সম্পাদকমণ্ডলী, ‘বিজ্ঞান’
‘বিজ্ঞান পত্রিকা’-য় আমরা ‘বিজ্ঞান’-এ প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে কিছু পছন্দের লেখা তুলে আনি। এর আগে ‘বিজ্ঞান পত্রিকা’-র দু’টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। আমরা জেনে আনন্দিত এবং উৎসাহিত হয়েছি যে এই পত্রিকাটি বেশ কিছু স্কুল তাদের রীডিং বোর্ডের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এইসব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ‘বিজ্ঞান’ ও ‘বিজ্ঞান পত্রিকা’-র অন্যতম উদ্দেশ্য হল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সহজভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের কিছু দিক তুলে ধরা। আশা রাখি, লেখাগুলি পড়ে উৎসাহিত হয়ে পাঠকদের অনেকে ভবিষ্যতে বিজ্ঞান গবেষণার জগতে পা রাখবে। তবে বিজ্ঞান পড়ার উদ্দেশ্য শুধু ভবিষ্যতে গবেষণার জগতে যাওয়ার মধ্যেই সীমিত নয়। বিজ্ঞান সচেতনতা সমাজের প্রতিটি মানুষের থাকা উচিত। বিগত দুই সংখ্যার সম্পাদকীয়তে ‘বিজ্ঞান’ ও ‘বিজ্ঞান পত্রিকা’-র উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই সংখ্যার সম্পাদকীয়তে আমরা ‘বিজ্ঞান’-এর সম্পাদনা এবং কার্যপ্রণালী নিয়ে আলোকপাত করবো। ‘বিজ্ঞান’-এর লেখাগুলো সম্পাদনা করতে গিয়ে বুঝেছি যে সহজ কিন্তু সঠিকভাবে বিজ্ঞান লেখা বেশ শক্ত। প্রচলিত খবরের কাগজে বিজ্ঞানের যে খবরগুলো লেখা হয় তার অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সবার জন্য সহজ করে লিখতে গিয়ে হয়েছে মহা বিপত্তি! অলঙ্কারে এমন ঠেসে গেছে লেখা যে আসল রূপটি আর চেনা যাচ্ছে না। পাঠকের পড়তে হয়ত বেশ ভাল লাগল, কথায় কথায় ‘আইনস্টাইন’, ‘মহাবিশ্বের রহস্য’ এসব অনেকবার পাওয়া গেল – কিন্তু ঠিক বিজ্ঞানের বিষয়টা বোধগম্য হল না! অনেকক্ষেত্রে আবার পাঠক এই অলঙ্কারকেই লেখার মূল বিষয়বস্তু ভাবার ভুল করে।
এক জ্বলন্ত উদাহরণ হল সম্প্রতি কণা পদার্থবিদ্যার এক সাড়া জাগানো আবিষ্কার। ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত সার্ণ (CERN)-এর পরীক্ষাগারে হিগস বোসন নামে এক কণার অস্তিত্ব জানা গেছে, যার খোঁজ চলছিল বহুদিন। এই কণাটিকে আবার অনেকে ‘গড পার্টিকেল’ বা ‘ঈশ্বর কণা’ নাম দিয়েছেন। শোনা যায় যে এক গবেষক একটা বইতে একে ‘গডড্যাম পার্টিকেল’ (Goddamn Particle) নাম দিয়েছিলেন, যার বাংলা করা যেতে পারে ‘হতচ্ছাড়া কণা’ বা ‘বিচ্ছু কণা’। কিন্তু বইয়ের প্রকাশক ভাষাটিকে ভদ্র করে ‘গড পার্টিকেল’ করে দিলেন, আর অমনি দশচক্রে বিচ্ছু ভগবানে পরিণত হল! রসিকতা করে হিগস পার্টিকেল-কে গড পার্টিকেল বললে আপাতভাবে ক্ষতি হয়ত হয় না, কিন্তু অনেকের সাথে কথা বলতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে তারা এই ভগবানের উপমাটা বেশ আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করেছেন। এখানে ‘বিজ্ঞান’-এর এক সম্পাদকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রাসঙ্গিক। একটি স্কুল সেমিনারে মূল বক্তৃতার আগে ছাত্রছাত্রীরা তাদের মাষ্টারমশায়ের সাহায্যে বানানো হিগস কণা আবিষ্কারের উপর একটা বক্তৃতা দিচ্ছিল। সেই বক্তৃতার প্রথম অংশ ছিল – ভারতীয় দর্শনে ভগবানের ভূমিকা!
‘বিজ্ঞান’-এর লেখাগুলি ছাপার সময় আমরা এইসব বিষয়ে সতর্ক থাকি। লেখাগুলি সাধারণত তারাই লেখেন যারা সেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন বা অন্য গবেষকদের কাজ কাছ থেকে দেখেছেন। তাই সহজ করে বলতে গিয়ে ভুল করে ফেলবেন না এমনটি আশা করা যায় লেখকদের কাছ থেকে। তার উপরে, প্রথাগত গবেষণার জগতে ব্যবহৃত কিছু পদ্ধতি আমরা গ্রহণ করেছি ‘বিজ্ঞান’-এর লেখাগুলো সম্পাদনার কাজে। যেমন, ‘Peer-reviewing’। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির নৈতিকতা (ethics) ও অখণ্ডতা (integrity) ধরে রাখার জন্য এই ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার জগতের ‘peer review’ মডেল অনুযায়ী আমরা যে কোনো নতুন লেখা পাবার সাথে সাথেই সেই বিষয়ক সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে পাঠাই। প্রথমে নজর দেওয়া হয় লেখাটির বৈজ্ঞানিক গুণগত মান নিয়ে। প্রয়োজনে সম্পাদকমণ্ডলীর বাইরে বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেওয়া হয়। এই সম্পাদক বা অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞদের (অর্থাৎ reviewer-দের) মতামতের ভিত্তিতে লেখক লেখাটি পরিমার্জনা করেন। Reviewer-রা ছাড়পত্র দেবার পরে লেখাটি যায় আর এক অতিরিক্ত সম্পাদকের কাছে যে ভাষার গুণগত মানের দিকটা দেখে। আমাদের এই peer-review পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, অনেক ক্ষেত্রেই লেখা জমা পড়া থেকে প্রকাশনা হতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। গবেষণার জগতে কিছু ক্ষেত্রে (যেমন গণিতশাস্ত্রে) এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ করতে অনেক সময় চার-পাঁচ বছর-ও লেগে যায়।
এভাবে আমরা চেষ্টা করি যাতে ‘বিজ্ঞান’-এ প্রকাশিত লেখাগুলো বৈজ্ঞানিক দিক থেকে সঠিক এবং সেই সাথে সহজপাঠ্য হয়। আমাদের আশা ‘বিজ্ঞান’-এর লেখাগুলোর মধ্যে আমাদের এই পরিশ্রম ও উৎসাহের ফল আপনারা দেখতে পাবেন।এই সংখ্যায় আমরা হাজির হয়েছি সাতটি লেখা নিয়ে। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ছোটোবেলায় জোনাকীর আলো দেখে বিস্মিত হয়েছি। সেই জোনাকির আলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির “জোনাকি আলোকে”। মহাবিশ্বের সিংহভাগ উপাদান নাকি চোখে দেখা যায় না বা পরীক্ষায় ধরা পরে না। বিজ্ঞানীদের পোষাকি ভাষায় একে “Dark matter” ও “Dark energy” বলে। সেই নিয়েই আমাদের দ্বিতীয় লেখা “আকাশজুড়ে এই আঁধারে”। বিবর্তনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া কিছু উদ্ভিদের বিস্ময়কর অভিযোজনের নিদর্শন নিয়ে লেখা “ছদ্মবেশী”। চতুর্থ লেখাটি হিগস বোসন এবং কণা পদার্থবিদ্যার গল্প নিয়ে। সম্প্রতি ভারতের মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ISRO অ্যাস্ট্রোস্যাট নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে এবং মহাকাশ গবেষণায় এর গুরুত্ব অসীম। সেই নিয়েই আমাদের পরের লেখা। ম্যালেরিয়া বিষয়ক গবেষণার জন্য ২০১৫ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান ইয়উয়উ টু। সেই গবেষণার কাহিনী রয়েছে “ম্যালেরিয়া: নোবেল পুরস্কার এবং মানুষের ভবিষ্যৎ”-এ। প্রতি বছর ২২ সে ডিসেম্বর “জাতীয় গণিত দিবস” (National Mathematics Day) উৎযাপিত হয় ভারতীয় গণিতজ্ঞ রামানুজন-এর স্মৃতিতে। তাঁকে নিয়ে আমাদের শেষ লেখা “অঙ্কের যুবরাজ”।আশা করি সবকটি লেখাই আপনাদের ভালো লাগবে। অনুরোধ রইলো নিজে পড়ুন এবং চারপাশের লোককে পড়ান।বিজ্ঞান পত্রিকা ডাউনলোড করুন।
Your contribution is undoubtedly excellent. I am very blessed by your columns. However I will be more blessed by you if you mind to create a paragraph on – ‘Is light a wave and particle ?’
Please give your noble consent on my prayer and take necessary steps at the earliest. Looking for a positive reply.
Thank you.