“Chinese whispers” বা “টেলিফোন” বলে ছোটদের একটা জনপ্রিয় খেলা আছে। অনেকজন থাকলে খেলাটা দারুণ জমে। প্রথমে সার বেঁধে সবাইকে দাঁড় করানো হয়। তারপর একজন তার পাশের জনের কানে কানে একটা বার্তা পাঠায়। দ্বিতীয়জন সেই বার্তাটা তার পাশের জনের কানে কানে বলে। এইভাবে বার্তাটা এগোতে থাকে। সবশেষে যে আছে, তাকে বলতে হয় কি শুনেছে। খেলাটার উদ্দেশ্য হলো, প্রথম জনের বার্তা যতটা সম্ভব না বাঁকিয়ে চুরিয়ে শেষ অব্দি পৌঁছতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, শেষ অব্দি পৌঁছতে পৌঁছতে সে বার্তা অনেকটাই পাল্টে গেছে। সবাই যখন শেষের জনের মুখ থেকে বার্তাটা শোনে আর প্রথম জনের সাথে তুলনা করে, সে এক মজার ব্যাপার! সবাই তখন হেসে খুন!
এই “টেলিফোন” খেলাটা আমরা দৈনন্দিন জীবনেও নিজের অজান্তেই খেলি। কেউ একজন কিছু বললো, আমি তার একটা মানে বুঝলাম। সেইটা আমি যখন আরেকজকনকে বলতে গেলাম, সেটা হয়তো কিছুটা পাল্টে গেছে। এরকম অল্পবিস্তর এদিকওদিক আমরা করেই থাকি, এতে হয়তো কোনো দোষ নেই। আমাদের স্মৃতিশক্তি, বোঝার ধরণ, বলার ধরণ, এসবের জন্য এই ব্যাপারটা হওয়া স্বাভাবিক।
এদিকে আরেকটু এগোলে আরেকটা কাণ্ডও লক্ষ্য করা যায়। একজন কিছু বললো, সেটাকে পুনরাবৃত্তি করার সময় আমি আরেকটু লেজুর জুড়ে দিলাম। যেটা হয়তো মূল বক্তব্যে ছিল না বা বলতেও চাওয়া হয়নি। এটাও হয়তো স্বাভাবিক, আমার বোঝার ভুল হতেই পারে।
কিন্তু সেই পুনরাবৃত্তিটা যখন আমি শয়ে শয়ে লোকের কাছে করছি, তখন আমার সতর্ক থাকা উচিত: যার কথাগুলো বলছি, সে ঠিক সেই কথাগুলোই বলেছিল তো? সাধারণত, এইরকম অবস্থায় সতর্ক হয়ে থাকি আমরা। অনেক ফ্যাক্ট চেক করি। কারো উদ্ধৃতি দিলে উদ্ধৃতিটার সূত্র দেখে নি।
তাই, যখন একটা হোয়াটস্যাপ ফরওয়ার্ড-এ “টেলিফোন” খেলার একটা চরমতম সংস্করণ দেখা যায়, সেটা দেখে এই সিদ্ধান্তেই আসতে হয়, ফরওয়ার্ড-এর স্রষ্টা একটা মস্ত প্যাঁচ কষছে। এটা মোটেই স্বাভাবিক ভুল নয়। এরকমই একটা প্যাঁচের সাথে পরিচয় করাতে চাই এই লেখার মধ্যে দিয়ে।
মূল বক্তব্যের সাথে গরমিল
একটা উদাহরণ দেখা যাক। করোনা আক্রমণের শুরুতে এইটা স্পষ্ট ছিল না কিভাবে ভাইরাস-টা ছড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে অনেক গবেষণার ফলে সেই নিয়ে একটা ধারণা তৈরী হলো। এবার নিচের অংশটা পড়ে দেখুন (যতটা পারবেন পড়ুন):
“একটা ভাইরাস যদি হাঁচি-কাশি নির্গত সেইসব বিন্দু থেকে ছড়ায় যেগুলো সহজেই ভূমিসাৎ হয়, তাহলে তাকে রোখার উপায় হলো মানুষে মানুষে ছোঁয়াছুঁয়ি কমানো, ঘন ঘন সাফ করা, একে অপরের ছোঁয়া থেকে বিরত থাকা, দূরত্ব বজায় রাখা, কাছাকাছি থাকলে মাস্ক পড়া, হাঁচি-কাশি হাত দিয়ে চাপা এবং সেইসব ডাক্তারি কাজেই হাই-গ্রেড সুরক্ষা নেওয়া যেখানে সেধরণের বিন্দু তৈরী হয়। এই ধরণের নিয়মনীতিগুলো ভিতরে বাইরের মধ্যে কোনো তফাৎ করবে না কারণ মাধ্যাকর্ষণ-এর প্রভাব সর্বত্রই এক। কিন্তু যদি ভাইরাস-টা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাস ছাড়লে, কথা বললে, চেঁচালে, গাইলে, নাক ঝাড়লে কিংবা কাশলেও তার থেকে আরেকজন আক্রান্ত হতে পারে। এইভাবে ছড়ানো ভাইরাসকে আটকাতে সেই সংক্রমিত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া ঠেকানোর উপায় দেখতে হবে, যেমন ভেন্টিলেশন বাড়ানো, ফিল্টার বসানো, জমায়েত কিম্বা ঘরের ভিতর একজোট হওয়া কমানো, ভিতরে থাকলে সবসময় মাস্ক পড়া, মাস্ক কতটা আঁটোসাঁটো হচ্ছে সেইদিকে নজর দেওয়া, এবং সবরকম স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যেই অত্যন্ত হাই-গ্রেড সুরক্ষা নেওয়া। …. দশটা ভিন্ন ভিন্ন ধারার প্রমাণ একসাথে মিলে এটাই সাব্যস্ত করে যে সার্স-কভ-২ ভাইরাস মূলত বায়ুবাহিত পথেই ছড়ায়।”
এবার এইটা পড়ে দেখুন:
“12 April 2021 এর এই report এ বহু বহু তথ্য দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে, যে Covid19 বায়ু দ্বারা সংক্রামিত হয়। অন্য কোনো ভাবেই নয়। … এর কিছু অংশ:
1. Covid রোগ কোনমতেই হাঁচি, কাশি, কফ, থুতু দিয়ে ছড়ায় না।
2. এটি পোষাক, জুতো, আসবাবপত্র, ধাতু, চামড়া এসব দিয়ে ছড়ায় না।
3. রুগীর ব্যবহার করা কোনো জিনিস এর স্পর্শে এই রোগ ছড়ায় না।
4. যানবাহন এর হাতল, সিঁড়ি এসবের মাধ্যমে ছড়ায় না।
5. এই জীবাণু ছড়ায় রোগীর কথা, নিঃশ্বাস বায়ু, হাসি, চিৎকার এমনকি গান থেকেও। জীবাণু বাতাসে মেশে এবং বাতাসে বহুক্ষণ সক্রিয় থাকে।
…
7. ঘরের বাইরে থেকে ঘরের ভিতরে রোগ হবার সম্ভাবনা বহু গুণ বেশী এবং সে রোগ ভয়াবহ হবার সম্ভাবনা ও ঘরেই অনেক বেশি।
8. বারবার হাত ধুয়ে, sanitizer ব্যবহার করে, বাইরে থেকে ফিরেই জামাকাপড় sanitize করলে কোনোই লাভ নেই।
9. নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যাঁরা বাইরে ঘুরেছেন তাঁদের চেয়ে যাঁরা ঘরে বদ্ধ থেকেছেন, তাঁদের রোগ হয়েছে বহুগুণ বেশী, এমনকি ভেন্টিলেটর এর প্রয়োজন বা মৃত্যু ও হয়েছে তাঁদের অনেক গুণ বেশি। বাস্তবে মৃতদের প্রায় ৮৬% ই ঘরে বদ্ধ ছিলেন। এই গৃহবন্দী নিয়ে report এ বহু detail আছে। বলা হয়েছে ঘরের থেকে রাস্তা, বড় বাগান, জঙ্গল, নদী এসব এলাকা বহুগুণ ভালো। এমনকি ঘরের থেকে Shopping mall ও ভালো বলা হয়েছে, কারণ সেখানে জায়গা অনেক বেশি, তাই বাতাসে জীবাণুর ঘনত্ব কম।
…”
প্রথমটা একটা গবেষণাপত্র থেকে নেওয়া এবং অনুবাদ করা, দ্বিতীয়টা বাংলায় একটা হোয়াটস্যাপ ফরওয়ার্ড। ফরওয়ার্ড-টা সঠিক রেফারেন্স দেয়নি (সচরাচর এই ধরণের ফরওয়ার্ড কোনো রেফারেন্স দেয় না) কিন্তু যেটুকু চেষ্টা করেছে, তার থেকে মনে হয়, গবেষণাপত্রটাই এই ফরওয়ার্ডটার সূত্র।
পুরো ফরওয়ার্ড-টা এখানে দেওয়া হলো। গবেষণাপত্রের লিঙ্ক-ও উপরে রয়েছে। গবেষণাপত্র-টা বা শুধু উপরের অংশটা পড়ে কি মনে হয় – এই ফরওয়ার্ড-এর সাথে কতটা মিল রয়েছে এর?
গোড়ায় মিল
ফরওয়ার্ড-টা শুরু হয়েছে যেভাবে, তাতে প্রথমে মনে হয়, গবেষণার কথাগুলোকেই আরো সহজভাবে বোঝানো হয়েছে। গবেষণাপত্রের ভাষা মোটেই সহজবোধ্য হয়না, অতএব কেউ যদি জনস্বার্থে সেই লেখাকে সর্বসাধারণের জন্য ভেঙ্গে থাকেন, তাহলে ক্ষতি কি?
হয়তো, গবেষণাপত্রটা একটু পড়েই আপনি হাঁফিয়ে গেছেন। শুরুটা মিলিয়ে নিয়ে আপনি এবার উৎসাহের সাথে ফরওয়ার্ড-টাই পড়ছেন। হাঁচি-কাশি-থুতুতে ছড়ায় না, মূলত বায়ুবাহিত পথেই ছড়ায়, এই কথাগুলো তো বলেছে গবেষণাপত্রে। বাকিটাও নিশ্চয় ঠিক।
কিন্তু যদি হাল ছেড়ে না দিয়ে পুরো পেপারটা পড়েন, দেখবেন একসময় ফরওয়ার্ড-এর কথাগুলো আর সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না। অতএব বাকি অংশটার সূত্র নিশ্চয় অন্য কিছু। অন্য কিছুটা কি? সেটা কিন্তু ফরওয়ার্ড-এ বলা নেই। যারা ঘরে বদ্ধ থেকেছেন, তাদের মৃত্যু হয়েছে অনেক বেশী, মৃতদের প্রায় ৮৬ শতাংশ ঘরে বন্দী ছিলেন, এর সূত্র কি? কিভাবে বার করলো এই ৮৬ শতাংশ-টা? কোথাকার মৃতদের? বিশ্বজুড়ে সব মৃতদের ৮৬ শতাংশ? তারা যে সংক্রমণের সময় ঘরে বন্দী ছিলেন, এই তথ্য কি ডাক্তাররা সাপ্লাই দিয়েছে?
যদি এইসব প্রশ্ন আপনার মনে জাগে, আপনি হয়তো আবার গবেষণাপত্রে ফেরত যেতে পারেন। দেখতে পারেন সেখানে এই নিয়ে কিছু বলা হয়েছে কিনা। কিন্তু হয়তো শুরুটা মেলানোর পর এইসব প্রশ্ন আর জাগবে না। ফরওয়ার্ড-এর মূল বক্তব্যটা, অর্থাৎ, “ঘরে বন্দী থাকবেন না, বাইরে বেরোন”, এটা আপনার মেনে নিতে আর অসুবিধে হবে না।
সত্যের আশেপাশের মিথ্যা
কিছু হোয়াটস্যাপ ফরওয়ার্ড আসে যেগুলো দেখলেই মনে হয় ভুয়ো। কিন্তু সেগুলোর আয়ু কম। একটু সুমতিসম্পন্ন হলেই আপনি সেটাকে উপেক্ষা করবেন। তাই ফরওয়ার্ড স্রষ্টারা এখন অন্যান্য চাতুরির আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে একটা হলো, সত্যের কাছাকাছি থেকে শুরু করা। এতে সহজে গুগল-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে সত্যতা যাচাই করার পদ্ধতিটা কিছুটা ঠেকিয়ে রাখা যায়।
এই ধরণের ফরওয়ার্ড কিন্তু ডান-বাম যেকোনো ধর্মেরই হতে পারে। একটা ডানবিরোধী ফরওয়ার্ড-এর নমুনা দি, এটা খোদ হোয়াটস্যাপ-কে নিয়েই। ২০২১-এর মে মাসে হোয়াটস্যাপ ভারত সরকারের নতুন সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত আইনের বিরুদ্ধে কোর্টে গেছিল। এর কারণ হলো, এই আইনটা অনুযায়ী, সরকার চাইলে হোয়াটস্যাপ-কে জানাতে হবে কোনো একটা বিশেষ ফরওয়ার্ড-এর উৎস কি। যেহেতু হোয়াটস্যাপ নিজেও সেই তথ্যটা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রাখেনি ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা (privacy) রক্ষা করতে, তাই তারা এই আইন মানতে নারাজ এবং দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। এই অব্দি ঘটনা। এই ঘটনাকে ধরেই ওই সময়ে একটা হোয়াটস্যাপ ফরওয়ার্ড ঘুরে বেড়াচ্ছিল। পুরো ফরওয়ার্ড-টা এখানে দেওয়া হলো। এর কিছু অংশ এরকম –
কাল থেকে হোয়াটস্যাপ (ভয়েস ও ভিডিও কল) সংক্রান্ত নতুন নিয়মগুলো চালু হবে:
[১] সব হোয়াটস্যাপ কল রেকর্ড করা হবে।
[২] সব কল-এর রেকর্ডিং সেভ করা হবে।
…
[৪] আপনার সব ডিভাইস সরকারের যোগাযোগ তদারকি ব্যবস্থার সাথে যুক্ত থাকবে।
…
[৭] ভুল করে যেন সরকারের বা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনাসূচক বা বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা সংক্রান্ত পোস্ট কিংবা ভিডিও কাউকে পাঠাবেন না।
…
হোয়াটস্যাপ-এর নতুন নিয়ম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :
[১] ✓ = মেসেজটা চলে গেছে।
[২] ✓✓ = মেসেজটা পৌঁছে গেছে।
[৩] দুটো নীল ✓✓= অন্যজন মেসেজ পড়েছে।
[৪] তিনটে নীল ✓✓✓ = মেসেজটা সরকারের নজরে এসেছে।
[৫] দুটো নীল ✓✓ এবং একটা লাল ✓= সরকার আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।
[৬] একটা নীল ✓ এবং দুটো লাল ✓✓ = সরকার আপনাকে খুঁজছে।
[৭] তিনটে লাল ✓✓✓ = সরকার আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং শীঘ্রই আপনি আদালত থেকে তলব পাবেন।
সকালের খবরের কাগজে যদি কেউ খবর পড়েন যে হোয়াটস্যাপ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং দুপুরে যদি এই ফরওয়ার্ড-টা আসে, এটাকে এক ঝটকায় উপেক্ষা করা কঠিন। হোয়াটস্যাপ কেন যে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে গেছে, সেটা হয়তো খবরের কাগজ পড়ে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়নি। privacy, encryption, এইসব কথার মাঝে আসল ব্যাপারটা কি হচ্ছে, এটা হয়তো বুঝতে পারছেন না আপনি। এইবার একটা হোয়াটস্যাপ ফরওয়ার্ড এসে আপনাকে জলের মতো স্পষ্ট করে সব বুঝিয়ে দিলো। সরকার যে আপনার ব্যক্তিগত মেসেজ সহজেই পড়ে ফেলবে, এটা ভেবে আপনি শিউরে উঠলেন।
সত্যি-মিথ্যের দূরত্ব-টা মাথায় রাখা কেন জরুরি
সত্যির কাছাকাছি মিথ্যেটা ধরা খুব কঠিন। সত্যি থেকে শুরু করার ফলে সামান্য গুগল সার্চ করে অনেকসময় মিথ্যেটাকে ধরা যায়না। আরেকটু বেশি কসরত করতে হয়। Fake news ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ফ্যাক্ট চেক (fact check) ওয়েবসাইট তৈরী হয়েছে। আপনি যদি একদম Whatsapp ফরওয়ার্ড-এর কোনো অংশ কপি করে হুবহু সার্চ করেন, সেটা যে ভুয়ো, ঐসব সাইট আপনাকে তাদের রিসার্চ-সহ বুঝিয়ে দেবে। তবে সেসব মূলত ইংরাজিতে। বাংলায় ভুয়ো খবর ধরার সেইরকম জোরদার প্রচেষ্টা এখনো হয়নি।
কিন্তু সত্যি-মিথ্যের এই তফাৎ-টা বোঝা কতটা জরুরি? আবার আগের দুটো উদাহরণে ফিরে যাই। খেয়াল করে দেখুন, ফরওয়ার্ড দুটো কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। একটা ফরওয়ার্ড-এ বলা হচ্ছে, লকডাউন ছাড়ুন, ঘর থেকে বেরোন। ঘরে আটকে থেকেই কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি। অন্যটাতে বলা হচ্ছে, সরকার কিন্তু এবার আপনার ব্যক্তিগত কথোপকথনে আড়ি পাতছে। মিথ্যেটা শুধু মিথ্যেই নয়, আপনার মধ্যে কোনো একটা আবেগকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। আপনাকে তাতিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আপনাকে তাতিয়ে তোলা তখনই যাবে যদি আগে আপনার বিশ্বাস অর্জন করা যায়। সেই কাজটি কিন্তু সারা হচ্ছে ওই শুরুর সত্যিটাকে আশ্রয় করেই। আরেকটা কথা মনে হতে পারে। বিজ্ঞানের কোনো গবেষণার ভিত্তিতে কেউ যদি একটা সিদ্ধান্তে আসে, সেই সিদ্ধান্তটা মূল গবেষণা ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে যাবে, তাতে আর আশ্চর্য কি? এই প্রশ্নটা মাথায় এলে আগে ভাবতে হবে, বিজ্ঞান কিভাবে এগোয়। বিজ্ঞানের জগতে কোনো গবেষণাকে মান্যতা দেওয়ার আগে সেটাকে পিয়ার রিভিউ (peer review) পদ্ধতিতে যাচাই করা হয়। মূল গবেষণার সাথে যুক্ত নয় অথচ সেই বিষয়ে দখল আছে, এরকম কিছু গবেষক গবেষণাপত্রটার সিদ্ধান্তগুলো খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেন। কিন্তু সেই গবেষণাকে যে ব্যক্তি নিজের মত করে ব্যাখ্যা করছে, সেই যদি গবেষণার সিদ্ধান্তগুলোকে আরো কয়েক কদম এগিয়ে নিয়ে যায়, তার সিদ্ধান্তগুলোকে কিন্তু কেউ আর যাচাই করলো না। সেটা কিন্তু তখন নিতান্তই কোনো ব্যক্তিবিশেষের সিদ্ধান্ত হবে। এরকম ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্তগুলোকে কি বিশ্বাস করা বা ছড়াতে দেওয়া উচিত?
প্রচ্ছদের ছবি: PixaBay