রাজীবুল (বিজ্ঞান): আচ্ছা তুমি মহাজাগতিক রশ্মি নিয়ে যেটা বলছিলে, সেই নিয়ে একটা কথা আমার মাথায় এলো। মহাজাগতিক রশ্মির সাথে কিন্তু আমাদের বাংলা এবং কলকাতার একটা যোগাযোগ রয়েছে। দেবেন্দ্র মোহন বসু, মানে জগদীশচন্দ্র বসুর ভাগ্নে, এবং সেই সাথে বিভা চৌধুরী দার্জিলিং ও সান্দাকফু-তে মহাজগতিক রশ্মি দেখতে পেয়েছিলেন।
বাসুদেব দাশগুপ্ত: ওনারা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা খোঁজ করেছিলেন। দেখেছিলেন মহাজাগতিক রশ্মিতে (Cosmic Ray) কী কী ধরনের কণা দেখা যায়। মিউয়ন বলে একটা কণা হয় (যেটা অনেকটা ইলেকট্রনের মতোই কিন্তু ইলেকট্রনের চেয়ে ভর 280 গুণ বেশি, আর কোন তফাৎ নেই), সেটা ওনারা প্রায় আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। পারেননি, কারণ তথ্যাবলি (Data) অতটা নিখুঁত ছিল না। আর একটু পরিষ্কার তথ্য থাকলেই ওঁরা খুঁজে ফেলতে পারতেন।
এই ব্যর্থতার পেছনে একটা মজার গল্প আছে। এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলোতে ফটোগ্রাফিক প্লেট ব্যবহার করা হতো। তখনকার দিনে দু-দিকে আবরণযুক্ত ফটোগ্রাফিক প্লেট ভারতে পাওয়া যেত না [1]। ওটা শুধু ব্রিটিশদের কাছে ছিল, ফলতো পরবর্তীকালে এই আবিষ্কারটা সেসিল পাওয়েল নামে গ্রেট ব্রিটেনের এক বৈজ্ঞানিক করেন।
আচ্ছা, তাহলে কি ওনাদের সময় নিউট্রিনো বা এ সংক্রান্ত কোনো বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার উপায় ছিল না?
না না, এটা তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দিকের সময়, তখন তো নিউট্রিনোর অস্তিত্ব অনুমানও করা হয়নি। 1930 -এ প্রথমবার ওর অস্তিত্ব অনুমান করা হয়।
নিউট্রিনো চুরি!
আচ্ছা, আমি এই অংশটাকে আরেকটা প্রশ্ন দিয়ে শেষ করবো। নিউট্রিনো নিয়ে তুমি বেশ কয়েকটা সুন্দর গল্প বললে। পারমাণবিক চুল্লির গল্প, সৌর নিউট্রিনোর গল্প, সেগুলো থেকে অবশ্যই মানবজাতির জ্ঞান বেড়েছে। কিন্তু তাছাড়াও এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো থেকে আমরা আর কী জানতে পেরেছি? যেটা ধরো আমরা আগে জানতেই পারতাম না যদি না নিউট্রনের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানতাম। সেই গল্প কি একটা দুটো কিছু বলা যায়?
আচ্ছা, প্রথমেই যদি খুব সোজাসাপ্টা উদাহরণ দিই, তাহলে নিউট্রিনোর উৎসে যে পারমাণবিক বিক্রিয়াগুলো হচ্ছে তা সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি। এই ধরনের বিক্রিয়াগুলোতে কতটা শক্তি নির্গমন হচ্ছে সেটা নিউট্রিনোর শক্তি মাপলে জানা যায়। যেমন, সূর্য থেকে যে নিউট্রিনো আসছে তার শক্তি মাপলে আমরা বুঝতে পারছি সূর্যে কী কী ধরনের পারমাণবিক বিক্রিয়া হচ্ছে, বিক্রিয়ার হার কেমন, তার শক্তি নির্গমন কীভাবে হচ্ছে, এসব।
এটাতো একটা প্রাথমিক জিনিস যে, যে কোনো উৎসের ধর্ম নিউট্রিনো দিয়ে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এর থেকেও অনেক বেশি আশ্চর্যজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জানা গেছে এই নিউট্রিনো থেকে। উদাহরণস্বরূপ বলি, যখন সূর্য থেকে প্রথম নিউট্রিনো দেখা যায়, বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করলেন যে সূর্য থেকে নির্গত শক্তির কথা মাথায় রাখলে আরও তিন গুণ বেশি নিউট্রিনো নির্গমন হওয়ার কথা। এটা আমরা শক্তি এবং নিউট্রিনো নির্গমনের সংখ্যার মধ্যে একটা সম্পর্ক থেকে জানতে পারি। কতটা পারমাণবিক বিক্রিয়া হচ্ছে সেটা সূর্যের তাপমাত্রা থেকে গণনা করা যায়। সেই তুলনায় আমরা দেখি বাস্তবে এক তৃতীয়াংশ নিউট্রিনো আসছে।
ঠিক সেই ভাবেই বায়ুমণ্ডলীয় নিউট্রনোর ক্ষেত্রেও সামগ্রিকভাবে কতটা মহাজাগতিক রশ্মি এসে পৌঁছাচ্ছে, তা আমরা জানি। এখানেও দেখা যাচ্ছে যত পরিমাণ নিউট্রিনো পৃথিবীতে এসে পৌঁছাচ্ছে তা প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এই ধরনের অসংগতিগুলোকে সৌর নিউট্রিনো সমস্যা (solar neutrino problem) বা বায়ুমণ্ডলীয় নিউট্রিনো সমস্যা (atmospheric neutrino problem) এই ধরনের নামকরণ করা হয়। 1980-1990-এর দশকে এটা একটা বড় সমস্যা ছিল।
নিউট্রিনো কম পড়েছে, আর সেটাকে আমরা মাপছি!
হ্যাঁ, একদম ঠিক। মানে কোথাও থেকে নিউট্রিনো চুরি হয়ে যাচ্ছে। অন্তত তাই মনে করা হতো।
1998-2000 সাল নাগাদ এই সমস্যাটার সমাধান পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন নিউট্রিনো চুরি হচ্ছে না বা কম পড়ছে না, নিউট্রিনো পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। এটা বুঝতে পারা যায় যে নিউট্রিনো আদতে এক রকমের নয়, বরং তিন রকমের। ইলেকট্রন নিউট্রিনো, মিউয়ন নিউট্রিনো, টাউ নিউট্রিনো।
সাধারণত কোনো কণা তৈরি হলে তেমনই থেকে যায়, যেমন প্রোটন প্রোটনই থাকে, প্রোটন হঠাৎ করে ইলেকট্রন বা নিউট্রন হয়ে যায় না। কিন্তু নিউট্রিনোর ক্ষেত্রে সেটা হয় না। ধরো, ইলেকট্রন নিউট্রিনো তৈরি হলো। সময়ের সাথে সাথে এই ইলেকট্রন নিউট্রিনোটা যত দূরত্ব অতিক্রম করছে সেটা মিউয়ন নিউট্রিনো হয়ে যেতে পারে, তারপর আবার টাউ নিউট্রিনো হয়ে যেতে পারে, আবার হয়তো ইলেকট্রন নিউট্রিনো হয়ে যেতে পারে, এরকম চলতেই থাকে। এই ঘটনাটিকে বলে নিউট্রিনো দোলন (Neutrino Oscillation)। এটা একটা তাত্ত্বিক ধারণা। পন্টেকর্ভো (Bruno Pontecorvo) বলে একজন খুবই সৃজনশীল এবং বুদ্ধিমান গবেষক প্রথম এই ধারণাটি পেশ করেন যে নিউট্রিনো দোলন হতে পারে।
পদার্থবিদ্যায় যখন কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়ানো হয়, আমরা দুই ধাপ বা তিন ধাপ দোলন (two level / three level Oscillation) নিয়ে শিখে থাকি। নিউট্রিনো দোলন এই দুই ধাপ বা তিন ধাপ দোলনেরই একটা উদাহরণ। শুরুতে এক প্রকারের নিউট্রিনো তৈরি হলেও সময়ের সাথে সাথে অন্য প্রকারের নিউট্রিনোতে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
আমাদের শনাক্তকারী যন্ত্রগুলো শুধুমাত্র এক প্রকারেরই, মূলত ইলেকট্রন নিউট্রিনোগুলিকে মাপতে পারে। ফলতো, সূর্য থেকে আমাদের কাছে নিউট্রিনোগুলি আসতে আসতে এক-তৃতীয়াংশ ইলেকট্রন নিউট্রিনো, এক-তৃতীয়াংশ মিউয়ন নিউট্রিনো এবং অপর-তৃতীয়াংশ টাউ নিউট্রিনোতে পরিণত হয়ে যায়। আমরা যেহেতু শুধুমাত্র ইলেকট্রন নিউট্রিনো অংশটিকেই মাপছি, ওই এক-তৃতীয়াংশ নিউট্রিনোই দেখতে পাই।
এখান থেকে তো প্রথমত আমরা একটা নতুন জিনিস শিখলাম যে নিউট্রিনো দোলন বলে একটা ব্যাপার হয়। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস আমরা বুঝতে পারলাম। এই ঘটনাটা কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর একটা পরিণতি, কিন্তু সেটা ঘটছে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব, অর্থাৎ 15 কোটি কিলোমিটার দূরত্ব জুড়ে। প্রথমবার একটা বৃহৎ পাল্লায় এতটা দূরত্বের উপরে একটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রভাব কাজ করতে দেখা গেল। এটা খুবই অবাক করে দেওয়ার মতো একটা উপলব্ধি।
সত্যিই, ঠিকই বলেছো, এটা খুবই অবাক করে দেওয়ার মতো ব্যাপার। এর আগে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কোনো একটা বৃহদাকার বস্তুতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে এরকম উদাহরণ যদি ভাবতে চাই, তবে হিলিয়ামকে তরলীকৃত করলে, সেটা একটা কোয়ান্টাম তরলে পরিণত হয় এই ঘটনাটা বলা যায়। তবে সেটা খুবই ছোট পরিসরের মধ্যে, এক থেকে দুই সেন্টিমিটার এরকম। আর এক্ষেত্রে প্রায় 15 কোটি কিলোমিটারের মধ্যে একটা কোয়ান্টাম মেকানিকাল প্রভাব, দোলন কাজ করছে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিদ্যার্থীরা অঙ্ক কষে কিছু দেখছে এবং সেটা এক আদপেই প্রকৃতিতে কাজ করছে এটা খুবই অবাক করে দেওয়ার মতো বিষয়। তো, আমার পরের প্রশ্ন, নিউট্রিনো নিয়ে তো বোধহয় অনেক নোবেল পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে, না?
হ্যাঁ। প্রথমেই আমার যেটা মনে পড়ছে, কোশিবা, যিনি ওই জাপানের কামিওকাণ্ডে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন, তিনি এবং রে ডেভিস যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান cosmic neutrino আবিষ্কারের জন্য। রে ডেভিস সৌর নিউট্রিনোর জন্য এবং কোশিবা সুপারনোভা নিউট্রিনোর জন্য। তাদের সঙ্গেই পেয়েছিলেন গিয়াকোনি, এক্স রশ্মি জ্যোতির্বিদ্যার (X-Ray Astronomy) জন্য।
তারপরে আবার 2017 সালে, আমার যতদূর মনে পড়ছে, আর্থার ম্যাকডোনাল্ড (কানাডার নিউট্রিনো পর্যবেক্ষণাগার) এবং তাকাকি কাজিতা (কামিওকাণ্ডে) দু-জন বিজ্ঞানী নোবেল পান ‘নিউট্রিনো দোলন’ ঘটনাটা আবিষ্কারের জন্য।
নিউট্রিনো দোলন গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা কারণে। এটা থেকে বলা যায় নিউট্রিনোর ভর আছে। পাওলি যখন নিউট্রিনোর অস্তিত্ব অনুমান করেন তখন তিনি নিশ্চিত ছিলেন না যে এর ভর শূন্য হবে না কম কিছু হবে। তিনি তাই গণনাগুলো প্রায় শূন্য ভর ধরেই করেছিলেন, কিন্তু আমরা নিউট্রিনো দোলন দেখে বলতে পারি নিউট্রিনোর ভর ইলেকট্রনের থেকে 10 লক্ষ গুণ কম হলেও শূন্য নয়।
নতুনভাবে বিশ্বকে দেখা?
আচ্ছা, আমরা জানি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাবিশ্বের ছবি তোলা হয়। মানে সেখানে আলো দিয়ে ছবি তুলি। এটা দৃশ্যমান আলো অথবা বেতার আলো হতে পারে, বা 2015 সালের পর থেকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমেও হতে পারে। তাহলে এখানে একটা প্রশ্ন আমার মাথায় আসছে, এই যে এত কাঁড়ি কাঁড়ি নিউট্রিনো আমাদের পৃথিবী দিয়ে প্রতি মুহূর্তে চলে যায়, যদি তারই কিছু কিছু আমরা ধরতে পারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে, তাহলে কি নিউট্রিনো দিয়ে মহাবিশ্বের ছবি তোলা সম্ভব?
হ্যাঁ, এটা খুবই ভালো এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ প্রশ্ন। কোশিবা এবং রে ডেভিসকে যে নোবেল পুরস্কারটি দেওয়া হয়, তার মূল কারণই হলো এটা নিউট্রিনো জ্যোতির্বিদ্যার শুরু ছিল। প্রথমবার তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ ছাড়াও অন্যভাবে কোনো মহাজাগতিক বস্তুকে দেখা গেছিল।
এই পদ্ধতির একটা সমস্যা হচ্ছে নিউট্রিনোগুলোকে শনাক্ত করা খুবই কঠিন। কারণ এর মিথস্ক্রিয়া করার সম্ভাবনা খুবই কম। বড় বড় শনাক্তকারী যন্ত্র লাগে এদের খুঁজতে। আর সাধারণত উৎসগুলো তো খুব দূরে, তাই তার থেকে আমরা খুবই অল্প নিউট্রিনো পাই।
সূর্য থেকে একটু বেশি পাই কারণ সূর্যটা কাছাকাছি। আর সুপারনোভা খুব বড় উৎস তাই সেটা দেখতে পেয়েছিলাম। যে তারাগুলো খুব দূরে দূরে তার থেকে নিউট্রিনো দেখতে পাওয়া খুবই জটিল। তাহলে আমরা এসব ক্ষেত্রে জ্যোতির্বিদ্যার প্রয়োগ করবো কীভাবে? এটাই বর্তমানকালের নিউট্রিনো পদার্থবিদ্যার একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
আইস কিউব বলে যে শনাক্তকারী যন্ত্রটার কথা বললাম, সেটাকে সামনের প্রায় 5-10 বছরে আরো দশ গুণ বিস্তৃত করার জন্যও প্রচেষ্টা চলছে। ফলতো আমরা আশা করছি আরো বেশি পরিমাণে এই মহাজাগতিক নিউট্রিনো দেখতে পাবো।
এটা নিয়ে আমরা আরো অনেক কথাই বলতে পারি। কারণ নিউট্রিনো জ্যোতির্বিদ্যা ছাড়াও কোন উৎস কে আরো বিভিন্নভাবে দেখা যায়। যেমন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে বা তুমি যেটা বললে; মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে। এই যে কোনো উৎসকে আমরা দেখছি, সেটা একসাথে বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এগুলোকে একত্রিত করে মাল্টি-মেসেঞ্জার জ্যোতির্বিদ্যা।
অন্ধের কল্পনা
এ প্রসঙ্গে হাতি নিয়ে আমার একটা গল্প মনে পড়লো। একটা হাতি বসে আছে এবং কিছু অন্ধ ব্যক্তিরা তাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাত বুলিয়ে দেখছে। কেউ মুখটা দেখছে কেউ লেজ বা কেউ কখনো পা। ঠিক এভাবেই আমরাও মহাবিশ্বকে বিভিন্নভাবে দেখছি; কখনো দৃশ্যমান আলোতে বা বেতার আলোকে, কখনো হয়তো মহাকর্ষীয় তরঙ্গতে এবং বর্তমানে নিউট্রিনোর মাধ্যমেও, যাতে মহাবিশ্ব নিয়ে আমাদের ধারণাটা আরো বিস্তৃতত হয়।
আসলে, এ নিয়ে আমারও ছোট্ট করে একটা কথা বলার ছিল। আমরা সাধারণভাবে যে দৃশ্যমান আলো দিয়ে সূর্যকে যখন দেখছি, এটা সূর্যের একেবারে বাইরের একটা খুবই সরু স্তর থেকেই বেরোয়। কিন্তু তার একটু ভেতরে ঢুকে গেলেই, অর্থাৎ যেটাকে ফটোস্ফিয়ার স্তর বলে, সেখানে ঘনত্ব-উষ্ণতা এতটাই বেশি যে আলো বের হতেই পারে না, বিভিন্ন আধানিত হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে বারবার ধাক্কা খেতে থাকে; বেরোতে পারে শুধুমাত্র বাইরের সবচেয়ে সরু যে স্তরটি রয়েছে, সেখান থেকে।
নিউট্রিনো কিন্তু তা নয়। এটা যেহেতু কম মিথস্ক্রিয়া করে, এরা সূর্যের প্রায় একেবারে কেন্দ্রক থেকে বেরোতে পারে। ফলতো, নিউট্রিনো দিয়ে আমরা যখন সূর্যকে দেখছি, আমরা এর একেবারে ভেতর অবধি দেখতে পাচ্ছি।
ঠিক যেভাবে এক্স রশ্মি দিয়ে আমরা মানুষের ভেতর দেখতে পারি! সূর্যকে নিউট্রিনো দিয়ে এক্স-রে করছি বলা যায়।
হ্যাঁ, নিউট্রিনোটা সূর্যটাকে প্রায় এক্সরে করতে পারে বলাই যায়। কোনো মহাজাগতিক বস্তুকে আমরা যখন নিউট্রিনো দিয়ে দেখবো, তখন একটা সুবিধা হচ্ছে আমরা তাকে একেবারে ভেতর থেকে দেখতে পাবো, যেটা অন্য কোনোভাবে করা যায় না।
দারুণ।
লেখাটি মূল ভিডিও থেকে লিপিবদ্ধ করেছেন স্বপ্ননীল জানা ও অমৃতা মণ্ডল। সম্পূর্ণ ইন্টারভিউ-টা এখানে দেখতে পাবেন: https://www.youtube.com/watch?v=0xLYlZfvhmA
উৎসাহী পাঠকদের জন্য:
[1] দেবেন্দ্র মোহন বসু ও বিভা চৌধুরী দার্জিলিং ও সান্দাকফু-তে কসমিক রশ্মি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেন। তাঁরা ব্যবহার করেন Ilford কোম্পানির বানানো বিশেষ ফটোগ্রাফিক প্লেট (R2 Half Tone)। এই ফটোগ্রাফিক প্লেটে কসমিক রশ্মির যাত্রাপথ দেখতে পাওয়া যেত। বসু ও চৌধুরী এই যাত্রাপথ থেকে এক বিশেষ ধরনের কণার সন্ধান পান, যার ভর ইলেক্ট্রনের প্রায় 200 গুণ বেশি (এখন এই কণাকে মেসন কণা বলা হয়)। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ও বিখ্যাত নেচার পত্রিকায় 1940 থেকে 1942 এর মধ্যে চারটি গবেষণা পত্র প্রকাশের পরও তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে এই গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরো আধুনিক ফটোগ্রাফিক প্লেট লাগবে, যা তাঁদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। বিভা চৌধুরী এই প্রোজেক্ট ছেড়ে PhD করতে ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। দেবেন্দ্র বসুও এই বিষয়ে কাজ করা বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে ইংল্যান্ডেই 1939 সাল থেকে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সেসিল পাওয়েল Ilford কোম্পানির সাথে একসাথে কাজ করতে আরম্ভ করছিলেন। অবশেষে, 1947 সালে ইলফোর্ড কোম্পানির বানানো আরো উন্নত প্লেট (Full Tone) ব্যবহার করে পাওয়েল নিঃসংশয় ভাবে দু-ধরনের মেসন কণা আবিষ্কার করেন। 1950 সালে পাওয়েল নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন। তিনি দেবেন্দ্র বসু ও বিভা চৌধুরীর পদ্ধতিই অবলম্বন করেছিলেন মেসন কণা দেখতে। (তথ্যসূত্র – ‘Her Space Her Time’, publisher – Random House Canada, author – Shohini Ghose)