নিজের ডেঙ্গি সংক্রমণের অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করলাম।
গত বছর 24 আগষ্ট, প্রথম আমি অস্বস্তিকর জ্বরের সম্মুখীন হই। নিকটবর্তী দোকান থেকে জ্বরের ও ব্যাথা-বেদনার ঔষধ খেতেই সেইদিন সন্ধ্যে থেকে আবার সুস্থ বোধ করি। 25 আগষ্ট পুরোদমে অফিসও করি।
কিন্তু 26 আগষ্ট সকাল থেকেই আবার জ্বর, মাথা কপাল ব্যাথা, কোমর ও ঘাড়ে ব্যাথা, ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব, গা হাত পা চুলকানো ও শারীরিক দুর্বলতায় জর্জরিত হয়ে পড়ি। 28 আগষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হলে তিনি রক্তপরীক্ষার পরামর্শ দেন। রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পরে।
ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো 28শে আগষ্ট থেকে 12ই সেপ্টেম্বর এই 16 দিন আমি বাড়িতেই বিশ্রামে ছিলাম। মশারির ব্যবহার করেছি বেশিরভাগটাই, যাতে এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) মশার কামড়ে আমার থেকে অন্য কারো শরীরে ডেঙ্গি ভাইরাস সংক্রামিত হতে না পারে। ডেঙ্গি প্রতিরোধী কোনো ঔষধ বর্তমানে নেই। কিন্তু ডাক্তারবাবুর প্রেসক্রিপশন অনুসারে জ্বর কমানোর, হজমশক্তি বৃদ্ধির ও ব্যাথা বেদনা উপশমের জন্য ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভৃতি ঔষধ খেতে থাকি এবং পথ্য হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল, ডাবের জল ও লেবু জাতীয় বিভিন্ন ফলের রস পান করতে থাকি শরীরের তরলের ঘাটতি মেটানোর জন্য। প্লেটলেট বাড়তে থাকে এবং এই রুটিন মেনে আমি ডেঙ্গির প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে সফল হই।
ডেঙ্গি ভাইরাসের রকমফের
এই ঘটনার পর অন্যদের মতো আমিও ভাবছিলাম, যে একবার যখন ডেঙ্গিতে সংক্রামিত হয়ে গেলাম, শরীরে ডেঙ্গির রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি চলে এলো। আগামী দিনে আর ডেঙ্গি সংক্রামিত হওয়ার ভয় নেই।
কিন্তু অচিরেই আমার ভুল ভাঙলো।
পড়াশোনা করে জানতে পারলাম, প্রথমবার আক্রমণের পর যেকোনো সময়ে মশার মাধ্যমে শরীরে আবার ডেঙ্গি সংক্রমণ হলে গুরুতর ডেঙ্গি হওয়ার ঝুঁকি সর্বাধিক। মৃত্যুও হতে পারে। দ্বিতীয়বার সংক্রমণে গুরুতর ডেঙ্গিতে মৃত্যুহার 1 শতাংশ [1]। অর্থাৎ জীবদ্দশায় একবার শরীরে ডেঙ্গি ভাইরাস প্রবেশ করলে অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়ার ফলে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, যাকে অভিযোজিত অনাক্রম্যতা বলা হয়, সেই তত্ত্ব ধাক্কা খেল। শত্রুকে হারাতে গেলে, তাকে বিস্তারিত ভাবে জানা খুব জরুরি। শুরুতেই বলা দরকার, ডেঙ্গি ভাইরাসের মূলত 4-টি সেরোটাইপ (Serotype) বা প্রকারভেদ থাকে, ডেঙ্গি ভাইরাস – 1, 2, 3, এবং 4। বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মে ডেঙ্গির এই প্রকারভেদের উদ্ভব হয়েছে। প্রতিলিপি গঠনের সময় পূর্বে ডেঙ্গি আক্রান্ত ব্যাক্তির রক্তের সিরামে উপস্থিত বিপরীতধর্মী ইমিউনোগ্লোবিউলিন-জি অ্যান্টিবডির সাথে ডেঙ্গি ভাইরাসের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় এই চার প্রকার ভাইরাসের উদ্ভব। 65% মিল থাকলেও, বাকি 35% জিনগত বৈচিত্রে এরা একে ওপরের থেকে আলাদা [2]।
ডেঙ্গি ভাইরাস মূলত একটি RNA ভাইরাস। অর্থাৎ এদের জিনগত উপাদান রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা RNA। এই ভাইরাসের প্রতিটি সেরোটাইপ আবার মূলত 10টি প্রোটিন দ্বারা গঠিত। এই 10টি প্রোটিনের মধ্যে 3টি প্রোটিন — RNA বেষ্টনী প্রাথমিক আবরণ বা ক্যাপসিড (C), পর্দা বা মেমব্রেন (M), এবং মোড়ক বা এনভেলপ (E) — ভাইরাস-এর মূল কাঠামো গঠন করে। এছাড়াও আছে আরও 7টি প্রোটিন: NS1, NS2, NS2A, NS2B, NS3, NS4, NS4B, NS5 [3]।
ডেঙ্গির ক্রমশ প্রকাশ
নিজের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে বলতে পারি, ডেঙ্গি সংক্রমণের প্রথম 5 – 7 দিনের মধ্যে রক্ত পরীক্ষা হলে অকাঠামোগত প্রোটিন NS1 প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থায় থাকে এবং ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি, যেমন ইমিউনোগ্লোবিউলিন-এম (IgM) এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন-জি (IgG), স্বল্প পরিমানে উৎপন্ন হওয়ায় অপ্রতিক্রিয়াশীল অবস্থায় থাকে। তবে এই সময়ের ব্যাবধানেই যদি রক্তে IgG প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থায় পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেই ব্যাক্তি এর আগেও ডেঙ্গি সংক্রামিত হয়েছেন, রক্ত পরীক্ষা না হওয়ায় জানতে পারেন নি।
ডেঙ্গি সংক্রমণের প্রথম 5 দিন হল ফেব্রাইল বা জ্বরের দশা (Febrile phase) এবং তাঁর পরবর্তী 2-7 দিন হল সংকটময় জটিল অবস্থা (Critical phase)।
ডেঙ্গি সংক্রামিত হওয়ার, প্রথম 0-9 দিন পর্যন্ত ভাইরাসের NS1 প্রোটিনের পরিমান ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে এবং একই সাথে ডেঙ্গির বিভিন্ন রোগ লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে থাকে। অকাঠামোগত NS1 প্রোটিন সাধারণত শরীরে থাকে 15 দিন পর্যন্ত।
ডেঙ্গি সংক্রমণের 3 দিনের মাথায় শরীরের রোগ প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়ায়, IgM অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করে এবং শরীরের সংবহনতন্ত্রে থেকে যায় 30-60 দিন অবধি। একইভাবে ভাইরাস প্রতিরোধী IgG অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হতে শুরু করে সংক্রমণের 7 দিনের মাথায়। 2-3 সপ্তাহ পরে এর পরিমান শীর্ষে পৌঁছায়। এই কারণে যাঁরা প্রথমবার ডেঙ্গি সংক্রামিত হয়েছেন, কমবেশি 2 সপ্তাহ পরে তাঁরা সেরেও ওঠেন। প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা সঠিক স্তরে পৌঁছায়। সে যাত্রার মতো ডেঙ্গি অসুরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অ্যান্টিবডি যখন শত্রু
কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেমন ব্যবসা’র ছলে আমাদের দেশে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলে প্রায় 200 বছরের জন্য, ঠিক তেমনি ডেঙ্গি প্রতিরোধী ব্যাবস্থাপনার মোড়কে এই IgG অ্যান্টিবডি আমাদের শরীরে থেকে যায় সারা জীবনের মতো। কিন্তু এতে সমস্যাটা ঠিক কী ?
সহজে বলতে গেলে, প্রথমবার ডেঙ্গি সংক্রামিত ব্যক্তি 4 ধরণের ডেঙ্গি ভাইরাসের যেকোনো একটির দ্বারা সংক্রামিত হন এবং IgG অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে শরীরেই থেকে যায় অনাক্রম্যতার স্বাভাবিক নিয়মে। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গি সংক্রামিত হলে আবার 4 ধরণের ভাইরাসের যেকোনো একটি দ্বারা সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু উৎপন্ন এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসের সেই ধরণকেই কেবল ধংস করতে পারে, যার প্রতিক্রিয়াশীলতায় প্রথমবার এই রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হয়েছিল।
উদাহরণস্বরূপ, ডেঙ্গি ভাইরাস-2 এর সংক্রমণে সৃষ্ট IgG অ্যান্টিবডি, শুধু দু নম্বর শ্রেণীর ভাইরাসকেই প্রতিরোধ করতে পারবে এবং কার্যত দেখা যায়, অন্য যেকোনো ভাইরাস অর্থাৎ 1 বা 3 বা 4 দ্বারা সংক্রমণ ঘটলে এই অ্যান্টিবডি বিভ্রান্ত হয়ে পরে, সবকিছু গুলিয়ে ফেলে এবং বিপরীতধর্মী আচরণ করে। এক্ষেত্রে IgG অ্যান্টিবডি ডেঙ্গি ভাইরাসের সাথে হাত মিলিয়ে রোগ প্রতিরোধের পরিবর্তে, রোগ সৃষ্টি ও বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। IgG অ্যান্টিবডির এই আচরণ হল দুধ কলা দিয়ে পোষা কালসাপ বা ঘরের শত্রু বিভীষণের মতো।
অ্যান্টিবডির হাত ধরে ভাইরাস বৃদ্ধি
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গি সংক্রমণ হলে ডেঙ্গি আরো ভয়ানক রূপ ধারণ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন এবং কীভাবে?
সহজাত এবং অভিযোজিত অনাক্রম্যতার নিয়ম অনুসারে, প্রথমবার ডেঙ্গি ভাইরাসের যে সেরোটাইপ শরীরে প্রবেশ করেছিল, শরীরে উপস্থিত IgG অ্যান্টিবডি দ্বিতীয়বারও তাকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধী কোষের সাহায্যে (B এবং T কোষ)। কিন্তু দ্বিতীয়বারের ডেঙ্গি যখন ভয়ানক রূপ ধারণ করলো, তখন অনুমান করা যায়, পূর্বের ডেঙ্গি সেরোটাইপ ব্যাতিরেখে অন্য তিনটি সেরোটাইপের যে কোনো একটি শরীরে প্রবেশ করেছে এবং স্বভাবতই সহজাত ও অভিযোজিত অনাক্রম্যতা এক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। প্রথমবার ডেঙ্গি সংক্রমণের ফলে শরীরে উপস্থিত IgG অ্যান্টিবডি এই ভিন্নধর্মী ডেঙ্গি সেরোটাইপ বা ভাইরাসকে প্রশমিত করতে পারেনি।
উপরন্তু এই সময়, ভিন্নধর্মী ডেঙ্গি সেরোটাইপ ভিন্নধর্মী IgG অ্যান্টিবডির সাথে একটি যৌগিক বন্ধনে আবদ্ধ হয় (উপরের ছবি)। এর ফলে এই অ্যান্টিবডি-ভাইরাস যৌগটি মনোসাইট শ্বেত রক্তকণিকার ফ্র্যাগমেন্ট ক্রিস্টালাইজেবল গ্রাহক (Fc gamma receptor) প্রোটিনের সাথে সহজেই সংযুক্ত হতে পারে। এই গ্রাহক প্রোটিনের মাধ্যমে ডেঙ্গি ভাইরাস মনোসাইট শ্বেত রক্তকণিকার ভিতরে প্রবেশ করে প্রতিলিপি গঠনের দ্বারা সংক্রমণ বৃদ্ধি করে। এই ঘটনাটিকে বলা হয় ডেঙ্গি ভাইরাসের অ্যান্টিবডি নির্ভরশীল বৃদ্ধি (Antibody dependent enhancement of virus replication)। এই পর্যায়ে মনোসাইট শ্বেত রক্তকণিকা ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যার্থ হয়।
এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, জীবিত কোষের জন্য বিষাক্ত T-কোষ এই সময় অতিরিক্ত পরিমাণে ‘সাইটোকাইন্স’ নামক প্রোটিন অণু তৈরি করে, যা প্রদাহ তৈরি করে এবং কলা-কোষকে ক্ষতিগ্রস্থ করে রক্ত নালীকে ফুটো করে দেয়। এইভাবে দ্বিতীয়বার সংক্রমণে ডেঙ্গি আরো গুরুতর ভয়ানক রূপ ধারণ করে [4]।
ডেঙ্গির পরিচিত উপসর্গ কিন্তু ডবল ডোজে
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গি সংক্রমণে, ডেঙ্গির গুরুতর লক্ষণগুলি শরীরে দেখা দিতে থাকে। যেমন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, বমি, রক্তবমি, তলপেটে অসহ্য ব্যথা, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট, মুখ থেকে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ, এবং মানসিক স্থিতির পরিবর্তন।
এই অবস্থায় ডেঙ্গি ভাইরাস প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়তে থাকে এবং গুরুতর সংক্রমণের পর্যায়ে রক্ত নালীকে ফুটো করে দেয়, তা থেকে রক্তরস বা প্লাসমা বেরোতে শুরু করে। রক্তে লোহিত কণিকার পরিমান কমতে শুরু করে।
ডেঙ্গি ভাইরাস লোহিত অস্থি মজ্জাতেও আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে উল্লেখের বিষয়, ‘হার ভাঙা রোগ’ বা ‘ব্রেক বোন ডিসিস’ হিসাবেও ডেঙ্গি পরিচিত। লোহিত অস্থি মজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া শুরু হয় অর্থাৎ রক্ত তঞ্চনকারী অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের পরিমাণ দ্রুতহারে কমতে শুরু করে এবং এক লক্ষ ঘন মিলি মিটারের অনেক নিচে চলে যায়।
ডেঙ্গি রোগীর শেষ অবস্থা কিরকম হতে পারে
একদিকে রক্তরস বা প্লাজমার পরিমাণ কমে যাওয়ায় এবং অন্যদিকে অণুচক্রিকার অভাবে রক্তক্ষরণ ত্বরান্বিত হওয়ায় অবশিষ্ট রক্ত ঘন হয়ে যায়।
সংকট কাটানোর জন্য জল খাওয়ানো বা স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় তরলের সাম্যাবস্থা ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। এই ভীষণ সংকটময় অবস্থায় পৌঁছানোর পূর্বেই যদি রোগীকে ইনটেনসিভ ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে (ICU) ভর্তি করা যায় এবং সীমা ছাড়ানোর উপক্রম হলে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা সঞ্চারণ করা যায় তাহলে রোগীর অবস্থা পুনরায় স্থিতিশীল হতে পারে।
সংকটময় অবস্থায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে রক্তক্ষরণ গুরুতর হয় অর্থাৎ ডেঙ্গি হেমোরেজিক ফিভার দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে ডেঙ্গি শক সিনড্রোম শুরু হয়। রোগী মৃত্যুমুখে ঢলে পরে। দৈনিক খবরের কাগজের পাতায় ডেঙ্গিতে মৃত্যুর যে ঘটনাগুলি আমাদের সামনে উঠে আসে, তাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ‘ডেঙ্গি হেমোরেজিক ফিভার’ বা ‘ডেঙ্গি শক সিনড্রোমের’ উল্লেখ থাকে।
তবে বৈদ্যুতিক গণমাধ্যমের এক খবরে লক্ষ্য করি, 27 সেপ্টেম্বর দক্ষিণ দমদমের এক কলেজ ছাত্রীর (20 বছর বয়স) ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ডেথ সার্টিফিকেটে ‘সেপটিক শক’ কথাটির উল্লেখ ছিল। এক্ষেত্রে জ্বর, প্রচন্ড বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ICU-তে পাঠিয়েও রোগীকে বাঁচানো যায়নি। প্রতিবেদন অনুসারে ICU-তে পাঠানোর পূর্বে রোগীর শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। এক্ষেত্রে গুরুতর ডেঙ্গি জ্বরে (সিভিয়ার ডেঙ্গি ফিভার) উপরিউক্ত সমস্ত রকম শারীরিক জটিলতার শেষে রক্তের বিভিন্ন উপাদান ও অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে, রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। রক্তসংবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রক্ত চাপ কমে যায়। শরীরের বিপাক ব্যবস্থা ভেঙে পরে। এসবের ফলে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অসাড় হয়ে গিয়ে শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। সবশেষে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পচনের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গি কীভাবে ছড়ায়
এটা হলো গুরুতর ডেঙ্গির ভয়াবহ রূপ। আমরা করোনা ভাইরাসকে পরাজিত করতে পারলেও ডেঙ্গি ভাইরাসকে এখনো রুখে দিতে পারিনি।
বানর ও শুয়োর ব্যতিত ডেঙ্গি ভাইরাসের প্রধান ধারক হলো মানুষ। শহরাঞ্চলে মূলত বাহক এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) মশা। গ্রামাঞ্চলে এডিস অ্যালবোপিকটাস (Aedes albopictus) মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রামিত মানুষের থেকে অন্য মানুষের রক্তে ডেঙ্গি ভাইরাস প্রবেশ করে। এই মশার বৃদ্ধির আদর্শ স্থান হলো উপগ্রীষ্ম থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, যেখানে তাপমাত্রা বছরের বেশিরভাগ সময়ে 10 ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেডের উপরেই থাকে। স্বভাবতই এই সকল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতও বেশি।
তবে বৃষ্টির আগে ও পরে, যত্র তত্র যাতে জল জমে না থাকে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রী মশা ডিম পারে জমে থাকা জলে। এই মশার ডিম ফুটে লার্ভা থেকে পিউপা হয়ে পূর্ণাঙ্গে পরিণত হতেও এই জমা জল সাহায্য করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি, একস্থান থেকে অন্যস্থানে মানুষের গমন, স্থায়ী-অস্থায়ী বসতি স্থাপন, বর্ষার সময়ে নির্মাণকার্য ও নির্মাণস্থলের অস্থায়ী গর্ত ও জমিতে জমে থাকা জল, আমাদের দ্বারা পরিবেশে নিক্ষিপ্ত প্লাস্টিকের পাত্র, মোড়ক ও ব্যাগে জমে থাকা জল প্রভৃতি সারা বছর ধরে এই এডিস মশার বংশবৃদ্ধিকে অতিমাত্রায় সুনিশ্চিত করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই মশা বাহিত ডেঙ্গিতে সংক্রামিত হতে পারে। নেচার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন অনুসারে বর্তমানে আনুমানিক 36 কোটি থেকে 40 কোটি মানুষ সারা পৃথিবীতে ডেঙ্গি সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। যার মধ্যে 20 লক্ষ মানুষ দ্বিতীয়বারের গুরুতর ডেঙ্গি জ্বরের কবলে পরে। এর মধ্যে 20 থেকে 21 হাজার ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ, দ্বিতীয়বারের গুরুতর ডেঙ্গিতে 1 শতাংশ মানুষের মৃত্যুহার এক্ষেত্রে প্রমাণিত। মানুষের সমস্ত রকম ব্যবস্থাপনা ও অব্যবস্থাপনার যুদ্ধে জয়ী কিন্তু এই এডিস মশা ও ডেঙ্গি ভাইরাস। আমাদের দেহই যেহেতু এই ডেঙ্গি ভাইরাসের মূল ধারক, তাই প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনেশন বা টিকাকরণ ছাড়া এই যুদ্ধে সম্পূর্ণ ভাবে জয়ী হতে পারবো বলে আমার মনে হচ্ছে না।
ডেঙ্গির ভ্যাকসিন
QDENGA ও Dengvaxia নামে দুটি ডেঙ্গি ভ্যাকসিন বা টিকা কিন্তু কিছু দেশে দেওয়া শুরু হয়েছে।
TAK-003 ডেঙ্গি ভ্যাকসিনের ব্যাবসায়িক নাম হল QDENGA। এক্ষেত্রে, ডেঙ্গি ভাইরাসের 2 নম্বর সেরোটাইপের মূল গঠনের সাথে ডেঙ্গি ভাইরাসের 1, 3, ও 4 সেরোটাইপের প্রশমিত স্ট্রেন রিকম্বিনেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে জুড়ে দিয়ে QDENGA ভ্যাকসিনটি তৈরি হয়েছে। যাদের আগে কখনো ডেঙ্গি হয় নি তাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন মোটামুটি আশানুরূপ হলেও, ভালো ফল লক্ষ্য করা যায় ডেঙ্গির ভাইরাসের 2 নম্বর সেরোটাইপকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে [5,6]।
অন্যদিকে Dengvaxia হলো ডেঙ্গি ভাইরাসের চার প্রকারভেদ সম্বলিত জীবিত প্রশমিত স্ট্রেনের ভ্যাকসিন। কিন্তু এক্ষেত্রে, ডেঙ্গির চারটি প্রকারভেদ থেকে নিয়ে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে পীতাভ জ্বরের ভ্যাকসিনের প্রশমিত 17ডি স্ট্রেনের, প্রাথমিক পর্দা/ঝিল্লি এবং এনভেলপ/মোড়ককে স্থানান্তরিত করে Dengvaxia নামক ভ্যাকসিন কল্পিত হয়েছে।
কিন্তু সেরোনেগেটিভ ব্যাক্তি বা যারা আগে কখনো ডেঙ্গি ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত হয়নি তাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনকে গুরুতর ডেঙ্গির রূপ নিতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি নির্ভরশীল ডেঙ্গি ভাইরাসের বৃদ্ধি ঘটে থাকে। কিন্তু কেন এমনটি হয় সে বিষয়ে বিশদ ভাবে এখনো জানা যাই নি [7,8]। কিন্তু Dengvaxia-র পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে (trial phase) দেখা গেছে, ডেঙ্গি-প্রবণ এলাকায় ভ্যাকসিন নেওয়া বাচ্চা বা বয়স্করা যখন প্রথমবার ডেঙ্গিতে সংক্রামিত হয়েছে, তখন তাদের শরীরে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গি সংক্রমণের মতন গুরুতর লক্ষণগুলি প্রকাশ পেয়েছে। ফিলিপিন্সে ডেঙ্গি আক্রমণে কিছু Dengvaxia ভ্যাকসিন নেওয়া শিশুর মৃত্যুও ঘটেছে। অ্যান্টিবডি নির্ভরশীল ডেঙ্গি ভাইরাসের বৃদ্ধিকেই কারণ হিসাবে ধরা হয়। যারা সেরোনেগেটিভ, অর্থাৎ যাদের দেহে ডেঙ্গি সংক্রমণের অনাক্রম্যতায় সৃষ্ট অ্যান্টিবডি নেই, এই ভ্যাকসিনে তাঁদের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হয়েছে। তবে যারা প্রথমবার সরাসরি ডেঙ্গি সংক্রামিত হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন নেয়ার পরে ডেঙ্গির গুরুতর রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়নি [2]। সেই কারণে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুসারে যারা প্রথমবার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন, ল্যাবরেটরি রিপোর্ট থেকে তা সুনিশ্চিত করে কেবলমাত্র তাঁদেরকেই এই Dengvaxia ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে [9,10]। এই জটিলতার কারণে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) এই দুই ভ্যাকসিনকে ভারতে মান্যতা দেয়নি।
আমেরিকাতে নির্মিত TV003/TV005 ভ্যাকসিন কিন্তু ডেঙ্গি ভাইরাসের চারটি প্রকারভেদকেই নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে [12]। টেট্রা ভ্যালেন্ট (TV) ডেঙ্গি ভ্যাকসিন TV003/TV005 হল ডেঙ্গির চারটি সেরোটাইপ বা প্রকারভেদের সংমিশ্রনে তৈরি একটি একক ভ্যাকসিন। এর গঠন, কার্যকারিতা, অনাক্রম্যতা Dengvaxia-র তুলনায় পুরোপুরি ভিন্ন। এটি প্রস্তুত করেছে আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এলার্জি এন্ড ইনফেকশিয়াস ডিসিসেস নামক সংস্থা।
আমেরিকাতে এই ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের প্রয়োগ সম্পূর্ণ করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ নামক সংস্থা। এছাড়াও থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ এবং ব্রাজিলেও এর প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে। দেখা গেছে, যারা পূর্বে ডেঙ্গি সংক্রামিত হয়েছেন বা যারা হননি, দুক্ষেত্রেই এই TV003/TV005 ডেঙ্গি ভ্যাকসিন সমান ভাবে কার্যকারী। শরীরে সামান্য চুলকানি ছাড়া অন্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি [11, 12,13]। এই ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় পূর্বে ডেঙ্গি সংক্রামিত না হওয়া ব্যাক্তির মধ্যেও অ্যান্টিবডি নির্ভরশীল ভাইরাসের বৃদ্ধি দেখা যায় নি [13]।
কিছু দেশে এর তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা সম্পূর্ণ হতে চলেছে এবং কিছু দেশে বাকি আছে। যেমন ভারতবর্ষে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাকি আছে। তবে আশার আলো, সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (SII) এবং প্যানাসিয়া বায়োটেক নামক ভারতীয় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাদ্বয়, আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এলার্জি এন্ড ইনফেকশিয়াস ডিসিসেস, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের সাথে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ডেঙ্গি ভাইরাসের টেট্রাভ্যালেন্ট প্রশমিত স্ট্রেন আমদানি করতে সক্ষম হয়েছে। এই দুই সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের কাছ থেকে ভারতে ডেঙ্গি ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার বরাত পেয়েছে।
তবে ICMR-এর ডিরেক্টর জেনারেলের মতে, সঠিক উৎপাদনের মাপদন্ডে প্রস্তুত ভ্যাকসিনকেই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে। আশা করা যায়, এই বছরই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার শেষে 2024-এ আমরা ‘ডেঙ্গুসিল’ নামক ভ্যাকসিন বা টিকা, যা সব ধরণের ডেঙ্গি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী, তা পেতে চলেছি। 18 বছর বয়স থেকে 60 বছর বয়সী, পূর্বে সংক্রামিত হন বা না হন, যে কেউ এই ‘ডেঙ্গুসিল’ ভ্যাকসিন নিতে পারবে। এই ভ্যাকসিন থেকে অ্যান্টিবডি নির্ভরশীল ভাইরাসের বৃদ্ধির ভয় নেই। সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া 18 বছরের নিচের বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করছে।
আশা করা যায়, করোনা ভাইরাসকে যেভাবে আমরা ভ্যাকসিনেশন বা টিকাকরণের মাধ্যমে পরাজিত করেছি, ডেঙ্গি ভাইরাসকেও একই ভাবে খুব শীঘ্র আমরা সম্পূর্ণ রূপে পরাজিত করবো [14,15,16]। তবে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দ্বায়িত্ব কিন্তু আমাদেরকেই পালন করে যেতে হবে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ ভাইরাসের রোগ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য 2023 সালে শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের নোবেল পেয়েছেন জীব রসায়নবিদ কাটালিন কারিকো এবং রোগ প্রতিরোধ বিজ্ঞানি বা ইমিউনোলজিস্ট ড্রিউ উইসম্যান। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তাদের দেখানো পথেই এসেছে। শুধু করোনা বা ডেঙ্গি নয়, তাদের আবিষ্কৃত পদ্ধতি আগামীদিনে অন্যান্য মারণ আরএনএ ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধেও ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
প্রচ্ছদের ছবি: এডিস মশা ও ডেঙ্গু ভাইরাসের ছবি (colorized transmission electron micrograph). Credit – CDC and NIAID . The picture was cropped from its original version and is used under CC 2.0 license.
তথ্যসূত্র ও অন্যান্য টুকিটাকি:
[1] World Health Organization. Global Strategy for Dengue Prevention and Control 2012–2020 (WHO Press, 2013). This document outlines the global strategy for dengue prevention and control to 2020.
[2] Zeyaullah, M.; Muzammil, K.; AlShahrani, A.M.; Khan, N.; Ahmad, I.; Alam, M.S.; Ahmad, R.; Khan, W.H. Preparedness for the Dengue Epidemic: Vaccine as a Viable Approach. Vaccines 2022, 10, 1940. https://doi.org/10.3390/ vaccines10111940
[3] Lindenbach, B.D.; Rice, C.M. Molecular biology of flaviviruses. Adv. Virus Res. 2003, 59, 23–61. [CrossRef]
[4] Whitehead, S. S. et al. Prospects for a dengue virus vaccine. Nature Reviews Microbiology 5, 518–528 (2007).
[5] Bauer, K.; Esquilin, I.O.; Cornier, A.S.; Thomas, S.J.; del Rio, A.I.Q.; Bertran-Pasarell, J.; Ramirez, J.O.M.; Diaz, C.; Carlo, S.; Eckels, K.H.; et al. A Phase II, Randomized, Safety and Immunogenicity Trial of a Re-Derived, Live-Attenuated Dengue Virus Vaccine in Healthy Children and Adults Living in Puerto Rico. Am. J. Trop. Med. Hyg. 2015, 93, 441–453. [CrossRef]
[6] Sirivichayakul, C.; Barranco-Santana, E.A.; Esquilin-Rivera, I.; Oh, H.M.L.; Raanan, M.; Sariol, C.A.; Shek, L.; Simasathien, S.; Smith, M.K.; Velez, I.D.; et al. Safety and Immunogenicity of a Tetravalent Dengue Vaccine Candidate in Healthy Children and Adults in Dengue-Endemic Regions: A Randomized, Placebo-Controlled Phase 2 Study. J. Infect. Dis. 2015, 213, 1562–1572. [CrossRef] [PubMed]
[7] Whitehead, S.S.; Durbin, A.P.; Pierce, K.K.; Elwood, D.; McElvany, B.D.; Fraser, E.A.; Carmolli, M.P.; Tibery, C.M.; Hynes, N.A.; Jo, M.; et al. In a randomized trial, the live attenuated tetravalent dengue vaccine TV003 is well-tolerated and highly immunogenic in subjects with flavivirus exposure prior to vaccination. PLoS Negl. Trop. Dis. 2017, 11, e0005584. [CrossRef]
[8] Villar, L.; Dayan, G.H.; Arredondo-García, J.L.; Rivera, D.M.; Cunha, R.; Deseda, C.; Reynales, H.; Costa, M.S.; Morales-Ramírez, J.O.; Carrasquilla, G.; et al. Efficacy of a Tetravalent Dengue Vaccine in Children in Latin America. N. Engl. J. Med. 2015, 372, 113–123. [CrossRef] [PubMed]
[9]. World Health Organization. Dengue Vaccine: WHO Position Paper, September 2018—Recommendations. Vaccine 2019, 37, 4848–4849. [CrossRef]
[10]. World Health Organization. Position Paper on Dengue Vaccines. Wkly. Epidemiol. Rec. 2018, 93, 457–476. Available online: https: //reliefweb.int/report/world/weekly-epidemiological-record-wer-7-september-2018-vol-93-no-36-pp-457-476-enfr (accessed on 5 October 2022)
[11] Whitehead, S.S. Development of TV003/TV005, a single dose, highly immunogenic live attenuated dengue vaccine; what makes this vaccine different from the Sanofi-Pasteur CYD™ vaccine? Expert Rev. Vaccines 2016, 15, 509–517. [CrossRef]
[12] Sáez-Llorens, X.; Tricou, V.; Yu, D.; Rivera, L.; Tuboi, S.; Garbes, P.; Borkowski, A.; Wallace, D. Safety and immunogenicity of one versus two doses of Takeda’s tetravalent dengue vaccine in children in Asia and Latin America: Interim results from a phase 2, randomised, placebo-controlled study. Lancet Infect. Dis. 2017, 17, 615–625. [CrossRef]
[13] Kirkpatrick, B.D.; Durbin, A.P.; Pierce, K.K.; Carmolli, M.P.; Tibery, C.M.; Grier, P.L.; Hynes, N.; Diehl, S.A.; Elwood, D.; Jarvis, A.P.; et al. Robust and Balanced Immune Responses to All 4 Dengue Virus Serotypes Following Administration of a Single Dose of a Live Attenuated Tetravalent Dengue Vaccine to Healthy, Flavivirus-Naive Adults. J. Infect. Dis. 2015, 212, 702–710. [CrossRef]
[14] Khan, W.H.; Ahmad, R.; Khan, N.; Ansari, M.A. SARS-CoV-2 Variants Associated Challenges in the Ongoing Vaccination of COVID-19. In Prime Archives in Virology; Raad, H., Ed.; Prime Archives in Virology: Hyderabad, India, 2022; Volume 1, pp. 1–59.
[15] Zeyaullah, M.; AlShahrani, A.M.; Muzammil, K.; Ahmad, I.; Alam, S.; Khan, W.H.; Ahmad, R. COVID-19 and SARS-CoV-2 Variants: Current Challenges and Health Concern. Front. Genet. 2021, 12, 693916. [CrossRef] [PubMed] [16] Goel, N.; Ahmad, R.; Fatima, H.; Khare, S.K. New threatening of SARS-CoV-2 coinfection and strategies to fight the current pandemic. Med. Drug Discov. 2021, 10, 100089. [CrossRef]
[16] Goel, N.; Ahmad, R.; Fatima, H.; Khare, S.K. New threatening of SARS-CoV-2 coinfection and strategies to fight the current pandemic. Med. Drug Discov. 2021, 10, 100089. [CrossRef]