতেই বাচ্চা হয়ে থাকে। শীতকালের বাচ্চা বর্ষাকালের অপেক্ষা আকৃতি প্রকৃতি এবং বর্ণ বৈচিত্র্যে সম্পূর্ণ পৃথক। এই বিষয়ে অধিকতর পরীক্ষার ফলে দেখা গেছে মরুভূমির পঙ্গপাল Schistocerca gregaria এবং S. paranensis, Locustana pardalina, Melanoplu spretus প্রভৃতি বিভিন্ন জাতীয় পঙ্গপালের বাচ্চাগুলিও বিভিন্ন আকৃতি-প্রকৃতি বিশিষ্ট হয়ে থাকে। পরীক্ষাগারে যথেষ্ট সংখ্যক পঙ্গপাল প্রতিপালন করে দেখা গেছে, এদের সংখ্যা অসম্ভবরূপে বৃদ্ধি না পেলে এরা একাকী বিচরণ করে থাকে, কিন্তু সংখ্যা অসম্ভব রূপে বৃদ্ধি পেলেই এদের মধ্যে ওড়বার প্রবৃত্তি জাগতে আরম্ভ করে। খাদ্যের প্রাচুর্যের ফলে অসংখ্য বাচ্চা জন্মাতে থাকে- সংখ্যা আরও বেড়ে গেলে খাদ্য সংগ্রহের প্রবৃত্তি থেকে ওড়বার ইচ্ছা প্রবল হয় এবং দু-একটির ওড়বার প্রবৃত্তি দেখে অপর পতঙ্গেরাও ক্রমশ উদ্বুদ্ধ হয় এবং উড়ন্ত পতঙ্গের দল ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরূপে ক্রমে ক্রমে অন্যান্য দল একত্রিত হয়ে সকলে একই দিকে উড়ে চলে। অভিযানের ফলে অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হলেও অবশিষ্টেরা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বিরাট দল ক্রমশ কমতে কমতে অবশেষে সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। কয়েক বছর পরে আবার যখন এই ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে, তখন কোনও এক স্থান থেকে অথবা বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযান শুরু হয় এবং ক্রমশ বিরাট দলে পরিণত হয়ে দেশ উজাড় করতে করতে অগ্রসর হয়।
পঙ্গপালের উপদ্রব প্রতিকারার্থে আজ পর্যন্ত তেমন কোনও কার্যকর উপায় আবিষ্কৃত না হলেও এদের আগুনে পুড়িয়ে মারবার জন্যে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বিত হয়ে থাকে। সাধারণত এদের অগ্রগতির পথে আড়াআড়িভাবে লম্বা লম্বা গভীর নালা কেটে রাখা হয়। তাড়া খেয়ে এরা দলে দলে গর্তের মধ্যে পড়ে স্তূপীকৃত হতে থাকে। তখন কেরোসিন প্রভৃতি পদার্থের সাহায্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক স্থলে আবার গভীর গড়খাইয়ের মধ্যে মসৃণ টিনের পাতের লম্বা পাত্র নালার মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়। পঙ্গপালেরা তার নীচে পড়ে গেলে টিনের মসৃণ গা বেয়ে উপরে উঠে আসতে পারে না। তখন সেগুলিকে ক্রেনের সাহায্যে উপরে তুলে বস্তাবন্দি করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়।
______________
প্রবাসী, আশ্বিন, ১৩৫১
উৎসাহী পাঠকদের জন্য –
১। পঙ্গপালের কীর্তি স্বচক্ষে দেখতে এই ভিডিওটি দেখুন।