নোবেলজয়ীর কাজ
কৌশিক: আমাদের এই সাক্ষাৎকারে আপনাকে স্বাগত। আমি নিশ্চিত যে ভারত, বাংলাদেশ, এবং আরও অনেক দেশের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা এই সাক্ষাৎকার দেখে অনুপ্রাণিত হবে। প্রথমে, আপনাকে জিজ্ঞেস করি — আপনাকে তো QCD বা কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্সের (quantum chromodynamics) জনক হিসেবে ধরা হয়। আপনাকে যদি এই বিষয়টা একজন স্কুল পড়ুয়াকে বোঝাতে বলা হয়, আপনি তাকে কী বলবেন?
ড: গ্রস: দেখো, কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্স এমন একটা তত্ত্ব যেটা খুব জোরালো নিউক্লিয়ার ফোর্স-এর (strong nuclear force) ব্যাখ্যা দেয়।
নিউক্লিয়াস একটা পরমাণুর সবচেয়ে ভারী অংশ। নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘোরে ইলেক্ট্রন, এবং ইলেক্ট্রন আর নিউক্লিয়াস মিলেই তৈরি হয় পরমাণু। আবার নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকে প্রোটন আর নিউট্রন।
আমরা এখন জানি যে প্রোটন আর নিউট্রন নিজেরা আরো ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। সেই কণাগুলির নির্দিষ্ট কোনো গঠন নেই। এদের বলে কোয়ার্ক। এই কোয়ার্ক কণাগুলি খুব অদ্ভুত ধরনের। এদের ইলেকট্রিক চার্জ একটা ইলেক্ট্রনের চার্জের ভগ্নাংশ, এবং এদের কখনোই ল্যাবরেটরিতে মুক্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়নি।
যেমনটা দেখা গেছে ইলেক্ট্রন-এর ক্ষেত্রে। একটা পরমাণু তৈরি হয় নিউক্লিয়াস আর ইলেক্ট্রন দিয়ে। পরমাণুটাকে আঘাত করলে মুক্ত ইলেক্ট্রন বেরিয়ে আসে। আমরা সেই ইলেক্ট্রনগুলোকে তারের মধ্যে দিয়ে পাঠাই, তাদের দিয়ে কাজ করাই, এই অবস্থায় আমরা ইলেক্ট্রনগুলোকে প্রত্যক্ষ করতে পারি। কিন্তু তুমি একটা প্রোটনকে যত জোরেই আঘাত করো না কেন, কখনোই প্রোটন ভেঙে কোয়ার্ক বেরিয়ে আসে না।
এই কারণেই রাদারফোর্ডের নিউক্লিয়াস আবিষ্কারের পরেও প্রায় ছয় দশক ধরে নিউক্লিয়ার ফোর্স-কে আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি। একেবারে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নিউক্লিয়ার ফোর্স-এর বিশদ বিবরণ দিতে পারে এমন একটা তত্ত্ব খাড়া করানো গেছে। এখন পরীক্ষাতেও সেই তত্ত্ব প্রমাণিত হয়েছে। এতটা সময় লাগলো কারণ নিউক্লিয়াস যে কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি সেটা বুঝতে হতো।
সত্তরের দশকের প্রথমদিকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে যখন প্রকাশিত হল প্রোটনের মধ্যে অবস্থিত কোয়ার্কের কথা, আমরা তখন একটা তত্ত্ব খাড়া করতে পারলাম। তত্ত্বটা কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডাইনামিক্স (quantum electrodynamics) নামে একটা প্রচলিত তত্ত্বের সাধারণীকরণ (generalization) করে বানানো হয়েছিল। কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডাইনামিক্স হলো ইলেকট্রিসিটি আর ম্যাগনেটিজম, বা তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের (electromagnetic field) কোয়ান্টাম তত্ত্ব। ইলেক্ট্রনগুলোকে পরমাণুর মধ্যে যা ধরে রাখে, সেটাই তড়িৎচুম্বকীয় বল।
কিন্তু ইলেক্ট্রোডাইনামিক্সে একটাই আধান বা চার্জ (charge) রয়েছে। সেটা থেকে সাধারণীকরণ করে যে তত্ত্ব বানানো হলো, তাতে আছে একের বেশি ইলেকট্রিক চার্জ। মোট তিন ধরনের চার্জ হয়, যাদের কখনো কখনো আমরা কালার বা রং বলি। কিছু একটা নাম তো দিতে হবে, তাই রং-এর ব্যবহার করা হয়েছে। তিন ধরনের রং হলো: লাল, নীল, সবুজ।
এই কোয়ার্ক-এর মধ্যে যে বলের আদান প্রদান হয় তার উৎপত্তি হয় আরো জটিল একটা ক্ষেত্র (field) থেকে। অনেকটা তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের মতো, কিন্তু এই ক্ষেত্রটার নিজেরও একটা রং রয়েছে যেহেতু এই ক্ষেত্রের প্রভাবে একটা লাল কোয়ার্ক সবুজ কোয়ার্কে রূপান্তরিত হতে পারে। বলা যায়, এই ক্ষেত্রটা নিজেই রং-এর অধিকারী।
যদিও এই তত্ত্বটা বেশ জটিল, তবে এর একটা দারুণ বৈশিষ্ট্য আমরা আবিষ্কার করেছিলাম — যাকে বলা হয় অ্যাসিম্পটোটিক ফ্রিডম (asymptotic freedom)। এই তত্ত্ব বলে, দুটো কোয়ার্ক-কে কাছাকাছি আনলে তাদের মধ্যবর্তী আকর্ষণ বল কমে যায়। তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়, তার ঠিক উল্টো। অন্যদিকে যদি এদেরকে দূরে সরানো হয় তাহলে আকর্ষণ বল ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এতটাই বেড়ে যায় যে একটা প্রোটনের ভিতর থেকে এদেরকে টেনে বের করা যায় না।
কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্স এমন একটা তত্ত্ব যেটা এসবের ব্যাখ্যা দিতে পারে। আরও অনেক কিছুরই ব্যাখ্যা দিতে পারে, বিশেষ করে যদি তুমি একটা প্রোটন, নিউট্রন, বা নিউক্লিয়াসের ভিতর যাও। সেক্ষেত্রে ব্যাখ্যাটা দেওয়া অপেক্ষাকৃতভাবে সহজ হয়ে যায় কারণ অ্যাসিম্পটোটিক ফ্রিডম অনুযায়ী খুব অল্প দূরত্বে আকর্ষণ বল দুর্বল হয়ে যায়।
এই তত্ত্বটা এই বছর অর্ধশতকে পা দিলো। নানা ভাবে এটা পরীক্ষিত হয়েছে — আক্ষরিক অর্থে বড় বড় accelerator-এ হাজার হাজারবার পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কোনো রকম ভাবেই হাতেকলমে পরীক্ষার সাথে কোনো গরমিল লক্ষ্য করা যায় নি। অতএব আমরা এটাকে বিশ্বাস করতে পারি।
এই জন্যই কি কেউ নিউক্লিয়াসকে ভেঙে কোয়ার্ক তৈরি করতে পারে না? কারণ তাদের মধ্যেবর্তী আকর্ষণ বল প্রবল?
একদম তাই। এটা বোঝার জন্য ভালো উপমা হবে যদি তুমি দুটো কোয়ার্ক-কে একটা রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকে দাও যাতে করে দু-জনে খুব কাছাকাছি থাকে। এই অবস্থায় ওরা রাবার ব্যান্ড-এর উপস্থিতি অনুভব করবে না।
কিন্তু যদি কোয়ার্ক দুটোকে টেনে দূরে সরানোর চেষ্টা করো তাহলেই তাদের মধ্যে আকর্ষণ বলের উপস্থিতি টের পাবে। এক মাত্র রাবার ব্যান্ডটা ছিঁড়তে পারলেই এদের দু-জনকে আলাদা করতে পারবে।
ছোটবেলায় ডিনার টেবিলে
আমাদের ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকার পাঠকদের কাছে এই সাক্ষাৎকারের কথা বলেছিলাম। বেশ কিছু প্রশ্ন এসেছে আমাদের কাছে। আমি কি কয়েকটা প্রশ্ন আপনাকে করতে পারি? ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রদীপ্ত পঞ্চাধ্যায়ী প্রশ্ন করেছেন — “আপনার জীবনীতে আপনি ছেলেবেলায় বাবা-মার সাথে খাবার টেবিলে আলোচনার প্রসঙ্গে লিখেছেন। বলেছেন, কীভাবে এই সব গভীর আলোচনায় আপনার বাবা-মা আপনাদের অংশ নিতে অনুমতি এমনকি উৎসাহও দিতেন।” এটা কীভাবে আপনাকে গভীর চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে?
অবশ্যই, একটা শিশু হিসেবে বড়দের সাথে কথোপকথন করাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। সমস্ত রকম চ্যালেঞ্জই ভালো, কারণ সেগুলো তোমাকে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করতে এবং ভাবনালোকে নিয়ে তর্ক করতে বা বুঝতে বাধ্য করবে।
আমি ছাড়াও আরও তিনটে ভাই ছিল। তারা আমার থেকে বয়সে ছোট হলেও আমাদের মধ্যে ভালোই প্রতিযোগিতা চলতো।
(হেসে) কী নিয়ে হতো আলোচনা?
বিজ্ঞান নিয়ে যে আলোচনা হতো এমন নয়। আমার বাবা ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞানী নয়।
আচ্ছা।
তবে বলতে পারো, এটা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল যে আমিও স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারি, পরিস্থিতি সামলাতে পারি, এবং ছোট বয়স থেকেই বড়দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কথা বলতে পারি।
আচ্ছা, তাহলে কিছু জানতে চাওয়ার সময় ওনারা ছোটদের প্রাপ্তবয়স্কের মর্যাদা দিতেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার মনে পড়ে, বিশেষত সেই সময়টা। আরো ছোট বয়সে হয়তো শিশু হিসেবেই দেখতেন। কিন্তু সেসময়ে বাবা মা আমাদের সাথে সমানে সমানে আচরণ করতেন। সেটা বেশ সুন্দর, উপভোগ্য এবং মজার লাগতো। এবং চ্যালেঞ্জিংও লাগতো। আমার মনে হয়, এই চ্যালেঞ্জ-টা ভালো জিনিস।
এটা সমস্ত বাচ্চার আত্মবিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা তৈরি করতে সাহায্য করে। পরের প্রশ্ন হল, এই প্রজন্মের বাবা-মা দের আপনি কী পরামর্শ দিতে চান? এই প্রজন্ম, এটা কিন্তু আগের মতো না। আমাদের, বেশিরভাগ পরিবারেই, খাবার টেবিলে বিশেষ আলোচনা আর হয় না।
তারা টিভি খুলে বসে।
হ্যাঁ, টিভি বা ফোন।
ডিনার টেবিলে আলোচনার বাইরে অন্য উপায়ও আছে। আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো শিশুদের কৌতূহল বজায় রাখা। শিশুরা স্বভাবতই কৌতূহলী হয়, নিজের চারপাশের জগৎ নিয়ে তাদের আগ্রহের সীমা নেই। এই চারপাশের জগৎটা তারা খুব একটা বোঝে না এবং প্রশ্ন করতে থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো, তাদের এই কৌতূহলটা যেন দমিয়ে দেওয়া না হয়।
সুতরাং বাবা-মা এইসব প্রশ্নের উত্তর না জানলেও যেন এরকম না বলেন, ‘মূর্খের মতো প্রশ্ন কোরো না তো। যাও এখন!’ তাঁরা যেন বলেন, ‘এটা একটা দারুণ প্রশ্ন। এক কাজ করো‘ — এখন বাবা-মায়ের এটা বলার উপায় আছে — ‘এক কাজ করো, ইন্টারনেটে খুঁজে দেখো তো এর উত্তর পাও কিনা?‘
আমাদের সময়ের থেকে আজকের সময়টা বেশ অনেকটা সহজ কিন্তু। আমাদের সময়ে, যদি তুমি একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাইতে, যেটা তোমার বাবা-মা জানেন না বা তোমার শিক্ষক জানেন না, তাহলে তোমাকে নির্দিষ্ট বই খুঁজতে লাইব্রেরিতে যেতে হতো। এটা খুব সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু আজকের দিনে তুমি সহজেই খুঁজে পেতে পারো, যদি জানো …
সব কিছু হাতের মুঠোয় …
একদম, যদি জানো কীভাবে সঠিক প্রশ্নটা করতে হয় এবং কোথায় খুঁজে দেখতে হয়। ইন্টারনেটে অনেক আজেবাজে হাবিজাবি জিনিস আছে। কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে উত্তরটাও আছে, যদি তুমি জানো কীভাবে খুঁজতে হয়। কিন্তু প্রায়শই বাবা-মা এবং কখনও কখনও শিক্ষকরা উত্তর না জানলে সেটাকে সামাল দিতে শিশুদের অনুসন্ধিৎসাকেই দমিয়ে ফেলেন। অথচ অনুসন্ধিৎসাই হল বিজ্ঞান এবং কল্পনার মূল চালিকা শক্তি।
অবশ্যই। আর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ, বিশ্বের সমস্ত বাবা-মা এবং শিক্ষকদের জন্য একটা মূল্যবান শিক্ষা।
বিশেষ করে, বাবা মায়েরা। কারণ, বাবা মায়েদের মনেও নানা জিজ্ঞাসা রয়েছে। হয়তো ছোটবেলায় তাঁরা সেসবের উত্তর পাননি। তাই, উত্তর না জানার লজ্জা বা বিব্রত অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য সন্তানকে ভাগিয়ে না দিয়ে তাঁরা সন্তানের সাথে মিলে একসঙ্গে উত্তরের খোঁজে লেগে পড়তে পারেন।
একদম ঠিক। উত্তর না জানলে লজ্জা পাওয়ার তো কিছু নেই।
অবশ্যই নেই।
কেউই তো সব কিছু জানতে পারে না।
কিছু না জানলে সেটাকে শেখার সুযোগ হিসেবে ভাবা যায়।
ছাত্রছাত্রীদের সাথে
একদমই তাই। দ্বিতীয় একটা প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্নটি হলো: আপনি এটাও বলেছিলেন যে “আমার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আগে যেভাবে কাজ করে এসেছি, বা এখনো যেভাবে কাজ করি, তা হলো এইরকম: আমি যখন যে বিষয়ে গবেষণা করছি তার সাথে তাদের যুক্ত করি, এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করি। একটা সোজা প্রব্লেম দিয়ে ছেড়ে দেবো, এমনটা পারি না। বরং আমি নিজে যেসব প্রোজেক্টে কাজ করছি, সেগুলোতে তাদের যুক্ত করি।”
সেটা কী কারণে?
আসলে কি জানো তো, একজন সফল বিজ্ঞান গবেষক হতে গেলে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারা খুব জরুরি। তার জন্যে কয়েকটা জিনিস দরকার, যেমন — কৌতূহল, ভালো প্রশ্ন করার ক্ষমতা, এবং আরো কিছু কারিকুরি, যেগুলো বলে বোঝানো মুশকিল, কারণ সেগুলো প্রায়শই কিছুটা অস্পষ্ট আর সেগুলো শেখানোও মুশকিল। যেমন সৃজনশীলতা। এটা কীভাবে শেখাবে?
সেই কারণে আমরা পিএইচডি শিক্ষার্থীদের যেভাবে শেখাই সেটাকে ঠিক পড়ানো বলা চলে না, তার অনেকটাই একসাথে কাজ করা। এটা অনেকটা পুরোনো কালে কাঠমিস্ত্রিদের কাছে হাতেখড়ির মতো। সেখানে নিৰ্দিষ্ট কোনো নির্দেশাবলির তালিকা বা বই দিয়ে ছেড়ে দেওয়া যায় না। একজন হবু ছুতোরমিস্ত্রিকে শেখাতে তার সাথে কাজ করতে হয়। তোমাকে কাজ করতে দেখেই সে কাজ করতে শিখবে, পরে নিজে নিজে আসবাবপত্র তৈরি করবে।
ঠিক সেরকমই বিজ্ঞান গবেষক হওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একজন ভালো উপদেষ্টা খুঁজে বের করে তাদের সাথে কাজ করতে করতে শেখা। এমনসব জিনিস আয়ত্ত করতে হয় যেগুলো কাগজেকলমে লিখে বোঝানো মুশকিল।
ঠিক।
তো আমি সেটাই করতে লাগলাম। তাছাড়া আমি খুব ভাগ্যবানও ছিলাম যে আমার কেরিয়ারের শুরুর অর্ধেকটাই কেটেছে প্রিন্সটনে। অনেক ভালো ভালো পিএইচডি শিক্ষার্থী ছিল সেখানে। তাদের সাথে কাজ করে খুব আনন্দ পেয়েছি। তাদেরকে কাজ করাতে গিয়ে, এককথায় তাদের সাথে সহকর্মীর মতো হয়ে, তাদেরকে নিজের সমগোত্রীয় ভেবে কাজ করতে পারতাম। কারণ তারা বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ, আবার পরিশ্রমী আর প্রচুর উৎসাহী। কেউ কেউ তো একদম তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো আমায়। এইসব তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করার আনন্দই আলাদা।
আর তাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দিয়ে –
তাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেওয়া, আবার তাদেরকে চোখের সামনে বেড়ে উঠতে দেখাও, তাই না? দারুন আনন্দদায়ক অনুভূতি!
তত্ত্ব বনাম হাতেকলমে পরীক্ষা
আরেকটা প্রশ্ন এসেছে। রিচার্ড ফাইনম্যান একবার বলেছিলেন, “আপনার তত্ত্ব কতটা সুন্দর বা আপনি কতটা বুদ্ধিমান, তাতে কিছু যায় আসে না। যদি পরীক্ষার সাথে না মেলে, তাহলে সেই তত্ত্ব ভুল।” একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ হিসেবে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানকে কীভাবে দেখবেন আপনি?
ফাইনম্যান একদম ঠিক বলেছিলেন। সব বিজ্ঞানই পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
জানোই তো, বৈজ্ঞানিক গবেষণাপদ্ধতির তিনটে অংশ রয়েছে। প্রথমত, পর্যবেক্ষণ। সে মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণই হোক কি ছোট কণার পর্যবেক্ষণ। অনেকসময় খুব সূক্ষ্ম খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করতে পারে এমন যন্ত্র লাগে। এরপর সুনিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা চালিয়ে সেই একই পর্যবেক্ষণ বিভিন্ন অবস্থায় করা হয়। তুমি প্রাথমিক অবস্থাগুলো ঠিক করলে, তারপর কয়েকটা জিনিসকে একসাথে আনলে, শেষে মাপলে কী বেরোচ্ছে। এরপর প্রাথমিক অবস্থাটা পাল্টে দেখলে মাপগুলো কীভাবে পালটাচ্ছে। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষা, বোঝবার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা।
এবং সবশেষে উদ্দেশ্য হলো একটা ব্যাখ্যা বা তত্ত্ব বা মডেল যেটা —
একটা অনুমান (hypothesis)।
শুরুতে বলতে পারো অনুমান। কিন্তু উদ্দেশ্যটা হলো একটা তত্ত্বে পৌঁছনো।
হ্যাঁ, উদ্দেশ্য তত্ত্বে পৌঁছনো।
কিন্তু তত্ত্বে পৌছতে হলে প্রথমে একটা অনুমান দিয়ে শুরু করতে হবে। আর এইটাই, এই জিনিসটাই শেখানো যায় না — নতুন আইডিয়া, নতুন মডেল, নতুন কোনো গাণিতিক এক্সপ্রেশন বার করা। বিশেষ করে পদার্থবিদ্যায় যেখানে প্রকৃতির নিয়মগুলো, যেমনটা গ্যালিলিও সুন্দরভাবে বলেছিলেন, গণিতের ভাষায় লেখা। নতুন গাণিতিক ব্যাখ্যা বা নতুন কোনো ধারণা বার করতে হবে, প্রতিসাম্য (symmetry) বা অন্য কিছুর ভিত্তিতে। সেই ব্যাখ্যাকে এমন হতে হবে যা ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলতে পারবে। এই হলো তিনটে ধাপ।
আমাদের ধারণা, আমরা কী হচ্ছে বুঝে সেইটা থেকে ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা সংখ্যার মাধ্যমে বলতে পারি। সেখান থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে এমন ক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারি যেখানে এর আগে কোনো পর্যবেক্ষণ বা মাপজোখ করা হয়নি। সেখানে গিয়ে বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি। ভবিষ্যদ্বাণী করার উদ্দেশ্য হলো নতুন মাপজোখের সাথে সেগুলো মেলে কিনা, সেইটা পরীক্ষা করা। না মিললে বুঝবে ভুল দিকে যাচ্ছি।
প্রকৃতি আমাদের থেকে এককাঠি উপরে যায়। তাছাড়া, প্রকৃতি যেমন সেরকমই, আমরা শুধু তাকে বোঝার চেষ্টা করছি। শেষ কথা প্রকৃতির কড়া বা কঠোর বিচার থেকেই আসবে। কড়া বলছি কেন? কারণ প্রকৃতি কখনো বলে না, হ্যাঁ, তুমিই ঠিক। শুধু এটুকু বলে যে এখনও অব্দি ভুল করোনি। কিন্তু পরের পরীক্ষাতে গলদ বেরোতেই পারে। এটা কিন্তু হয়েই থাকে।
অতএব হতেই পারে তুমি এক ধরনের ঘটনাক্রমকে বোঝাতে গিয়ে এমন একটা মডেল বানালে যেটা সুন্দর কিন্তু ভুল। হয়তো ভুলটা ধরাও খুব কঠিন। হয়তো মডেলটা আগের থেকে বেশি বোঝাতে পারে কিন্তু শেষমেশ পুরো ব্যাখ্যা দিতে পারে না। তখন তুমি বুঝবে যে ভুল হয়েছে। প্রকৃতি কখনোই হ্যাঁ বলে না। প্রতিনিয়তই এরকমটা হতে দেখা যায়।
সত্যি বলতে কি, আমরা পদার্থবিদরা ভাবি যে ঐতিহাসিকভাবে আমাদের বেশিরভাগ সফল তত্ত্বই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভুল মানে এই নয় যে সেগুলো কাজের হয়নি, বরং উল্টোই দেখেছি। কিন্তু সেগুলো আরো বড়, আরো ব্যাপক কোনো তত্ত্বের একটা আংশিক ছবি দেয়, যে ছবিটা হয়তো বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
যেমন, নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ বা নিউটনের সনাতন বলবিদ্যা ভুল। সব পরীক্ষার ফলের সাথে মেলে না। যেমন, খুব দ্রুতগতির কণার গতিবিধি এই তত্ত্বের সঙ্গে মেলে না। তোমাকে তখন আপেক্ষিকতাবাদের আশ্রয় নিতে হবে। কিংবা পরমাণুর ভিতরে ইলেকট্রনের আচরণ বোঝা যায় না। তখন তোমাকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আশ্রয় নিতে হয়।
কিন্তু তাই বলে নিউটনের সূত্র যে এক্কেবারে ভুল তা নয়। তাকে অন্য তত্ত্বগুলোর একটা বিশেষ শর্তসাপেক্ষে সত্য বলা চলে। যদি বিশালকায় বস্তুর কথা ধরো, যেমন পৃথিবীর চারিদিকে চাঁদ, সেখানে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিশেষ অংশ হিসেবে নিউটনের সূত্রকে পাওয়া যাবে। যদি চাঁদে রকেট পাঠাতে চাও, তোমার কোয়ান্টাম বলবিদ্যা কিংবা আপেক্ষিতাবাদের আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন নেই। নিউটনের সূত্র ব্যবহার করলেই যথেষ্ট, ওখানে এই সূত্র খাটবে। কিন্তু পরিপূর্ণ তত্ত্ব হিসেবে ওটা ভুল। একই কথা সনাতন বলবিদ্যার ক্ষেত্রেও খাটে, তোমার কোয়ান্টাম বলবিদ্যা চাই।
এইভাবেই বিজ্ঞান এগোয়। হয়তো এযাবৎ যত তত্ত্ব পেয়েছি, সেগুলো কোনো একটা বড় তত্ত্বের অংশ বা সীমা মাত্র। একদিন হয়তো শেষ তত্ত্ব পাওয়া যাবে, তবে এক্ষুনি সেরকম কিছু দেখছি না।
এই জন্যেই, প্রশ্ন করা চালু রাখতে হবে। অল্পবয়সিদের এই একটা সুবিধে রয়েছে, বড়দের একপেশে চিন্তা বা সনাতন ধ্যানধারণাকে প্রশ্ন করতে তারা ভয় পায় না। কখনো তাদের প্রশ্ন করাটা একটু বোকা বোকা শোনায়, কিন্তু অনেক সময়েই সেগুলো খুব ইন্টারেস্টিং হয়, পুরোনো ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে, নতুন ধারণার জন্ম দেয়। এবং এইভাবেই বিজ্ঞান এগিয়ে যায়।
আমরা, বিজ্ঞানীরা, সবসময় পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষার দিকে তাকিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করছি কোথায় আমাদের বর্তমান ধারণাগুলো ভেঙে যেতে পারে। সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছি। যদি প্রকৃতি সদয় হন, অনেক সময় তিনি আমাদের দেখিয়ে দেন যে কোথায় ভুল করেছি, বা কোথায় এমন কিছু ধরে নিয়েছি যেটা সীমিত পরিসরে ঠিক কিন্তু আখেরে ঠিক নয়।
আগামী প্রজন্মকে ট্রেনিং দেওয়া
খুব গভীর উত্তর। আমি জানি আমাদের হাতে সময় বেশি নেই। আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন: আপনি খুব গভীরভাবে ক্লাসরুমে পড়ানোর সঙ্গেও জড়িত। পড়ানোতে আপনি খুবই আগ্রহী এবং আমি জানি আপনি বহু বছর ধরে স্কুল শিক্ষকদের জন্য কনফারেন্স-এর আয়োজন করে এসেছেন। আপনি পড়ানোর পদ্ধতি, বা শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়েও খুবই আগ্রহী।
পড়ানোটা বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। বিজ্ঞানে যত যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটেছে তার অধিকাংশই এসেছে যুবসমাজের হাত ধরে। এটার কারণ হিসাবে বলা যায় যে স্বাভাবিক কারণেই যুবসমাজ নতুন কিছু করতে চায়। তারুণ্যের স্পর্ধায় ও উদ্যমে তারা গন্ডির মধ্যে না থেকে ছকভাঙা পথে হেঁটে সৃজনশীল নতুন কিছু করার ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করে না।
তাই বিজ্ঞানের প্রতিটা শাখা অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও উৎসাহদানে খুব গুরুত্ব দেয়। কারণ তারাই বিজ্ঞানের অগ্রগতির ভবিষ্যৎ। এই কারণেই আমি পড়াতাম। আমি প্রায় সারাজীবন পড়িয়েছি, আর সেটাকে অত্যন্ত উপভোগ করেছি, যদিও এখন আর পড়াতে পারি না।
পড়ানোর একটা ভালো দিক হলো, পড়ানোটা শুধুমাত্র যে ছাত্রছাত্রীদের কাজে আসে তা নয়, শিক্ষকের উপরও তার প্রভাব অপরিসীম। যে বিষয় নিয়ে তুমি গবেষণা করো, যেটা তুমি অত্যন্ত ভালো ভাবে জানো এবং সবসময় ব্যবহার করো, সেই বিষয়ও তুমি যখন পড়াতে যাবে, তুমি উপলব্ধি করবে – ‘হুঁ, আমি বিষয়টা যতটা ভালো বুঝি বলে মনে করতাম, তত ভালো বুঝি না।’
তাই, পড়ানোটা ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক দু-তরফের জন্যই খুবই ফলপ্রসূ এবং আনন্দদায়ক। তবে সবসময় সবজায়গায় ভালোভাবে পড়ানো হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি পড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে। আগে যে সমস্ত যোগ্য লোকেরা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পড়াতেন, এখন তাঁদের সামনে অনেক বেশি মাইনের চাকরির, যেমন কম্পিউটার বা ওই ধরণের ক্ষেত্রে, অনেক বিকল্প আছে।
তার উপর অধিকাংশ দেশেই শিক্ষকশিক্ষিকাদের আর সমাজে সেই সম্মানও নেই, তাদেরকে যতটা পুরস্কৃত করা উচিত, সেটাও হয় না। অনেকেই ভাবে – ‘পড়ানো – ওহ, সে আর এমন কি কাজ!’ কিন্তু, আদতে ভালো পড়ানো একটা আর্ট। ভালো শিক্ষক খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ। তাঁদের আরো ভালো ভাবে পুরস্কৃত করা উচিত। সেটা যে হয়না, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
আরো একটা ব্যাপার আছে। সত্যি কথা বলতে শিক্ষকদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, কীভাবে তৈরি করা উচিত, সে ব্যাপারটাও আমরা ভালো জানি না। এখন কীভাবে শিক্ষক তৈরি হয়? আমরা তাদের ঠেলে দিই, দিয়ে বলি, ‘যাও গিয়ে পড়াও!’ আর তার পর সে অন্য ভালো শিক্ষকদের দেখে তাদের মতো করে পড়াবার চেষ্টা করে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখনো পর্যন্ত ভালো শিক্ষক বানানোর ঠিকঠাক পদ্ধতি আমরা বার করে উঠতে পারিনি। আমার মনে হয় না আমরা টিচার এডুকেশনে ভালো কিছু করতে পেরেছি।
আমরা ভালো করতাম যখন আমরা শুধুমাত্র জনগণের এক শতাংশকে পড়াতাম। একশো বছর আগে পর্যন্তও আমরা শুধুমাত্র এক বা দুই শতাংশকে হাইস্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়াতাম। এখন আমাদেরকে চল্লিশ, পঞ্চাশ, এমনকি একশো শতাংশ জনগণকে পড়াতে হচ্ছে। এখন অধিকাংশ মানুষই শিক্ষার আলো পাচ্ছে, বেশি সংখ্যক মানুষ উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে। সুতরাং, আমাদের এই শিক্ষাদানের কাজটাও ভালো করে শিখে করতে হবে। হ্যাঁ, মানুষের মগজই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। জনগণের এই সম্পদে আমাদের আরো বিনিয়োগ করতেই হবে!
হ্যাঁ, সেটাই আসল সম্পদ।
একদম ঠিক কথা। উদাহরণ হিসাবে ভারতবর্ষের দিকে তাকিয়ে দেখো। ভারতবর্ষ গর্ব করে বলে যে সেদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক বা ওই রকম কিছু যুবক, তাদের বয়স আঠারোর নিচে। তিরিশ, চল্লিশ কোটি বা তারও বেশি যুবক সে দেশে! সেটাই সে দেশের বিশাল শক্তি!
সেটা ঠিক হবে যদি এই যুবশক্তির ঠিকঠাক ব্যবহার তারা করতে পারে।
ঠিকই।
কিন্তু, যদি এই যুবসমাজকে তুমি ঠিকঠাক ভাবে প্রশিক্ষিত না করতে পারো?
তাহলে আপনি কি মনে করেন যে প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের মতো শিক্ষায় এবং এডুকেশনে ভারতবর্ষের আরো বিনিয়োগ করা উচিত? না হলে তো চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো লোক তৈরি হবে না।
শুধু সেটাই নয়, এটা একটা বিরাট সম্ভাবনার অপচয় হবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে এই অসাধারণ মানুষেরা তাঁদের প্রকৃত জায়গায় পৌঁছতে পারছেন না। যদি তাঁদের কাছে সেই সম্ভাবনার দরজা খুলে না দেওয়া হয়, তাহলে সেটা দেশের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক হবে। বিশেষ করে যে দেশ দাবি করছে তাদের হাতে যৌবনের উদ্যম আর চিন্তাশক্তিসম্পন্ন বিপুলসংখ্যক যুবক যুবতী আছে। তারা যদি নতুন কিছু করে দেখানোর সুযোগ না পায়, তাহলে সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হবে।
হ্যাঁ, আমি সম্পূর্ণ একমত।
অনেক ধন্যবাদ ডেভিড আপনার এতো মূল্যবান সময়, মূল্যবান প্রজ্ঞা আর বিজ্ঞান সাধনা ও শিক্ষা নিয়ে আপনার সারাজীবনের অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা নেই।
আমিও খুব আনন্দ পেলাম।
(মূল ইন্টারভিউ-টা ইংরেজিতে নেওয়া হয়েছিল। বাংলায় অনুবাদ করেছেন বিজ্ঞান-এর স্বেচ্ছাসেবকরা।)