নিচের ইন্টারভিউটা Night Science নামে একটা podcast-এর একটি episode-এর অনুবাদ। মূল podcast episode-টা এখানে পাবেন। এখানে পডকাস্ট -এর দুই প্রশ্নকর্তা ইতাই ইয়ানাই (Itai Yanai) ও মার্টিন লার্চার (Martin Lercher) বিজ্ঞানী শন ক্যারল-এর (Sean Carroll) সাথে আলোচনায় বসেছেন। শন ক্যারল-কে বিবর্তনীয় ডেভেলপমেন্টাল জীববিদ্যার (evolutionary developmental biology বা সংক্ষেপে evo devo) একজন পথিকৃৎ হিসেবে দেখা হয়। বিবর্তনকে আরো ভালোভাবে বুঝতে হলে যে বিভিন্ন প্রাণীর ভ্রুণ অবস্থা থেকে বিকাশের মধ্যে মিলগুলো দেখতে হবে, এই ধারণাটা শন-এর পিএইচডি এবং পোস্টডক্টরাল গবেষণা থেকে এসেছিলো। কিন্তু এছাড়াও ওনার আরেকটা পরিচয় রয়েছে। জনসাধারণের কাছে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দিতে উনি সবরকম মাধ্যমের সাহায্য নিয়েছেন এবং সর্বত্রই ছাপ রেখে গেছেন। ওনার দুটো বিখ্যাত বই Endless Forms Most Beautiful: The New Science of Evo-Devo and the Making of the Animal Kingdom এবং Remarkable Creatures: Epic Adventures in the Search for the Origin of Species সর্বস্তরের বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। এছাড়াও চলচ্চিত্রের জগতেও উনি কাজ করেছেন। যেমন, সাম্প্রতিককালের পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় ডকুমেন্টারি All that breathes ছবিটাতে উনি একজন প্রযোজক ছিলেন। এই পডকাস্ট-এ শন ক্যারল আমাদের বলছেন, কিভাবে একসাথে ভালো বিজ্ঞানী এবং গল্পকার দুটোই হওয়া যায়। দুই অংশে প্রকাশিত ইন্টারভিউ-এর এটি দ্বিতীয় অংশ।
মার্টিন: তোমার কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল তুমি বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানীদের বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার কথা বলতে চাইছো। কিন্তু এ-প্রসঙ্গে আমার মনে হলো, জার্নালের আর্টিকেলে কোনো বৈজ্ঞানিক ফলাফল লেখার ক্ষেত্রেও কি তুমি গল্প বলার ভঙ্গিটিকে প্রাসঙ্গিক মনে করো? সেই গল্প বলাটা কি আলাদা?
শন: হুম, আলাদা। পার্থক্য আছে। গবেষণাপত্র আসলে অনেক মিথ্যে বলে। এই কথাটা যে বললাম, জানি অনেকে অনেক কিছু বলবে। কিন্তু আমি বলতে চাইছি, গল্পটা আসলে যেভাবে ঘটছে সেভাবে বলা হচ্ছে না।
গবেষণাপত্রগুলো আবিষ্কারের গল্প বলছে না, বরং চটজলদি বলা যায় এমন কিছু একটা উপস্থাপিত করছে।
ইটাই: তাহলে তোমার মতে একটি গবেষণাপত্র লেখার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত… মানে কীভাবে লিখলে সেটা আকর্ষণীয় ও পাঠযোগ্য হয়ে উঠবে?
শন: আমার উত্তরটা হয়তো সর্বত্র প্রযোজ্য হবে না। তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি নিজের ক্ষেত্রের বাইরের লোকের সঙ্গে একটা সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তারা কী ভাবছে সেটা যেমন জানা প্রয়োজন, তেমনই আমার গবেষণার এমন কোন দিক রয়েছে যা সবার আগ্রহ তৈরি করতে পারে, সেটা জানাও জরুরি। তোমার লেখা বা পডকাস্ট-এ একটা ব্যাপার উঠে এসেছে — বিজ্ঞানে অনেক মজার কাজ হয় দুটো ভিন্ন বিষয়ের সংযোগস্থলে। কিন্তু তুমি যেটা বার করেছো, সেটা অন্য একটা বিষয়ের লোক জানবে কী করে? তাই নিজের বিষয়ের বাইরের লোকেদের জন্য লেখালেখির প্রয়োজন আছে।
এটা কিন্তু চ্যালেঞ্জিং। কারণ নিজের বিষয়ের বাইরের লোকেদের জন্য লেখালেখি করার তেমন অভ্যেস নেই আমাদের। আমার নিজের ক্ষেত্রেই দেখেছি, বিষয়ের বাইরের লোকের জন্য সচেতনভাবে লিখতে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের জন্য লেখাগুলোতেও উন্নতি হয়েছে। কারণ বাইরের লোকের কথা ভাবতে গিয়ে আমি সবসময় খুঁজতে থাকি একটা বিষয়ের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও সার্বজনীন দিকটা কী। একটা ভালো কথা আছে — জীববিদ্যা হলো অসীমসংখ্যক ছোট ছোট বিশেষত্বের সমাহার। আমি চেষ্টা করি এই অসীমসংখ্যক ছোট ছোট জিনিসের ভিড়ে কিছু সার্বজনীন সত্যের খোঁজ দিতে। আমি বুঝি যে বিশেষ একটা ঘটনা বা সিস্টেমের উপর মনোসংযোগ করারও একটা জায়গা রয়েছে। কিন্তু মুশকিলটা হলো, ওই ছোট ছোট বিশেষত্বগুলোকে ঘিরে সিংহভাগ গবেষণাপত্র লেখা হয়েছে।
তাই আমার মতে, এই সার্বজনীন সূত্রগুলো খুঁজে বের করা এবং তোমার নিজের বিষয়ের বাইরের পাঠকদের কথা ভাবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেইসব পাঠকরা তোমার লেখা পড়বেই না যদি না তুমি তাদের জন্য বিষয়টি সহজ করে উপস্থাপন করো, তাদের কাছে বোধগম্য করে তোলো।
ইটাই: তোমাকে অনেক ধন্যবাদ এই কথাটা বলার জন্য। তোমার এই কথা থেকে অনেক নতুন চিন্তা মাথায় আসছে, যেগুলোর কথা আগে মনে হয়নি। এতদিন যত গবেষণাপত্র লিখেছি, এক ধরনের পাঠকের কথা ভেবেই লিখেছি — যাদের আমি কনফারেন্সে দেখি। তুমি ঠিকই বলেছো, এদের বাইরেও আমার ভাবা উচিত। আচ্ছা, তুমি তো ড্রোসোফিলার ভ্রূণে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও তার ডেভেলপমেন্টাল এবং বিবর্তনীয় জীববিদ্যা (developmental and evolutionary biology) নিয়ে কাজ করছিলে। তুমি কি বলতে চাইছো যে, সেই কাজ নিয়ে লেখার সময় তুমি শুধু ড্রোসোফিলা বা ডেভেলপমেন্টাল জীববিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা ভাবছিলে না? বরং আরও বিস্তৃতভাবে, এমনকি ডেভেলপমেন্টাল জীববিদ্যার বাইরেও ভাবছিলে? তাহলে এই ‘বাইরের’ সীমানা ঠিক কতটা বিস্তৃত ছিল?
শন: তাহলে আমি তোমাকে ডেভেলপমেন্টাল জীববিদ্যা (developmental biology) এবং বিবর্তনীয় ডেভেলপমেন্টাল জীববিদ্যার (evolutionary developmental biology), যা ইভো-ডেভো (evo-devo) নামে পরিচিত, এই দুইয়ের মধ্যের সম্পর্কটি ব্যাখ্যা করি।
ইভো-ডেভোর শুরুর দিনগুলোতে যা ঘটেছিল, তা একদম অভাবনীয়। আমি এটা কল্পনাও করতে পারিনি। আমরা যা আবিষ্কার করেছিলাম, সেটা জীবাশ্মবিদদের (palaeontologists) মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছিল। এদিকে আমার জীবাশ্মবিদ্যা সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। আমি কোনো জীবাশ্মবিদকেও চিনতাম না।
ইটাই (হেসে): হ্যাঁ, ওদের সাথে কেউ কথা বলে না…
শন: আমাদের ডিপার্টমেন্টগুলো তো আলাদা, আমরা আলাদা আলাদা জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করি। অন্তত 90-এর শুরুর দিকের পরিস্থিতি এমন ছিল যে সব ডিপার্টমেন্টের মধ্যে যোগাযোগও তেমন ছিল না।
ইটাই: ওদের সাথে কথা বলা বারণ…
শন: তাই নাকি? বারণ আছে জানতাম না…
ইটাই: মজা করছি।
শন: কিন্তু এর ফলে জীববিদ্যা ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একই গল্প পরিবেশবিদদের (ecologist) সাথেও। আণবিক জীববিদ্যার (molecular biology) বিজ্ঞানীরা এদের সাথে কথা বলে না। যাইহোক, আমাদের এই ইভো-ডেভোর প্রাথমিক কাজগুলো প্রকাশের পর সবথেকে বেশি সাড়া পেয়েছিলাম জীবাশ্মবিদদের কাছ থেকে, ডেভেলপমেন্টাল জীববিদদের কাছ থেকে নয়।
জীবাশ্মবিদরা বললো — ওমা, বিবর্তনীয় ইতিহাস এবং জীবজগতের বৈচিত্র্য নিয়ে এইভাবে তো ভাবা হয়নি আগে! এদিকে জীবাশ্মবিদরা জীবনের ইতিহাস জানতো, তারা জানতো কীভাবে জীবজগতের প্রধান গোষ্ঠীগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একজন আণবিক জীববিজ্ঞানী হিসেবে এই গল্পগুলো আমি জানতাম না বা বলা ভালো এই বিষয়টি আমার কাছে সহজলভ্য ছিল না। ফলে এটাকে একটা সহজাত আদানপ্রদান, একটা পারস্পরিক প্রেমালাপ বলতে পারো (হেসে)। একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছি হয়তো কিন্তু এমন কিছু জীবাশ্মবিদ রয়েছেন যাদের সঙ্গ পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি —
ইটাই: এটা সম্ভব হয়েছিল কারণ তারা তোমার লেখাপত্র পড়ে বুঝতে পেরেছিল।
শন: হ্যাঁ বুঝতে পেরেছিল। তারপর কিছু মানুষ একটা দারুণ আইডিয়া দিল যে আণবিক জেনেটিক্সের জীববিজ্ঞানী (molecular biologist) এবং জীবাশ্মবিদদের (palaeontologist) একই কনফারেন্সে আনা উচিত। সেটা একটা দুর্দান্ত ব্যাপার ঘটেছিল। মোদ্দা কথা হলো — তুমি জানো না, কখন কোথায় কে তোমার কাজে আগ্রহী হয়ে উঠবে। বিভিন্ন বিভাগের সংযোগস্থলে অনেক কিছু হতে পারে। অন্য বিভাগের লোকজন তোমার সাথে কথা বলছে, তুমিও তাদের থেকে অনেক কিছু শিখছো।
কয়েক বছরের মধ্যেই কিছু জীবাশ্মবিদের সাথে আমি কয়েকটা গবেষণাপত্র বার করি। এই কাজগুলো বেশ প্রভাবশালী হয়েছিল। গবেষণাপত্রগুলো রিভিউ পেপার ছিল। কিন্তু তাতে শুধু আগে যা করা হয়েছে, সেগুলোকে চাউর করা হচ্ছিল এমন নয়। বরং এই নতুন আবিষ্কারগুলো আসলে কী বোঝায়, সেটাও বিশ্লেষণ করার চেষ্টা হচ্ছিল।
তাই আমি মনে করি, নিজের বিষয়ের বাইরে নিজের কাজকে সম্প্রসারিত করলে অনেক লাভ আছে। শুধু যে প্রচার হচ্ছে তাই নয়, নিজের চিন্তারও প্রসার ঘটে।
মার্টিন: হুম, তাহলে ভালো গবেষণাপত্র লেখার একটা উপায় হলো নিজের বিষয়ের বাইরের পাঠকদের কথা ভাবা। কিন্তু গল্প বলার আরও কি কোনো দিক রয়েছে? মানে, তোমার বই বা চলচ্চিত্রগুলোতে তুমি দারুণ গল্প বলো। তুমি কি মনে করো, ওই মাধ্যমগুলোর কোনো বৈশিষ্ট্য গবেষণাপত্র লেখার ক্ষেত্রেও ধার করা যেতে পারে?
শন: আমি শত্রুকে চিনতে পেরেছি, আমাদের শত্রু আমরাই (সবাই হাসে)।
এটা বারবার হয় যে কোনো সম্পাদক শব্দসংখ্যার সীমা বলে দেন বা রিভিউয়ার বলেন যে পাণ্ডুলিপির একটা অংশ অনুমাননির্ভর। আবার কখনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুচ্ছেদ লেখকের সাথে কথা না বলেই বাদ দেওয়া হয়। আমার এই ব্যাপারটাকে মস্ত বড় বোকামি মনে হয়।
তুমি জানো, বৈজ্ঞানিকদের আবিষ্কারগুলো কত কষ্টের ফসল। একটা গবেষণাপত্রের আলোচনা অংশটাতে (discussion section) তোমার উচিত সম্ভাবনার জগতে পাড়ি দেওয়া, অন্যান্য বিজ্ঞানীদের বলা তোমার কাজটা থেকে কোথায় যাওয়া যেতে পারে। সেখানে যদি শব্দসংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়…আর আমি কিন্তু পাতার পর পাতা গড়াচ্ছে, সেইটা ছাঁটার কথা বলছি না।
মার্টিন: হয়তো একটা অতিরিক্ত অনুচ্ছেদ —
শন: একটা অতিরিক্ত অনুচ্ছেদ।
মার্টিন: ওই একটা অনুচ্ছেদ ছাপলে কি ওদের প্রাণ বেরিয়ে যেত —
শন: (হেসে) একদম। আর ওই নিয়ে ধস্তাধস্তি চলছে। অত্যন্ত হাস্যকর ব্যাপার!
যখন আমি সাধারণ মানুষের জন্য লিখলাম, আমার প্রথম বইটা, ‘Endless Forms Most Beautiful’, সেটাতে কী মুক্তির স্বাদ যে পেলাম তোমাকে কী বলবো। আমি আস্তে আস্তে একটা গল্পের খোসা ছাড়াতে পারছিলাম, একটা বক্তব্যকে ধীরে ধীরে ফোটাতে পারছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি, ঐটাই হয়তো আমাকে টিকিয়ে রাখলো এই লাইনে। যদি গবেষণাপত্রই নিজেকে প্রকাশ করার একমাত্র উপায় হতো, তাহলে এতদিনে হয়তো খিটখিটে ব্যাজারমুখো বিজ্ঞানী হয়ে যেতাম।
মার্টিন: এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর। তুমি গবেষক হিসেবে একটা গবেষণা বা রিসার্চ পেপারের পেছনে দীর্ঘ পরিশ্রম করেছো। তোমার একটা ধারণা রয়েছে তোমার কাজের কী তাৎপর্য থাকতে পারে। হয়তো সেই ধারণার স্বপক্ষে প্রমাণ তোমার হাতে নেই। কিন্তু তোমার সেই ভাবনাগুলোই অন্য লোকের কাছে খুব মূল্যবান হতে পারে। সেগুলোকে বাদ দিয়ে দেওয়া, এটার ফলে বিজ্ঞানের যে ক্ষতিটা হচ্ছে, বলার নয়।
শন: হচ্ছে তো! আমি বুঝি না এটা কেন করা হয়। বিশেষ করে ভবিষ্যতের আভাস দেওয়ার ব্যাপারটা…তুমি কী ভাবছো, সেটা সবাইকে বলা তো খুব স্বাস্থ্যকর ব্যাপার। ভবিষ্যতের একটা ঝলক দিচ্ছো মাত্র। এতে ক্ষতি কী?
ইটাই: আচ্ছা, এতক্ষণ আমরা গবেষণাপত্রের পাণ্ডুলিপি লেখার ক্ষেত্রে গল্প বলা নিয়ে বললাম। কিন্তু আমায় বলো, আবিষ্কারের প্রক্রিয়াতেও কি গল্প বলাটা জড়িয়ে থাকে? নাকি পরীক্ষার শেষে শুধু ফলাফল বা রেজাল্ট জানানোর জন্য গল্পের প্রয়োজন পড়ে?
শন: মনে হয় একটা আখ্যান তৈরির চেষ্টা থাকে। তুমি প্রশ্ন করছো, বাস্তবটা কি এইরকম? তারপর উত্তরে নানা সম্ভাবনা তৈরি করছো। আশা করা যায় তোমার পরীক্ষানিরীক্ষাগুলো সেই সম্ভাবনার রাজ্যটাকে আরো ছোট করবে। তুমি আস্তে আস্তে কয়েকটা বিন্দুর মধ্যে রেখা টেনে একটা ছবি ফুটিয়ে তুলবে। আর এই বিন্দুগুলোকে জুড়ছো যখন, সেখান থেকেই তো গল্প তৈরি হচ্ছে!
ধরো ল্যাবের মধ্যে বলাবলি করছো, মার্টিন একটা ভালো কাজ করেছে। তখন কিন্তু মনে মনে ভাবছো, এই কাজটা থেকে একটা ভালো গল্প দাঁড়াবে!
মার্টিন: বা এইরকম বলেই থাকি আমরা, গল্পটা এখনো ঠিক দাঁড়াচ্ছে না —
শন: একদম ঠিক। আমার তো মনে হয়, আমরা সবাই একেকটা গল্প খাড়া করছি। এটা কিন্তু খারাপ অর্থে বলছি না। আমরা সবাই তো চেষ্টা করছি এই জগতের মর্মোদ্ধার করতে। প্রকৃতির ভিতর উঁকি দিয়ে দেখতে চাইছি, সে কীভাবে কাজ করছে। যদি দেখাটা তেমন তেমন হয় আর তুমি তোমার ব্যাখ্যাগুলোকে যাচাই করতে পারো, তখন তুমি বলে উঠবে — আচ্ছা, আমি বুঝেছি! প্রকৃতি এইভাবে কাজ করে।
এটা তো গল্প বলাই হচ্ছে। আমার মনে হয়, বিজ্ঞানীরা যেটা বলেন, সেটা একটা গল্প তৈরি করা। যেটা করেন, সেটাও একটা গল্প তৈরি করা। সেই কাজটাকে যখন একটা লেকচারে বা কারোর কাছে পেশ করছি, আমি অনিবার্যভাবে লক্ষ্য করি যে একটা গল্প বলছি।
মার্টিন: তার মানে তুমি বলতে চাইছো যে আমাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বেশিরভাগ সময় আমরা কয়েকটা বিন্দুর মধ্যে রেখা টানছি। এবং সেটাই একটা গল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। আচ্ছা, তোমার কাছে এই গল্প নির্মাণ করার কোনো কৌশল রয়েছে কি?
শন: কৌশল? ভাবছি।
মার্টিন: অভ্যেস বলতে পারো। এমন জিনিস যেটা তুমি বারেবারে করে থাকো সঠিক গল্পটাকে খুঁজে পেতে…
শন: একটা কৌশল আছে। এটা আমার খুব কাজে লেগেছে এবং হয়তো এইদিক দিয়ে আমি অন্যদের থেকে একটু আলাদা। কৌশলটা হলো, পড়া, পড়া আর পড়া। গোগ্রাসে পড়া। যতটা সম্ভব বিস্তৃতভাবে পড়া।
আমি একটা অদ্ভুত জিনিস বলবো, দেখি তোমাদের কী মনে হয়।
মার্টিন: নিঃসন্দেহে বলো।
শন: আমার রক’ন রোল নিয়ে ডকুমেন্টারি দেখতে খুব ভালো লাগে। ওই জগতে আমার বেশ কিছু হিরো রয়েছে। তুমি এই ধরনের মিউজিকের স্বর্ণযুগের কথা ভেবে দেখো। বিটলসের কথাই ভাবো। কত রকমের গান তারা শুনেছে; পপ মিউজিক, রক, লোকসংগীত। এই সব গানের প্রভাব অবচেতনে তাদের গানে ফুটে ওঠেনি, সেকথা কে বলতে পারে।
আমার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলতে গেলে আমি এই তুলনাটাই আনি। আমি প্রচুর পড়েছি, বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণার কথা গোগ্রাসে গিলেছি। আমার মনে হয়, এটার একটা ছাপ পড়েছে আমি কীভাবে ভাবি বা কীভাবে ব্যাখ্যা করি, তার উপর। অতএব প্রভাবটা ঠিক প্রত্যক্ষ নয়। এরকম নয় যে কিছু একটা পড়লাম আর তার ভিত্তিতে ল্যাবের জন্য নতুন পরিকল্পনা বানিয়ে ফেললাম। কিন্তু যেকথা বললাম — এতরকম পড়েছি যে আমার চিন্তার ধরনটাতে তার প্রভাব পড়েছে। সেই প্রভাবটা ল্যাবের জন্য পরিকল্পনাতেও নিশ্চয়ই ফুটে উঠেছে।
আমাদের বৈজ্ঞানিকদের বোধহয় এটাই করা উচিত — মগজে সার দিয়ে যাও। এরকম হয় না যে আজকে চারা পুতলে, কালকে গাছ বেরিয়ে গেল। ওরকম কোনো সহজ সরল রেসিপি নেই।
ইতাই: এই প্রসঙ্গে আমার ফ্রাঁসোয়া জেকবের (Francois Jacob) কথা মনে হল। উনি সকালের বিজ্ঞান আর রাতের বিজ্ঞানের মধ্যে একটা পার্থক্য করছিলেন। দিনের বিজ্ঞান হল যে বিজ্ঞানটা জার্নালে প্রকাশ করা হয়। আর রাতের বিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানটাকে দাঁড় করানোর সেই বিশৃঙ্খল প্রক্রিয়াটা, যেখানে তুমি জানো না কী হতে চলেছে। ওনার এই কথাগুলো নিয়ে তোমার কী মনে হয়, যদি বলো।
শন: একদম ঠিক কথা। আমি কিন্তু জেকবের একজন বড় ভক্ত। কয়েকবার দেখা হওয়ারও সুযোগ ঘটেছিল।
জেকবের বেশ কয়েকটি ধারণা ছিল যেগুলো টিকে গেছে। অবশ্যই রাতের বিজ্ঞান এরকম একটা ধারণা। বিবর্তন যে একটা পূর্বনির্দিষ্ট পথে চলে না, এটাসেটা ঘেঁটে দেখে কেমন হচ্ছে (evolutionary tinkering), এই ধারণাটাও ওনারই দেওয়া।
রাতের বিজ্ঞান নিয়ে বলতে গিয়ে ওঁর বইতে যে ইউরেকা মুহূর্তটার কথা উনি বলেছিলেন, সেটা একটা সাধারণ রবিবারের গল্প। কোনো একটা জিনিস নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন যেটা জমছিল না। সেটা ছেড়ে স্ত্রীর সাথে সিনেমা দেখতে গেলেন। সেখানে বসে আছেন, সিনেমাটাও তেমন পদের নয়, হঠাৎ তার মাথায় একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। তিনি বুঝলেন যে এদ্দিন যা নিয়ে ভাবছিলেন, অর্থাৎ ল্যাম্বডা প্রোফেজের ইনডাকশান (induction of lambda prophage), সেটা একদম ল্যাকটোজ মেটাবলিজিমের অভাবে ঘটিত বিটা-গ্যালাক্টোসিডেস সিন্থেসিসের ইন্ডাকশানের (Beta-galactosidase synthesis induction) মতো কাজ করছে। এটা দারুণ ব্যাপার যে এই গল্পটা উনি আমাদের বলেছেন। আর অবশ্যই এই ঘটনাটার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য তোমাকে বলে দিতে হবে না। আণবিক জীববিদ্যার (molecular biology) জগতে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
ইতাই: হ্যাঁ, যেটা জেকব এবং মোনো (Jacob and Monod) এরপর করলেন, সেটা মূলত ওই দুটো ঘটনার যোগসূত্রকে আরো খতিয়ে দেখা। যদি বিটা-গ্যালাক্টোসিডেস তৈরি আর লাইসোজেনি-র (lysogeny) মধ্যে এরকম একটা যোগসূত্র থাকে, তাহলে এই যোগসূত্রর মধ্যে আর কী পাওয়া যেতে পারে? এবং এর থেকেই ওদের পরের গবেষণাগুলো হলো। কিন্তু শুরুর যোগসূত্রটা তৈরি করতে ওদের ঘটনাগুলোকে একটু অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে পারতে হয়েছিল। সেটা হয়তো সম্ভব হয়েছিল, তোমার কথামতো, বাগানটাতে নিয়মিত সার দেওয়া হয়েছিল বলে।
শন: অসাধারণ। আমরা এটা নিয়ে আরেকটু আলোচনা করতে পারি। 1958 থেকে 1960-এর মধ্যের সময়টাকে দেখো। জেকব এবং মোনো ঐসময়টায় তাদের এক্সপেরিমেন্ট-এর ফলাফলগুলো বার করছিলেন। মূল ফরাসী গবেষণাপত্রগুলো পড়ে দেখো। ইংরেজিতে ওনাদের একটা বিখ্যাত পেপার আছে জার্নাল অফ মলিকুলার বায়োলজিতে (Journal of Molecular Biology), কিন্তু সেটাতে আসল গল্প পাবে না। কয়েক মাস পর পর ওনাদের কাজগুলো বেরোচ্ছিল। Comptes Rendus নামের জার্নালে পাবে সেসব।
পেপারগুলোতে দেখবে কিছু এক্সপেরিমেন্ট-এর কথা কিন্তু যদি আলোচনা অংশটা পড়ো, দেখবে ওনারা পরের ধাপগুলো তখন থেকেই ভাবছেন। যাকে পরে ল্যাক অপেরন (lac operon) নাম দেওয়া হয়েছিল, তার ছবিটা আস্তে আস্তে ফুটে উঠছিল সেখানে। অপারেটর (operator gene), রিপ্রেসোর (repressor), কীভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় (logic of regulation), সেগুলো সব এক এক করে আসছিল। পড়তে পড়তে লোম খাড়া হয়ে যাবে। এক্ষুনি যে বিন্দু জোড়ার কথা বললাম, সেসব দেখতে পাবে। একের পর এক জুড়ছিলেন তারা। শেষে এলো মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA)।
রাতের বিজ্ঞানের কথায় যদি ফিরে যাই, জেকব কি দিবাস্বপ্ন দেখছিলেন থিয়েটারে বসে যেটা থেকে এই বিদ্যুৎ ঝলকানিটা হলো? ধরা যাক, ওই মুহূর্তটাই ছিল ওঁর সৃষ্টির মুহূর্ত যেখানে হঠাৎ ওঁর চোখ খুলে গেছিল। কিন্তু এই ধরনের মুহূর্ত তৈরি করবে কীভাবে? এরকম মুহূর্তের জন্য কাউকে প্রশিক্ষণ দেবে কীভাবে? বা কীভাবে এরকম মুহূর্ত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাটাকে বাড়াবে?
ইতাই: (হেসে) তোমার ছাত্রদের বোরিং সিনেমা দেখতে পাঠিয়ে দাও —
শন: হ্যাঁ, টিকটক (Tiktok) থেকে দূরে সরাও।
মার্টিন: হা হা হা, ঠিক ঠিক। আচ্ছা পেশাগত জীবনে তো তুমি বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করেছো। তুমি প্রথমে একজন বিজ্ঞানী ছিলে। বিজ্ঞানে সৃজনশীলতার প্রয়োজন। আবার তুমি একজন চলচ্চিত্র প্রযোজকও, সেখানেও সৃজনশীলতার প্রয়োজন। এই সৃজনশীলতাগুলো কি আলাদা? নাকি তুমি মনে করো এগুলো এক? এই দুটি মাধ্যমের মধ্যে কি কোনো ধারণা বা কৌশল বিনিময় করা সম্ভব?
শন: গল্প বলায় ফেরত যাওয়া যাক। আমি যে তিনটি মাধ্যমে কাজ করেছি, বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র, সাধারণ পাঠকদের জন্য বাজারে জনপ্রিয় বই, এবং চলচ্চিত্র — এই তিনটি ক্ষেত্রেই গল্প বলার বিষয়টি আসে। বিশেষত শেষ দুটি মাধ্যমের ক্ষেত্রে আমি বলবো — অনুভূতি বা আবেগের জায়গাটিকে ধরো।
আমি মনে করি এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আলফ্রেড ওয়ালেসের কথাই ধরো। একজন প্রকৃতিবিদ, যার পকেটে কোনো পয়সা নেই, চার বছর ধরে অ্যামাজনে রইলেন। তিনি ফিরে এলেন বাধ্য হয়ে যখন দেখলেন ম্যালেরিয়া, পীতজ্বর, বা দুটোতেই মরে যেতে পারেন। ফেরার জন্য একটা নৌকায় চড়লেন, বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন ভেবে মনে খুব ফুর্তি। সেই নৌকায় আগুন ধরলো এবং সেটা ডুবে গেল। তারপর খোলা লাইফবোটে তিনি দশ দিন কাটালেন। যদি এই গল্প দিয়ে তুমি শ্রোতাদের মনোযোগ ধরে রাখতে না পারো, তবে আর কিছুতেই পারবে না।
তাই আমি গল্প বলার সময় এই রকম জীবনের মুহূর্তগুলো খুঁজি — যেখানে আবেগ এবং নাটকীয়তা বেশি। ধরো, আমি ওয়ালেসের গল্পটা বলতে চাই। হ্যাঁ, আমি জানি ওঁর হঠাৎ উপলব্ধির কথা, যে অবস্থার মধ্যে উনি ছিলেন, এবং যে কঠিন পথ দিয়ে উনি এই উপলব্ধিতে এসেছিলন। কিন্তু আমাকে এর বাইরেও প্রশ্ন করতে হয়। কেন তিনি অ্যামাজনে গিয়েছিলেন? কেন ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? তার নৌকায় কী ঘটেছিল?
এবং দেখো, নৌকাডুবির পর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে এলেন এবং সেরে উঠলেন। এরপর তিনি আবার বেরিয়ে পড়লেন এবং মালয় দ্বীপপুঞ্জে আট বছর কাটালেন। আট বছর! ভাবো, কী ধরনের মানসিক শক্তি ছিল ওয়ালেসের! এমন মানুষের জীবন নিয়েই আমাদের গল্প বলা দরকার। একজন গল্পকার হিসেবে আমি এই নাটকীয় মুহূর্তগুলোই খুঁজি। আমি খুঁজি সেই মুহূর্তগুলো যা ওয়ালেসকে ওয়ালেস বানিয়েছে — অবশ্যই তার মধ্যে তার ইউরেকা মুহূর্ত, আবিষ্কারের আনন্দ, এবং সেই আবিষ্কারের তাৎপর্যও রয়েছে।
জানি না আমার কথাগুলোর মধ্যে তুমি গল্প বলার কোনো স্ট্র্যাটেজি খুঁজে পেলে কিনা। যখন আমি একটি নতুন গল্প শুরু করি, প্রথমে খুব গভীরভাবে পড়ি। প্রতিটি উৎস থেকে পড়ি। ডায়েরি, পুরোনো পুঁথি কিংবা চিঠিপত্র পেলে তো কথাই নেই। ওর মধ্যে আমি খুঁজি গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো, নাটকীয় মুহূর্তগুলো এবং সংশয়ের সময়গুলো যখন সবকিছু অন্যদিকে যেতে পারতো। সেগুলোই গল্পের ওঠানামা তৈরি করে।
ইতাই: আমার মনে হয় এটা একটা অসাধারণ ব্যাপার যে কিছু বৈজ্ঞানিক যেখানে নিজের ইউরেকা মুহূর্ত খুঁজতে মগ্ন, তুমি কোথা থেকে অন্য লোকের সেই মুহূর্তগুলোকে বোঝার মতো সহানুভূতি খুঁজে পাও। এটাই তোমার গোপন রহস্য হতে পারে। তুমি একটা আবিষ্কারের কথা এমনভাবে বলতে পারো যে শ্রোতার মনে হয় সেটা যেন তাদেরই আবিষ্কার।
শন: মনে হয় ঠিকই বলছো। নিজের প্রসংশা বলে বলছি না, আমার মনে হয় গল্প বলার পদ্ধতিটা এইরকম হওয়া উচিত।
আমি একটা বই লিখেছিলাম, যার নাম Remarkable Creatures। সেখানেই আমি ওয়ালেসের গল্পটা প্রথম বলেছিলাম। তারপর Brave Genius বলে একটা বই লিখেছিলাম, যেটা Monod আর Camus কে নিয়ে। এই বইগুলো লিখতে গিয়ে এই চরিত্রগুলোর সাথে আমাকে অনেকটা সময় কাটাতে হয়েছিল। তাদের জীবনে কী ঘটেছিল বা কিসে তারা অনুপ্রেরণা পেতেন, এইসব জেনেছিলাম। এইগুলো জানতে পেরে আমি নিজেই ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আশা করি, আমার গল্পেও সেই অনুপ্রেরণার ছোঁয়া পাওয়া যাবে।
আমি আদৌ এই গল্পগুলো বলি কেন? একদম সত্যি কথা বললে, যে দুটো জিনিসের সবথেকে বেশি প্রয়োজন বিজ্ঞানের জগতে এবং সহজে মেলে না, তা হলো — অনুপ্রেরণা এবং আশা। আমি সেইসব গল্পের প্রতিই আকৃষ্ট হই যেগুলো অনুপ্রেরণা জাগায়, যেগুলো আমাকে আশার আলো দেখায়। অন্ধকারের গল্প বলাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আলোর গল্পগুলো বলা জরুরি।
মার্টিন: আজ তোমার সাথে যা কথা হল আমার মনে হয় শ্রোতারা তা থেকে শুধু উদ্বুদ্ধই হবেন না, উপকৃতও হবেন।
শন: এই যে এত কথা বললাম, এবার সারা সপ্তাহ ভাববো এই নিয়ে।
মার্টিন: শুধু তুমি নও আমরা সবাই ভাবতে বাধ্য হবো। আর এটাই এই পডকাস্টের উদ্দেশ্য। মানুষকে নতুনভাবে ভাবতে, চিন্তা করতে, কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করা। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে শন।
শন: আমি মনে করি, পডকাস্টে তোমাদের করা সাক্ষাৎকারের সংগ্রহ, তোমাদের লেখা প্রবন্ধগুলো, এই সময়ে একটি আলোর উৎস। আমি আশা করি, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম থেকে, যারা সমস্ত অনিশ্চয়তা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তারা এর থেকে প্রেরণা পাবে।
এটা দুই-অংশে প্রকাশিত ইন্টারভিউ-এর দ্বিতীয় এবং শেষ অংশ। ইন্টারভিউটা পডকাস্ট স্রষ্টাদের অনুমতি সহ অনুবাদ করা হয়েছে। মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন অপাবৃতা চক্রবর্তী এবং অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়।