জল-বরফ আর জল-বাষ্প, এই দুটো দশা পরিবর্তন-ই কি একই রকম? পদার্থের আণবিক সজ্জা থেকে দশা পরিবর্তন চেনার কোনো উপায় আছে কি? শোনা যাক অধ্যাপক জয়দীপ সাউ-এর কাছে।
২০১৬ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন জন: ডেভিড থাউলেস, ডানকান হ্যালডেন, এবং মাইকেল কস্টারলিৎস। নোবেল কমিটি থাউলেসকে এ বছরের পুরস্কারের অর্ধেক দিয়েছেন, আর বাকী অর্ধেক সমানভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে হ্যালডেন ও কস্টারলিৎসকে। পুরস্কারের কারণ হিসাবে কমিটি উল্লেখ করেছেন – “for theoretical discoveries of topological phase transitions and topological phases of matter”, অর্থাৎ টপোলজিক্যাল দশা পরিবর্তন এবং পদার্থের টপোলজিক্যাল দশার তাত্ত্বিক আবিষ্কারের জন্য এই তিন বিজ্ঞানীকে পুরস্কার দেওয়া হল।
‘টপোলজিক্যাল’, ‘দশা’, তারও আবার ‘পরিবর্তন’ – শুনতে শক্ত এই সব কথার মানে সহজ করে বুঝতে আমরা আড্ডায় বসলাম মেরীল্যাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক জয়দীপ সাউ-এর সাথে। জয় নিজেই পদার্থের টপোলজিক্যাল দশা নিয়ে গবেষণা করে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর জয়ের কাছ থেকে জেনে নেওয়া –
১) কেন পদার্থের টপোলজিকাল দশা এতটা গুরুত্বপূর্ণ, কোথা থেকে লোকজন এই ধারণাগুলো পেলো?
২) বিজয়ী বিজ্ঞানীদের অবদান ঠিক কোথায়, এবং সেই সাথে, কোন দিকে এগোচ্ছে এই বিষয়ের গবেষণা?
৩) লোকজন সবকিছুই আবিষ্কার করে ফেলেছে না এখনো নতুন কিছু করার অবকাশ রয়েছে (open problems)? আর,
৪) কেনই বা থাউলেসকে বাকীদের থেকে বেশি অংশ দেওয়া হল এবারের নোবেল পুরস্কারের?
কথায় কথা বাড়ে। আরও বাড়ে, যদি সে যুগান্তকারী বেশ কিছু আবিষ্কারের কথা হয়। আমাদের সুদীর্ঘ আড্ডা অবশ্য শেষ হল এক সময়ে, এবার পাঠকের সাথে সেই মজা ভাগ করে নেবার পালা!
পদার্থের দশা পরিবর্তন ও প্রতিসাম্য
বিজ্ঞান: পদার্থের টপোলজিক্যাল দশা বা Topological phases of matter নিয়ে তোমার কাছ থেকে আমরা শুনতে চাই। কিন্তু, প্রথমে বুঝতে চাই যে ‘phases of matter’ বা ‘পদার্থের দশা’ বলতে কী বোঝায়।
অধ্যাপক জয় দীপ সাউঃ পদার্থের দশা বলতে আমরা সাধারণতঃ তিনরকম অবস্থার কথা বুঝি – কঠিন, তরল, আর গ্যাসীয় অবস্থা। একটা সহজ উদাহরণ হল জল। জলের তিনরকম অবস্থা আমরা দেখতে পাই। সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায় জল তরল অবস্থায় থাকে, ঠাণ্ডা করলে কঠিন বা বরফ হয়, এবং ফোটালে বাষ্প হয়ে যায়। মজা হচ্ছে, এই যে জল থেকে বরফ বা বাষ্প হওয়ার ঘটনা, সেটা একটা নির্দিষ্ট বায়ুচাপে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হঠাৎ করে হয়! সাধারণ বায়ুচাপে জলকে ঠাণ্ডা করতে করতে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে এলে সে বরফে পরিণত হয়, এবং যতক্ষণ পুরো জল বরফে পরিণত না হচ্ছে তাপমাত্রা পালটায় না। একইভাবে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বিশুদ্ধ জল বাষ্পে পরিণত হয়। অর্থাৎ, ১০০ ডিগ্রীর কম তাপমাত্রায় সে তরল। তার উপর চাপ প্রয়োগ করলে সহজে আয়তন কমে না। কিন্তু এই তাপমাত্রা পেরিয়ে গেলেই সে গ্যাসীয়, যার উপর চাপ প্রয়োগ করলে আয়তন কমে যায়। পদার্থবিদ্যার ভাষায় একে পদার্থের ‘দশার পরিবর্তন’ বা phase transition বলা হয়। এই পদার্থের দশা পরিবর্তন থেকে মোটামুটি বোঝা যায় যে বরফ, জল এবং বাষ্প আলাদা জিনিস।
বিজ্ঞানঃ আচ্ছা, তার মানে এই ‘দশা পরিবর্তন’-এর মাধ্যমে আমরা জলের এক দশা থেকে আরেক দশায় যেতে পারি। উল্টোটা কি সত্যি? অর্থাৎ, এক দশা থেকে আরেক দশায় যেতে হলে, যেমন জল থেকে বাষ্পে যেতে গেলে এই হঠাৎ পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতেই হবে? অন্য কোন রাস্তা নেই?
জয়ঃ সেটা খুব ভাল প্রশ্ন। আমি আগে যা বললাম তাতে মনে হতে পারে যে জল থেকে বাষ্পে পরিবর্তন করতে গেলে এই হঠাৎ ‘দশা পরিবর্তন’-এর মধ্যে দিয়েই যেতে হবে। যার অর্থ, জল থেকে বরফ পেতে গেলে জলকে ঠাণ্ডা করে জমাতেই হবে এবং বাষ্প পেতে গেলে জলকে ফোটাতেই হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, কয়েকশো বছর ধরে পদার্থবিদদের জানা আছে যে জলকে যদি অতিরিক্ত বায়ুচাপে গরম করা হয়, তাহলে সে ধীরে ধীরে সংকোচনশীল হয়ে যায়। এখানে ‘ধীরে ধীরে’ কথাটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। জল কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসে ফুটে বাষ্পে পরিণত হল না। ধীরে ধীরে সঙ্কোচনশীল হয়ে জল আর বাষ্পের মধ্যে পার্থক্য হারিয়ে গেল [১]। তাই, জল থেকে বাষ্পে যেতে হলে ১০০ ডিগ্রীর হঠাৎ দশা পরিবর্তনটা জরুরি নয়, চাপ বাড়িয়ে এটাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়।
বিজ্ঞান: এই একই ঘটনা কি জল ও বরফের মধ্যেও হবে?
জয়ঃ জল ও বরফের মধ্যে এটা সম্ভব নয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, জল থেকে বরফে যেতে হলে ‘দশা পরিবর্তন’ ছাড়া সম্ভব নয়। কেউ বুদ্ধি করে কখনোই জলকে এমনভাবে ঠাণ্ডা করতে পারবে না যে জল হঠাৎ করে কোন এক নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসে জমল না, বরং ধীরে ধীরে বরফে পরিণত হয়ে গেল।
বিজ্ঞানঃ জল থেকে বাষ্প তৈরি করা যায় না ফুটিয়েই, কিন্তু না জমিয়ে বরফ তৈরি করা যায় না – এই ঘটনার পিছনে কি গভীর কোন কারণ আছে?
জয়ঃ এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় হল – জল ও বরফের প্রতিসাম্য (Symmetry) আলাদা। এই রহস্য প্রথম বুঝেছিলেন লেভ লান্দাউ (Lev Landau) নামে এক রাশিয়ান পদার্থবিদ। এই প্রশ্নের সাথে সম্পর্কযুক্ত অতিপরিবাহিতা বা Superconductivity-র ওপর কাজের জন্য নোবেল পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
বিজ্ঞানঃ কিসের প্রতিসাম্য?
জয়ঃ তাহলে বলি সিমেট্রি বা প্রতিসাম্য জিনিসটা কী। জলের উদাহরণের সাহায্যেই বোঝা যাক ব্যাপারটা।
বরফ জলের অণু (H2O) দিয়ে তৈরি। আধুনিক প্রযুক্তির অত্যন্ত শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র, যেমন অ্যাটমিক ফোর্স মাইক্রোস্কপি (AFM) দিয়ে বরফের অণুগুলোকে দেখলে বোঝা যাবে যে বরফ আসলে একটা ক্রিস্টাল বা কেলাস। মানে, অণুগুলো একে অপরের পরিপ্রেক্ষিতে ভীষন নিয়মিতভাবে সাজানো আছে। সেই প্যাটার্নটা আবার এমন যে একটা নির্দিষ্ট কোণে ঘোরানো হলে (যেমন নীচের ছবিতে ১২০ ডিগ্রী কোণে) সেটা আবার আগের সজ্জাতেই ফেরত আসে। এটা হল একটা সিমেট্রির উদাহরণ।
বিজ্ঞানঃ মানে, আমি বুঝতে পারব না যে ওটা ঘোরানো হয়েছে?
জয়ঃ ঠিক তাই। ঠিক যেমন একটা বর্গাকার বস্তু নিয়ে ৯০ ডিগ্রী ঘোরালে একই অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু এই বস্তুর দৈঘ্য ও প্রস্থ যদি আলাদা হয়, অর্থাৎ সে বর্গাকার (স্কোয়ার) না হয়ে আয়তকার (রেকট্যাঙ্গুলার) হয় তাহলে কিন্তু বুঝতে পারব যে এটাকে ঘোরানো হয়েছে। অর্থাৎ, এই ৯০ ডিগ্রীতে ঘোরানোটা বর্গাকার বস্তুর একটা সিমেট্রি বা প্রতিসাম্য। কিন্তু আয়তকার বস্তুর এই সিমেট্রি নেই।
জলের অণুগুলো এলোমেলোভাবে ঘুরে বেরাচ্ছে। তাই, পারমাণবিক স্তরে যদি জলকে দেখা হয় তাহলে আপাতভাবে মনে হবে যে এর কোন প্রতিসাম্য বা Symmetry নেই। কিন্তু এটাকে একটু অন্যরকমভাবে দেখতে হবে। একটু আগে আমরা বরফের ক্রিস্টালকে ঘুরিয়ে দেখেছিলাম যে ১২০ ডিগ্রী বা তার গুণিতক ছাড়া অন্য কোন কোণে ঘোরালে তার সজ্জা পালটে যায়। আর তাই পরীক্ষা করে (যেমন শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ছবি তুলে) বোঝা যাবে যে কেউ ক্রিস্টালটিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে কিনা। জলের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন করা যাক। কিছুটা জল নিয়ে তাকে কোন কোণে ঘুরিয়ে দিলে পরীক্ষা করে বের করা সম্ভব কি যে তাকে কতটা ঘোরানো হয়েছে? (এখানে ধরে নিচ্ছি যে জল এমন এক পাত্রতে রাখা আছে যাকে দেখে বোঝার উপায় নেই ঘোরানো হয়েছে কিনা।)
মূল কথা হচ্ছে যে জল বা তরলকে যদি ঘোরানো হয় তাহলে কোন পার্থক্য বোঝা যায়না, কারণ তরলের মধ্যে অণুগুলো এমনিতেই এলোমেলো ভাবে ঘোরাঘুরি করে – যেগুলো ঘোরানোর আগেও এলোমেলো ছিল পরেও এলোমেলো থাকবে। জলের অণুগুলোর এলোমেলো সজ্জার জন্য যে কোণেই ঘোরাই না কেন আণবিকভাবে দেখতে একই থাকবে। অর্থাৎ, জলের ঘূর্ণন সিমেট্রি আসলে বরফের থেকে বেশি!
বিজ্ঞানঃ এই সিমেট্রি আছে না নেই সেই ব্যাপারটা বুঝতে কি সত্যিই প্রতিটা অণু দেখতে হবে, না কি অন্য কোন উপায় আছে? শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরির আগেকার দিনে বিজ্ঞানীরা কীভাবে বুঝেছিলেন?
জয়ঃ এটা বোঝার দুটো রাস্তা আছে।
(১) কোন ক্রিস্টালকে (যেমন বরফ) সহজে ভাঙা যায় কিছু নির্দিষ্ট তল বরাবর, যেগুলোকে ক্রিস্টাল তল বলা হয়। তাহলে একখণ্ড বরফকে একটু ঘুরিয়ে দিলে এই তলের অভিমুখও ঘুরে যাবে। অনেক পুরানো দিনে কোন ক্রিস্টালের সিমেট্রি কী (বা ক্রিস্টালকে ঘোরানো হয়েছে কিনা), সেটা লোকে এই বিশেষ তলগুলোর অভিমুখ দেখে বুঝতে পারতো।
(২) আর একটা রাস্তা হল এক্স-রে ডিফ্রাকসন (X-ray diffraction) পদ্ধতি। বরফের ওপর এক্স রশ্মি ফেললে সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসা রশ্মির একটা প্যাটার্ন পাওয়া যায়। বরফকে ঘুরিয়ে দিলে এই প্যাটার্নটাও ঘুরে যায়। কিন্তু জলের ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট এক্স-রশ্মির প্যাটার্ন তৈরি হয় না। এই পদ্ধতি আবিস্কার করার জন্য বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্র্যাগ (W. L. Bragg) এবং তাঁর ছেলে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
বিজ্ঞান: আমাদের একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে, যেহেতু কঠিন ক্রিস্টালাইন পদার্থের মধ্যে অণুগুলো সুন্দর নিয়মিতভাবে সাজানো থাকে সুতরাং তার সিমেট্রি বা প্রতিসাম্য বেশী। কিন্তু তুমি বলছ যে আসলে ব্যাপারটা উল্টো। তরলকে যেহেতু যে কোন দিকে ঘোরালে একই থাকে, সেহেতু তরলের মধ্যে সিমেট্রি বেশী, কিন্তু কঠিনের মধ্যে সিমেট্রি কম।
জয়ঃ ঠিক তাই। তরলের সিমেট্রি বেশী, কঠিনের কম।
শুধু তাই নয়, সিমেট্রি নিয়ে আলোচনা করতে হলে বেশ কিছু ধাঁধার মত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের এই গল্পের সাথে সেই প্রশ্নের যোগ আছে বলে একটু খুলে বলি।
আমরা এতক্ষণ বরফের বা জলের সিমেট্রির কথা বললাম। আমরা জানি যে জলের তাপমাত্রা কমাতে থাকলে অণুগুলোর মধ্যেকার বল (force) বা আন্তঃক্রিয়ার (interaction) প্রভাবে এই ক্রিস্টাল তৈরি হয়। মজার ব্যাপার হল অল্পসংখ্যক মানে ২-টি বা ৪-টি জলের অণুর মধ্যেকার এই বল বা আন্তঃক্রিয়া কিন্তু কোন নির্দিষ্ট দিকের উপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে তারা নিজেদের মধ্যে কিভাবে সজ্জিত হয়ে আছে (মানে নিজেদের মধ্যে রৈখিক ও কৌণিক দূরত্ব) তার উপর। এই কয়েকটা অণুকে একসাথে যদি ঘুরিয়ে দেওয়া যায় অন্য কোন দিকে, তাহলে তাদের মধ্যেকার বল পালটায় না। প্রতিসাম্যর ভাষার বলতে গেলে বলব যে জলের অণুগুলোর মধ্যেকার আন্তঃক্রিয়ার ঘূর্ণন প্রতিসাম্য আছে – যে কোন কোণে ঘোরালেই তা এক থাকে [২]।
যেহেতু এই আন্তঃক্রিয়ার ফলেই কম তাপমাত্রায় জল থেকে বরফ হচ্ছে, তাহলে আমরা আশা করব যে জলের মত বরফেরও প্রতিসাম্য থাকবে (অর্থাৎ, কেনই বা বরফের অণুগুলোর মধ্যেকার আন্তঃক্রিয়ার এই প্রতিসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে?)। অর্থাৎ, জলের মধ্যে অণুগুলো যেমন এলোমেলো অবস্থান করে, বরফেরও তাই হওয়া উচিত। বরফের আদৌ ক্রিস্টাল হওয়া উচিত ছিল না!
বাস্তবে কিন্তু তা হয় না। অনেকগুলো জলের অণু যখন একসাথে জমে গিয়ে বরফ হয় তখনই এই প্রতিসাম্য ভেঙ্গে যায়। এটাকে Spontaneous Symmetry Breaking বলা হয়। অর্থাৎ, অল্পসংখ্যক অণুর মধ্যেকার আন্তঃক্রিয়ার যে প্রতিসাম্য ছিল, অনেক অণু মিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে (spontaneous) তা ভেঙে দিয়েছে।
ল্যান্দাউ দেখিয়েছিলেন যে এই Spontaneous Symmetry Breaking, যেমন জল থেকে বরফ হওয়ার সময় (যেখানে প্রতিসাম্য কমে যায়), সেটা সর্বদা কোন একটা দশা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই হবে। এই কাজের জন্য ল্যান্ডাউ বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তখন থেকে পরবর্তী প্রায় ৭০ বছর পদার্থবিদদের ধারণা ছিল যে এই প্রতিসাম্য দিয়ে (অর্থাৎ কোন পদার্থ কোন প্রতিসাম্য ভেঙে তৈরি হয়েছে তা দিয়ে) সমস্ত পদার্থকেই শ্রেণীবদ্ধ (classification) করা যায়।
বিজ্ঞান: তুমি শুরুতে বলেছিলে জল থেকে বাষ্পে আমরা যেতে পারি কোনরকম দশা পরিবর্তন ছাড়া। তাহলে জল ও বাষ্পের মধ্যে কোন সিমেট্রির পরিবর্তন হয়নি, এমনটা কি বলতে পারি?
জয়ঃ ঠিক তাই! জল ও বাষ্প দুটো ক্ষেত্রেই অণুগুলো এলোমেলোভাবে ঘুরে বেরাচ্ছে। বরফের মত বিশেষ সজ্জা পায়নি। তাই জল ও বাষ্পকে একটু ঘুরিয়ে দিলেও একই রকম দেখতে। তাদের মধ্যে ঘূর্ণন প্রতিসাম্য (rotational symmetry) বজায় আছে। জল ও বাষ্পের সিমেট্রি যেহেতু এক, জল থেকে বাষ্পে যেতে দশা পরিবর্তন বা phase transition-এর প্রয়োজন নেই। কিন্তু বরফ ও জলের সিমেট্রি যেহেতু আলাদা তাই এদের একটা থেকে আরেকটায় যেতে হলে দশা পরিবর্তন দিয়েই যেতে হবে। আর কোন রাস্তা নেই।
(পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সিমেট্রির এই সহজ হিসেবটা খাটে না কিছু ক্ষেত্রে। সেখানেই চলে আসে টপোলজির গল্প। সেই আড্ডা পরের পর্বে।)
প্রচ্ছদের ছবি – সুমেরু হাজরা, টি.আই.এফ.আর মুম্বই
অতিরিক্তঃ
[১] এই ভিডিওতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অতিরিক্ত বায়ুচাপে গরম করলে কি হয় দেখা যাবে। https://www.youtube.com/watch?v=RmaJVxafesU
[২] এই আন্তঃক্রিয়ার ঘূর্ণন সাম্যকে বোঝাতে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। টেবিলের উপর দুটো দণ্ড চুম্বককে পাশাপাশি রাখা হল। এই চুম্বক দুটি একে অপরের উপর বল প্রয়োগ করবে যার মান নির্ভর করবে তাদের দূরত্বের উপর এবং চুম্বক দুটো কত শক্তিশালী তার উপর। এবার চুম্বক দুটো সহ পুরো টেবিলটাকে একটু ঘুরিয়ে দিলেও চুম্বকদের মধ্যে পারস্পরিক বল পালটাবে না। যদিও এক্ষেত্রে চুম্বক দুটোই একটু করে ঘুরে গেছে টেবিলের সাথে। অর্থাৎ, এই বল নির্ভর করে না চুম্বক দুটো পূর্ব-পশ্চিম বরাবর আছে না উত্তর-দক্ষিণ বরাবর আছে।
লেখক পরিচিতি: জয়দীপ সাউ মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিষয় ঘনবস্তুর পদার্থবিদ্যা বা কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স। পদার্থের টোপোলজিক্যাল দশা নিয়ে ওনার বিশেষ উৎসাহ। ওনার গবেষণা সম্বন্ধে আরো জানতে ওনার ওয়েবসাইট দেখুন।
প্রশ্ন পাঠান এই লিঙ্কে ক্লিক করে।
‘বিজ্ঞান’-এ প্রকাশিত লেখার বাছাই সংকলন ‘বিজ্ঞান পত্রিকা’ ডাউনলোড করুন।
khub sundor kore bujhte parlam..