কণা বিজ্ঞান (particle physics) মহলে একদম সাড়া পড়ে গিয়েছে। ব্যাপার রীতিমত গুরুতর। টেনিদা থাকলে নাক চুলকিয়ে বলতেন “পুদুচ্চেরি” । দু-দুটো পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে মিউয়ন (muon) কণা যেরকম হওয়ার কথা ছিল, অন্তত আমাদের জানা অঙ্ক অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো থেকে যা উত্তর আসা উচিত ছিল, একদমই সেরকম উত্তর আসে নি। উত্তর কী করে মিলবে এই ভাবনাই এখন বিজ্ঞানীদের ব্যস্ত রেখেছে।
সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে? মিউয়ন কণাই বা কী আর তার উত্তর ঠিকঠাক মিলল না বলে কী যায় আসে? দাঁড়াও দাঁড়াও, একটু বুঝিয়ে বলি।
কণা জগতে শেষ কথা?
কত বয়েস অব্দি পদার্থবিদ্যা (physics) নিয়ে চর্চা করেছো, সেই অনুযায়ী কণাজগৎ সম্বন্ধে তোমার একটা ধারণা থাকবে। ইস্কুল অব্দি পড়ে থাকলে, পরমাণুর ভিতর ইলেক্ট্রন আর তার মধ্যেকার নিউক্লিয়াসের ভিতর প্রোটন-নিউট্রনের কথা শুনে থাকবে। কলেজে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়লে জানবে, ওই প্রোটন-নিউট্রন আবার নিজেরাও কোয়ার্ক কণা দিয়ে তৈরী। আর পরমাণুর বাইরেও শুধু কণাগুলোকে নিয়েই গবেষণা করা হয়। বিভিন্ন ধরণের কণা এবং তাদের মধ্যেকার আন্তঃক্রিয়া (অর্থাৎ একে অপরের সাথে কোন জাতের বল প্রয়োগ করে), সেটা নিয়ে একটা গোটা বিজ্ঞানের শাখা রয়েছে। যাকে বলে কণা পদার্থবিজ্ঞান (particle physics)।
শেষে এই কণা পদার্থবিজ্ঞানই যদি তোমার গবেষণার বিষয় হয় কিম্বা যদি কলেজে এই নিয়ে একটা কোর্স থাকে, তখন জানবে যে একটা-দুটো ধরণের নয়, এক চিড়িয়াখানা কণা রয়েছে। সবাইকে এমনিতে সহজে পাওয়াও যায়না। চেনা কণাগুলোকে মহাবেগে একে অপরের সাথে আছড়িয়ে ক্ষণিকের জন্য এই চিড়িয়াখানার ভিতর উঁকিঝুঁকি মারা যায়। দেখা যায় স্বল্পস্থায়ী অন্য কণাগুলোকে। এত ধরণের কণায় যখন থৈ পাবেনা, তখন এটাও জানবে যে এত কণাকে একই সূত্রে বেঁধেছে, এরকম একটা তত্ত্ব হয়। গত শতকের মাঝামাঝি থেকে অনেক অঙ্ক, অনেক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা কণা জগতের জন্য একটি তত্ত্ব খাড়া করেছেন, যাকে ডাকা হয় স্ট্যান্ডার্ড মডেল (Standard Model) [১] নামে।
কণা অনেকরকমের হলেও তাদের মধ্যে একটা সুন্দর শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। একদল কণা সমস্ত পদার্থের মূল রসদ, আরেকদল সমস্তরকম বলের বাহক হিসেবে কাজ করে। একটা বিশেষ চরিত্র স্পিন [২] অনুযায়ী এই দুটো দলকে আলাদা করা যায়:
- ফারমিয়ন (fermion), যাদের স্পিন অর্ধেক অথবা অর্ধেকের বিজোড় গুণিতক, এরা সবরকম পদার্থ সৃষ্টি করে।
- বোসন (boson), যাদের স্পিন পূর্ণসংখ্যা, এরা সবরকম বলের বাহক।
এই ফারমিয়ন কণার আবার দুটি ভাগ, লেপ্টন (lepton) ও কোয়ার্ক (quark)। আমাদের চেনাপরিচিত ইলেক্ট্রন এই লেপ্টন গোত্রের মধ্যে পড়ে। এবং আজকের গল্প লেপ্টনদের নিয়েই। নিচের এক নম্বর ছবিটি দেখলে কণাগুলির নাম ও ভাগ সম্বন্ধে সহজে বুঝতে পারবে। ক্ষেত্র বিশেষে নিউট্রিনো কণা ছাড়া বাকি সব কণাই স্ট্যান্ডার্ড মডেল অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। স্ট্যান্ডার্ড মডেল সম্বন্ধে অল্প কথায় আরও ভাল করে জানতে হলে এই ওয়েবপেজটি দেখতে পারো [৩]।
বস্তু কি দিয়ে তৈরী, সেটা বারবার জিজ্ঞেস করতে করতে অণু-পরমাণু ছাড়িয়ে কণার স্তরে নামলে আর এই প্রশ্নটা করা যায়না। সবথেকে মৌলিক (fundamental) এই কণাগুলোই। তাই এমন তত্ত্ব যদি হয় যেটা সব জাতের কণাকে এক সূত্রে বাঁধে, তখন এরকম মনে হতে পারে, অন্তত এই মৌলিক স্তরে পদার্থবিদ্যার অনেকটাই জানা হয়ে গেছে।
বাধ সাধলো মিউয়ন নিয়ে পরীক্ষা
এইবার আসি মিউয়নের কথায়। মিউয়ন হল একটা লেপটন গোত্রের কণা। ইলেকট্রনও লেপটন গোত্রের কণা কিন্তু মিউয়ন ইলেকট্রনের থেকে ২০০ গুণ বেশি ভারি।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল বলবাহক কণাগুলির সাথে ফারমিয়ন কণাগুলির আন্তঃক্রিয়ার বিবরণ দেয় (আন্তঃক্রিয়া বা interaction মানে একটা কণা অন্যটাকে কিভাবে প্রভাবিত করে)। এই মডেল অনুযায়ী লেপটন কণাগুলির অন্য বল বাহক কণাগুলির সাথে আন্তঃক্রিয়া একইরকম হওয়ার কথা। এই আন্তঃক্রিয়া এক থাকা, এটা সব লেপ্টনের জন্যেই খাটে, সে মিউয়নই হোক কি ইলেক্ট্রন। অর্থাৎ, ওদের ওজনের তফাতে কিছু যায় আসে না। এর কোন তাত্ত্বিক প্রমাণ নেই, কিন্তু আগের পরীক্ষার ফল আমরা যা পেয়েছিলাম, তাতে এই ধারণা সঠিক বলে মনে করা যায়। একে বলে lepton universality বা লেপটন সার্বজনীনত্ব।
এতদিন দিব্যি এই ধারণা ব্যবহার করে গবেষণা এগিয়ে চলেছে। আর এইটাতেই আঘাত হেনেছে মিউয়ন। শুধু একটা পরীক্ষার ফল নয়, দু-দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জাতের পরীক্ষা থেকেই এমন ইঙ্গিত মিলেছে যে, মিউয়ন কণা স্ট্যান্ডার্ড মডেলের তত্ত্বকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারে!
প্রথম পরিমাপ : মিউয়ন-কে চুম্বক হিসেবে ব্যবহার করা
প্রথম পরীক্ষাটা আমেরিকার ইলিনয় প্রদেশের ফারমি-ল্যাবে করা। এটার নাম Muon g-2 experiment। এখানে g কাকে বলছি? ইলেকট্রন কণার যেহেতু বৈদ্যুতিক আধান (electric charge) আছে, সেটা খুব ছোট একটা চুম্বকের মত আচরণ করতে পারে। মিউয়ন কণার জন্যেও একই কথা খাটে। এবার বাইরে থেকে যদি আরেকটা শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র বসানো হয়, তখন এই কণা-চুম্বক টলতে থাকে (precess), অনেকটা ঘুরন্ত লাট্টুর মত। নিচের ছবিটা দেখ।
কণার নিজের চৌম্বক ধর্ম ঠিক করে দেয় বাইরের চৌম্বকক্ষেত্রে কণাটার টলবার হার (rate of precession) কী হবে। এই টলবার হার যে সংখ্যা দিয়ে বর্ণনা করা হয় সেটা হল ঐ কণার ‘g-factor’।
এবার প্রশ্ন হলো: পরীক্ষার নাম g-2 এক্সপেরিমেন্ট কেন? কারণ এই g-factor এর মান 2-এর থেকে সামান্য বেশী। 2 মানটা আসে একটা সহজ অঙ্ক কষে: একটা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা (quantum mechanics) মেনে চলা ইলেক্ট্রনের উপর একটা ক্লাসিকাল তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রভাব দেখা হয়। এরকম একটা আধা-ক্লাসিকাল (semiclassical) অঙ্ক কষে ইলেক্ট্রনের ‘g-factor’ বেরোয় ঠিক 2। কিন্তু অঙ্কটা ঠিকমতো করতে গেলে এবং প্রকৃতিকে আরো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে ওই তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রটাকেও কোয়ান্টাম হিসেবে ভাবতে হবে। সেইটা করলে অঙ্কটা আরেকটু কঠিন হয় এবং g-factor ও বাড়ে 2-এর থেকে। কতটা বাড়লো সেখানেই লুকিয়ে আছে ইলেক্ট্রনের সাথে অন্য কণাদের আন্তঃক্রিয়ার গল্প। তাই g-factor এর মান থেকে সোজাসাপ্টা 2-টা বাদ দিয়ে বাকিটুকু নিয়ে চর্চা করা হয়। ফলে পরীক্ষার নাম g-2। এইধরণের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করতে g-2-এর সাথে জড়িত আরেকটা রাশির কথা বলা হয়। এর নাম অস্বাভাবিক চৌম্বক ভ্রামক বা anomalous magnetic moment ()। এটা g-factor-এর সাথে এইভাবে জড়িত :
অঙ্ক যতই কঠিন হোক, তাত্ত্বিক গণনা করে এই g-factor খুব নির্ভুল ভাবে বের করা যায়। আবার পরীক্ষার দিক থেকে ভাবলে ইলেকট্রনের g-factor-এর পরিমাপ আজ পর্যন্ত করা সবথেকে সূক্ষ্মতম পরিমাপের মধ্যে পড়ে, আর সেটা তাত্ত্বিক গণনার সাথেও হুবহু মিলেও যায়। ইলেকট্রনের g-factor এর
- পরীক্ষায় প্রাপ্ত মানঃ 2.00231930436256 ± 0.00000000000035 (দশমিকের পর কতগুলো সংখ্যা লক্ষ্য কর) [৪] আর
- তাত্ত্বিক গণনাকৃত মান 2.00231930436322 ± 0.00000000000046 [৫]।
ইলেকট্রনের তো g-factor মাপা হল, তার দাদা মিউয়নের কি খবর? Standard Model যদি মানতে হয় তাহলে মিউয়নের g-factor এর তাত্ত্বিক মান আর পরিমিত মানও একই হবে। মিউয়নের g-factor মাপতে গিয়ে দেখা গেল তত্ত্বের সাথে মিলছে না!
এটা কি পরীক্ষার ভুল হতে পারে? এর আগে ২০০৬-য়ে আমেরিকারই ব্রুকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে (BNL) g-factor মাপা হয় [৬]। সেখানেও তত্ত্বের সাথে অমিল দেখা গেছিল কিন্তু পরীক্ষায় পাওয়া মানটা তত্ত্বের থেকে তিন সিগমা (σ) [৭] দূরে ছিল। সিগমা (σ) যত বেশি হয়, তাত্ত্বিক গণনাকৃত মানের সাথে পরিমিত মানের তফাৎ তত বেশি। সহজে বলতে গেলে, যদি সিগমা শূন্য হত তাহলে আমরা বলতাম মিউয়নের g-factor এর তাত্ত্বিক গণনাকৃত মান আর পরিমিত মান হুবহু এক। জানিয়ে রাখা দরকার, তিন সিগমা নতুন কিছু আবিষ্কারের সম্পূর্ণ স্বীকৃতি নয়, সাবুদ (‘evidence’) মাত্র। বিজ্ঞানী মহলে তিন সিগমা মানের তফাতের অর্থ, ‘নতুন কিছু হলেও হতে পারে, আমাদের পরীক্ষা করতে ভুল হয়েছে নাকি সত্যি সত্যি মানের তফাৎ হচ্ছে তা জানতে আরও গবেষণা করা দরকার’ । যদি এই তফাৎ ৫ সিগমা হয়, তার অর্থ দশ লক্ষ বারে একবার পরীক্ষার ভুলে এই মান সম্ভব – আর তখনই নতুন আবিষ্কার হয়েছে বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
এই বছর ফারমি ল্যাবে আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করে ও আগের পরীক্ষার সাথে মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে এর মান তাত্ত্বিক মানের থেকে অন্তত ৪.২ সিগমা দূরে [৮], অর্থাৎ ৪০ হাজার বারে একবার পরীক্ষার ভুলে এই মান সম্ভব। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা দরকার, স্ট্যান্ডার্ড মডেলের তাত্ত্বিক মানের গণনার সময় হ্যাডরন-এর প্রভাব কিছুটা অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করতে পারে, এই বিষয়ে এখনো কোন সর্বজনস্বীকৃত মত পাওয়া যায়নি [৯]। এই ফল চিত্র ৩-এ বোঝানো হয়েছে [১০]। এর অর্থ, আমরা কাঙ্ক্ষিত ৫ সিগমার দিকে এগিয়ে চলেছি, আরও তথ্য পেলে আমরা হয়তো নতুন কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে জানাতে পারব।
দ্বিতীয় পরিমাপ : ইলেক্ট্রন–মিউয়ন দুর্বল বলের উপস্থিতিতে কিভাবে আচরণ করে
এরপর আসি দ্বিতীয় পরিমাপে। এই পরিমাপটা সুইজারল্যান্ডের সার্নের LHCb পরীক্ষায় করা হয়েছে [১১]। এই পরীক্ষায় কণা সম্বন্ধীয় নানান ঘটনার মধ্যে bottom quark কণার strange quark-এ বিভাজিত হওয়াও দেখা হচ্ছে (চিত্র ১-এ কোয়ার্ক কণাগুলি দেখ) [১২]। এই বিভাজনের ফলস্বরূপ আধানযুক্ত লেপটন (charged lepton) যেমন ইলেকট্রন ও তার বিপরীত আধানের পজিট্রন বেরোতে পারে, তেমনই মিউয়ন ও তার বিপরীত আধানের অ্যান্টিমিউয়ন কণাও বেরোতে পারে।
Standard Model-এর lepton universality বা লেপ্টন সার্বজনীনত্ব যদি ঠিক হয়, তাহলে bottom quark কণা strange quark এ বিভাজিত হওয়ার সময় ইলেকট্রন ও পজিট্রন বেরোনোর হার () এবং মিউয়ন ও অ্যান্টিমিউয়ন বেরোনোর হার () সমান হবে, অর্থাৎ:
অথচ, এই পরীক্ষায় সর্বশেষ পাওয়া ফলে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি ১০০ টি ইলেকট্রন পজিট্রন কণা বেরোলে মিউয়ন অ্যান্টি মিউয়ন কণা বেরোচ্ছে মাত্র ৮৫ টি। গাণিতিক ভাবে বলতে গেলে, । এই অনুপাতটি চিত্র ৩-এ দেখানো হয়েছে [১৪] ।
এখানেও Standard Model-এর মানের সাথে পরিমিত মান মিলছে না। তবে এক্ষেত্রে, বিজ্ঞানীরা মানের তফাৎ ৩.১ সিগমা পর্যন্তই দেখেছেন, অর্থাৎ এখানেও সম্পূর্ণ নতুন কিছু আবিষ্কারের যে মানদণ্ড ৫ সিগমা সেটি পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে আরও অনেক তথ্য LHCb পরীক্ষায় পাওয়া যাবে, আর সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে হয়তো ৫ সিগমা মানদণ্ড অতিক্রম করা যাবে।
যদি Standard Model-এর মানের সাথে পরীক্ষা গুলির মান না মেলে তার মানে কী? তার মানে এই যে, মহাবিশ্বে হয়তো আরও কিছু নতুন ধরনের আন্তঃক্রিয়া আছে যেটা মিউয়ন কণার ওপর প্রভাব ফেলছে। অথবা, এমনও হতে পারে যে নতুন কোনো কণা মিউয়নের সাথে interact করছে, যেইটা সম্বন্ধে আমাদের এখনো পর্যন্ত কোন ধারণাই নেই। সবকিছুর সাথেই ‘হয়তো’ কথাটি জুড়ে দিতে হচ্ছে, কেননা বিজ্ঞানীরা এগুলো সম্বন্ধে একদমই নিশ্চিত নন।
তাত্ত্বিক পদার্থবিদরা এখন কিছু কিছু ধারণা দিচ্ছেন, যেগুলো Beyond Standard Model-এর অন্তর্গত, অর্থাৎ আমাদের বর্তমান Standard Model-এর আওতার বাইরে। যেমন, কেউ বলছেন লেপটোকোয়ার্ক (leptoquark) নামে এক নতুন ধরনের কণার কথা, যা একই সাথে লেপটন ও কোয়ার্ক এর মত interaction করতে পারে ‒ এইরকম কণা মিউয়নকে প্রভাবিত করছে। কেউ বলছেন, নতুন কোন আধানহীন বোসন কণা আছে যা আজও আমাদের অধরা; এবং সেই নতুন কণা মিউয়নের সাথে interact করছে; সেই অজানা কণাকে হিসেবের মধ্যে ধরা হচ্ছে না বলে আমাদের তাত্ত্বিক গণনায় ভুল হচ্ছে। আবার, কারও মতে সময়, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা – আমাদের জানা এই চারটি মাত্রা (dimension) ছাড়াও হয়তো অতিরিক্ত কোন মাত্রা আছে; মিউয়ন কণা আমাদের জানা চারটি মাত্রার সাথে সেই অজানা মাত্রার (এক বা একাধিক) মেলবন্ধন করছে। এছাড়া আরও অন্যান্য অনেক তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা দিচ্ছেন যা এই সব পরীক্ষার ফলাফল তত্ত্বগত ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। তত্ত্ব দিলেই বিজ্ঞানে শেষ কথা বলা যায় না, পরীক্ষাগারে সেই তত্ত্ব প্রমাণ হওয়াও দরকার। সেই কাজেই বিজ্ঞানীরা এখন নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। কে বলতে পারে অদূর ভবিষ্যতে প্রকৃতির এই নতুন ধাঁধার সমাধানের লক্ষ্যে তাঁরা পৌঁছে যাবেন খুব শীঘ্রই, আর টেনিদার মতই চেঁচিয়ে উঠবেন ‘ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস’!
[১] https://en.wikipedia.org/wiki/Standard_Model
[২] স্পিন হল প্রত্যেক কণার স্বকীয় (intrinsic) ধর্ম, যেমন তার ভর আর একটা স্বকীয় ধর্ম।
[৩] https://home.cern/science/physics/standard-model
[৪] https://physics.nist.gov/cgi-bin/cuu/Value?gem|search_for=all!
[৫] Measurement of the fine-structure constant as a test of the Standard Model, BY RICHARD H. PARKER, CHENGHUI YU, WEICHENG ZHONG, BRIAN ESTEY, HOLGER MÜLLER SCIENCE Vol. 360, Issue 6385, pp. 191-195
DOI: 10.1126/science.aap7706
[৬] Final report of the E821 muon anomalous magnetic moment measurement at BNL, G. W. Bennett et al (Muon g-2 Collaboration), Phys. Rev. D 73, 072003
(2006)
[৭] সিগমা হল একটি statistical quantity। এর মাধ্যমে কোন statistical distribution এর বিস্তৃতি (spread) বোঝায়। এখানে খুব সুন্দর করে বোঝান আছেঃ https://news.mit.edu/2012/explained-sigma-0209
[৯] g-factor গণনার Standard Model এর গাণিতিক তত্ত্বে hadron (https://en.wikipedia.org/wiki/Hadron) এর প্রভাব দুভাবে গণনা করা যায় – প্রথমটি হল পূর্বে পাওয়া পরীক্ষার ফলের সাথে মিলিয়ে (যেই পদ্ধতি এখনো পর্যন্ত সর্বজনগ্রাহ্য), আর দ্বিতীয়টি হল lattice QCD এর মাধ্যমে। যদি দ্বিতীয় পদ্ধতি, অর্থাৎ lattice QCD এর গণনা নেওয়া হয়, তাহলে standard model এর গণনা আর পরীক্ষার ফলের মধ্যে তফাৎ মাত্র ১.৫ সিগমা দাঁড়ায়, ৪.২ সিগমা নয়। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি এখনো সর্বজন স্বীকৃতি লাভ করে নি – এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি এখানে আছে:
Leading hadronic contribution to the muon magnetic moment from lattice QCD, Borsányi et al., Nature 593, 51–55, 2021
[১০] Measurement of the Positive Muon Anomalous Magnetic Moment to 0.46 ppm, Muon g-2 Collaboration, Physical Review Letters 126, 141801 (2021). https://doi.org/10.1103/PhysRevLett.126.141801
[১১] https://home.cern/news/news/physics/intriguing-new-result-lhcb-experiment-cern
[১২]এই পরীক্ষায় আসলে কণার ( যেটি একটি up কোয়ার্ক ও একটি bottom অ্যান্টিকোয়ার্ক দ্বারা গঠিত) কণায় ( যেটি একটি up কোয়ার্ক ও একটি strange অ্যান্টিকোয়ার্ক দ্বারা গঠিত) ভেঙ্গে যাওয়া দেখা হয়, সরাসরি bottom কোয়ার্কের strange কোয়ার্কে ভেঙ্গে যাওয়া নয়। [১৩] Test of lepton universality in beauty-quark decays, the LHCb Collaboration,
arXiv:2103.11769