“বলছিলাম কি, বস্তুপিণ্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে,
অর্থাৎ কিনা লাগছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে।
গোড়ায় তবে দেখতে হবে কোত্থেকে আর কি করে,
রস জমে এই প্রপঞ্চময় বিশ্বতরুর শিকড়ে।”
–সুকুমার রায়
এই “গোড়ায় দেখা”র গেরো বড়োই কঠিন গেরো। সেই কোন যুগে ডালটন সাহেব বলে গেছিলেন, এই যে প্রপঞ্চময় বিশ্বতরু, তার মূলে আছে এক মৌলিক কণা—নাম তার পরমাণু। সেই পরমাণু আবার একটা সংঘ বিশেষ। এই সংঘের সদস্যরা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন। এই পরমাণুদের হরেক রকম কেরামতিতে মানুষের হাতে আসে রকমারি পদার্থ। যদি পরমাণুতে থাকে ৬ টি প্রোটন, তাহলে আমরা পাবো কার্বন (C), অর্থাৎ কয়লা কিম্বা হীরে। যেই তাদের সংগঠনে যোগ দিলো আরও দুটি প্রোটন, আমরা পেয়ে গেলাম আমাদের প্রাণবায়ু—অক্সিজেন! প্রোটন সংখ্যা যেন পদার্থের বংশপরিচয়। কিন্তু পদার্থ পেশাদারী পরিচয় পায় অনেকটাই তার ইলেকট্রনের জোরে। কারো ইলেকট্রন যেন মুক্ত বিহঙ্গ, তার কোনও পিছুটান নেই। সামান্য প্ররোচনাতেই সে ছুটে যেতে পারে অনেকদূর! ধাতুর ইলেকট্রন এইরকম। আর অধাতু, যেমন ধরা যাক কার্বন (কয়লা)- তাদের ইলেকট্রন যেন কঠোর শৃঙ্খলে বন্দী। তারা বসে থাকে জড়ভরতের মতো- পরমাণুগুলিকে আঁকড়ে ধরে।
বিগত শতাব্দীর প্রায় অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে এইসব অণু পরমাণুগুলো ছিল মানুষের “চেনাশোনার কোন বাইরে/ যেখানে পথ নাই নাই রে”। অণু আছে, পরমাণু আছে, কে কিভাবে কোথায় আছে —সব-ই জানি, সেই জানার উপর ভিত্তি করে তরতর করে এগিয়ে চলেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা। কিন্তু যতই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতরর সাধনায় মেতেছে, যতই আমরা পরমাণুদের জগতে প্রবেশ করতে চাইছি, যেতে চাইছি বিশ্বসংসারের গভীরে- ততই থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে একটা জায়গায় এসে—কারণ অণু বা পরমাণুর উপস্থিতি অনুভব করা হয়তো যায়, কিন্তু না যায় তাকে সরাসরি দেখা, না যায় তাকে ইচ্ছেমতন ছোঁয়া। মানুষের চোখ তাকে দেখতে পায় না, কেননা তার দৃষ্টিশক্তি সীমিত। যদি ১০ লাখ পরমাণুকে পাশাপাশি রাখা যায়, তাহলে সেটা হবে একটা চুলের প্রস্থের সমান! একটা পরমাণুর আয়তন যদি হয় একটা ফুটবল মাঠের মতো, তাহলে প্রোটন নিউট্রনগুলো জটলা পাকিয়ে থাকে একটা কড়াইশুঁটি মাপের ঘরে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে উপায় কি হবে? উপায় সেই বিজ্ঞান, যা বারেবারেই মানুষের সীমিত শক্তিকে করে তুলেছে অসীম, অপ্রতিরোধ্য। বিজ্ঞান মানুষের গোচরে নিয়ে এসেছে ব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণ, নক্ষত্রের মৃত্যু! সেখানে অধরা থেকে যাবে হাতের মুঠোয় থাকা এক গুচ্ছ পরমাণু? কিছুতেই না। সাল ১৯৮১। বিজ্ঞানী রোহরার (Heinrich Rohrer) এবং বিনিগ (Gerd Binnig) কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এনে দিলেন সেই ইন্দ্রজাল—যা দিয়ে সরাসরি দেখা যাবে সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুর ছবি!! তৈরি হল Scanning Tunneling Microscope, সংক্ষেপে STM [১]। বিষয়টি কিরকম? সেটা বুঝতে গেলে আগে বুঝে নিতে হবে টানেলিং (tunnling) জিনিসটা কি।
সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানোর ফন্দী
আমাদের চারপাশের পৃথিবীতে পদার্থ আর তরঙ্গের মধ্যে কোনও গোলমাল নেই। যা পদার্থ, তা সবসময়েই পদার্থ। যা তরঙ্গ, তা সবসময় তরঙ্গের মতোই ব্যবহার করে। সমুদ্রে ঢেউ ওঠে, নদীতে তরঙ্গ বয়ে যায়। আবার যেকোনো পদার্থ, যেমন ধরা যাক ফুটবল, তাকে লাথি মেরে সরানো যায়। ফুটবল কখনো ঢেউ এর মত বয়ে যায় না, কিম্বা আমাদের মুখ দিয়ে যে আওয়াজ বের হয়, লাথি মেরে তাকে গড়িয়ে দেওয়ার কথা কখনো শোনা যায় না। আসলে কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম এমনটা নয়। তবে স্থূলজগতে প্রকৃতির প্রকৃত নিয়মকানুন ঠিক ঠাহর করা যায় না। অণু-পরমাণুর সূক্ষ্ম জগতে ঢুকলে স্পষ্টই বোঝা যায় যে পদার্থ আর তরঙ্গের মধ্যেকার যে ভেদরেখা আপাতভাবে প্রতীয়মান, আসলে তার কোনও অস্তিত্বই নেই।
অসংখ্য গবেষণা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, জাগতিক ঘটনাবলীর সম্পূর্ণ যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা কেবল তখনি সম্ভব, যদি মেনে নেওয়া হয় যে পদার্থ (matter) আর তরঙ্গ (wave) আসলে একই প্রকৃতির দুইটি রূপ; একই প্রকৃতি কখনো নিজেকে পদার্থ রূপে প্রকাশ করছে, কখনো বা তরঙ্গ রূপে। বিষয়টার ভালো নাম তরঙ্গ-কণা দ্বৈত। একটি ইলেকট্রন এক কণা পদার্থের মতো চলাফেরাও করতে পারে, আবার সময় সুযোগ মতো বয়ে যেতে পারে তরঙ্গের মতো। আলো ঝলমল সকালে চারপাশে বয়ে যায় আলোকতরঙ্গ, সেই আলোর কিছু কিছু আচরণ ঠিক টুকরো টুকরো পদার্থের মতো। একটি পদার্থের সামনে যদি থাকে কোনও উঁচু দেওয়াল, তাহলে একমাত্র দেওয়াল টপকে সে ওপারে যেতে পারে। যদি টপকে যাওয়ার মত শক্তি না থাকে, তাহলে তার আর ওপারে যাওয়া হবে না। তরঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়।
ধরা যাক, (চিত্র ১ক) আলোকরশ্মির (বা তরঙ্গ) অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন হচ্ছে X কাঁচের ব্লকের AB তল থেকে। AB তলের একদিকে কাঁচ আর অন্যদিকে বায়ু। কাঁচ থেকে বায়ুতে প্রবেশ করার ক্ষমতা আলোকরশ্মির নেই, তাই একইরকম অন্য একটি ব্লক Y কে ওই তলের কাছে আনলেও তার মধ্যে আলোকতরঙ্গ প্রবেশ করবে না। এখন ওই এক ই ব্লককে যদি ওই তলের খুব কাছে নিয়ে আসা যায়, তাহলে কিন্তু দেখা যাবে দুটি তলের মাঝখানে বায়ু থাকা সত্তেও আলোক তরঙ্গের কিছু অংশ X ব্লক থেকে Y ব্লকে ঢুকে পড়ছে (চিত্র ১খ)। এখানে দুটি ব্লককে যদি একটি মাধ্যম (কাঁচ) হিসেবে দেখা যায় যার মধ্যে দিয়ে আলোকতরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে, তাহলে বায়ুস্তর সেই আলোকতরঙ্গের পথে এমন একটা বাধা হিসেবে কাজ করবে, যাকে অতিক্রম করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, এবং সেইজন্য ওই তরঙ্গের অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন হবে। কিন্তু সেই স্তর যদি যথেষ্ট সরু হয়, তাহলে সেই বায়ুস্তর এর বাধা ভেদ করে, যেন বা একটা সুরঙ্গ খুঁড়ে তরঙ্গের একটা ছোট্ট অংশ কাঁচের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। অর্থাৎ গতিপথে বাধাপ্রাপ্ত হলে, তাকে টপকানোর শক্তি না থাকলেও সেই বাধা ভেদ করে এগিয়ে যাওয়া তরঙ্গের একটা ধর্ম, যেটা কোনও পদার্থ কণার পক্ষে সম্ভব নয় [চিত্র ১গ]। এখন, যেকোনো পদার্থের পরমাণু যেসব মৌলিক কণা দিয়ে তৈরি, তার মধ্যে ইলেকট্রন অন্যতম। অথচ সেই ইলেকট্রন কণার সামনেই যদি থাকে এমন কোনও বাধা যাকে টপকে যাওয়ার শক্তিসামর্থ্য তার নেই, তখন সে কিন্তু একটা তরঙ্গের মতোই সেই বাধাকে ভেদ করে গিয়ে উদয় হয় সেই বাধার উলটো পিঠে। অবশ্যই সবকটি ইলেকট্রন যেতে পারবে না এভাবে। কিছু কয়েদি যেন জেলের দেওয়ালে সুড়ঙ্গ (Tunnel) খুঁড়ে জেল পালানোর ফন্দী আঁটছে। জেলের দেওয়াল যত পুরু হবে, তত কম, আরও কম সংখ্যক কয়েদি পালাতে পারবে সেই দেওয়াল ফুঁড়ে। গোটা গল্পটাকে পোশাকি ভাষায় বলা হয় Quantum Mechanical Tunneling (কোয়ান্টাম মেকানিকাল টানেলিং )।
অদেখার দর্শন
প্রতিটি পরমাণুকেই ঘিরে থাকে তার ইলেকট্রনগুলি। কোনও পদার্থের কাছে, খুব কাছে যদি নিয়ে আসা হয় একটি ধাতব ছুঁচ (STM tip), আর তাতে ব্যাটারি লাগিয়ে যদি আকর্ষণ করা হয় পদার্থের উপরিতলে থাকা পরমাণুর ইলেকট্রনগুলিকে, তাহলে ছুঁচ আর উপরিতলের মাঝখানের শূন্যস্থান ইলেকট্রন প্রবাহের পথে এমন একটা বাধা হিসেবে কাজ করবে, যাকে টপকে যাওয়ার মতো শক্তি (Energy) ইলেকট্রন গুলির থাকবে না। কিন্তু তা বলে ইলেকট্রনগুলি মোটেই নিজেকে পদার্থকণা মনে করে ঘাবড়ে গিয়ে বসে থাকবে না, বরং উপরে বর্ণিত তত্ত্ব অনুযায়ী তরঙ্গের মতো অনায়াসে দেওয়াল ফুঁড়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়বে এবং পৌঁছে যাবে ছুঁচের মাথায়। কিন্তু পদার্থের উপরিতলটিতে সর্বত্র ছুঁচ ও পরমাণুর দূরত্ব সমান থাকবে না। অর্থাৎ ইলেকট্রনের প্রবাহের পথে যে বাধা বা দেওয়াল, তার পুরুত্ব সর্বত্র সমান থাকবে না। আপাত দৃষ্টিতে নিখুঁত সমতল কোনও পদার্থের উপরিতল অবশ্যই ঢেউখেলানো, কারণ সেই তল তৈরি হয়েছে যে পরমাণু দিয়ে, তা আকারে গোলকাকার (চিত্র ২)। এই দূরত্ব যেখানে কম, সেখানে ইলেকট্রন প্রবাহ হবে বেশি, যেখানে দূরত্ব বেড়ে যাবে সেখানে প্রবাহ হবে কম। যদি ছুঁচটি চায় ইলেকট্রন প্রবাহ সর্বত্র সমান রাখতে, তাহলে তাকে পদার্থের তল থেকে সর্বত্র সমান দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, অর্থাৎ উপরিতলের ঢেউখেলানো ভূমিরূপকে অনুসরণ করে তাকেও উপরে উঠে বা নিচে নেমে আসতে হবে (চিত্র ২)। এই ছুঁচের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেই আমরা সোজাসুজি দেখে নিতে পারি কোথায় কোথায় কেমন ভাবে ছড়িয়ে আছে পরমাণু, এই সেই STM যা দিয়ে আমরা তুলে নিতে পারি পরমাণুর ছবি। কোনোভাবেই তারা আর পারবে না আমাদের চোখে ধুলো দিতে![চিত্র ২]
এখন ইলেকট্রন নিয়ে এহেন ছেলেখেলা তো আর যেখানে সেখানে করা যায় না, বায়ুমণ্ডলের মধ্যে তো নয়-ই। বায়ুমণ্ডলের কণাগুলি ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে ক্ষুদ্র ইলেকট্রনগুলির সুড়ঙ্গ খোঁড়ার যাবতীয় পরিকল্পনা মাথায় উঠবে। এই কাজের জন্য তাই দরকার মহাশূন্য। হ্যাঁ, বিজ্ঞানের অশেষ কেরামতিতে সেই মহাকাশের মহাশূন্যও তৈরি করা গেছে এই পৃথিবীর বুকেই। নিছক বায়ুশূন্য Vacuum নয়, একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ের সাঙ্ঘাতিক Ultra High Vacuum, বা সংক্ষেপে UHV। বায়ুচাপের 10-13 ভাগ কম চাপ সেখানে। রোটারি পাম্প (Rotary pump), টার্বো পাম্প (turbo pump), আয়ন পাম্প (ion pump), টাইটানিয়াম সবলিমেসন পাম্প ( Titanium Sublimation Pump-) ইত্যাদি একাধিক পাম্প ব্যবহার করে ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হয় প্রকোষ্ঠের ভেতরের বায়ুচাপ।
এহেন সাক্ষাৎ পরমাণু দর্শন বিজ্ঞানের এক অমিত সম্ভাবনাময় শাখায় খুলে দিলো এক নতুন দিগন্ত নাম তার Surface Physics (তল পদার্থবিদ্যা)। বিজ্ঞান, পদার্থের ভেতরে যা, পদার্থের উপরিতলে একেবারেই তেমন নয়। কারণ, পদার্থের ভেতরে স্থান ত্রিমাত্রিক, আর উপরিতলে স্থান দ্বিমাত্রিক। পদার্থের ভেতরে বসে থাকা পরমাণুটির সবদিকে ভিড় করে আছে আরও পরমাণু, কিন্তু পদার্থের উপরিতলে বসে থাকা পরমাণুর একটা পাশ একেবারে খোলা, সেখানে কোনও পরমাণুর ভিড় নেই। এরকম মুক্ত আকাশ পেলে কার-ই বা মাথার ঠিক থাকে? তখন তার রকমসকম-ই পালটে যায়। পালটে যায় তার ধর্ম, তার আচার আচরণ। সেই নতুন উন্মেষের হাত ধরে এক লাফে অনেকদূর এগিয়ে গেছে মানবসভ্যতা [২-৫]। পরমাণু নিয়ে খেলতে খেলতে মানুষের জীবনযাত্রায় বিপ্লব ঘটিয়েছে Nanotechnology (ন্যানোটেকনোলজি)। Transistor, যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের যেটা কিনা ভিত্তিপ্রস্তর, একটা মাত্র পরমাণু দিয়ে সেটা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে [৬] [চিত্র ৩]। মানুষের একটা চুল যতটা সরু, তার ১০০০০ ভাগের এক ভাগ সরু তার তৈরি করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা সিলিকন দিয়ে, যেটা কিনা কাজ করতে পারে ঠিক একটা তামার তারের মতোই। যাই হোক, সেসব আবার অন্য এক গল্প।
বিজ্ঞানের জগতে মনে হয় অসম্ভব বলে কিছুই নেই। গতকাল যা মানুষের সুদূর কল্পনাতেও ছিল না, বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ সেটাই এক চমকপ্রদ বাস্তব, এবং আগামীকাল তা পরিণত হবে সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর প্রদক্ষিণের মতোই এক সহজবোধ্য বৈজ্ঞানিক সত্যে। আসলে বিজ্ঞান মানুষের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা যুক্তি ও বোধশক্তির বোধনের নাম— আর সেই বোধনেই নিহিত মানবসভ্যতার ভূত ও ভবিষ্যৎ, সত্য এবং ঈশ্বর।
লেখার উৎস
- G. Binnig and H. Rohrer, Rev. Mod. Phys. 59, 615 (1987).
- Ken P. Chong, Journal of Physics and Chemistry of Solids 65, 1501 (2004).
- Marvin L. Cohen, Materials Science and Engineering C 15, 1 (2001).
- Marvin L. Cohen, Physica E 29, 447 (2005).
- John R. Arthur, Surface Science 500, 189 (2002).
- Martin Fuechsle et al, Nature Nanotechnology 7, 242 (2012).