মেট্রোতে তুমুল তর্ক চলছিল দুই যুবকের মধ্যে। দুজনে মুখোমুখি বসে ছিল। ওদের মাঝখানে কোনো যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল না, তাই আরামসে তর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল ছেলেদুটো। একজনের হাতে ছিল একটা ফুটবল, এবং তর্ক সেই ফুটবলটাকে নিয়ে। যেটুকু বুঝলাম, প্রশ্নটা ছিল, ওই মুহূর্তে ছেলেটা হাত থেকে ফুটবলটা ছেড়ে দিলে সেটা কোনদিকে যাবে। এমনিতে তো ছাড়লে সোজা জমিতে পড়বে, কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু ট্রেনটা চলছে, তাই সমস্যা।
একজনের বক্তব্য এইরকম: “এই মুহূর্তে আমি বলটা ধরে আছি। আমার হাতের সাথে বলটা লেগে আছে। ট্রেন যেহেতু চলছে, আমার হাতটাও চলছে, ফলে বলটাও চলছে। বলটার একটা ভরবেগ (momentum) আছে। আমি বলটা ছাড়বো যখন, ওই ভরবেগটা তো থাকবে। অতএব বলটা ট্রেনের চলার দিকে কিছুটা চলবে মাটিতে পড়ার আগে।”
এই ছেলেটাকে নাম দিলাম টেনিদা। ও যেভাবে কথা বলছিলো, শুনতে টেনিদার মতোই লাগছিল।
উল্টোদিকে বসা দ্বিতীয়জন এই ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে পারছে না। “ইয়ার্কি হচ্ছে! বলটা শূন্যে নিজে থেকেই যাবে! আমরা হাঁ করে দেখবো, বল দিব্যি আমাদের মাঝখান থেকে বেরিয়ে ট্রেনের সামনের দিকে ভেসে ভেসে যাবে। এরকম হয় নাকি?”
একজন যদি টেনিদা হয়, অন্যজনকে ক্যাবলা না বলে থাকি কি করে। অতএব এই দ্বিতীয়জনের নাম ক্যাবলা।
ট্রেনে যেহেতু লোকজন রয়েছে, দুজনের কেউই বলটাকে ছেড়ে কি হয় সেটা দেখার কথা ভাবছে না। ট্রেনের মধ্যে খেলছে ভেবে ড্রাইভার নামিয়ে দিতে পারে পরের স্টেশনে।
প্রায় কুড়ি মিনিট ছিলাম ওদের পাশে বসে। তর্কটা শুনছিলাম। দুজনেই নিজেদের বক্তব্য থেকে অনড়। টেনিদা বলে, ভরবেগ সংরক্ষণ (conservation of momentum)। ক্যাবলা বলে, বলটার শূন্যে নিজে থেকে চলা কিরকম ম্যাজিক লাগছে। শেষে স্টেশন এসে গেল, দুজনে নেমে গেল।
দুজনেই নিজেদের দিক থেকে ঠিক ছিল, তাই ওরা যে তর্কের মীমাংসা করতে পারলো না, তাতে একটু দুঃখ পেলাম।
তুমি যদি ওখানে থাকতে, তাহলে ওদের দুজনকে বোঝাতে পারতে, কেন ওরা দুজনেই ঠিক এবং ঠিক কোথায় গণ্ডগোলটা পাকাচ্ছে? এবং ট্রেন যদি ফাঁকা থাকতো আর ওরা বলটা হাত থেকে ছেড়ে দেখতো, তাহলে কি দেখতে পেত, সেটা বলতে পারবে? এটা মাথায় রেখো, বল ছাড়ার পরের সময়টা ট্রেনটা হয়তো স্পীড বাড়াচ্ছে বা স্লোডাউন করছে, এরকমও হতে পারে। আবার একই স্পীডে cruise করছে, সেরকমও হতে পারে।
যদি না পারো, তাহলে এক এক করে নিচের প্রশ্নগুলো উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করো। প্রত্যেকটা প্রশ্নের জন্যেই একই তিনটে উত্তর হতে পারে:
- বলটা ট্রেন যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে কিছুটা গিয়ে পড়বে।
- বলটা সোজা মাটিতে পড়বে।
- বলটা ট্রেনের উল্টোদিকে কিছুটা গিয়ে পড়বে।
বেছে নাও কোনটা ঠিক।
প্রশ্ন ১: স্টেশনে প্যালা
ধরা যাক, ট্রেনটার স্পীড বাড়েও নি, কমেও নি। কিন্তু ট্রেনটা একটা স্টেশন দিয়ে যাচ্ছে না থেমে (ছোটখাটো স্টেশন, galloping ট্রেন, এইরকম ধরে নাও)। স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে প্যালা। টেনিদা বলটা এই অবস্থায় ফেললে, প্যালা কি দেখবে – বলটা কোনদিকে যাচ্ছে?
প্রশ্ন ২: টেনিদার ফিজিক্স
প্যালা যখন দেখছে বলটাকে পড়তে (কি দেখছে, সেটার আগের প্রশ্নের উত্তরে বললে), তখন টেনিদা আর ক্যাবলা ট্রেনে বসে কি দেখবে?
প্রশ্ন ৩: ট্রেনের গতি বাড়লে
স্টেশন পেরিয়ে ট্রেন আবার গতি বাড়ালো। ট্রেনের গতি বাড়ানোর সময় টেনিদা বলটা ফেললে, টেনিদা আর ক্যাবলা কি দেখবে? প্যালা যেহেতু স্টেশনে, ও আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না, ট্রেন এখন চোখের আড়ালে চলে গেছে।
প্রশ্ন ৪: ট্রেনের গতি কমলে
Galloping ট্রেন শেষমেশ থামলো গিয়ে। থামার আগে একটু একটু করে গতি কমাচ্ছিল। ট্রেনের গতি কমানোর সময় টেনিদা বলটা ফেললে, ওরা দুজনে কি দেখবে?
এতক্ষণে নিশ্চই বুঝে গেছ, কেন দুজনেই কিছুটা ঠিক, কিভাবে ঝগড়া শান্ত করা যেত। যদি বুঝে না থাকো, বা উত্তর মেলাতে চাও, তাহলে আমাদের mail করতে পারো [email protected] – এ।