২০২১-এ রসায়ন শাস্ত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বেঞ্জামিন লিস্ট (Benjamin List) এবং ডেভিড ম্যাকমিলান-কে (David W.C. MacMillan) নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কোন কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার? এক কথায় বললে, “অপ্রতিসম জৈব অনুঘটন বিক্রিয়ার উদ্ভাবন” (Development of asymmetric organocatalysis reaction)। এই একটি কথার মধ্যে অনেকগুলি অপরিচিত শব্দ আছে। তাই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক: অনুঘটন কি? জৈব অনুঘটন কী? “অপ্রতিসম” মানে কী? “অপ্রতিসম জৈব অনুঘটন” কী? এগুলি কোন কাজে লাগে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই লেখায় আমরা এক এক করে ব্যাপারগুলি বোঝার চেষ্টা করবো।
প্রকৃতির জটিল অণু গবেষণাগারে বানানো
একজন জৈব রসায়নবিদের চোখ দিয়ে দেখলে প্রকৃতি অসংখ্য অণুর সমষ্টি। তা সে মানুষ, গাছপালা, পশু-পাখি, চেয়ার-টেবিল, জল-মাটি-হাওয়া হোক, কিংবা ওষুধ। প্রাকৃতিক জিনিসগুলি আমাদের তৈরি করতে হয় না, প্রকৃতিই সেগুলি তৈরির দায়ভার নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু যেগুলি প্রকৃতিতে অপ্রতুল, বিশেষ করে জীবনদায়ী ওষুধ, সেগুলি কিন্তু আমাদেরকেই তৈরি করতে হয়। এই যেমন ধরো, পেনিসিলিন জৈব যৌগটি প্রথম পাওয়া যায় একটি ছত্রাকের শরীর থেকে। আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং-এর এই আবিষ্কার মানব সভ্যতার হাতে তুলে দেয় প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক। প্রকৃতি নিজে থেকেই কত সহজে পেনিসিলিনের মতো বিভিন্ন অণু তৈরি করে। কিন্তু প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল না থেকে যদি প্রয়োজন এবং চাহিদামত একইরকম গঠনের অণু আমরা তৈরি করতে চাই, সেটি কীভাবে করতে পারি?
এই সব জটিল অণুগুলি তৈরি করতে সাধারণ এবং সহজলভ্য অণু থেকে শুরু করা যেতে পারে। ঠিক যেমন একটি একটি করে ইট, কাঠ, পাথর, বালি, সিমেন্ট, ইত্যাদি দিয়ে বাড়ি তৈরি হয়, তেমনই। বাড়িটা যেহেতু বড়, তাই আমরা দেখতে পাই কেমন তৈরি হলো, সব ঠিকাছে কিনা! কিন্তু অণুগুলি তো খুব ছোট, চোখে দেখা যায় না, এমনকি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না। তাহলে বুঝবো কী করে কী বানানো হয়েছে?
অণুগুলিকে শনাক্ত করতে কিছু কৌশল (analytical technique) ব্যবহার করতে হয়। যেমন, Nuclear Magnetic Resonance (NMR), Infrared Spectroscopy (IR), Mass Spectrometry (MS), Crystallography এবং Optical rotation, ইত্যাদি।
- NMR : আমাদের দেহের ভিতরের ছবি যে MRI পদ্ধতি দিয়ে তোলা হয়, NMR অনেকখানি একই নীতি (principle) মেনে চলে। NMR দিয়ে কোনো অণুর মধ্যে হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, ইত্যাদি পরমাণুগুলির পারস্পরিক অবস্থান বোঝা যায়।
- IR : IR পদ্ধতি দিয়ে একটি অণুর মধ্যেকার পরমাণুগুলি একে অন্যের সাথে কি রকম বন্ধনে জুড়ে আছে, তা বোঝা যায়।
- Mass spectrometry : এই পদ্ধতি দিয়ে দিয়ে বোঝা যায় একটি অণুর আণবিক ওজন কত।
- Crystallography : এই পদ্ধতির সাহায্যে একটি কেলাসের (crystal) গঠন সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
- Optical rotation : এই পদ্ধতি দিয়ে অপ্রতিসম অণুগুলির ত্রিমাত্রিক গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই নিয়ে “বিজ্ঞান”-এ আগেই আলোচনা করা হয়েছে, আগ্রহী পাঠক এখানে ক্লিক করে পড়তে পারো।
এইসব পদ্ধতি থেকে বোঝা যায় শুরুর ছোট ছোট অণুগুলি থেকে কাঙ্খিত জটিল অণুটি তৈরি হলো কিনা। কিন্তু বিক্রিয়া যেমনখুশি চাইলেই তো হয়না। শুধু উপাদানগুলিকে একত্রিত করলেই তো আর বিক্রিয়াটি হবে না। অনেক সময় বিক্রিয়াটিকে “উস্কে দিতে” একটি অনুঘটকের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কী এই অনুঘটক?
অনুঘটক ও অনুঘটন (Catalyst and catalysis) কি?
ঘটক শব্দের সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। যে মানুষ একটি সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে কিন্তু নিজে সম্পর্কে জড়ায় না, বরং তার উপস্থিতিতে সম্পর্কটি খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়, সে-ই ঘটক। অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তোমরা হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছো। ব্যাস, তাহলে অনুঘটক ব্যাপারটিও তোমরা বুঝতে পারবে। একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায়, অর্থাৎ অণু-পরমাণু স্তরে, কিছু পদার্থ এই রকমের কাজ করে থাকে, এদেরই আমরা নাম দিয়েছি অনুঘটক।
আসলে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া এমন একটি ঘটনা যেখানে এক বা একাধিক অণু এবং পরমাণুর মধ্যে বন্ধনের (bonds) ভাঙ্গা বা গড়া অথবা দুইই ঘটে। এই বন্ধন ভাঙ্গা বা গড়ার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই এইসব রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি শুরু করতে কখনও কখনও বাইরে থেকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণত কোন অনুঘটক একটি বিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকলে বিক্রিয়ার সক্রিয়করণ শক্তি (activation energy), অর্থাৎ বিক্রিয়া শুরু করতে ন্যূনতম যত পরিমাণ শক্তি লাগে, সেটি কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু সেই অনুঘটক রাসায়নিক সাম্যাবস্থার কোনো পরিবর্তন করে না। অর্থাৎ, বিক্রিয়ার শেষে কি পড়ে থাকবে, কতটা থাকবে, তাতে অনুঘটকের থাকা না-থাকাতে কোনো তফাৎ হয়না। এটি কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে নিচের ছবিটি দেখো (চিত্র-২)। এখানে একটি বিক্রিয়ায় ‘ক’ এবং ‘খ’ মিলে ‘গ’ এবং ‘ঘ’ তৈরি করছে। ধরে নাও, “ঙ” এখানে অনুঘটকের কাজ করছে। “ঙ”-র অনুপস্থিতিতে বিক্রিয়া কাটা দাগের পথে যায় এবং “ঙ”-র উপস্থিতিতে যায় মোটা দাগের পথে।
দেখতেই পাচ্ছো, অনুঘটকের উপস্থিতিতে শক্তি লাগে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আর কম শক্তি লাগার ফলে বিক্রিয়ার গতি যায় বেড়ে। অর্থাৎ, অনুঘটক না থাকলে এই বিক্রিয়াই অনেক বেশী শক্তি ও সময় খরচে “ক + খ” থেকে “গ + ঘ” তৈরি করতো। ধরো, তুমি আগে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় একটি পাহাড়ের উপর দিয়ে আসতে, কাটা দাগের পথে। এখন একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়েছে, এবং তুমি সেই পথে (মোটা দাগ) বাড়ি আসো। অনুঘটক অনেকটা সুড়ঙ্গ পথে বাড়ি ফেরার মতো ঘটনা। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে শক্তি ও সময় বাঁচাতে অনুঘটকের ভূমিকা অনেকটাই [1]। অনুঘটকের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হওয়া এই বিক্রিয়াগুলিকেই বলা হয় অনুঘটন (catalysis)।
শুধু তাই নয় অনেক সময় কোন নির্দিষ্ট বিক্রিয়া (selective reaction) সম্পন্ন করতে অর্থাৎ অনেকগুলি সম্ভাব্য বিক্রিয়ার কোনো একটিকে বেছে নিতে বা নির্দিষ্ট কোনো ত্রিমাত্রিক গঠন (stereo selectivity) পেতেও অনুঘটকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। আমাদের আজকের আলোচনা এই সব কিছু নিয়েই।
অনুঘটকের আর একটি মস্ত বড় গুণ হল, সে বিক্রিয়ায় সাহায্য করলেও বিক্রিয়ার শেষে নিজে অপরিবর্তিত থেকে যায়। ফলে কোনো অনুঘটক বিক্রিয়ায় খুব অল্প পরিমাণে উপস্থিত থাকলেই যথেষ্ট। একটি একটি করে অণু অনুঘটকের হাত ধরে বিক্রিয়াজাত পদার্থে পরিণত হয়ে সেটিকে ছেড়ে দেয় পরের অণুর জন্য। অনেক সময় বৃহৎ শিল্প উৎপাদনে খরচ কমাতে বিক্রিয়ার শেষে অনুঘটকের পুনরূদ্ধার করে পুনরায় ব্যবহার করা হয়। তাহলে শুধু সময় আর শক্তি নয়, অনুঘটকের ব্যবহারে খরচও কমে। শুনলে অবাক হবে, আজকের দিনে শিল্প ক্ষেত্রে প্রায় ৯০% বিক্রিয়াই অনুঘটন প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।
প্রকৃতিতে উপস্থিত অনুঘটক
আণবিক গঠন অনুসারে অনুঘটককে মূলত তিনটে ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন ধাতব, উৎসেচক এবং জৈব অনুঘটক ইত্যাদি [2]। এক কথায়:
- ধাতব অনুঘটক হলো এমন অনুঘটক যাদের গঠনে কোনো এক বা একাধিক ধাতু থাকে,
- উৎসেচক বলতে আমরা এনজাইম বুঝি, যাকে ইংরাজি তে Bio-catalyst বলা হয়,
- জৈব অনুঘটক (OrganoCatalyst) হ’ল ছোট ছোট জৈব যৌগ যারা অনুঘটক হিসাবে কাজ করে থাকে। জৈব অনুঘটককে “সাম্প্রতিককালের আমদানি” বলা চলে। সেভাবে দেখতে গেলে ২০০০ সালের আগে পর্যন্ত জৈব অনুঘটক নিয়ে গভীর ভাবে কোন কাজ হয়নি।
প্রথমে, উৎসেচক অনুঘটন (enzyme catalysis বা bio-catalysis) দিয়ে শুরু করা যাক। তোমরা যদি ভাবো অনুঘটকের ধারণাটি ল্যাব থেকে এসেছে, তা কিন্তু নয়। প্রকৃতিতে অনেক অনুঘটক রয়েছে, এমন কি আমাদের শরীরেও অনুঘটকের কোন কমতি নেই। আমাদের শরীরে থাকা অনুঘটকগুলোকে আমরা উৎসেচক (enzyme) নামে চিনি।
আমাদের চারপাশে থাকা প্রায় সব সজীব জিনিসের মধ্যেই বিভিন্ন রকমের উৎসেচক থাকে। কখনও যদি আমাদের শরীরে এই সব উৎসেচকের মাত্রার হেরফের হয় তখন বেশ অসুবিধায় পড়ি আমরা। যেমন ধরো, ল্যাক্টেস উৎসেচক (Lactase enzyme) দুধ ও দুধজাত খাদ্যের পাচনে সাহায্য করে। এই উৎসেচক শুধু আমাদের শরীরেই নয় অন্যান্য প্রাণীদের শরীরেও থাকে। আবার লাইপেস (Lipase) খাদ্যে থাকা ফ্যাটকে হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়া, ওষুধ তৈরিতে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে, কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন ডিটারজেন্ট, জৈব জ্বালানি (Bio-fuel) বা কাগজ তৈরিতেও উৎসেচকের ভুমিকা অনস্বীকার্য [3]।
ধাতুর সাহায্যে গবেষণাগারে অনুঘটন
এরপর আসি ধাতব অনুঘটক (metal catalysis) বা অর্গানোমেটালিক্স বিক্রিয়ার কথায় (Organometallics reaction)।
প্রকৃতি প্রয়োজন অনুযায়ী অনায়াসে অজস্র অণু তৈরি করে। তা সে ফুলের রং হোক বা গন্ধ, সাপের বিষ হোক বা ব্যাকটেরিয়ানাশক পেনিসিলিন কিংবা নানা রকমের প্রোটিন বা ভিটামিন অণু। এগুলির কাঠামো যেমন জটিল, তেমনই আকর্ষণীয়। এদের গঠন দেখলে বুঝতে পারবে, এগুলি অনেক রকমের কার্বন-কার্বন, কার্বন-নাইট্রোজেন, কার্বন-অক্সিজেন ইত্যাদি বন্ধন দিয়ে তৈরি, যেমন পেনিসিলিন (চিত্র-১)।
যদি আমরা প্রকৃতির অনুকরণ করে নিজেদের ইচ্ছামতো অণু তৈরি করতে চাই, তাহলে যেকোনো রকমের কার্বন-কার্বন বা অন্য রকমের বন্ধন তৈরি করার কৌশল আমাদের জানা দরকার। প্রকৃতি এগুলো বানায় বিভিন্ন রকম এনজাইম বা উৎসেচক দিয়ে। যে সব বিক্রিয়া/বন্ধন তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে হিমসিম খান, উৎসেচকের উপস্থিতিতে সেগুলি খুব সহজেই বানিয়ে ফেলা যায়।
এই উৎসেচকগুলো বেশ জটিল গঠনের যৌগ, প্রকৃতি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এদের বানিয়েছে। আমরা এখনও এইরকম উৎসেচক বানাতে পারি না। তাহলে উপায়? এখানেই জৈব রসায়নের (organic chemistry) পরিশ্রম শুরু। জৈব রসায়ন গবেষকরা বিভিন্ন ধরণের C-C, C-N, C-O, N-H ইত্যাদি বন্ধন তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেছেন। আর এই উদ্দেশ্য সাধনে কিছু অনুঘটকও বানাতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকটি উদাহরণ নীচে দেওয়া হল। লক্ষ্য করে দেখো, এই অনুঘটকগুলিতে একটি করে ধাতু উপস্থিত আছে।
১) উদ্ভিদ সরাসরি বায়ু থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে না। রাসায়নিক সারগুলির একটি কাজ হ’ল চাষাবাদের উপযোগী উদ্ভিদের শরীরে প্রয়োজন মতো নাইট্রোজেনের যোগান দেওয়া। রাসায়নিক সার উৎপাদনে অ্যামোনিয়ার ভূমিকা অপরিসীম। অ্যামোনিয়া নামের যৌগের গঠন দেখলে বুঝতে পারবে তা নাইট্রোজেন (N) আর হাইড্রোজেন (H) এই দুটি মৌল দিয়ে তৈরি। তাহলে দুটিকে মিশিয়ে দিলেই তো অ্যামোনিয়া তৈরি হয়ে যাবার কথা। কিন্তু না, তা তো হয়না। কারণ নাইট্রোজেন বেশ নিষ্ক্রিয় মৌল, সহজে কারোর সাথে বিক্রিয়া করে না। তাহলে উপায় কী? বিজ্ঞানী হেবার (Fritz Haber) লোহাকে অনুঘটক রূপে ব্যবহার করে অ্যামোনিয়া তৈরির এক সহজ কৌশল বের করলেন। এর আশীর্বাদে রাসায়নিক সংস্থার হাত ধরে হৈ হৈ করে শুরু হয়ে গেলো অ্যামোনিয়ার শিল্প উৎপাদন এবং রাসায়নিক সার উৎপাদনে তার ব্যবহার। এই আবিষ্কারের সুবাদে ১৯১৮ সালে বিজ্ঞানী হেবার-কে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।
সাধারণত লৌহ চূর্ণকে কোন ধাতব অক্সাইডের উপরে স্থাপন করে নিচের বিক্রিয়াটিতে অনুঘটক হিসাবে ব্যবহার করা হয় [4]।
২) বিজ্ঞানী নয়োরি (Ryoji Noyori) দ্বারা আবিষ্কৃত অনুঘটক দিয়ে অপ্রতিসম হাইড্রোজিনেশন (asymmetric hydrogenation) বিক্রিয়া সহজে করা যায় (চিত্র-৩) [5]। এই আবিষ্কারের ফলে বিভিন্ন রকম ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যেমন অ্যান্টিবায়টিক Carbapenem, ব্যাকটেরিয়ানাশক levofloxin, রক্ত তঞ্চন রোধী (anticoagulant drugs) (R)-warfarin, অ্যান্টি সাইকিয়াট্রিক BMS১৮১১০০, ইত্যাদি। এই অনুঘটকের গঠনের মূলে আছে রুথেনিয়াম ধাতু। ২০০১ সালে অপ্রতিসম হাইড্রোজিনেশন অনুঘটনের সুবাদে বিজ্ঞানী নয়োরি (Ryoji Noyori) ও নোয়েলস (Williams S. Knowles) কে এবং অপ্রতিসম জারণ বিক্রিয়ার (asymmetric oxidation) জন্য বিজ্ঞানী শার্পলেস (K. Barry Sharpless) কে নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত করা হয়।
অনুঘটক যখন জোড়ার একজনের পক্ষ নেয়
এই শেষের বিক্রিয়াটা বেশ মজার। ওখানে ধাতব অনুঘটকটি একটি কিটোনকে (চ) বিজারিত করে একটি অপ্রতিসম অ্যালকোহল (ছ) তৈরি করছে। এটি যাকে বলে অপ্রতিসম অনুঘটন (asymmetric catalysis), তার উদাহরণ। অর্থাৎ একটি অনুঘটক আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অপ্রতিসম অণু তৈরি করতে পারছে। কিন্তু অপ্রতিসম অণু মানে কী?
আমাদের দুটি হাত সামনা সামনি রাখলে দেখবে একটা যেন ঠিক অন্যটির প্রতিবিম্ব। কিন্তু এক হাতের দস্তানা অন্য হাতে পড়ার চেষ্টা করে দেখো, পড়া যাচ্ছে না। আশ্চর্য! তাই না? দুটিকেই তো এক দেখতে, তাহলে এক হাতের দস্তানা অন্য হাতে হচ্ছে না কেনো? একেই বলে কাইরালিটি (chirality) বা Handedness। অর্থাৎ, দুটি বস্তু একে অন্যের আয়নার প্রতিবিম্ব (mirror image) কিন্তু এক নয়, আলাদা। (কাইরাল, asymmetric বা অপ্রতিসম শব্দ গুলি এখানে সমার্থক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।)
অণুর জগতেও এই ব্যাপারটা হয়। কিছু অণুর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে একই কেমিকাল ফর্মুলা-ওয়ালা অণুর দুটো ত্রিমাত্রিক গঠন হয় যেগুলো একে অপরের প্রতিবিম্ব। এই কাইরাল অণুগুলিকেই অপ্রতিসম অণু বলা হয়, এবং দুটি গঠনকে একে অন্যের এনানশিওমার (enantiomer) বলে। দুটি এনানশিওমার-এর ১:১ মিশ্রণকে রেসিমিক মিশ্রণ (racemic mixture) বলা হয়। অর্থাৎ এই মিশ্রণে দুটি এনানশিওমার সমান পরিমাণে আছে।
কাইরাল ব্যাপারটি আরো ভালো করে বুঝতে চাও? তাহলে এ বিষয় নিয়ে একটি মজার গেম আছে, এখানে ক্লিক করে নিজেই খেলে দেখো।
এই এনাশিওমার-গুলি আণবিক সজ্জার দিক থেকে গঠন যেহেতু এক, এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মও প্রায় এক রকম। যেমন, গলনাঙ্ক (melting point), স্ফুটনাঙ্ক (boiling point), ঘনত্ব (density), দ্রাব্যতা (solubility), ইত্যাদি সব এক। শুধু তাই নয়, এদের NMR, IR, Mass spectroscopy দিয়ে পরীক্ষা করলেও বোঝবার উপায় নেই যে কে কোনটা। কেবল মাত্র এদের Optical rotation আলাদা, একজনের মান ধনাত্মক হলে অন্যজনের হয় ঋনাত্মক। বলা বাহুল্য, এই জন্য একটি এনানশিওমারিক মিশ্রণ থেকে দুটি এনানশিওমারকে আলাদা করা অত্যন্ত পরিশ্রম সাধ্য এবং ব্যায় সাপেক্ষ ব্যাপার।
আবার প্রকৃতিতে এমন অনেক অণু আছে যাদের কেবলমাত্র একটি এনানশিওমার (enantiomer) অবস্থায় পাওয়া যায়, যেমন প্রাকৃতিক অ্যামাইনো অ্যাসিড-গুলি। এখন ব্যাপার হচ্ছে আমাদের শরীর কিন্তু এই সব এনানশিওমারদের চিনতে পারে। এক কথায়, আমাদের শরীর হল কাইরাল। সজীব বস্তুতে থাকা প্রোটিন, ডিএনএ, কারবোহাইড্রেট, হরমোন এরা সবাই কাইরাল বা অপ্রতিসম। তাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কোন একটি অণুর একটি এনানশিওমার আমাদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করলেও অন্যটি হয় নিষ্ক্রিয় নয়তো আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ১৯৬০-এর দশকে থ্যালিডোমাইড ওষুধ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এর একটি বড় উদাহরণ। এই অণুর একটি এনানশিওমার গর্ভবতী মহিলাদের ওষুধ হিসাবে ভালো কাজ করলেও অন্য এনানশিওমার-টি ভ্রুণের জন্ম ত্রুটি ঘটিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ওষুধ প্রস্তুতকারি সংস্থা ভালো এনানশিওমার-টির বদলে ভালোমন্দ দুটোর রেসিমিক মিশ্রণটি বাজারে ওষুধ হিসাবে এনেছিল। ফলে সেই সময় প্রায় ১০ হাজার বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। তাহলে বুঝতেই পারছো এই ধরণের অপ্রতিসম অণু তৈরি করার কতটা প্রয়োজন আছে।
এনানশিওমার-এর উদাহরণ হিসেবে কার্বন-ভিত্তিক অণুগুলির কথা ভাবা যাক। কার্বন চারটি বন্ধন তৈরি করতে পারে, এবং এই চারটি বন্ধন কিন্তু একই তলে নয় (চিত্র-৪ দেখো)। একটি পিরামিডের কেন্দ্রে যদি কার্বন থাকে তাহলে পিরামিডের চারটি কোণে থাকে কার্বনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন গ্রুপগুলো। চিত্র-৪ এ একটা কার্বন চারটি আলাদা আলাদা গ্রুপের সাথে বন্ধন তৈরি করেছে এবং দুটি আলাদা অণু তৈরি হয়েছে। এরা দেখতে একে অন্যের প্রতিবিম্ব, ঠিক আমাদের দু’হাতের মতই, কিন্তু এক নয়। আবার দু হাতের মতোই একটিকে আয়নায় প্রতিফলিত করলে অন্যটিকে পাওয়া যায়। এটিই কাইরাল বা অপ্রতিসম অণুর উদাহরণ। যেহেতু এরা একে অন্যের প্রতিবিম্ব, তাই এরা একে অপরের এনানশিওমার।
উপরে যে নয়োরি বিজারণ বিক্রিয়াটির কথা বলা হলো, তাতে কিন্তু দুটি এনানশিওমার তৈরী হওয়ারই সম্ভাবনা ছিল। এটি বুঝতে নিচের ছবিটি ভালো করে দেখ (চিত্র-৫)। ধরা যাক, শুরুর কিটোন অণুটির সঙ্গে যুক্ত মিথাইল (Me) এবং মিথাইল এস্টার (COOMe) গ্রুপগুলি এই কাগজের যথাক্রমে উপর এবং নিচের তলে অবস্থান করছে। তাহলে হাইড্রোজেন যুক্ত হওয়ার দুটি সম্ভাবনা হতে পারে: হয় এই অণুর ডান দিক থেকে কিংবা বাম দিক থেকে। যে দিক থেকে হাইড্রোজেন যুক্ত হচ্ছে, তার ভিত্তিতে দুটি আলাদা অণু তৈরি হবে। এইভাবে দুটি এনানশিওমার-ই তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কিন্তু অপ্রতিসম অনুঘটকের উপস্থিতিতে সেটা হয়না। অপ্রতিসম অনুঘটক হাইড্রোজেন-কে একদিক থেকেই যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়, ফলে একটি এনানশিওমার-ই বেশি করে তৈরি হয়। এটিই অপ্রতিসম অনুঘটকের বিশেষত্ব। উপরোক্ত নয়োরি অনুঘটকের উদাহরণে (চিত্র-৪) একটি এনানশিওমার তৈরি হচ্ছে ৯৯.৫% আর অন্যটি হচ্ছে মাত্র ০.৫% (দুটি সংখ্যার তফাৎকে বলে enantiomeric excess, সংক্ষেপে ee; এক্ষেত্রে তাই ee হবে- ৯৯.৫-০.৫ = ৯৯%)। এই ধরণের বিক্রিয়াকেই বলে অপ্রতিসম অনুঘটন বিক্রিয়া [5b]।
ধাতুবিহীন অনুঘটক
একটি জিনিস লক্ষ্য করে থাকবে, গবেষণাগারে আবিষ্কৃত অনুঘটকের উদাহরণগুলিতে একটি ধাতুর ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, প্রকৃতিদত্ত যে অনুঘটকের কথা আমরা জানি, অর্থাৎ উৎসেচক, তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের যে অংশটিতে বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় (active site), তাতে কোনো ধাতু নেই। কিন্তু তাও তারা দিব্যি অনুঘটকের কাজ করে। তাহলে কি ধাতু ছাড়াও অনুঘটন সম্ভব? ছোট ছোট জৈব অণু দিয়েও কি অনুঘটন সম্ভব? এই প্রশ্নগুলি থেকেই শুরু হল জৈব রসায়নের নতুন অধ্যায় – জৈব অনুঘটক (organocatalyst)।
গত শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত জৈব অনুঘটক নিয়ে সামান্যই কাজ হয়েছিলো। সম্ভবত সেসময় গবেষকরা মূলত নতুন নতুন ধাতব অনুঘটক তৈরিতে বেশি উৎসাহী ছিলেন। যদিও জৈব অনুঘটন বিক্রিয়ার প্রথম উদাহরণ পাওয়া যায় ১৮৫৯ সালে। বিজ্ঞানী ফন লিবিগ (Justus von Liebig) অ্যাসিটাল্ডিহাইড-কে অনুঘটক রূপে ব্যবহার করেন [2]। ১৮৯৬ -এ এমিল নয়েভেনেগেল (Emil Knoevenagel) প্রাইমারি/সেকেন্ডারি অ্যামিনকে অনুঘটক রূপে ব্যবহার করে বিটা-কিটোএস্টার বা ম্যালোনেটএস্টারের সঙ্গে অ্যাল্ডিহাইডের অ্যান্ডল বিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন [7]। এছাড়া ১৯১২ সালে সিঙ্কোনা অ্যাল্কালয়েড অনুঘটকের উপস্থিতিতে অ্যাসিটালডিহাইড অণুতে হাইড্রোজেন সায়ানাইডের যুক্ত হওয়ার বিক্রিয়া প্রকাশিত হয়। এই ইতিহাসে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য বিক্রিয়া হল ১৯৭১ সালে প্রকাশিত প্রোলিন অনুঘটকের উপস্থিতিতে অপ্রতিসম অ্যালডল বিক্রিয়া (Hajos–Parrish–Eder–Sauer–Wiechert reaction)।
তবে এই রকমের কিছু বিচ্ছিন্ন উদাহরণ বাদ দিলে গত শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত জৈব অনুঘটক দিয়ে সেভাবে কোন বিস্তারিত গবেষণা হয়নি। কীভাবে এই বিক্রিয়াগুলি সম্পন্ন হয় তার সঠিক বিক্রিয়া পথও অজানা ছিল। ধাতব অনুঘটকের প্রচলিত ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে জৈব যৌগের সাহায্যে অনুঘটন তাই নিঃসন্দেহে একটি নতুন ব্যাপার। বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই ধরণের অনুঘটন বিক্রিয়ার উদাহরণ হাতে গোনা ছিল।
জৈব অনুঘটকের বিশেষত্ব হ’ল, এর গঠনে কোন রকম ধাতু থাকে না। অর্থাৎ এগুলি আপাদমস্তক ছোট বা মাঝারি আকারের জৈব যৌগ। ২০০০ সালে বেঞ্জামিন লিস্ট এবং ডেভিড ম্যাকমিলানের হাত ধরে জৈব অনুঘটকের নতুন করে পথ চলা শুরু হলো (এছাড়াও আরো অনেক বিজ্ঞানীর অবদান রয়েছে)।
L-প্রোলিন-কে (L-proline) অনুঘটক হিসাবে ব্যবহার করে লিস্ট প্রথম দেখালেন যে অপ্রতিসম অ্যালডল বিক্রিয়া করা সম্ভব [8]। এখানে প্রোলিন একটি ছোট্ট জৈব যৌগ, একটি খুব পরিচিত প্রাকৃতিক অপ্রতিসম অ্যামাইনো অ্যাসিড।
এই গবেষণাপত্র প্রকাশের দু’মাসের মধ্যে ম্যাকমিলান নিজের তৈরি অনুঘটক (MacMillan’s catalyst) ব্যবহার করে দেখালেন প্রথম অ্যামিন ক্যাটালাইজড অপ্রতিসম ডিলস-অলডার বিক্রিয়া [9]। ম্যাকমিলানের এই অনুঘটক কিন্তু সম্পূর্ণরূপে ল্যাবে বানানো। তবে এই দুটি বিক্রিয়াই উচ্চমানের এনানশিওমার সমৃদ্ধ (enantio enrich) বিক্রিয়াজাত পদার্থ তৈরি করে (চিত্র-৬)। ডেভিড ম্যাকমিলানই প্রথম “জৈব অনুঘটন” (Organocatalysis) শব্দ বন্ধের প্রচলন করেন।
দুই নোবেলজয়ীর কাজের তফাৎ কী?
বেঞ্জামিন লিস্ট আর ডেভিভ ম্যাকমিলান দুজনেরই কাজ অপ্রতিসম জৈব অনুঘটক নিয়ে, কিন্তু দুজনের বিক্রিয়া পদ্ধতিতে একটু তফাৎ আছে। এক কথায় বললে, দুই বিক্রিয়ার গতিপথের মূল পার্থক্য হ’ল, লিস্ট-এর বিক্রিয়া যায় ইন্যামিন (enamine) অণুর মধ্য দিয়ে, আর ম্যাকমিলানের বিক্রিয়া পথ যায় ইমিনিয়াম আয়নের (iminium ion) মধ্য দিয়ে (চিত্র-৭)।
প্রাথমিক যে দুটি ভিত্তির উপর ভর করে জৈব অনুঘটনের কাজ নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছিলো, তা হল ইন্যামিন এবং ইমিনিয়াম আয়ন অন্তর্বর্তী দশা (intermediate)। যে অণুতে একটি দ্বি’বন্ধন (ene) এবং সেই সঙ্গে একটি অ্যামিন (amine) গ্রুপ পাশাপাশি থাকে, তাকে ইন্যামিন (ene+amine = enamine) বলা হয়। সাধারণত ইন্যামিনগুলি ইলেকট্রন সমৃদ্ধ (electron rich) হয়। ফলে যারা ইলেক্ট্রন পছন্দ করে, (electrophile) (বা ইলেকট্রনের অভাব আছে এমন), তাদের সাথে এদের সহজেই বিক্রিয়া হয়। অ্যাল্ডিহাইড বা কিটোনের আলফা স্থানে (কার্বনিল কার্বনের পাশের কার্বনে) প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া করে এদের তৈরি করা হয় (চিত্র ৭)।
অন্যদিকে, যে অণুতে একটি নাইট্রোজেন পরমাণু একটি দ্বি-বন্ধন ও দুটি এক বন্ধনের দ্বারা যুক্ত হয়ে ধনাত্মক আধানযুক্ত অণু তৈরি করে, তাকে ইমিনিয়াম আয়ন বলে। যেহেতু ইমিনিয়াম আয়নে নাইট্রোজেন পরমাণু ধনাত্মক আধানযুক্ত, স্বভাবতই ইমিনিয়াম আয়নগুলিতে ইলেক্ট্রনের ঘাটতি (electron deficient) থাকে। ফলে ইলেকট্রন সমৃদ্ধ গ্রুপের সঙ্গে সহজেই বিক্রিয়া করে।
ইমিনিয়াম আয়নগুলি হাইড্রোলিসিস হয়ে পুনঃরায় অ্যামিন অণুকে মুক্ত করে। এবং এই অ্যামিন অণুগুলি আবার অন্য কার্বনিল অণুরসাথে যুক্ত হয়ে অনুঘটন বিক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে চলে।
ধাতব অনুঘটক ফেলে জৈব অনুঘটক?
এই অবধি পড়ে মনে হওয়া স্বাভাবিক, দিব্যি তো ধাতব অনুঘটক দিয়ে কাজ চলে যাচ্ছিল, সেখানে জৈব অনুঘটকের প্রয়োজন কী?
তুলনামূলকভাবে দেখলে ধাতব অনুঘটকগুলি অনেক সময়ই বায়ু এবং জল (বাতাসে উপস্থিত জলীয়বাষ্প) দ্বারা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, সুতরাং বুঝতেই পারছো এগুলি অত্যন্ত যত্ন সহকারে ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া ধাতব অনুঘটকগুলি অনেক ক্ষেত্রে বেশ ব্যায় সাপেক্ষ। অন্যদিক থেকে জৈব অনুঘটকগুলি অনেক সময় প্রাকৃতিক উৎস থেকে সহজে পাওয়া যায় (যেমন L-প্রোলিন একটি প্রাকৃতিক অ্যামাইনো অ্যাসিড), ফলে এদের দামও কম এবং সহজে বায়ু বা বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্প দ্বারা নষ্ট হয় না। যেহেতু জৈব অনুঘটকগুলো অনেক বেশি টেকসই তাই ব্যবহার করাও অনেক সহজ। আবার পরিবেশ এবং তার দূষণের দিক থেকে দেখতে গেলে ধাতব অনুঘটকের তুলনায় জৈব অনুঘটক অনেক বেশি পরিবেশ বান্ধব। সর্বোপরি জৈব অনুঘটক গুলো রাসায়নিক বর্জ্য থেকে সহজে আলাদা করে পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব। আর এই সব কারণে শিল্প ক্ষেত্রে জৈব অনুঘটকের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা “অপ্রতিসম জৈব অনুঘটন বিক্রিয়া” সম্পর্কে জানতে পারলাম। পরের পর্বে আমরা এই বিক্রিয়াগুলির সমন্ধে আরও বিশদে জানতে পারবো। সেই সঙ্গে এই ধরণের অনুঘটনের সীমাবদ্ধতাগুলি কী কী? কেন এই বিষয়ে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হলো? ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা করা হবে। (চলবে)
তথ্য সূত্র ও টুকিটাকিঃ
1. https://www.youtube.com/watch?v=apHOmg8PXH0&t=1223s
2. Chem. Revw. 2007, 107, 5413
3. Catalysis, 2018, 8, 237
4. https://www.nobelprize.org/uploads/2018/06/haber-lecture.pdf
5. (a) https://www.nobelprize.org/prizes/chemistry/2001/summary/; (b) J. Am. Chem. Soc. 1987, 109, 5856
6. S. Mukherjee; Current Sc. 2021, 121, 1148. বিশেষ সহযোগিতার জন্য প্রফেসর শান্তনু মুখার্জি কে ধন্যবাদ জানাই।
7. Ber. Dtsch. Chem. Ges. 1896, 29
8. List et al.; J. Am. Chem. Soc., 2000, 122, 2395
9. MacMillan et al.; J. Am. Chem., Soc., 2000, 122, 4243১০। লেখাটি রিভিউ করার জন্য প্রফেসর সুভাষ চন্দ্র পান, ডঃ অর্ণব রুদ্র এবং ডঃ সুজিত মণ্ডল কে ধন্যবাদ জানাই। প্রসঙ্গত ডঃ সুভাষ পান, প্রফেসর বেঞ্জামিন লিস্টের কাছে জৈব অনুঘটক নিয়ে পিএইচডি করেছিলেন।