গামা-রে অ্যাস্ট্রোনমি হলো জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি অভূতপূর্ব সুন্দর এবং আকর্ষণীয় গবেষণার ক্ষেত্র। প্রতিনিয়ত আমাদের মাথার উপর অসংখ্য অতি শক্তিশালী চার্জ কণা (charged particles) বর্ষিত হচ্ছে। এই চার্জ কণাকে আমরা কসমিক-রে (cosmic ray) বা মহাজাগতিক রশ্মি বলে থাকি। কসমিক-রের প্রায় ৯০% প্রোটন, ৯% হিলিয়াম এবং বাকিগুলো উচ্চ ভরযুক্ত পরমাণু। কসমিক-রের গতিশক্তি বিপুল। এতটাই বেশী, যে এতো গতিশক্তি কোনো পরমাণুকে দিতে পারে এমন গবেষণাগার বা কারখানা আমাদের পৃথিবীতে নেই। অথচ প্রকৃতির কারখানায় অনবরত এই শক্তিশালী কসমিক রে তৈরি হয়ে চলেছে।
এখন স্বভাবতই আমাদের মনে এই প্রশ্ন আসে যে কীভাবে প্রকৃতির কারখানা এত শক্তিশালী কণা তৈরি করতে পারছে? গামা-রে অ্যাস্ট্রোনমি আমাদেরকে মহাবিশ্বের এই ধাঁধার সমাধান করতে সাহায্য করে। অ্যাস্ট্রোনমির অন্যান্য শাখার তুলনায় গামা-রে অ্যাস্ট্রোনমি অপেক্ষাকৃত অনেক নবীন। বিগত ১০ বছরে গামা-রে অ্যাস্ট্রোনমি এর স্বর্ণযুগে প্রবেশ করেছে। আজ আমরা এই নতুন অ্যাস্ট্রোনমির কথা জানব।
শক্তির মাপকাঠি
প্রথমেই বলি যে, পদার্থবিদ্যার অনেক বিভাগে শক্তির একক হিসেবে আমরা ইলেকট্রন ভোল্ট (eV) ব্যবহার করে থাকি (১ eV = ১.৬ x ১০–১২ erg)। এই মহাজাগতিক রশ্মির বা কসমিক-রের গতিশক্তি ১০২০ eV (অর্থাৎ, ১ এক পর কুড়িটা শূন্য) পর্যন্ত হতে পারে । এ যে কত বড় শক্তি তা আন্দাজ করা যায় এই উদাহরণ থেকে – এই শক্তি ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে যাচ্ছে এমন একটা ৫০ গ্রাম টেনিস বলের গতিশক্তির সমান। কিন্তু, এই টেনিস বলের মধ্যে সঞ্চিত শক্তি ১০২৪গুলি পারমাণবিক কণার মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। সুতরাং, টেনিস বলের এক একটি কণার মধ্যে যে শক্তি থাকে তার পরিমাণ ১ ইলেকট্রন ভোল্টেরও কম হয়।
অন্যদিকে কসমিক-রের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ শক্তি, অর্থাৎ ১০২০ eV শক্তি, মাত্র একটি কণার মধ্যেই সঞ্চিত থাকে! এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, কি অসীম পরিমাণ শক্তি এই কসমিক-রে ধারণ করতে পারে। আজ পর্যন্ত আমরা পৃথিবীতে ২০ বছর ধরে ফ্রান্স আর সুজারল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত সার্ন গবেষণাগারে যে গতিশক্তি বাড়ানোর যন্ত্র (accelerator) “লার্জ হাড্র্ন কোলাইডার (LHC)” বানিয়েছি, তাতে সর্বোচ্চ প্রায় ১৩ TeV-এর প্রোটন কণা বানাতে পেরেছি। (টেরাইলেকট্রন ভোল্ট; ১ TeV = ১০১২ eV = ১০৯ keV (কিলো ইলেকট্রন ভোল্ট) = ১০৬ MeV (মেগা ইলেকট্রন ভোল্ট) = ১০৩ GeV (গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট)।) কসমিক-রের শক্তি এর প্রায় কোটিগুণ বেশি। বিভিন্ন ধরণের শক্তি সম্বন্ধে ধারণা তৈরির জন্য আলোর বর্ণালী, তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং তাদের উৎসের সাথে শক্তির একটা রেখাচিত্র চিত্র ১-এ দেওয়া হল।
মহাজাগতিক রশ্মি আবিষ্কারের ইতিহাস
এবার একটু ইতিহাসের পাতা ওল্টানো যাক। ১৯১২ সালে এই মহাজাগতিক রশ্মি অর্থাৎ কসমিক-রের আবিষ্কার করেছিলেন এক অস্ট্রিয়ান গবেষক, ভিক্টর হেস্ (Victor Hess)। তিনি গ্যাস বেলুনে চড়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উঠে এক ধরনের বিকিরণ মাপতে থাকেন। এই বিকিরণকে আমরা আয়োনাইজেশন রেডিয়েশন বলে থাকি এবং এই আয়োনাইজেশন মাপার জন্য আমরা electroscope ব্যবহার করে থাকি। প্রাথমিক ভাবে এটা অনুমান করা হয়েছিল যে, এই আয়োনাইজেশন রেডিয়েশনের জন্য মূলত আমাদের ভূপৃষ্ঠ থেকে আসা চার্জ কণা বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি দায়ী। এবং এর ফলস্বরূপ, ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে গেলে এর প্রভাব ক্রমশ কমতে থাকবে। ভিক্টর হেস্ এই প্রচলিত ধ্যান-ধারণা কে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দেখলেন যে বেলুনে করে যত উপরের দিকে যাচ্ছিলেন ততো আয়োনাইজেশন রেডিয়েশন-এর প্রভাব বাড়তে থাকছিল। এই রেডিয়েশন যদি পৃথিবী সমতল পৃষ্ঠ থেকে নির্গত উচ্চ ক্ষমতাশক্তি সম্পন্ন চার্জ কণা বা তেজস্ক্রিয় রশ্মির জন্য সৃষ্টি হতো তবে উচ্চতার সাথে সাথেই এই বিকিরণ এর প্রভাব ক্রমশ কমতে থাকত। অথচ ভিক্টর হেস্ দেখলেন যে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো হচ্ছে।
এই অভূতপূর্ব পর্যবেক্ষণ থেকে ভিক্টর হেস্ এই সিদ্ধান্তে পৌছেলেন যে, এই আয়োনাইজেশন রেডিয়েশন সৃষ্টিকারী চার্জ কণা ভূপৃষ্ঠ থেকে আসছে না, বরং তা আসছে মহাশূন্য থেকে এবং সেই জন্যই এই বিকিরণের প্রভাব উচ্চতার সাথে সাথে বাড়তে থাকছে। এই চার্জ কণাগুলোকেই পরবর্তীকালে কসমিক-রে বলা হয়ে থাকে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য প্রফেসর হেস্ কে ১৯৩৬ সালে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় [২, ৩ , ৪ ]।
আমাদের এই বহুদূর বিস্তৃত মহাশূন্যে অসংখ্য কসমিক-রের কারখানা আছে, যেখানে প্রচণ্ড উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ধনাত্মক ও ঋণাত্মক কণা প্রতিনিয়ত তরান্বিত (accelerated) হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই কারখানাগুলো আসলে কি ? এদের উৎপত্তিস্থলই বা কোথায়? আমরা কিভাবেই বা খুঁজে পাব এই কারখানাগুলিকে?
আমরা পদার্থবিদ্যার খুব সাধারণ একটা জ্ঞান থেকে জানি যে চার্জড কণার গতিপথ চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় বেঁকে যায়। চার্জড মহাজাগতিক রশ্মিগুলোর গতিপথও ইন্টার গ্যালাক্টিক ও ইন্টারস্টিলার চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় বেঁকে যায়। তাই, তারা যখন পৃথিবীর সীমানায় পৌঁছায়, তখন ঠিক কোথা থেকে এসেছে তা বোঝার উপায় থাকে না। তাই, এই কসমিক-রের উৎপত্তিস্থল সম্বন্ধে কোন সুস্পষ্ট ধারণা পাই না। এখানেই আরেকধরণের তরঙ্গ, অর্থাৎ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক গামা-রে তরঙ্গের অপরিসীম গুরুত্ব। এই গামা রে আমাদেরকে সেইসব মহাজাগতিক কারখানার সন্ধান অতি সহজেই দিতে পারে।
কিন্তু, এই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের সাথে এই কসমিক -রের সম্পর্ক কি?
মহাজাগতিক রশ্মি বা কসমিক রে আর গামা রশ্মির সম্পর্ক খুব গভীর! মহাজাগতিক রশ্মি তার জন্মের পর আশেপাশের চৌম্বক ক্ষেত্র বা তুলনামূলকভাবে কম শক্তির তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের সাথে আন্তঃক্রিয়া (interact) করে উচ্চ শক্তির গামা রশ্মি বিকিরণ করে। কসমিক রে-র শক্তি যত বেশি হয়, গামা রশ্মির শক্তিও তত বেশি হয়।
গামা-রে অ্যাস্ট্রোনমির জন্ম
গামা-রে জ্যোতির্বিজ্ঞানের শুরু ভীষণ অযাচিত ভাবে হয়। ১৯৬৩ সালে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বায়ুমণ্ডল বা জলাশয়ে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমেরিকা সন্দেহ করেছিল যে সোভিয়েত ইউনিয়ন গোপনে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে। তাই আমেরিকাও গোপনে সোভিয়েত ইউনিয়ন এর উপর নজর রাখছিলো। এই নজরদারির অঙ্গ হিসেবে আমেরিকা বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠায় যারা “ভেলা” (Vela) নামে পরিচিত। এই স্যটেলাইটগুলোর মধ্যে দুটিতে গামা-রে ডিটেক্টর বসানো ছিল। উদ্দেশ্য ছিল যে পৃথিবীতে কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চললে পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত গামা-রে অতিসহজেই এই ডিটেক্টরে ধরা পড়ে যাবে। ১৯৬৭ সালের ২রা জুলাই অতি শক্তিশালী গামা-রের একটি সিগনাল্ ধরা পড়ে এই স্যাটেলাইটে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল যে, বিজ্ঞানীরা দেখলেন এই গামা বিকিরণ ভূপৃষ্ঠ থেকে আসে নি, বরং এর উৎপত্তিস্থল মহাজাগতিক [৫ ,৬ ]।
এই মহাজাগতিক গামা-রের আবিষ্কারেই জন্ম হয়, গামা-রে অ্যাস্ট্রোনমির।
গামা-রে নির্ণায়ক পদ্ধতি
গামা-রের শক্তির অনেক রকমফের হতে পারে। তাই একটা কোন ডিটেক্টর যথেষ্ট না গামা রে-র উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। এর জন্য লাগে বিভিন্ন ধরনের ডিটেক্টর। ডিটেক্টর মানে যে যন্ত্রের উপর গামা রে পড়লে সিগন্যাল বেরোয়। আমরা কম শক্তিশালী গামা-রে (২০ মেগা ইলেকট্রন ভোল্ট থেকে ১০০ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট) সনাক্ত করতে স্যাটেলাইট এর সাহায্য নিয়ে থাকি। আর বেশি শক্তি সম্পন্ন গামা-রে কে সনাক্ত করতে আমরা ভূপৃষ্ঠের ডিটেক্টর এর সাহায্য নিয়ে থাকি। এখন স্বভাবতই আমরা প্রশ্ন করতে পারি কেন কম শক্তির গামা-রে ভূপৃষ্ঠ থেকে সনাক্ত করা যায় না? এর উত্তর আমরা এই অনুচ্ছেদ-এর শেষে পাব।
গামা-রে স্যাটেলাইট ডিটেক্টর এর মধ্যে আন্তঃক্রিয়া (interaction) করে ইলেকট্রন এবং পজিট্রন তৈরি করে। এই ইলেকট্রন-পজিট্রন মানিকজোড় ডিকেক্টরের একটা অংশ, যাকে পার্টিকেল ট্র্যাকার বলে, তারা এর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় নিজেদের গতিপথের নিদর্শন রেখে যায় (চিত্র ২)। সেই নিদর্শন থেকেই আমরা বুঝতে পারি কোন দিক থেকে গামা-রে আসছে। বর্তমানে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক গামা-রে ডিটেক্টর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নাসা-র “ফারমি লার্জ এরিয়া টেলিস্কোপ (Fermi-LAT)” (চিত্র ২)।
২০০৮ সালে এই ডিটেক্টরকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ১২ বছর ধরে এই স্যাটেলাইট ডিটেক্টর আমাদেরকে অসংখ্য গামা-রের উৎসের সন্ধান দিয়ে চলেছে [৭ ]।
অন্যদিকে ভূপৃষ্ঠের ডিটেক্টর দিয়ে একটা ভীষণ আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে গামা-রে কে পরোক্ষভাবে ডিটেক্ট করা হয়। এই পদ্ধতি বলার আগে একটা ছোটো ঘটনা বলে রাখি।
আমরা জানি যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত গামা-রে খুব ক্ষতিকারক। এরা আমাদের শরীরে ক্যানসার তৈরি করতে সক্ষম। আবার তাদেরকে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ব্যবহার করে, আমরা ক্যানসার কোষ বিনাশও করে থাকি। এই গামা-রের শক্তি (কিলোইলেকট্রন ভোল্ট থেকে মেগা ইলেকট্রন ভোল্টের ) মহাজাগতিক গামা-রের থেকে বহুগুণ কম। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই মহাজাগতিক রশ্মি কি আমাদের শরীরে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে?
উত্তর হলো-“না”। ক্যানসার সৃষ্টিকারী এত অতিশক্তিশালী গামা-রে থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে চলেছে আমাদের বায়ুমণ্ডল। গামা-রে যখন আমাদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন তা বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত অণু/পরমাণুর সাথে আন্তঃক্রিয়া (interaction) করে তৈরি করে ইলেকট্রন এবং পজিট্রন। এই উচ্চশক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রন এবং পজিট্রন থেকে আবার গামা-রে নির্গত হয়, যেগুলো পুনরায় ইলেকট্রন এবং পজিট্রনের জোড়া তৈরি করে। এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ চলতে থাকে, যতক্ষণ না বায়ুমণ্ডলে তৈরি গামা-রের শক্তি এক জোড়া ইলেকট্রন এবং পজিট্রন তৈরি করার জন্য যে নূন্যতম শক্তি লাগে, তার থেকে কমে যায়। এই ভাবে বায়ুমণ্ডলে চার্জ কণা এবং আলোককণার একটি ঝর্ণা তৈরি হয়, যাকে আমরা বলি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শাওয়ার।
এই শাওয়ার যখন বায়ুমণ্ডলের নিচের দিকে নামতে থাকে তখন এই চার্জ কণাগুলো বায়ুমণ্ডলকে উদ্দীপিত করে একধরনের নীল আলোর একটি বৃহৎ কোনাকার ক্ষেত্র তৈরি করে যেটা ভুপৃষ্ঠে ১৫০-২০০ মিটার বিস্তৃত হয়, যাকে আমরা চেরঙ্কভ লাইটপুল (Cherenkov lightpool) বলে থাকি (চিত্র ৩ ) । এই লাইটপুলের মধ্যে আমরা আমাদের টেলিস্কোপগুলোকে রেখে সেই নীল আলোকে ডিটেক্ট করি, তার মাধ্যমে আমরা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শাওয়ারের চিত্র পাই, যেটা পরোক্ষভাবে গামা-রের দিক নিদর্শন করতেও সাহায্য করে। এটা বলে রাখি যে, এই নীল আলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অন্যান্য নীল আলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের থেকে ভিন্ন। আর তার জন্যই একে ডিটেক্ট করে আমরা সহজেই গামা-রের গতিপথকে সুনির্দিষ্ট করতে পারি। কম শক্তিসম্পন্ন গামা-রে থেকে আমাদের বায়ুমণ্ডলে তৈরি এই চেরেঙ্কভ আলোর পরিমাণ খুব কম হয় এবং তা অতি সহজেই বায়ুমণ্ডলেই শোষিত হয়ে যায়।তাই তাদেরকে ভূপৃষ্ঠে ডিটেক্ট করা কঠিন হয়ে যায়।
আমাদের বিশ্বে ভূপৃষ্ঠ-ভিত্তিক অনেক গুলো গামা-রে টেলিস্কোপ আছে। তাদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য হল ম্যাজিক (MAGIC: Major Atmospheric Gamma Imaging Cherenkov) টেলিস্কোপ (চিত্র ৪)। এই টেলিস্কোপ স্পেন এর ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের লা-পালমা দ্বীপে অবস্থিত।এই টেলিস্কোপ অসংখ্য গামা-রের উৎস আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে[৮]।
গামা-রের উৎসের ভিন্ন ভিন্ন রূপ
বিগত ১০-১৫ বছরে এই গামা-রে টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা অসংখ্য ভিন্ন জাতীয় গামা-রের উৎসের আবিষ্কার করেছি। গ্যালাক্টিক এবং এক্সট্রা গ্যালাক্টিক উভয় ক্ষেত্রেই আমরা এর সন্ধান পেয়েছি। আমাদের সৌরমণ্ডল যে ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির অন্তর্গত তাকে আমরা মিল্কীওয়ে বলে থাকি এবং এই মিল্কীওয়ের অন্তুরভুক্ত উৎসগুলোকে আমরা গ্যালাক্টিক উৎস বলে থাকি। আর আমাদের মিল্কীওয়ের বাইরের উৎস গুলো হল এক্সট্রাগ্যালাক্টিক। গ্যালাক্টিক উৎসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সুপারনোভা রেমন্যান্ট। এছাড়া রয়েছে পালসার, পালসার উইন্ড নেবুলা, স্টার ক্লাস্টার, বাইনারী সিস্টেম। আমাদের মিল্কীওয়ের বাইরে অর্থাৎ এক্সট্রাগ্যালাক্টিক উৎসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অ্যাক্টিভ গ্যালাক্টিক নিউক্লিয়াই যার নিউক্লিয়াসটা হলো একটা ব্ল্যাকহোল। এছাড়া রয়েছে স্টার বার্স্ট গালাক্স্যী যেখানে নতুন নতুন তারা-র জন্ম হয়ে চলেছে। ৫ নম্বর চিত্রে এই উৎস গুলোর প্রতীকি চিত্র দেখানো হয়েছে।
এরা সবাই কম বেশি মহাজাগতিক রশ্মির কারখানা। তবে প্রতিটি উৎসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন। এই সব উৎস থেকে গামা-রের সনাক্তকরণ এবং তার যথোপযুক্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা এই মহাজাগতিক রশ্মির কারখানাগুলোর সম্বন্ধে বিশদে জানতে পারি। এই আবিষ্কার গুলোর মাধ্যমে আমরা শুধু এই উৎসগুলোর সম্বন্ধেই জানতে পারি না, পদার্থবিদ্যার অনেক মৌলিক গবেষণাও এর মাধ্যমে করে থাকি।
আমরা পরবর্তী অংশে এই উৎসগুলোর সমন্ধে এবং যেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি তাদের বিস্তারিত বিবরণ দেব। উৎসাহী পাঠকেরা এই উৎসগুলো এবং অন্যান্য বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু সম্বন্ধে জানতে সূত্র [৯] এর সাহায্য নিতে পারে।
তথ্যসূত্র এবং আরো জানতে
[১] CTA টেলিস্কোপ নিয়ে জানতে: https://www.cta-observatory.org/
[২] https://www.nature.com/articles/483400a
[৩] https://timeline.web.cern.ch/victor-hess-discovers-cosmic-rays-0
[৪] বিজ্ঞ্যান এ প্রকাশিত প্রবন্ধ: https://bigyan.org.in/2014/04/13/victor-hess-and-cosmic-ray/
[৫] https://imagine.gsfc.nasa.gov/science/toolbox/gamma_ray_astronomy1.html
[৬] https://en.wikipedia.org/w/index.php?title=History_of_gamma-ray_burst_research&oldid=982740244
[৭] Fermi-LAT টেলিস্কোপ নিয়ে জানতে: https://fermi.gsfc.nasa.gov/
[৮] MAGIC টেলিস্কোপ নিয়ে জানতে: https://magic.mpp.mpg.de/
[৯] মহাজাগতিক উৎস সম্বন্ধে জানতে: https://imagine.gsfc.nasa.gov/science/objects/