রাজীবুল (বিজ্ঞান): বাসুদা, তুমি একটা চমৎকার বিষয় নিয়ে গবেষণা করছো। তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে স্পষ্ট যে এটা তোমার একটা খুব প্রিয় বিষয়, এ নিয়ে তোমার খুব আগ্রহ রয়েছে, তুমি এটা করতে আনন্দ পাও। এসব গবেষণার অন্যতম একটা অনুপ্রেরণা। গবেষণার ক্ষেত্রে তোমার এই সফর নিয়ে তুমি একটু বলো।
আচ্ছা। পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়বো এটা মোটেও ঠিক ছিল না। প্রায় ঘটনাক্রমেই আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা পড়ার সুযোগ পাই। এখানেই অস্নাতকস্তরে (Undergraduate) পদার্থবিদ্যার দারুণ সব প্রফেসরদের পেয়েছি আমরা। এরকম ভালো অধ্যাপকদের কাছে পেয়েই আমি পদার্থবিদ্যা নিয়ে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ি। এসব নিয়ে আমাকে আরো বেশি পড়তে হবে, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়। মনে হয়, অন্তত পিএইচডিটা-তো করি তারপরে দেখা যাবে।
আর এখন যাদবপুর ছাড়ার প্রায় কুড়ি বছর পর যখন ভেবে দেখি তখন মনে হয় যে শুধুমাত্র এটাই নয়, তাছাড়াও এর আগে অনেক কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলো শুধু পদার্থবিদ্যা নয় সার্বিকভাবে বিজ্ঞানের প্রতি আমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আমি কলকাতায় বড় হয়েছি। বিড়লা সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি মিউজিয়ামে আমার মা আমাকে মাঝেমধ্যেই ছেড়ে দিয়ে যেত, আর আমি সেখানে সারাদিন কাটাতাম। সেই মুহূর্তগুলো আমার কাছে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। আমার এখনো মনে আছে ওই মিউজিয়ামটাতে একটা পেন্ডুলাম ছিল। ওটাতে বালি ভরতে হত এবং দুলিয়ে দিলে প্রত্যেকবার একটা জ্যামিতিক কারুকার্য তৈরি হয়ে যেত। এটা পরবর্তীকালে যাদবপুরে তুমি আমি দু-জনেই লিসাজুস প্যাটার্ন (Lissajous pattern) হিসেবে শিখেছি।
একটা মজার ব্যাপার বলি। পিএইচডি করার সময় আমি সুপারনোভায় নিউট্রিনো নিয়ে কাজ করতাম। সুপারনোভায় সম্মিলিত দোলন (collective oscillation) এই ঘটনাটা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি বুঝলাম যে সেটা আর লিসাজুস পেন্ডুলাম একই ব্যাপার। এই বোঝা থেকেই এবিষয়ে আমার প্রথম গবেষণাপত্র বেরিয়েছিল।
এভাবেই ছোটবেলার আপাতদৃষ্টিতে খুবই অপ্রাসঙ্গিক জিনিস বড় হয়ে পদার্থবিদ্যা কিংবা আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে গবেষণার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অংশে কোনও ভাবে কাজে লেগে গেছে।
বিড়লা মিউজিয়াম কিন্তু আমারও একটা অনুপ্রেরণার জায়গা। ছোটবেলায় বাবা নিয়ে গেছিলেন ওই মিউজিয়ামে। আমার মনে পড়ে ওই সময় সেখানে একটা রোবট ছিল, খগেনবাবু নামের। এ ধরনের জিনিস ছোটবেলায় দেখে বিজ্ঞানের প্রতি একটা উৎসাহ তৈরি হয়ে গেছিলো। পরবর্তীকালে হয়তো এই ছোট ছোট উৎসাহগুলোই কোনোভাবে আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকে।
আচ্ছা এবার পরের প্রশ্নে যাওয়া যাক। তুমি এখনো পর্যন্ত যাদবপুরের কথা বললে। তারপরে TIFR-এ পিএইচডি করেছো। TIFR ভারতবর্ষের অন্যতম একটি গবেষণা কেন্দ্র। সেখানে তোমার অভিজ্ঞতা কেমন?
যাদবপুরে স্নাতক হওয়ার পর আমার ইচ্ছে ছিল যে আমি পিএইচডি করবো। তাই আমি বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিলাম, যেমন IISC,TIFR, IIT কানপুর, ইত্যাদি। TIFR -এ সুযোগ পাওয়ার পর ওদের একটা সাক্ষাৎকার হয়। সেই অভিজ্ঞতাটা বেশ মজাদার। আমার মনে আছে আমি খুব ভয়ে ভয়ে গেছিলাম এই সাক্ষাৎকারটা দিতে, কারণ শুনেছিলাম এটা নাকি খুব কঠিন হয়। কিন্তু এখানকার অধ্যাপকেরা খুবই ভালো ছিলেন এবং সাক্ষাৎকারটাও খুবই ভালো লেগেছিল আমার।
সাক্ষাৎকার দিতে এসেই আমি প্রথমবার TIFR দেখি। সমুদ্রের ধারে অসাধারণ সুন্দর জায়গা। একবার এসেই আমার জায়গাটা খুব ভালো লেগে গেছিল। এখানে সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
পরে ক্যাম্পাসে এসে বুঝতে পারলাম এখান থেকে পিএইচডি করা কতটা জটিল। এখানকার প্রথম বছরের পাঠক্রম খুবই জটিল হতো তখন। আমি যেহেতু শুধু BSc করে এসেছিলাম, আমার কাছে খুব কঠিন লেগেছিল সেসব।
কিন্তু সেসময় আমার বন্ধু-বান্ধবরা খুব সাহায্য করে এবং অনেক সিনিয়ররাও সাথে ছিল। যতটা আমি ক্লাসে শিখেছি, ঠিক ততটাই আমি ক্লাসের বাইরে বন্ধু-বান্ধবদের থেকে, অনেক সময় জুনিয়রদের থেকেও শিখেছি। বিভিন্ন ধরনের সেমিনার ও আলোচনার মাধ্যমে বয়সে ছোটদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। আসলে এটা এমন সুন্দর একটা পরিবেশ ছিল যেখানে সবাই সবার থেকে শিখতে পারে। এভাবেই দেখতে দেখতে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেল। পড়াশোনা করছি মনেই হতো না। শেষদিকে তো এরকমই লাগতো যে সারাক্ষণ মজা করছি, আলোচনা করছি, ঠিক যেমন তুমি আমি কথা বলছি এখন।
এই যে আলোচনার কথা বললে, আমার মনে হয় এ ধরনের পরিবেশ শুধুমাত্র TIFR-এই নয়, স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র, সমস্ত ভালো শিক্ষাক্ষেত্রেই এটা হওয়া উচিত। পড়াশোনা শুধুমাত্র যখন মাস্টারমশাই এসে পড়িয়ে গেলেন, তখন হবে, ব্যাপারটা তা নয়। আমরা সবার সাথেই কথা বললে কিছু না কিছু শিখতে পারি। ক্যান্টিনে খেতে বসে যখন কিছু আলোচনা হয় বা ক্লাসের মাঝে ফাঁকা সময় কথা হয়, আমরা সেখান থেকেও কিছু না কিছু শিখি।
তুমি এর পরের ঘটনা বলো। TIFR-এ যখন এলে, তখন তুমি অধ্যাপক অমল দীঘে-র সাথে কাজ করেছিলে।
হ্যাঁ, তখন অধ্যাপক অমল দীঘে সদ্য সদ্য এসেছেন এবং আমি ওনার প্রথম পিএইচডি ছাত্র ছিলাম। ওনার সাথে সুপারনোভার নিউট্রিনো ইত্যাদি নিয়ে কাজ করি।
তারপর 2008-এর শেষের দিকে আমি TIFR ছেড়ে জার্মানিতে ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ফিজিক্স, মিউনিখে যাই পোস্টডক হিসেবে। ওখানে আমি আগেও দু-এক বার গেছি। ওখানকার একজন অধ্যাপক, গেওর্গ রাফেল্ট-এর সাথে পিএইচডি করার সময় আমি একসাথে কাজ করতাম। সেইসূত্রে ওই সময়ও প্রায় 5-6 বার ওখানে গিয়েছি। পরবর্তীকালে তিনি আমাকে পোস্টডক হিসেবে নেন।
আমি প্রায় এক বছর মিউনিখে কাটাই। এই জায়গাটা বেশ নামকরা একটা জায়গা। এখানে গিয়ে আমার বেশ ভালো লেগেছিল কারণ এটা কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর সূত্রে খ্যাত ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের প্রতিষ্ঠিত একটা সংস্থা। আর জায়গাটাও খুব সুন্দর ছিল।
এরপর আমি চলে আসি আমেরিকার ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। জন বিকম বলে একজন অধ্যাপকের সাথে কাজ করি। উনি উপদেষ্টা হিসেবে খুবই ভালো ছিলেন।
তারপর আমি চলে যাই ইটালিতে। সেখানে আমি আলেক্সেই স্মিরনভ-এর সাথে কাজ করি। উনি নিউট্রিনো পদার্থবিদ্যায় খুবই নামকরা একজন ব্যক্তি। MSW effect বলে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আবিষ্কৃত হয়েছিল, সেখানে S-টা হচ্ছে স্মিরনভ-এর নামের আদ্যক্ষর। তার সাথে আমি পোস্টডক্টরাল গবেষণা করি।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখি এই যে তিনটে পোস্টডক করেছি, তার পেছনে একটা পরিকল্পনা রয়েছে। পিএইচডি-র পর থেকেই আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে নিউট্রিনো ছাড়া অন্য কোনো একটি বিষয় নিয়ে কাজ করবো। তাই ডার্ক ম্যাটার নিয়ে কাজ করতে শুরু করি। প্রত্যেকটা পোস্টডক-ই আমি ডার্ক ম্যাটার নিয়ে কাজ করবো বলেই করেছিলাম এবং ওহায়ওতে যাওয়ার আমার মূল কারণই ছিল ডার্ক ম্যাটার।
আচ্ছা আমাদের পাঠকদের মধ্যে অনেকে হয়তো PhD করছে। তাদেরকে কি তুমি এটা বলবে যে PhD থেকে Postdoc-এ যাওয়ার সময় নিজের গবেষণাক্ষেত্রটা একটু বদলে নেওয়া উচিত? কারণ ব্যাপারটা তাদের জন্যে চ্যালেঞ্জও হয়ে যেতে পারে। তারা যাতে স্বচ্ছন্দ তার বাইরে যেতে হচ্ছে, নয় কি?
আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে যে প্রত্যেক 5-6 বছর পর পর নিজের কাজের পরিধিটা একটু করে পাল্টানো উচিত।
এটা যে একেবারে আমার নিজের চিন্তাভাবনা তা ঠিক নয়। আমি এ সম্পর্কে শিখি আমার গবেষণা জীবনের একেবারে প্রথম দিকে। একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম রিচার্ড হ্যামিং-এর: You and your research। হ্যামিং খুব নামকরা ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানী। Hamming error correction code, Hamming distance, এরকম বেশ কয়েকটা বড় বড় অবদান ওনার রয়েছে। ওনার বক্তব্যগুলোর মধ্যে একটা ছিল যে কেউ যদি একই গবেষণাক্ষেত্রে 5-6 বছরের বেশি কাজ করে তাহলে তার কার্যক্ষমতা একটু কমে যায়।
এর পেছনে যুক্তি হলো, আমরা সবাই তো একটু নিজের মতো করে ভাবি। কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাধানপদ্ধতিও একটু আলাদা। যে কোনো গবেষণাক্ষেত্রেই কিছু সমস্যা থাকে যেগুলো একটা ধরনের ভাবনাচিন্তার জন্য আদর্শ। অর্থাৎ ওইভাবে ভাবলে ওই সমস্যাটা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুদূর পর হয়তো সেগুলো আর কাজ করবে না। সেসময় আশেপাশের কোনো শাখায় গিয়ে যদি ওই একই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়, হয়তো সেখানকার বেশ কিছু সমস্যা আবার সহজে সমাধান করা যাবে। হ্যামিং একথা ভেবেই বলেছিলেন যে 5-6 বছর অন্তর গবেষণার ক্ষেত্র একটু পাল্টানো উচিত।
এটা আমিও খুব জোরালোভাবে বিশ্বাস করি। তবে তুমি যেটা বললে, সেটাও ঠিক। এতে একটা ঝুঁকি রয়েছে। গবেষণাক্ষেত্র বদল করতে গেলে মাঝখানের সময়টায় একটা অনিশ্চয়তা থাকে। কারণ একটা জিনিসে আমি পারদর্শী হয়ে গেছি, এখন নতুন করে কিছু শিখতে হবে। সেই শেখার জন্য যদি সময়টা ব্যয় করি, তখন আর আগের জিনিসে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দিতে পারবো না। এই সময়ের হিসেবটা হয়তো একটু করতে হয়, করে নতুন জিনিসটা শিখতে হয়।
কিন্তু নতুন জিনিসটা শিখে গেলে তখন আবার প্রথম জিনিসটাতেও কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে যেতে পারে। এরকম অদ্ভুত কিছু সমন্বয়ও ঘটতে দেখা গেছে।
দু-দিক ভেবেই হয়তো এগোনো যায়। আমি নতুন যে শাখায় যাচ্ছি, সেটা আগের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা নাও হতে পারে যাতে একদম শূন্য থেকে শুরু না করতে হয়। নতুন শাখাটা একটু আলাদা হতে পারে, যাতে একটু অন্য ধরনের পদ্ধতি, একটু অন্য চিন্তাধারা শেখা যায়।
আমি নিজেও তাই করেছিলাম। পিএইচডি করি আধানিত কণার পদার্থবিদ্যা (ion trapping physics) নিয়ে। তারপর যখন Postdoc-এ যাই, আমি কাজ করলাম আধানহীন কণার ওপর। সার্বিকভাবে ভাবলে এই দুটো হয়তো একই ধরনের গবেষণাক্ষেত্র কিন্তু এদের মূল চিন্তাভাবনাগুলো এবং গবেষণার পন্থাগুলো আলাদা। পরবর্তীকালে আমি যখন আবার পুরোনো গবেষণাক্ষেত্রে ফিরে এলাম তখন আধানহীন কণা নিয়ন্ত্রণের যে পদ্ধতিগুলো শিখেছিলাম, সেগুলো আধানযুক্ত কণা নিয়ে গবেষনাতেও আনতে পারলাম, যে পদ্ধতিগুলো এই গবেষণায় অতটাও প্রচলিত নয়।
একেবারে। আমি PhD করেছিলাম নিউট্রিনো নিয়ে এবং Postdoc করেছিলাম ডার্ক ম্যাটার নিয়ে। তারপর যখন TIFR-এ আবার ফিরে আসি তখন আবার নিউট্রিনো এবং ডার্ক ম্যাটার দুটো নিয়েই কাজ করছি। নিউট্রিনোতে ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক ম্যাটারে নিউট্রিনো খুঁজছি। সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এরপর আবার ব্ল্যাক হোল নিয়েও কাজ করছি। প্রত্যেক 6-7 বছরে নতুন নতুন জিনিস শিখছি এবং যেই নতুন কিছু শিখছি, সেগুলো আবার পুরনো জিনিসের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছি। এই পুরো জিনিসটাই একসাথে সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে এবং একঘেয়েমিও লাগে না।
আমরা এজন্যই অনেক সময় ‘চিন্তাধারার পরনিষেক’ (cross-fertilization of ideas) কথাটা ব্যবহার করি।
একেবারেই।
তুমি দেশের অন্যতম সেরা গবেষণাগারের সাথে সাথে বিদেশেও কাজ করেছো। এ থেকে আমার শেষ প্রশ্ন, দু-জায়গায় তোমার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমি তো নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি যে TIFR-এর মতো জায়গায় আমি পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছি এবং পরবর্তীকালে ফিরে এসে আবার চাকরি করারও সুযোগ পেয়েছি। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্য আমি মনে করি যে TIFR পৃথিবীর অন্য সকল উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমানই। আমি এখনো বিশ্বের এরকম কোনো জায়গায় যাইনি যেটাকে গুণগতভাবে TIFR-এর চেয়ে ভালো মনে হয়েছে।
শুধু আমিই নয়, আরো অনেকেও এটাই বলেছে। আমি মনে করি শুধুমাত্র পদার্থবিদ্যার নয় তাত্ত্বিক গবেষণার দিক দিয়ে ভারতের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালো পরিবেশ তৈরি করেছে। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে দেশে থেকে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় ভালো গবেষণা করা যাবে না।
খুব ভালো লাগলো শুনে। তুমি 2022-এ ভারতে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ভাটনগর পুরস্কার পেয়েছিলে। তার আগেও তুমি 2019 সালে ICTP থেকে পুরস্কার পেয়েছিলে। তোমার কাছে এই পুরস্কারগুলো পাওয়ার গুরুত্বটা কী?
যখন আমরা পেপার লিখি বা কোনো গবেষণা করি সেটার একটা উৎসাহ থাকে। এসব হয়ে যাওয়ার পর যখন দেখি যে অন্যেরাও আমাদের কাজের সাথে সহমত হচ্ছে এবং আমরা সবাই শেষ পর্যন্ত একমত হতে পারছি সেটারই একটা অন্য রূপ আমার মনে হয় এই পুরস্কারগুলো। আমার মনে হয় এই পুরস্কারগুলো শুধু আমার নিজের প্রাপ্তি নয়। এগুলো আমার চেয়েও অনেক বড় অর্থাৎ এই গবেষণাক্ষেত্র এবং এই প্রশ্নগুলোর প্রাপ্তি।
“আমার মনে হয় এই পুরস্কারগুলো শুধু আমার জন্যই নয়, এগুলো আমার চেয়েও অনেক বড় অর্থাৎ এই গবেষণাক্ষেত্র এবং এই প্রশ্নগুলোর জন্য।”
এগুলি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির পুরস্কার নয় বরং এই পুরো গবেষণাক্ষেত্রেরই একটা পুরস্কার এটা। আমি একা মোটেও এটা পুরোটা করতে পারতাম না। এটা শুরু হয় আমার ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে, আমি যাদের সাথে মিলে একসাথে কাজ করেছি তাদের দিয়ে এবং আমার যে শিক্ষক শিক্ষিকারা ছিলেন তাদেরকে দিয়ে। এই গবেষণাক্ষেত্রে যারা কাজ করছে, যারা ফলিত বিজ্ঞান চর্চা করছে তারা সবাই মিলে যে নতুন জিনিসটা খুঁজে বের করছে তাকেই সম্মানিত করার জন্য এদের মাঝখান থেকে কোনো একজনকে প্রতিনিধি হিসেবে পুরস্কার দেওয়া হয়। আমি খুবই খুশি যে আমি সেই স্থানটা একাধিকবার অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু এটা একটা বড় দলীয় প্রচেষ্টা।